1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কার্টুনে মায়ের অসহায়ত্ব

আরিফুর রহমান৯ মার্চ ২০১৬

নারী অধিকার নিয়ে ভেবেছি সেই ছোটবেলা থেকেই, চেয়েছি ব্যতিক্রমী কিছু করার৷ আর সেই আকাঙ্খা থেকে কার্টুনের মাধ্যমে তুলে ধরতে চেয়েছি নারীর অসহায়ত্বের, অধিকারের কথা৷

Cartoon Internationaler Frauentag
ছবি: Arifur Rahman

আমার মা তখন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী, বয়স ১১ আর বাবা পড়তেন অষ্টম শ্রেণিতে, বয়স ১৫৷ সেই বয়সেই তাদের বিয়ে হয়েছিল৷ একদিন আমার মা স্কুল থেকে ফিরে জানতে পারেন, তাঁর বিয়ে৷ বিয়ে কী জিনিস আমার মা তার কিছুই জানতেন না৷ দুই গ্রামের দুই ব্যক্তি বন্ধুত্ব করবেন, তাই তাঁরা তাঁদের নাবালক ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দিয়ে আত্মীয় হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ আরো অনেক মেয়ের মতো আমার মা তখন তাঁর লেখাপড়া ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি চলে যান৷ মায়ের বয়স যখন ১৩ বছর, তখন আমার জন্ম৷ আমার জন্মের পাঁচ বছর পর আমার ছোট বোন পৃথিবীতে আসে৷

জীবন থেকে শিক্ষা পেলাম

বাবা চাকরি করতেন৷ আমার বোনের জন্মের দু'বছর পর জানতে পারি, বাবা অন্যত্র বিয়ে করেছেন৷ এরপর মা-বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে আমরা নানির বাড়ি ফিরে আসি৷ শুরু হয় আমাদের দুর্বিষহ জীবন, অভাব-অনটন৷ মায়ের বিয়ের সময় আমার নানা যা যৌতুক হিসেবে আমার বাবাকে দিয়েছিলেন, তার কিছুই আমরা সঙ্গে আনিনি৷ আমাদের এমনও দিন গেছে যে, একই জামা-কাপড় জোড়া তালি দিয়ে দুই বছর পার করেছি৷ এমনকি গ্রামে থাকতে স্কুল থেকে আসার পর মামাদের ছাগল-ভেড়ার দেখাশোনাও করেছি আমরা৷

ছবি: Arifur Rahman

আমার মা প্রায়ই আফসোস করতেন আর বলতেন, ‘‘আমার যদি লেখাপড়া জানা থাকত, তাহলে অন্তত কোথাও চাকরি করে তোদের দুই ভাই-বোনের ভরণপোষণের খরচ জোগাড় করতে পারতাম৷ তোদেরকে মানুষের মতো মানুষ করতে পারতাম৷ আমার মতো কষ্টের জীবন আর কোনো মেয়ের যেন না হয়৷''

অসহায় আমি, আমার মা

তখন মায়ের মুখের দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করতে পারতাম না৷ আমার মা কখনও দ্বিতীয় বিয়ে করার কথা ভাবেননি৷ কেউ প্রস্তাব নিয়ে আসলে মা বলতেন, ‘‘বিয়ে করে কী হবে? আমার ছোট ছোট ছেলে-মেয়েকে কে দেখবে? কে তাদের মানুষ করবে?'' আমার মাকে নিয়ে আমি সব সময় গর্ব করি, তিনি ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মাদের একজন, তিনিই আমার আদর্শ

ছবি: Arifur Rahman

২০১০ সালে ডাক্তার জানালেন মায়ের দু'টি কিডনিই বিকল৷ কিডনি প্রতিস্থাপন করা দরকার৷ মাকে জানালাম, ভয় করো না মা, আমি আছি৷ আমার শরীরে দু'টো কিডনি আছে, এর থেকে একটা কিডনি আমি তোমাকে দেবো, তোমাকে ঠিক সুস্থ করে তুলবো৷ কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য যে পরিমাণ অর্থের দরকার ছিল, সেটা জোগাড় করতে পারিনি৷ ২০১২ সালে মায়ের শরীর অবনতির দিকে চলে যায় এবং সে বছরের ১০ এপ্রিল তিনি পৃথিবী ত্যাগ করেন৷

মায়েদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই

আমার মা, শৈশবে তাঁর শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন৷ শৈশবে তাঁর কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল সংসারের বোঝা৷ বাংলাদেশের ৬৪ হাজার গ্রামে আমার মায়ের মতো হাজারো মাকে খুঁজে পাওয়া যাবে, যাঁরা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, যাঁদের ইচ্ছাকে কেউ মূল্য দেয়নি৷ আমি চাই না বাল্যকালে আমার মায়ের মতো আর কাউকে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে সংসারের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হোক৷ আমি চাই, সবাই যাতে তাঁদের ন্যায্য অধিকার পান৷

ছবি: Arifur Rahman

আমার সবচেয়ে বড় শক্তি কার্টুন৷ কয়েকবছর আগে সেই কার্টুনের কারণে বাংলাদেশে জেল খাটতে হয়েছে৷ মামলা-মোকাদ্দমার ধকল কাটাতে একসময় বাধ্য হয়ে দেশত্যাগ করি৷ এখন যে দেশটিতে আছি, নরওয়ে, সেই দেশের মানুষ আমার কার্টুন ভালোবাসে৷ তাদের ভালোবাসার জায়গাটা আমি কাজে লাগাচ্ছি নারী অধিকার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে৷

চলতি বছরের আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে ঘিরে তাই বিশ্বের একাধিক দেশে কার্টুন প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করতে কাজ করেছি আমি৷ উদ্দেশ্য আমার মাসহ পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং সকল নারীর অধিকারের প্রতি সমর্থন জানানো৷ সেই সাথে বিশ্বের কাছে নারী অধিকারের এবং বিভিন্ন দেশের এবং সমাজের নারীর অবস্থানের বাস্তবচিত্র তুলে ধরেছি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে৷

আরিফুর রহমান, কার্টুনিস্টছবি: Arifur Rahman

কার্টুন প্রতিযোগিতায় আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের কার্টুনে উঠে এসেছে শিশু বিবাহ, নারী নির্যাতন, পুরুষের বহুবিবাহ, নারী পুরুষের বৈষম্য এবং ধর্মীয় কুসংস্কারের মতো বিভিন্ন বিষয়৷ আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কার্টুনে উঠে এসেছে নারী পাচার ও পতিতাবৃত্তির বিষয়গুলি৷ দক্ষিণ এশিয়ার কার্টুনে উঠে এসেছে নারী-পুরুষের বৈষম্য৷ ইউরোপ বা অ্যামেরিকার কার্টুনে উঠে এসেছে সমাজে বিভিন্ন স্তরে নারী-পুরুষের বৈষম্য এবং নারী অধিকারের বিষয়গুলি কৌতুক বা বিদ্রুপ আকারে৷ এ সব কার্টুন এবং বিভিন্ন দেশে প্রদর্শনী সম্পর্কে বিস্তারিত থাকছে এখানে

আমি মনে করি, নারী-পুরুষ উভয়ই মানুষ৷ আর মানুষ হিসেবে সর্বক্ষেত্রে সবার সমান অধিকার থাকা উচিত, উচিত মানুষকে লিঙ্গের ভিত্তেতে মূল্যায়ন না করে মানুষকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করা৷ তবেই প্রগতি সম্ভব৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ