মিংক, যার পশম বিশ্বের অন্যতম দামী ফ্যাশন-পণ্য, ডেনমার্কে করোনা সংক্রমণ বাড়ার একটি কারণ৷ দেশের সরকার তাই বেশ কিছু কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের ফ্যাশন দরবারে মিংকের পশমের চাহিদা সব সময়েই বেশি৷ কিন্তু বর্তমানে এই জন্তু ফ্যাশন নয়, করোনা সংকটের কারণে ডেনমার্কের শিরোনামে৷
সাম্প্রতিককালে সরকারের তরফে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন জানাচ্ছে, অনেকটা বেজির মতো দেখতে এই জন্তুটির মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে বিশেষ ধরনের জিনগত পরিবর্তন, যার ফলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মিংক থেকে সংক্রমিত হচ্ছেন মানুষ৷
এখন পর্যন্ত ১২জন করোনা আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে ডেনমার্কে, যাদের সংক্রমণের উৎস এই প্রাণীটি, বলছে সেই প্রতিবেদন৷ কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাগনুস হয়নিকের মত, দেশের ৭৮৩জন করোনা সংক্রমণের অর্ধেকই মিংক-সম্পর্কিত৷
কুকুর দিয়ে করোনা পরীক্ষা: সময় ও অর্থ সাশ্রয়
ফিনল্যান্ডের গবেষকরা বলছেন, বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত কুকুর দিয়ে দ্রুত ও কম খরচে করোনা পরীক্ষা করা সম্ভব৷ এজন্য মানুষকেও শারীরিক কোনো কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হবে না৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Lehtikuva/Reuters
ইউরোপে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে করোনার সংক্রমণ আবার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে৷ বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন দেশ জানিয়েছে, ব্যয় সংকোচন করতে সংক্রমিত রোগীর সংস্পর্শে এলেও কারো আর করোনা টেস্ট করানো হবে না৷ করোনা পরীক্ষা ও ট্র্যাক করা নিয়ে পুরো ইউরোপই অনেকটা দিশেহারা৷
ছবি: Attila Cser/Reuters
ফিনল্যান্ডের বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষা
ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কির বিমানবন্দরে ছোট্ট একটা কেবিনে এক টুকরো খাবারের বিনিময়ে করোনা পরীক্ষা করছে কুকুর ‘কোসি’৷ মাত্র কয়েক সেকেন্ড লাগছে তার৷ সাধারণ করোনা পরীক্ষায় যে পরিমাণ সময় লাগে তার তুলনায় অনেক কম সময় লাগে এখানে৷
ছবি: Lehtikuva/Reuters
শারীরিক অস্বস্তি নেই
নাক থেকে কোনো শ্লেষা নেয়ার দরকার নেই৷ কোনো ব্যক্তির হাত বা ঘাড় মোছা কাপড় শুঁকে তৎক্ষণাৎ কুকুর জানিয়ে দেবে করোনার সংক্রমণের কথা৷ এমনকি করোনা সংক্রমণের শিকার ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন, কিন্তু পাঁচদিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়নি এমন ব্যক্তিরও করোনায় সংক্রমণ ধরা পড়েছে কুকুরের পরীক্ষায় এবং তাকে আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Lehtikuva/Reuters
অনেক জীবন বাঁচানো সম্ভব
হেলসিঙ্কি ভেটারনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আনা হিলেম-জোর্কমান ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, এই কুকুরগুলো করোনার হাত থেকে অনেক জীবন রক্ষা করতে পারে৷ তিনি জানালেন, কুকুর পরীক্ষার পর তারা অন্য মাধ্যমে পরীক্ষা করেও পরীক্ষাগুলো শতভাগ সঠিক ছিল৷
ছবি: Attila Cser/Reuters
প্রশিক্ষিত কুকুর
হেলসিঙ্কি ভেটারনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক কুকুরকে রোগ নির্ণয়ের কাজে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ বেডবাগস, ক্যান্সারের মতো রোগ নির্ণয়ে তাদের প্রশিক্ষণ রয়েছে৷ প্রথমে প্রশিক্ষণের পর কুকুর ‘কোসি’র সাত মিনিট সময় লেগেছে প্রশিক্ষক আসলে কী চাইছেন তা বুঝতে৷
ছবি: picture-alliance/abaca/R. Lafargue
১৫ কুকুরকে প্রশিক্ষণ
প্রথম পর্যায়ে ১৫টি কুকুরকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে৷ তাদের মধ্যে এমন কুকুর আছে, যারা শরীর শুঁকে বলে দিতে পারে কারো ডায়াবেটিস আছে কিনা৷
ছবি: picture-alliance/abaca/R. Lafargue
প্রয়োজন অনুমোদন
এই পরিকল্পনা সুদূর প্রসারী করতে প্রয়োজন অর্থের এবং অনুমোদনের৷ স্থানীয় মেয়র অবশ্য বিমানবন্দরে এসে এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং নিজেকে পরীক্ষা করিয়েছেন৷ তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন মাত্র দুই মিনিটে পরীক্ষা হয়ে যেতে দেখে৷ চার মাসের এ পাইলট প্রকল্পে ৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার দেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/abaca/R. Lafargue
এক মাসে খরচ দশ লাখ ইউরো
বিমানবন্দরের এই প্রকল্পে গত এক মাসে খরচ হয়েছে ১০ লাখ ইউরো৷ শীতকালে আরো ৩০ লাখ ইউরো খরচ হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: picture-alliance/abaca/R. Lafargue
ফিনিশ সরকারের অনুমোদন মেলেনি
জনগণের বিপুল সমর্থন সত্ত্বেও ফিনল্যান্ড সরকার এখনো এই প্রকল্পে অনুমোদন দেয়নি৷ বিমানবন্দরের যাত্রীরা খুব আগ্রহের সাথেই এই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/abaca/R. Lafargue
প্রকল্প পৌঁছেছে জার্মানিতেও
এই পরীক্ষা এখন আর কেবল ফিনল্যান্ডে সীমাবদ্ধ নেই৷ জার্মানির গবেষকরাও জানিয়েছেন, তারা এ ধরনের পরীক্ষায় সফলতা পেয়েছেন৷ হানোফারের ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হোলগার ফোল্ক জানিয়েছেন, এই প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও তহবিল প্রয়োজন, সেটা তারা পাচ্ছেন না৷ মহামারি মোকাবিলায় এই পদ্ধতি খুবই কার্যকর হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Frey
10 ছবি1 | 10
বুধবার ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন এই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মিংক সংক্রমণের তথ্যটি জনসমক্ষে তুলে ধরেন৷ শুধু তাই নয়, মিংকের শরীর থেকে পরিবর্তিত রূপের করোনা ভাইরাস যখন মানবশরীরে প্রবেশ করে, তখন তা মোকাবিলা করা অনেক ওষুধের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে, জানান ফ্রেডেরিকসেন৷
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘মিংকের শরীরের এই পরিবর্তিত ভাইরাস ভবিষ্যতে করোনার প্রতিষেধকের কার্যকারিতার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ এটি খুবই গুরুতর বিষয়৷ গোটা বিশ্বে এই পরিবর্তিত ভাইরাসের প্রভাব ছড়িয়ে পড়তে পারে৷’’
এ সমস্যা মোকাবিলা করতে মেটে ফ্রেডেরিকসেন ডেনমার্কের সমস্ত খামারকে নির্দেশ করেছেন মিংক বাছাই করতে৷ ডেনমার্কের পুলিশ, হোমগার্ডসহ প্রতিরক্ষাবাহিনীর সদস্যরা মিংক বাছাইয়ের কাজে সহায়তা করছেন৷ খাদ্যমন্ত্রী মোগেনস ইয়েনসেন জানিয়েছেন যে, ডেনমার্কে এই মুহূর্তে অন্তত ২০৭টি খামারে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ, যা গত মাস পর্যন্ত ছিল ৪১৷
কত বড় ডেনিশ মিংকের কারবার
ডেনমার্ক বিশ্বের সর্বোচ্চ মিংক পশম প্রস্তুতকর্তা৷ বছরে এক কোটি ৭০ লাখ মিংক পশম তৈরির ক্ষমতা রয়েছে দেশটির৷ দেড় হাজার মিংকপালকের সমবায় সংস্থা ‘কোপেনহাগেন ফার’ থেকেই বিশ্বের ৪০ শতাংশ মিংক পশম আসে, যার বেশিরভাগই বিক্রি হয় চীন ও হংকঙে৷
বর্তমান সংক্রমণের জেরে প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ মিংককে সরিয়ে ফেলা হবে খামার থেকে৷ অর্থাৎ, তাদের পশম বাজারে পৌঁছবে না৷ এই প্রক্রিয়ায় সরকারের খরচ হবে মোট পাঁচ বিলিয়ন ডেনিশ ক্রোনার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬৭০০ কোটি)৷ এছাড়া, কর্তৃপক্ষ মিংক পালকদের ক্ষতিপূরণও দেবে বলে জানিয়েছে৷