‘মিড-ডে মিল’ বিষকাণ্ডের কারণ নজরদারির অভাব
২৫ জুলাই ২০১৩বিষাক্ত খাদ্যের নমুনা পরীক্ষা করে ও মৃত ২৩টি শিশুর পোস্টমর্টেম রিপোর্টে কীটনাশক রাসায়নিকের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে৷
ভারতের ‘মিড-ডে মিল' কর্মসূচি বিশ্বের বৃহত্তম৷ এর উদ্দেশ্য যে সৎ সে বিষয়ে দ্বিমত নেই৷ গ্রামগঞ্জের ৬ থেকে ১২ বছরের প্রায় ১০ কোটি গরিব বাচ্চাদের প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি পুষ্টিকর আহার দেয়া এর মাধ্যমে৷ কিন্ত তার বাস্তবায়নে রয়ে গেছে গুরুতর ত্রুটি এবং কর্তৃপক্ষের চরম গাফিলতি৷ এছাড়া রয়েছে ভারতের কর্ম সংস্কৃতির ‘যেমন চলছে চলুক' মানসিকতা৷ সরবরাহ করা খাদ্যের গুণগত মান নিয়মিত পরীক্ষা করা বা সেদিকে নজর রাখার বালাই নেই – না সরকারের, না স্কুল কর্তৃপক্ষের, না স্থানীয় বিধায়ক বা সাংসদদের৷
বিহার মিড-ডে মিলে মোনোক্রোটোফস নামে মারাত্মক রাসায়নিক বিষের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে৷ এই রাসায়নিক বিষ বিশ্বের ৪৬টি দেশে নিষিদ্ধ, কিন্তু ভারতে তা সুলভ৷ এই রাসায়নিক বিষ এত মারাত্মক যে পাঁচটি চালের দানার মতো ডোজে একজনের মৃত্যু হতে পারে৷ মহারাষ্ট্রের কাপাস চাষে এটা একটা বহুল ব্যবহৃত কীটনাশক৷ আহার্য ফসলে এই কীটনাশকের প্রয়োগ নিষিদ্ধ হলেও, মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ অঞ্চলে শাক-সবজি ও ফলফলাদিতে তা নির্বিচারে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে৷ আর এই নিয়ে কেউ মাথাও ঘামায় না৷
লক্ষ্ণৌতে আমের মরশুমে পোকা-মাকড়ের হাত থেকে আমের ফলন বাঁচাতে এই মোনোক্রোটোফস কীটনাশক ব্যাপকহারে ব্যবহার করা হয়৷ এর প্রতিকারের অন্যতম উপায় হলো, বিষাক্ত রাসায়নিক বিক্রি নিয়ন্ত্রিত করা এবং খালি পাত্র উৎপাদক কোম্পানিগুলিকে ফেরত দেয়া, যাতে অন্য কিছু তাতে না রাখা যায়৷ বড় ধরণের কোনো বিপর্যয় বা দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট সকলের ঘুম ভাঙে৷ মিড-ডে মিল বিষকাণ্ডের বেলাতেও তাই ঘটেছে৷ আট সদস্যের এক বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু নিবারণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতের অভিধানে কার্যত নেই৷
ইউনিসেফ-এর প্রেক্ষিতে কিছু সুপারিশ করেছে৷ যেমন রান্নাঘর এবং বাসন-পত্র জীবাণুমুক্ত রাখা, খাদ্য সামগ্রী নিরাপদ জায়গায় মজুত করা, শাক-সবজি এবং অন্যান্য উপকরণ রান্না করার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নেয়া, রাধুঁনি এবং সাহায্যকারীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, খেতে দেবার আগে খাদ্য চেখে দেখা এবং খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে বাচ্চাদের হাত ধোওয়া৷
এ সবের দিকে নিয়মিত নজর রাখার জন্য এক পৃথক ব্যবস্থাপনা থাকা জরুরি বলে মনে করছে ‘রাইট টু এডুকেশন ফোরাম'৷ তাতে থাকবে স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটি, গ্রাম পঞ্চায়েত এবং স্ব-নির্ভর গোষ্ঠীগুলি৷ শিক্ষকদের দায়িত্ব পড়ানোর, রান্নার নয়৷ তাই কারো কারো মতে, মিড-ডে মিলে দুর্নীতি থাকার কারণে খাদ্যসামগ্রীর গুণগত মান পরীক্ষা করার দিকে তেমন নজর দেয়া হয় না৷
রাজনীতি কোনো কিছুকেই রেয়াত করে না৷ তা সে শিশু মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনাই হোক না কেন৷ বিহারে নীতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দলের সরকার এর পেছনেও রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছে৷ অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে বিরোধী বিজেপি এবং লালু প্রসাদের আরজেডি দলের দিকে৷ নীতীশ কুমারের কথায়, সরকারের ভাবমূর্তিতে কালি ছেটাতে এটা ওদের মিলিত চক্রান্ত৷ খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়নি, খাদ্যে বিষ মেশানো হয়েছিল৷ বিষাক্ত কীটনাশকের পাত্রে রাখা হয়েছিল রান্নার তেল৷ তিনি আরো বলেন, মুদিখানার যে দোকান থেকে খাদ্যসামগ্রী কেনা হয়েছিল তার মালিক আরজেডি দলের সক্রিয় সদস্য এবং স্কুলটির প্রধান শিক্ষিকা তাঁরই স্ত্রী৷