সবেতনে প্রায় ২০ মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি পেয়ে থাকেন এস্তোনিয়ার মায়েরা৷ জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)-এর হিসাবে মাতৃত্বকীলন সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষে আছে দেশটি৷
এক্ষেত্রে এস্তোনিয়ার পরপর প্রথম সারিতে আছে পর্তুগাল, জার্মানি, ডেনমার্ক, স্লোভেনিয়া, লুক্সেমবুর্গ এবং ফ্রান্স৷ আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, সাইপ্রাস, গ্রীস ও সুইজারল্যান্ড রয়েছে তালিকার নিচের দিকে৷
‘‘মস্তিষ্কের উন্নয়ন ও ভবিষ্যতের ভিত্তি তৈরির করার জন্য শিশুদের জীবনের প্রাথমিক বছরগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ এ কারণে মা-বাবাদেরকে সন্তান জন্মের আগে-পরে সময় সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন,'' বলেছেন ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর৷
সন্তান জন্মের পর মা-বাবাদেরকে কমপক্ষে ছয় মাসের ছুটি দেওয়ার সুপারিশ রয়েছে ইউনিসেফের৷ একইসঙ্গে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির পূর্ব পর্যন্ত শিশুদের সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার কথা বলে আসছে তারা৷
বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়ার ক্ষেত্রে এস্তোনিয়ার পরপর অবস্থান হাঙ্গেরির৷ সেখানে ৭২ সপ্তাহ ছুটি দেওয়া হয়৷ এরপরে অবস্থানে থাকা বুলগেরিয়ার মায়েরা ছুটি পেয়ে থাকেন ৬৫ সপ্তাহ৷ তালিকার নিচের দিকে থাকা যুক্তরাজ্যে ১২ সপ্তাহ এবং সুইজারল্যান্ডে ৮ সপ্তাহ ছুটি পেয়ে থাকেন মায়েরা৷
জার্মানিতে ৪৩ সপ্তাহ বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং ৫ দশমিক ৭ সপ্তাহ পিতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া হয়৷ দেশটির চাইল্ডকেয়ারে ভর্তির সুযোগ পায় তিন বছর বয়সি ৩৩ শতাংশ শিশু৷
বাবাদের পর্তুগালে ১২ দশমিক ৫ সপ্তাহ, সুইডেনে ১০ দশমিক ৯ সপ্তাহ এবং লুক্সেমবুর্গে ১০ দশমিক ৪ সপ্তাহ পিতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া হয়ে থাকে৷ চেক রিপাবলিক, স্লোভাকিয়া, আয়ারল্যান্ড, সাইপ্রাস এবং সুইজারল্যান্ডে পিতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নাই৷
‘‘বেতনসহ পিতৃত্বকালীন ছুটি দিলে তা সন্তানদের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করা এবং শিশুদের স্বাস্থ্য ও বেড়ে উঠায় ভূমিকা রাখে৷ একইসঙ্গে তা মায়েদের বিষণ্নতা কমাতেও সাহায্য করে,'' বলা হয়েছে ইউনিসেফের প্রতিবেদনে৷
বেতনসহ পিতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়ার ক্ষেত্রে উদ্যোগী হওয়ার জন্য সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ৷ কারণ অনেকে আর্থিক চাপ অনুভব করার কারণে ছুটি নিতে চান না৷
তিন বছর পর্যন্ত শিশুদের ৭০ শতাংশ চাইল্ডকেয়ার পেয়ে থাকে ডেনমার্কে৷ আইসল্যান্ডে এই সংখ্যা ৬৫ শতাংশ এবং নেদারল্যান্ডসে ৫৩ শতাংশ৷ অন্যদিকে, গ্রীসে এমন শিশুদের ৯ শতাংশ, চেক রিপাবলিকে ৫ শতাংশ এবং স্লোভাকিয়ায় ১ শতাংশ চাইল্ডকেয়ার সুবিধা পায়৷
আইসল্যান্ড ও বেলজিয়ামে ৯৯ শতাংশ এবং সুইডেনে ৯৭ শতাংশ তিন বছর বয়সি শিশু চাইল্ডকেয়ার সুবিধা পায়৷ এই তালিকায় নিচের দিকে থাকা রোমানিয়ায় ৬১ শতাংশ, গ্রীসে ৫৬ শতাংশ এবং ৩১ শতাংশ শিশু পায় এই সুবিধা৷
ভারতে পিতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে বিতর্ক
সন্তান জন্মের পর তাকে সুস্থভাবে বড় করে তোলায় মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি৷ কিন্তু সন্তান লালন-পালনে বাবার ভূমিকাও কোনো অংশে কম নয়৷ তাই সরকারি চাকরিতে মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া হলে পিতৃত্বকালীন ছুটি নয় কেন? উঠেছে প্রশ্ন৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
শিপ্রা দাস (চিত্র সাংবাদিক)
ষাটোর্ধ শিপ্রা নিজে বিয়ে করেননি৷ তবে সম্প্রতি ভারত সরকারের অধীনে কর্মরতা মহিলাদের মাতৃত্বকালীন ছুটি-সংক্রান্ত আইন পাস হওয়ায় বেজায় খুশি তিনি৷ তাঁর দাবি, একই ভাবে বিবাহিত পুরুষদের জন্যেও ছুটির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন৷ কারণ সন্তান জন্মের পর বাবা-মা উভয়ের দেখভাল অত্যন্ত জরুরি৷
ছবি: DW/R. Chakraborty
অরিন্দম বাগ (কলেজ শিক্ষক)
ইনি কিছুদিন আগেই বাবা হয়েছেন৷ স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে সঙ্গে নিয়ে ছবি তুললেন তিনি৷ বললেন, ‘‘শিশুকন্যার জন্ম নার্সিংহোমে৷ সেখান থেকে বাড়ি ফেরা এবং পরবর্তীকালে শিশু ও মায়ের দেখভাল করতে হিমশিম খেতে হয়েছে আমাদের৷ অফিসে কাজের চাপ সামলানোর চেয়ে ঢের বেশি জরুরি সদ্যোজাতকে দেখভাল করা৷ তাই পুরুষদেরও কিছুদিন ছুটি চাই৷’’
ছবি: DW/R. Chakraborty
দীপাঞ্জনা বসু মজুমদার (অধ্যাপিকা)
একটি সরকারি কলেজের সাংবাদিকতা বিভাগে প্রধানের দায়িত্ব সামলান দীপাঞ্জনা৷ বাড়িতে ছয় বছরের মেয়ে রয়েছে৷ তাঁর বক্তব্য, সন্তানকে বড়ো করতে মা ও বাবার সমান দায়িত্ব৷ তাই মা যদি তাঁর চাকরিতে ছ’মাস ছুটি পেতে পারেন, তবে একই ভাবে বাবাকেও ছুটি দেওয়া উচিত৷
ছবি: DW/R. Chakraborty
সোনম চৌহান (সরকারি কর্মী)
বেশ চটপটে এক সরকারি কর্মী সোনম৷ তাঁর কথায়, ‘‘সরকার মাতৃত্বকালীন ছুটির নতুন আইন করার আগে একটা বিষয় ভেবে দেখেনি৷ সন্তান জন্মের পর মা একাই সদ্যোজাতের দেখাশোনা করবেন আর বাবা দপ্তরে ছুটবেন? এমনটা হলে তো ঘুরিয়ে মায়ের ওপরেই চাপ সৃষ্টি হবে৷ তাই বাবা-ও যাতে ছুটি পান সেটা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই৷’’
ছবি: DW/R. Chakraborty
শৌভিক ভট্টাচার্য (ব্যবসায়ী)
এক মেয়ের বাবা শৌভিক বিষয়টাকে অন্য ভাবে দেখেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘পিতৃত্ব শুধুমাত্র একটা অনুভূতি নয়৷ ‘বাবা হওয়া’ পুরুষকে দায়িত্ববান করে তোলে৷ সন্তান পালনের জন্য পুরুষদের পিতৃত্বকালীন ছুটি পাওয়ার অধিকার তাই খুবই স্বাভাবিক একটা দাবি৷ এই দাবি সমর্থনযোগ্য৷’’
ছবি: DW/R. Chakraborty
মাকন সিং (বেসরকারি সংস্থার কর্মী)
সংসদে সদ্য মাতৃত্বকালীন ছুটির বিলটি পাস হওয়ার খবর পেয়েছেন মাকন সিং৷ নারী-পুরুষ ভেদাভেদে উনি বিশ্বাসী নন৷ ওঁর মতে, সন্তানের জন্মে যেমন নারী-পুরুষ উভয়ের ভূমিকা সমান, ঠিক তেমনই তাকে সুস্থভাবে বড় করে তোলার ক্ষেত্রেও দু’জনের থাকে সমান কর্তব্য৷ তাহলে কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ কেন?
ছবি: DW/R. Chakraborty
যোগীতা শর্মা (চাকুরিজীবী)
একটি বেসরকারি সংস্থায় সহায়ক পদে চাকরি করেন যোগীতা৷ এখনও মা হননি তিনি৷ উনি মনে করেন, শুধু সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নয়, সমস্ত চাকরির ক্ষেত্রেই সন্তান জন্মের পর মা ও বাবাকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সবেতন ছুটি দেওয়া উচিত৷
ছবি: DW/R. Chakraborty
মান সিং (মুদির দোকানি)
ভারত সরকারের নতুন আইন সম্পর্কে কিছুই জানেন না এই দোকানদার৷ তবে তিনি মনে করেন, ঘরে সন্তান এলে সরকার ছুটি দিক অথবা না দিক, বাবাকে ক’দিন বাড়িতে থাকতেই হয়৷ ফলে মায়ের মতো বাবার জন্যও ছুটি চালু হোক৷
ছবি: DW/R. Chakraborty
প্রদীপ কুমার (সবজি বিক্রেতা)
লোকের মুখে এমন আইনের কথা শুনেছেন বটে, তবে বিশদ কিছুই জানেন না৷ চার সন্তানের বাবা এই সবজি ব্যবসায়ীর মতে, সন্তান জন্মের পর মায়েদের যদি ছ’মাস ছুটি দেওয়া হয়, তাহলে বাবাদের সন্তান লালন-পালনের জন্য অন্তত একমাস ছুটি দেওয়া উচিত৷