ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের পর মূল ধারার গণমাধ্যগুলোকে কীভাবে টিকে থাকতে হবে, সেই পথ খুঁজতে কথা বলছেন বিভিন্ন দেশের মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির বনে ডয়চে ভেলের প্রধান কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে দুই দিনের এই সম্মেলন৷ ডি ডব্লিউ অ্যাকাডেমি এবং কনরাড-অ্যাডেনোয়ার-স্টিফটুং (কেএএস) বিভিন্ন দেশের ২০০ মিডিয়া ব্যক্তিত্বকে নিয়ে এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে৷ বাংলাদেশ থেকে তিনজন এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন৷
ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের পর সাংবাদিকতা এবং গণমাধ্যমগুলোতে কী কী পরিবর্তন আনা উচিত বিভিন্ন অধিবেশেন এনিয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের পাশাপাশি এ বিষয়ে উন্মুক্ত আলোচনা করবেন তারা৷ সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভুল তথ্য মোকাবেলায় মিডিয়াগুলোর ভূমিকা কেমন হবে সে বিষয়েও কথা বলছেন তারা৷ এছাড়া তথ্য স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনে নতুন কৌশল বিকাশের পক্ষেও মত দিয়েছেন আলোচকেরা৷
ডি ডব্লিউ অ্যাকাডেমির প্রধান কারস্টেন ফন নামেন এবং ইরেসমাস ইউনিভার্সিটি রটারড্যামের অধ্যাপক নৃবিজ্ঞানী পায়েল অরোরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন৷ বিভিন্ন অধিবেশনে প্যানেল আলোচনার পর উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রাপ্ত থেকে আসা সংবাদকর্মীরা৷
সেরা ১১ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন
পুলিৎজার পুরস্কারকে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার বলে ধারণা করা হয়৷ গত ১১ বছরে কারা পেয়েছেন এ পুরস্কার জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: Heidi Levine
২০০৬ সাল
যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকা ‘ওয়াশিংটন পোস্টে’-র সাংবাদিক সুজান স্মিড, জেমস ভি গ্রিমাল্ডি এবং আর. জেফরি স্মিথ সে বছর পেয়েছিলেন এই পুরস্কার৷ সংস্কারের নামে মার্কিন কংগ্রেসে ওয়াশিংটন লবিস্ট জ্যাক আব্রামোফের দুর্নীতির বিষয়ে প্রতিবেদন করেছিলেন তারা৷
ছবি: AP
২০০৭ সাল
‘দ্য বার্মিংহ্যাম নিউজ’-এর ব্রেট ব্ল্যাকলেজ পেয়েছিলেন এই পুরস্কার৷ একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করে দেন তিনি৷ যার ফলে ঐ চ্যান্সেলরকে বরখাস্ত করা হয়েছিল এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল৷
ছবি: The Pulitzer Prizes Columbia University
২০০৮ সাল
এ বছর দু’টি পত্রিকা এ পুরস্কার পায়৷ ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকার ওয়াল্ট বোগদানিচ এবং জেক হুকার পেয়েছিলেন এ পুরস্কার৷ চীন থেকে আমদানিকৃত ওষুধ ও নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি সংক্রান্ত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছিলেন তারা৷ এছাড়া ‘শিকাগো ট্রিবিউন’-এর এক প্রতিনিধি জিতেছিলেন এই পুরস্কার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০০৯ সাল
‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর ডেভিড বার্সতো পেয়েছিলেন এ পুরস্কার৷ কিছু অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা রেডিও ও টেলিভিশনে বিশ্লেষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে পেন্টাগনের সমর্থনে ইরাক যুদ্ধকে প্রভাবিত করছে৷ তাদের এসব বক্তব্যের কারণে কত কোম্পানি সুবিধাভোগ করছে তাও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Emmert
২০১০ সাল
‘দ্য ফিলাডেলফিয়া ডেইলি নিউজ’-এর বারবারা ল্যাকার ও ওয়েনডি রুডারম্যান এবং ‘নিউইয়র্ক টাইম ম্যাগাজিন’-এর প্র-পাবলিকার শেরি ফিঙ্ক যৌথভাবে এ পুরস্কার জিতেছিলেন৷ একটি অসৎ পুলিশ দলের মাদক চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার ঘটনাটি উদঘাটন করেন ল্যাকার ও রুডারম্যান৷ ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক হৈ চৈ হয়েছিল৷ ফিঙ্ক ঘূর্ণিঝড় ক্যাটরিনা আঘাত হানার পর রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসকদের মানসিক অবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছিলেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ngan
২০১১ সাল
‘সারাসোতা হেরাল্ড ট্রিবিউন’-এর পেইজি সেন্ট জন সে বছর পুলিৎজার পেয়েছিলেন৷ ফ্লোরিডার বাড়ি মালিকদের সম্পদের ইনস্যুরেন্সে দুর্বলতা সংক্রান্ত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তাঁকে এ পুরস্কার এনে দিয়েছিল৷
ছবি: The Pulitzer Prizes Columbia University
২০১২ সাল
‘অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস’-এর ম্যাট অ্যাপুৎসো, অ্যাডাম গোল্ডম্যান, এইলিন সুলিভান এবং ক্রিস হাওলি সে বছর এই পুরস্কার জিতেছিলেন৷ নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের ‘ক্ল্যানডেস্টাইন গুপ্তচর কর্মসূচি’র আওতায় শহরের মুসলিম সম্প্রদায়ের দৈনন্দিন জীবন যাপনের প্রতি নজর রাখা হচ্ছিল, যা প্রকাশ পায় এপি-র ঐ প্রতিবেদনে৷ প্রতিবেদন প্রকাশের পর কংগ্রেস থেকে কেন্দ্রীয় তদন্ত দাবি করা হয়৷
ছবি: The Pulitzer Prizes Columbia University
২০১৩ সাল
‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ এর ডেভিড বার্সতো এবং আলেহান্দ্রা ইয়ানিক ফন বেরত্রাব এই বছর পুরস্কারটি পান৷ মেক্সিকোতে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে কীভাবে ওয়াল-মার্ট ঘুষ দেয়, সেটা নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছিলেন তারা৷
ছবি: AP
২০১৪ সাল
ওয়াশিংটর ডিসির ‘দ্য সেন্টার ফর পাবলিক ইনটিগ্রিটি’-র ক্রিস হামবি জেতেন এই পুরস্কার৷ কয়লা খনির শ্রমিকদের ফুসফুসের রোগ নিয়ে কয়েকজন আইনজীবী ও চিকিৎসকের প্রতারণার চিত্র তুলে ধরেছিলেন তার প্রতিবেদনে৷ যার ফলে ঐ আইনজীবী ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল৷
ছবি: The Pulitzer Prizes Columbia University
২০১৫ সাল
এ বছর দুইজন জিতেছেন এই পুরস্কার৷ ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর এরিক লিপটন কংগ্রেস নেতা ও অ্যাটর্নি জেনারেলদের লবিস্টরা তাদের কতটা প্রভাবিত করে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের জন্য এবং ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর এক প্রতিনিধির স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনের জন্য৷
ছবি: Imago/Rüdiger Wölk
২০১৬ সাল
চলতি বছরে ‘ট্যাম্পা বে টাইমস’-এর লিওনোরা লাপিটার ও অ্যান্থনি কর্মিয়ার এবং ‘দ্য সারাসোতা হেরাল্ড ট্রিবিউন’-এর মাইকেল ব্রাগা জিতেছেন এই পুরস্কার৷ ফ্লোরিডা মানসিক হাসপাতালের অবহেলার অমানবিক চিত্র ফুটে উঠেছিল তাদের প্রতিবেদনে৷
ছবি: The Pulitzer Prizes Columbia University
11 ছবি1 | 11
বাংলাদেশ এনজিও নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম বজলুর রহমান প্রথম অধিবেশন শেষে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ডিজিটাল ট্রন্সফরমেশনের জন্য সব ধরনের মিডিয়া যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে৷ টেকনোলজিক্যাল চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে মোকাবেলা করা হবে, এগুলো করতে গিয়ে কী ধরনের লিডারশিপ তৈরি করতে হবে, সেই লিডারশিপ কীভাবে মিডিয়াকে ডিজিটাল টান্সফরমেশন থেকে রক্ষা করবে এসব নিয়ে আলোচনা করছেন তারা৷
তার মতে, ''সাংবাদিকদের আপগ্রেড করতে হবে, স্কিল বাড়াতে হবে৷ কিন্তু মিডিয়া মালিকেরা সাংবাদিকদের আপগ্রেডিংয়ের বিষয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখান না, কারণ এতে অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয়৷''
বাংলাদেশের ৫৭ শতাংশ বিজ্ঞাপন সাইবার স্পেসে চলে যাচ্ছে বলে এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বজলুর বলেন, গতবার বিজ্ঞাপন বাবদ ৪১৫ কোটি টাকা ফেসবুক ও গুগলকে দেয়া হয়েছে৷
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক বলেন, এই মুহূর্তে মিডিয়া বিরাট একটা ক্রাইসিস পিরিয়ডের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ মিডিয়া বিজনেস এবং জার্নালিজম ল্যান্ডস্কেপ টেকনোলজির কারণে র্যাপিডলি চেঞ্জ হচ্ছে... ফি মিডিয়ার জন্য গণতন্ত্র দরকার৷ এ ধরনের সম্মেলন সুযোগ করে দিয়েছে এই স্ট্রাগল তারা কীভাবে মোকাবেলা করছে, কীভাবে ওভারকাম করছে, সাংবাদিকতাকে বাঁচিয়ে রাখার যে প্রচেষ্টা, কার কী অভিজ্ঞতা এবং ইনোভেশন সেসব জানতে পারছি৷
সোশাল মিডিয়ায় সবাই গ্লোবাল মিডিয়ার স্বাদ পাচ্ছে জানিয়ে আশফাকুল বলেন, ‘‘আমরা অনেক বিষয়ে যখন রিপোর্ট করতে পারছি না, সরকার কখনো আমাদোর উপর একটি ক্রিটিকাল ভিউ দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে যেতে পারছে অথবা কোনো পাওয়ারফুল অর্গানাইজেশন বা ব্যক্তি মিডিয়ার উপর অসন্তুষ্ট হচ্ছে, তখন সাংবাদিক এবং প্রতিষ্ঠান হ্যারাজমেন্টের স্বীকার হয়, এই জায়গাটা কীভাবে ট্যাকেল করা যায়, এজন্য বিশ্বের সাংবাদিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটা যোগাযোগ দরকার৷ কারণ মিডিয়া না থাকলে ডেমোক্রেসির ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে৷
রেডিও ভূমির স্টেশন প্রধান শামস সুমন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মিডিয়াগুলো সোশাল মিডিয়াকে তাদের বাহন হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে৷ কিন্তু তারা বাহন হতে গিয়ে মূল মিডিয়াটাই চলে যাচ্ছে সোশাল মিডিয়ায়৷ কীভাবে সোশাল মিডিয়া মূল মিডিয়াগুলো ব্যবহার করবে এখানে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে৷