জার্মানির জলিঙ্গেন শহরে ২৭ বছর বয়সি এক মা তার পাঁচ সন্তানকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে৷ ওই নারী পরে নিজেও ট্রেনের নীচে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন৷ তবে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ছয় সন্তানের এক মা তার পাঁচ সন্তানকে হত্যার পর নিজে ড্যুসেলডর্ফ রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে ওই নারীর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে৷ গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ মৃত শিশুদের মধ্যে তিনটি মেয়ে ও দুটি ছেলে৷তাদের বয়স দেড় থেকে আটের মধ্যে৷ এগারো বছর বয়সি একটি ছেলে বেঁচে যায়৷ তাকে পরিবারের কাছে রাখা হয়েছে৷
কী কারণে ওই শিশুদের হত্যা করা হলো তা এখনো জানা যায়নি৷ এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে৷ বিল্ড পত্রিকা জানায়, নিহত পাঁচ সন্তানের নানী পুলিশকে বলেছেন, তার নিজের মেয়েই তার সন্তানদের হত্যা করেছেন৷ ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর পুলিশ কর্মকর্তারা পাঁচটি শিশুর মৃতদেহ দেখতে পান৷
এনএস/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)
ডাইনি অভিযোগে হত্যা: এখনও চলছে
১০ আগস্ট বিশ্ব ডাইনি হত্যাবিরোধী দিবস৷ ইউরোপে তিনশ বছরে অন্তত ৩০ লাখ মানুষকে ডাইনি হিসেবে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিলো৷ হত্যা করা হয়েছিল ৬০ হাজার৷ তবে আফ্রিকাসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে উইচ হান্ট বা ডাইনি নিধন এখনও চলছে৷
ছবি: picture-alliance/Design Pics/K. Welsh
হাজারো মানুষকে হত্যা
১৫৫৫ এর একটি লিফলেটে ডেরেনবুর্গের ডাইনি অভিযো্গে একজনকে পোড়ানোর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে৷ ইউরোপে ডাইনি শিকার যখন চরম রূপ নিয়েছিল, তখনকার ঘটনা এটি৷ জার্মানিতে ১৪৫০ থেকে ১৭৫০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মানুষকে ডাইনি অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল৷ তবে ডাইনি হিসেবে অভিযুক্তদের বেশিরভাগই নারী৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অদ্ভুত পরীক্ষা
ডাইনিদের বিরুদ্ধে বিচার হত ‘বৈধ’ আইনি পদ্ধতিতে৷ একজন নারী ডাইনি কিনা তা বিচার করা হত নিষ্ঠুরতম এক পরীক্ষার মাধ্যমে৷ এটাকে বলা হত ‘সাঁতার পরীক্ষা’৷ অভিযুক্তকে দড়ি দিয়ে বেঁধে পানিতে ফেলে দেয়া হত৷ যারা ডুবে যেতো তারা নিরপরাধ বলে প্রমাণিত হত৷ আর যারা বাঁধন খুলে সাঁতরে উঠে আসতো তাদের ডাইনি বলা হত, কারণ ধারণা করা হত, তারা শয়তানের সাহায্যে এটা করতে পেরেছে৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
জিজ্ঞাসাবাদ
অভিযুক্ত প্রত্যেককে তথাকথিত জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে যেতে হত৷ বলা বাহুল্য এই জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়া ছিলো নির্যাতনের মাধ্যমে দোষ স্বীকারে বাধ্য করা৷ সেসব প্রক্রিয়া যে কতটা ভয়াবহ ছিলো উপরের ছবিটি তার প্রমাণ৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
ডাইনি শিকারের ‘বাইবেল’
১৪৮৬ সালে ডোমিনিকান সন্ন্যাসী হাইনরিশ ক্রেমার ‘হ্যামার অফ হুইচেস’ নামে এক বই প্রকাশ করেন৷ এই বইটিতে ডাইনিদের নির্যাতনের কত ধরনের প্রক্রিয়া হতে পারে তার বর্ণনা এবং আইনি প্রক্রিয়ার পূর্ণ ব্যাখ্যা রয়েছে৷ সপ্তদশ শতাব্দীর পর এটি ছাপানো বন্ধ হয়ে যায়৷ এই বইটি সেসময় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়৷
ছবি: DW
জোয়ান অব আর্ক
ফরাসি এই বীর যোদ্ধা ১৪২৯ সালে ইংরেজ সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন৷ তার কারণে ফ্রান্স-ইংল্যান্ডের শতবর্ষের যুদ্ধের অবসান ঘটে৷ ফ্রান্সের স্বাধীনতার পর জোয়ান অফ আর্ককে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে আটক করা হয়৷ ইংরেজ যাজকের অধীনে তার বিচার শুরু হয় এবং তাকে ডাইনি অ্যাখ্যা দিয়ে ১৪৩১ খ্রিষ্টাব্দে পুড়িয়ে মারা হয়৷
ছবি: Imago/Leemage
অ্যাগনেস বার্নয়ার এর ঘটনা
প্রাক-আধুনিক ইতিহাসের বিখ্যাত অপরাধ মামলা এটি৷ বাভেরিয়ার সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী তৃতীয় আলব্রেখটের প্রেমিকা ছিলেন অ্যাগনেস৷ আলব্রেখটের বাবা অ্যাগনেসকে ডাইনি বলে প্রচার করে এবং ১৪৩৫ সালে দানিয়ুব নদীতে ডুবিয়ে মারা হয় তাকে৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
ক্যাথরিনা হানোটের ঘটনা
কলোনের রাজনীতিবিদ পরিবারের ক্যাথরিন বর্তমানে সফল ব্যবসায়ী নারী হিসেবে পরিচিত৷ কিন্তু এই কারণেই তার বিরুদ্ধে ডাইনি অভিযোগ আনা হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদের সময় অনেক অত্যাচার সহ্য করেও নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন তিনি৷ ১৬২৭ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়৷ তবে তার শাস্তি ‘কমানো’ হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়৷ অর্থাৎ তার দেহ আগুনে ছোড়ার আগে গলা টিপে হত্যা করা হয় তাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘গুয়ের্নসের শহীদ’
১৫৫০ সালে ইংলিশ চ্যানেলের দ্বীপ গুয়ের্নসে অনেক ডাইনির বিচার হয়৷ সেসময় প্রোটেস্টেন্ট এবং ক্যাথলিকদের মধ্যে ব্যাপক দ্বন্দ্ব চলছিল৷ ১৫৫৬ সালে তিনজন প্রোটেস্টেন্ট নারীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় সেখানে৷ এর মধ্যে একজন নারী জ্বলন্ত অবস্থায় এক শিশুর জন্ম দিয়েছিলেন৷ সেসময় নারীটিকে উদ্ধার করা হয়৷ তবে পরে আবারও তাকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়৷ বর্তমানে সেই তিন নারী ‘গুয়ের্নসের শহীদ’ হিসেবে খ্যাত৷
ছবি: picture-alliance / akg
নিউ ইংল্যান্ডে ডাইনি শিকার
১৯৬২ সালে বিশ্বের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে ডাইনি শিকার৷ যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস, যা তখন ছিলো সালেম৷ ব্রিটিশরা নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য সাহায্য নিয়েছিল ডাইনি শিকারের৷ নিউ ইংল্যান্ডে ১৪ জন নারী এবং পাঁচজন পুরুষকে ডাইনি আখ্যা দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল৷ নির্যাতন করা হয়েছিল কয়েকশ’ মানুষকে৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
এখনো আছে উইচ হান্ট
৩৬টি দেশে এখনো ডাইনি শিকার অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে ক্যাথলিক মিশনারি সোসাইটি মিসিও৷ জার্মান ইতিহাসবিদ ভল্ফগাং বেহরিঙ্গেরের মতে, ওই তিনশ বছরে ডাইনি সন্দেহে যত মানুষ হত্যা করা হয়েছে, তা চেয়ে বেশি হত্যা করা হয়েছে আধুনিক সভ্য যুগে৷ বিশেষ করে আফ্রিকায়৷ ১৯৬০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে তানজানিয়ায় ডাইনি সন্দেহে ৪০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে৷ আফ্রিকার বয়স্ক, নিঃসঙ্গ নারীরাই এর শিকার হন বেশি৷