1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কন্যার চেয়ে কাঙ্খিত পুত্রসন্তান

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি২৫ আগস্ট ২০১৩

বিদ্যাবুদ্ধিতে, প্রতিভায়, মেধায়, কর্মদক্ষতায় মেয়েরা সবদিক থেকে পুরুষের সমকক্ষ৷ তবু ভারতীয় সমাজে পুত্রসন্তান কাঙ্খিত, এমনকি মায়েদের কাছেও৷ কেন?

ছবি: Fotowerk - Fotolia.com

যদি পুরুষতান্ত্রিক ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় এটা দস্তুর হয়ে থাকে, তাহলে মায়েরা সেটাকে বিপরীতমুখী করার চেষ্টা করেন না কেন?

প্রশ্ন কিন্তু আরো আছে৷ বেশিরভাগ মা কেন কন্যাসন্তানের চেয়ে পুত্রসন্তান কামনা করেন? আর জন্মলগ্ন থেকেই শিশুকন্যাকে কেন খরচের খাতায় লেখা হয়?

এর কারণ খুঁজতে গেলে যেতে হবে গোড়ায়৷ ভারতের প্রাচীন ধর্মীয়-সংস্কৃতিতে আছে ‘পুত্র' মানে যে নরক থেকে পিতৃপুরুষকে উদ্ধার করে৷ সমাজ ব্যবস্থায় পুত্রের মূল্য নির্ধারিত হয় বংশরক্ষার উপায় হিসেবে৷ শাস্ত্রে আছে ‘‘পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্যা''৷ শোনা যায় সেজন্য যাগযজ্ঞও করা হতো৷ যেকোনো পিতৃতান্ত্রিক সমাজেই নারী প্রজননের এবং গৃহস্থালী কাজকর্মের যন্ত্র৷ তাঁর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার সীমিত গণ্ডিতে বাঁধা৷ ফলে ভারতীয় সমাজে নারীর অবমূল্যায়ন এবং তা থেকে পণপ্রথা, অত্যাচার৷ তা থেকে নারীমনে জন্মায় হীনমন্যতা৷ পুত্র প্রসব করতে না পারলে সে সনাতন সমাজে হয়ে পড়ে অপাংক্তেয়৷

মায়ের কাছেও কন্যার চেয়ে কাঙ্খিত পুত্রসন্তানছবি: Maksim Bukovski - Fotolia.com

পিতৃতান্ত্রিকতার পুরানো রূপে এসেছে সামাজিক রূপান্তর৷ মেয়েরা উঠে দাঁড়িয়েছে৷ বিকাশ প্রক্রিয়া সামিল হতে পেরেছে৷ শিক্ষাদীক্ষার মাধ্যমে আদায় করতে পেরেছে সামাজিক অধিকার৷ ব্যক্তি স্বাধীনতা৷ কিন্তু আসলে কী তাই? ভেতরের ছবিটা পালটেছে কতটা? যেটা পালটেছে সেটা নিছক বাহ্যিক৷ আজও শিক্ষিত মেয়েরা রাস্তাঘাটে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে না৷ ধর্ষণ আর যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়৷ শিক্ষিতা, চাকুরিরতা মেয়ে ঘরে না ফেরা পর্যন্ত বাড়ির লোকেদের উদ্বিগ্ন থাকতে হয়৷ কেন? কারণ প্রতি বছর হাজার হাজার মেয়ে স্রেফ হারিয়ে যায়৷ কর্পুরের মতো উবে যায়৷ অভিযোগ করলেও প্রশাসন নির্বিকার থাকে৷

ইউনিসেফ-এর হিসেব অনুযায়ী, লোভ-লালসা আর দারিদ্র্যের কারণে ভারতে বছরে ৩০ লাখ মেয়ে হারিয়ে যায়৷ হারিয়ে যাওয়া মেয়েদের মধ্যে ১২ লাখ শিশুকন্যা ও নাবালিকা৷ নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের মতে, লক্ষাধিক নারীর নিরুদ্দেশ হবার অন্যতম কারণ কন্যাভ্রুণ হত্যার সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা৷ গত বিংশ এবং একবিংশ শতকের প্রতি দশকে নারী-পুরুষের আনুপাতিক হার ভারতে ধাপে ধাপে কমছে৷ গর্ভাবস্থায় ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ণয় করে কন্যাভ্রুণ হলে গর্ভপাত করানো মানে সমাজে শিশুকন্যাকে জন্মাতে না দেবার চক্রান্ত৷ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিশুকন্যাকে জন্মের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে৷ এর চাইতে সামাজিক বৈযম্য আর কী হতে পারে? প্রতি হাজার ছেলে ও মেয়ের অনুপাত ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে শহরাঞ্চলে ৯২৬৷ শিশুকন্যার মৃত্যুর হার শিশুপুত্রের তুলনায় বেশি৷ কারণ শৈশবে তাঁদের পুষ্টিকর আহার থেকে বঞ্চিত করা হয়৷ পড়াশুনার খরচ, বিয়ে দেবার খরচ তারপর অন্যের সম্পত্তি হয়ে চলে যাবে৷ উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে গর্ভস্থ সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে ভারতে৷

এইসব হারিয়ে যাওয়া মেয়েদের নানা নির্যাতনের মধ্য দিয়ে শেষ অবধি স্থান হয় তাঁদের রেড-লাইট এলাকায়৷ ভারতে এমন কিছু উপজাতি আছে যারা দেহ ব্যবসাকে আর পাঁচটা রোজগারের উপায় হিসেবে মনে করে তাঁদের মেয়ে-বৌদের পাঠায় পুরুষদের লালসা মেটাতে৷ যেমন, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশের বেদিয়া উপজাতি৷ এমনকি তাদের সমাজে এমন ধারণাও প্রচলিত যে, কোনো নাবালিকার কুমারিত্ব যে পুরুষ প্রথম ভাঙতে পারবে তাঁর এইচআইভি/এইডসের মতো যৌন রোগ থাকলে তা সেরে যাবে৷ এর বদলে অবশ্য ঐ নাবালিকার অভিভাবককে অনেক বেশি টাকা দিতে হয়৷ এই ধরণের কুপ্রথা নিবারণে পুলিশ প্রশাসনের তৎপর নয়৷ মুসলিম সমাজের আসল ছবিটাও গুণগত দিক থেকে খারপ বই ভালো নয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ