মিউনিখের পুলিশ জানিয়েছে, আক্রমণকারীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করার পর মনে করা হচ্ছে, ইচ্ছাকৃতভাবে ওই মিছিলে সে হামলা চালিয়েছিল। আক্রমণকারীর নাম প্রকাশ না করলেও প্রশাসন জানিয়েছে, সে আফগান নাগরিক কিন্তু বৈধভাবে জার্মানিতে বসবাস করছে।
বাভারিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জোয়াখিম হারম্যান জানিয়েছেন, আক্রমণকারী ব্যক্তি আফগান হলেও জার্মানিতে বৈধভাবে বসবাস করছে সে। তার কাজের পারমিটও আছে। তার বিরুদ্ধে এর আগে কোনো অপরাধমূলক মামলা হয়নি। তার নামে কখনো ডিপোর্টেশন অর্ডারও বার হয়নি। মন্ত্রীর কথায়, ''ওই ব্যক্তি জার্মানিতে সম্পূর্ণ বৈধভাবে বসবাস করছে।''
২০১৬ সালে নাবালক হিসেবে ওই ব্যক্তি অন্য কারো সঙ্গে জার্মানিতে এসেছিল। ২০২০ সালে সে জার্মানিতে অভিবাসনের জন্য দরখাস্ত করে। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়। তাকে দেশে ফিরে যেতে বলা হয়। কিন্তু ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে মিউনিখ তাকে রেসিডেন্সি পারমিট দেয়। তখন থেকে বৈধভাবে সে জার্মানিতে বসবাস করছে।
জার্মানিতে ইহুদি উপাসনালয়ে যত হামলা
জার্মানির হালে শহরে বুধবার ইহুদিদের একটি উপাসনালয়ে হামলার চেষ্টা হয়েছে৷ তবে সিনাগগে ঢুকতে না পেরে দুইজন পথচারীকে হত্যা করেন এক জার্মান আততায়ী৷ ছবিঘরে কয়েকটি সিনাগগে হামলার ঘটনা তুলে ধরা হলো৷
ছবি: Imago Images/S. Schellhorn
কোলন, ১৯৫৯: স্বস্তিকা ও হেট স্পিচ
১৯৫৯ সালের ডিসেম্বরে ‘ডয়চে রাইশপার্টাই’ নামের একটি চরম ডানপন্থি দলের সদস্যরা কোলনের সিনাগগে স্বস্তিকা এঁকে দিয়েছিল৷ এছাড়া ‘জার্মানদের দাবি: ইহুদিরা চলে যাও’ শব্দগুলোও লিখে দেয় তারা৷ এরপর জার্মানির বিভিন্ন এলাকায়ও ইহুদিবিরোধী গ্রাফিতির দেখা পাওয়া গিয়েছিল৷ ঐ ঘটনায় জড়িতদের ধরা হয়েছিল এবং ভবিষ্যতে কেউ যেন ‘মানুষের উসকানিমূলক’ কিছু করতে না পারে সেজন্য সংসদে আইন পাস হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images/Joko
ল্যুবেক, ১৯৯৪: অগ্নিসংযোগ
মার্চ মাসের এই ঘটনা সারা বিশ্বের মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছিল৷ চরম ডানপন্থি চার ব্যক্তি ল্যুবেকের সিনাগগে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল৷ এই ঘটনার এক বছর পর আবারও একই সিনাগগে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
এসেন, ২০০০: পাথর ছোড়া
লেবানন থেকে আসা ১০০-র বেশি ফিলিস্তিনি ২০০০ সালের অক্টোবরে এসেন শহরের পুরনো সিনাগগে পাথর ছুড়ে মেরেছিল৷ ‘মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত’-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শেষে এই হামলা করা হয়৷ এই ঘটনায় একজন পুলিশ আহত হয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/B. Boensch
ড্যুসেলডর্ফ, ২০০০: অগ্নিসংযোগ ও পাথর নিক্ষেপ
ইহুদি ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘প্রতিশোধ’ নিতে ১৯ বছর বয়সি এক ফিলিস্তিন ও ২০ বছর বয়সি মরক্কোর এক নাগরিক আগুন ও পাথর দিয়ে ড্যুসেলডর্ফের নতুন সিনাগগে হামলা করেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Weihrauch
মাইনৎস, ২০১০: মলটফ ককটেল হামলা
১৯৩৮ সালে নাৎসি বাহিনী মাইনৎসের একটি সিনাগগ পুড়িয়ে দিয়েছিল৷ সেখানে নতুন করে একটি সিনাগগ নির্মাণ করা হয়৷ তবে উদ্বোধনের কিছুক্ষণ পরই সেখানে মলটফ ককটেল হামলা চালানো হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg/Bildarchiv Steffens
ভুপার্টাল, ২০১৪: অগ্নিসংযোগ
ফিলিস্তিনি তিন তরুণ ২০১৪ সালের জুলাই মাসে ভুপার্টালের সিনাগগের প্রবেশ দরজায় দাহ্য পদার্থ ছুড়ে মেরেছিল৷ তবে এই ঘটনায় ইহুদিবিদ্বেষের পক্ষে ‘প্রমাণ পাওয়া যায়নি’ বলে আদালত রায় দিয়েছিলেন৷ জার্মানির ইহুদি ও বিদেশি গণমাধ্যম এই রায়ে ক্ষুব্ধ হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Seidel
বার্লিন, ২০১৯: ছুরি নিয়ে হামলা
অক্টোবরের ৪ তারিখ শাবাতের পূর্বে বার্লিনের নতুন সিনাগগে স্থাপন করা একটি বেড়ায় ছুড়ি নিয়ে উঠে পড়েছিলেন এক ব্যক্তি৷ নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে ধরে ফেলেন৷ পরে ছেড়েও দেন৷ ইহুদি নেতারা পুলিশের এই সিদ্ধান্তকে বিচারব্যবস্থার ‘ব্যর্থতা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Avers
হালে, ২০১৯: গুলি
ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের জন্য বছরের সবচেয়ে পবিত্র দিন ‘ইয়ম কিপুর’ উপলক্ষ্যে ৯ অক্টোবর সিনাগগে উপস্থিত হয়েছিলেন ৭০-৮০ জন মানুষ৷ অস্ত্র নিয়ে সেই সিনাগগে ঢোকার চেষ্টা করেছিল ২৭ বছর বয়সি জার্মান আতাতয়ী৷ তবে নিরাপত্তারক্ষীদের বাধার মুখে সিনাগগে ঢুকতে না পেরে রেগে গিয়ে গুলি করে দুইজন পথচারীকে হত্যা করেন তিনি৷ জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার জানিয়েছেন, ইহুদি-বিদ্বেষের কারণেই তিনি হামলা চালিয়েছেন৷
ছবি: Imago Images/S. Schellhorn
8 ছবি1 | 8
এরপর মিউনিখেই ওই ব্যক্তি স্কুলে যায়। পরে একটি চাকরির কোর্সও করে। একটি দোকানের নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করে। দোকানে চুরির বেশ কয়েকটি মামলায় তাকে আদালতে যেতে হয়েছিল অপরাধী হিসেবে নয়, সাক্ষী হিসেবে। এই কারণেই প্রাথমিকভাবে পুলিশের মনে হয়েছিল, ওই ব্যক্তি একাধিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু পরে দেখা যায়, তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড নেই।
শলৎসের বক্তব্য
জার্মানচ্যান্সেলর ওলফ শলৎস বৃহস্পতিবার একটি নির্বাচনি প্রচারে ছিলেন। জার্মানির একটি টিভি চ্যানেলে দর্শকদের প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিচ্ছিলেন তিনি। সেখানে সন্ত্রাসবাদের প্রসঙ্গও আসে। মিউনিখের ঘটনাটির প্রসঙ্গও ওঠে। শলৎস জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের জার্মানিতে শাস্তি না দিয়ে সরাসরি দেশে ফিরিয়ে দেয়াই ঠিক রাস্তা বলে তিনি মনে করেন। এক্ষেত্রেও সেই একই কথা বলেছেন তিনি।
তালেবানের বক্তব্য
আফগানিস্তানের তালেবান সরকার জানিয়েছে, জার্মানি থেকে আফগান নাগরিকদের ফেরত পাঠালে তাদের দেশে ফেরত নিতে আপত্তি নেই। কিন্তু তার বদলে জার্মানিতে আবার আফগানিস্তান কনসুলেট খুলতে দিতে হবে। ওই কনসুলেটের মাধ্যমেই এই প্রত্যর্পণ করতে হবে।
এখন তৃতীয় দেশের মাধ্যমে একাজ করে জার্মানি। মূলত পাকিস্তান হয়ে আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হয় মানুষদের। তালেবানের বক্তব্য, তৃতীয় দেশের মাধ্যমে একাজ আর করা যাবে না। জার্মানিকে সরাসরি তালেবান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে এবং দূতাবাস খুলতে দিতে হবে।
এএফডি-র বক্তব্য
অতি দক্ষিণপন্থি দল এএফডি-র চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী এলিস উইডেল জানিয়েছেন, তার দল ক্ষমতায় থাকলে ওই ব্যক্তি জার্মানিতে ঢুকতেই পারতো না। তার বক্তব্য, ''প্রতিবার একই জিনিস দেখা যায়। অভিবাসনপ্রার্থীকে প্রথমে অনুমতি দেওয়া হয় না। কিন্তু তাকে ফেরত পাঠানোও হয় না। পরে ঠিকই সে কোনো না কোনো ভাবে দেশে বৈধভাবে থেকে যাওয়ার কাগজপত্র পেয়ে যায়।''