মিংক, যার পশম বিশ্বের অন্যতম দামী ফ্যাশন-পণ্য, ডেনমার্কে করোনা সংক্রমণ বাড়ার একটি কারণ হয়ে ওঠায় গণহারে মারা হয় সংক্রামিত মিংকদের৷ এই পদক্ষেপ সরকারের সমালোচনার কারণ হয়ে উঠছে৷
বিজ্ঞাপন
ফ্যাশন দুনিয়ায় মিংকের পশমের চাহিদা সব সময়েই বেশি৷ কিন্তু ফ্যাশন নয়, অনেকটা বেজির মত দেখতে এই প্রাণী করোনা সংকটে অন্য কারণে ডেনমার্কের শিরোনামে৷ সম্প্রতি লক্ষ্য করা গেছে বিশেষ ধরনের জিনগত পরিবর্তনের ফলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মিংক থেকে সংক্রমিত হচ্ছে মানুষ৷
এই খবর প্রকাশিত হবার পর ডেনিশ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় লাখ লাখ মিংক মেরে ফেলার৷ কিন্তু গত সপ্তাহে ডেনিশ কৃষিমন্ত্রী মোগেন্স ইয়েনসেন স্বীকার করেন যে এই নির্দেশের কোনো আইনি ভিত্তি ছিল না৷ বুধবার এই খবর প্রকাশিত হবার পর থেকেই বিরোধী দলগুলি সোচ্চার হয়ে ওঠে৷ পদত্যাগ ঘোষণা করেন কৃষিমন্ত্রী ইয়েনসেন৷
করোনা সংক্রমণ রুখতে ডেনমার্কে কোটি মিংক হত্যা
ডেনমার্কে মিংক থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ এ কারণে দেশের এক কোটি ৭০ লাখ মিংককে হত্যা করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ ছবিঘরে দেখুন বিস্তারিত৷
ড্যানিশ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তায় মৃত মিংকদের সামরিক এলাকায় দাফন করছে৷ মিংক থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়াচ্ছে সন্দেহে দেশের ১ কোটি ৭০ লাখ মিংক ধ্বংস করা হচ্ছে৷ তবে এ ধরনের পদক্ষেপের কোন বৈধতা না থাকায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ড্যানিশ সরকার৷
মিংকের পশম বিশ্বের অন্যতম দামী ফ্যাশন-পণ্য৷ বিশ্বের ফ্যাশন দরবারে মিংকের পশমের চাহিদা সবসময়ই বেশি৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেনমার্কে করোনা সংক্রমণ বাড়ার একটি কারণ এই প্রাণীটি৷ দেশের সরকার তাই কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে৷
সাম্প্রতিককালে এই প্রাণীর মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে বিশেষ ধরনের জিনগত পরিবর্তন, যার ফলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মিংক থেকে সংক্রমিত হচ্ছে মানুষ৷ মিংকের শরীর থেকে পরিবর্তিত রূপের করোনা ভাইরাস যখন মানব শরীরে প্রবেশ করে, তখন তা মোকাবিলা করা অনেক ওষুধের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: John Randeris/Ritzau Scanpix/REUTERS
খামারগুলোকে নির্দেশ
ডেনমার্কের সব খামারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে মিংক বাছাই করতে৷ ডেনমার্কের পুলিশ, হোমগার্ডসহ প্রতিরক্ষাবাহিনীর সদস্যরা মিংক বাছাইয়ের কাজে সহায়তা করছে৷ ডেনমার্কে এই মুহূর্তে অন্তত ২০৭টি খামারে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ৷ ছবিতে ডেনমার্কের নেস্তভেদের কাছে হেনরিক নর্ডগার্ড হানসেন অ্যান্ড আন-মোনা কুলসো লারসেন খামারটিতে মৃত মিংকদের জড়ো করছেন খামারিরা৷
ছবি: Mads Claus Rasmussen/Ritzau Scanpix/REUTERS
বিশ্বের ৪০ শতাংশ মিংক পশম
ডেনমার্কে প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ মিংক আছে৷ দেড় হাজার মিংকপালকের সমবায় সংস্থা ‘কোপেনহাগেন ফার’ থেকেই বিশ্বের ৪০ শতাংশ মিংক পশম আসে, যার বেশিরভাগই বিক্রি হয় চীন ও হংকঙে৷
ছবি: Mads Claus Rasmussen/Ritzau Scanpix/REUTERS
মিংক নির্মূলে খরচ
মিংকগুলোকে মেরে ফেলতে সরকারের খরচ হবে মোট পাঁচ বিলিয়ন ড্যানিশ ক্রোনার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬৭০০ কোটি)৷ এছাড়া, কর্তৃপক্ষ মিংক পালকদের ক্ষতিপূরণও দেবে বলে জানিয়েছে৷
তিনি বলেন, ‘‘সংসদে আমার প্রয়োজনীয় সমর্থন নেই, ফলে আমাকে পদত্যাগ করতেই হবে৷’’
সরকারে অনাস্থা, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ
ডেনমার্কের বিরোধী দলগুলির মধ্যে থেকে উঠে আসছে প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডরিকসেনের পদত্যাগের দাবিও৷ বিরোধিনেতা ইয়াকব এলেমান-ইয়েনসেন বলেন, ‘‘কৃষিমন্ত্রী যা করেছেন, প্রধানমন্ত্রীও তা-ই করুন, আমি চাই৷ আমি চাই যে, প্রধানমন্ত্রী কোনো ভুল করলে তা স্বীকার করুন, কারণ এই দায়িত্ব তাঁরই ছিল৷’’
এলেমান-ইয়েনসেনের পাশে রয়েছে তাঁর দল লিবারেল পার্টি ছাড়াও ডেনিশ পিপলস পার্টি৷ আদৌ সরকার বেআইনি আদেশ দিয়েছে কি না, তা জানতে নিরপক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এই দলগুলি ছাড়াও অন্যান্য সংসদ সদস্যেরা৷ কিন্তু নিরপেক্ষ তদন্ত প্রকরিয়ার জন্য ডেনিশ সংসদে এবিষয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন, যা নিয়ে সংশয় দেখা যাচ্ছে৷
অরহুস বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে যে, জুলাই মাসে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারের ওপর আস্থা ছিল ৭৫ শতাংশ৷ এই সংখ্যাই সাম্প্রতিক মিংক-বিতর্কের ফলে এসে ঠেকেছে পঞ্চাশের আশেপাশে৷
অন্যদিকে, ডেনিশ কর্তৃপক্ষ বলছে যে, সংক্রামিত মিংকদের মেরে ফেলা হলেও সংক্রমণের সন্দেহের তালিকায় রয়েছে আরও ২৫টি মিংক-খামার৷ সে বিষয়ে কী করা হবে, তা বলেননি তারা৷