1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মিথ্যা' বলে আইনজীবী কাদের বাঁচাতে চান?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৫ ডিসেম্বর ২০২০

ব্লগার ও বিজ্ঞান লেখক ড. অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় প্রধান সাক্ষী তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা৷ তিনিও দুর্বৃত্তদের অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন৷

Rafida Ahmed
ছবি: Reuters/Str

বন্যার সঙ্গে যোগাযোগ না করেই মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম সারোয়ার জাকির এ ধরনের তথ্য আদালতকে কিভাবে দিলেন? তার উদ্দেশ্যই বা কী?

আইনজীবী গোলাম সারোয়ার জাকির ২২ ডিসেম্বর আদালতে আরো দাবি করেছেন, দূতাবাসের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বন্যার স্বাক্ষ্যের জন্য সমন পাঠিয়েছেন৷ টেলিফোনেও কথা বলেছেন৷ কিন্তু শতভাগ ইচ্ছা থাকার পরও নিরাপত্তার কারণে তিনি আসতে পারছেন না

এর জবাবে একটি ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন বন্যা৷ তিনি বলেছেন, গত প্রায় ছয় বছরে এফবিআই ছাড়া আর কেউ তার সাথে যোগাযোগ করেনি৷ এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাসও যোগাযোগ করেনি৷ তিনি প্রশ্ন করেছেন, ‘‘এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে তার বাসা, ফোন নাম্বার বা ইমেইল খুঁজে বের করা কি অসম্ভব?'' সেই প্রশ্ন আমাদেরও৷

বন্যা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী৷ যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে এসে ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অভিজিৎ ও তিনি বাংলা অ্যাকাডেমির অমর একুশে গ্রন্থ মেলা গিয়েছিলেন৷ রাত ৮টার দিকে বইমেলা থেকে ফেরার পথে টিএসসির উল্টো দিকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে দুর্বৃত্তরা তাদের দুইজনকেই গুরুতর আহত করে৷ হাসপাতালে নেয়ার পর অভিজিৎ মারা যান৷ ঘটনার পর চার বছর লেগেছে এই মামলার চার্জশিট দিতে৷ মামলায় ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হলেও প্রধান দুই আসামি জঙ্গি নেতা মেজর জিয়া এবং মোজাম্মেল হোসেন ওরফে সায়মন এখনো পলাতক৷

গত বছরের ১ আগষ্ট অভিযোগ গঠনের পর মামলার বিচার শুরু হয় ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে৷ এ পর্যন্ত ২৬ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে৷

গোলাম সারোয়ার জাকির

This browser does not support the audio element.

এই মামলার বাদী অভিজিতের বাবা অধ্যাপক ড. অজয় রায়৷ মামলার বিচার দেখার সুযোগ আর তার নেই৷ মামলায় স্বাক্ষ্য দেয়ার পর তিনি গত বছরের ১৯ ডিম্বের মারা যান৷ অভিজিৎ হত্যার পর থেকে প্রয়াত অজয় রায়ের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল৷  শুরু থেকেই এই মামলার তদন্ত নিয়ে তিনি অসন্তুষ্ট ছিলেন৷ এমনকি চার্জশিট দেয়ার পরও তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷ তিনি প্রকাশ্যেই কয়েকজনকে নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন৷ তাদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে প্রহসনের অভিযোগও তিনি করেছেন তখন৷ শেষ পর্যন্ত তাদের চার্জশিটে আনা হয়নি৷

বন্যাও ফেসবুক পোস্টে এই মামলা নিয়ে চরম হতাশার কথাই বলেছেন৷ তিনি বলেছেন, ‘‘কোনো বিচারের আশা করি না আমি, শুধু এই হাস্যকর মিথ্যার প্রতিবাদটুকু জানিয়ে গেলাম৷''

বন্যার সঙ্গে যোগাযোগের সব ধরনের চেষ্টার কথা বলা হলেও ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম সারোয়ার জাকির আসলে কী করেছেন? আমি সেটা তার কাছেই জানতে চেয়েছিলাম৷ তিনি যা বললেন তাতে অবাক হয়েছি বললে খুব কম বলা হবে৷ তিনি জানিয়েছেন, এজাহারে ঢাকার যে ল্যান্ড ফোন নাম্বারটি ছিল সেই নাম্বারে ফোন করে বন্ধ পেয়েছেন৷ আর সাক্ষীর সমন পাঠানো হয়েছে তাদের ঢাকার ঠিকানায়৷ সেখানে কেউ নেই, তাই সমন ফেরত এসেছে৷

হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলেছবি: Harun Ur Rashid/DW

এই আধুনিক যুগে বন্যার ফোন নাম্বার, যুক্তরাষ্ট্রের ঠিকানা বা ইমেইল পাওয়া কি অসম্ভব? এর জবাবে এক অদ্ভুত আইনি যুক্তি দেখান তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘এজাহারে যে ঠিকানা ও ফোন নাম্বার থাকে, তাতেই যোগাযোগ করতে হয়৷ এটাই আইন৷'' তার কথা, সাংবাদিকরা পারেন খুঁজে বের করতে, কিন্তু তারা পারেন না, কারণ ‘‘এজাহারের বাইরে যাওয়া আইনে নাই৷''

বন্যা এই মামলার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী৷ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার পেতে তার সাক্ষ্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷ এটা কিন্তু বোঝেন এবং জানেন  রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী৷ কিন্তু সেই সাক্ষী নিয়ে  রাষ্ট্রপক্ষের চেষ্টার নমুনা তো দেখাই গেল৷ প্রশ্ন তোলা যায়, এই ‘অসাধারণ' চেষ্টার নেপথ্যে কী? কাদের বাঁচাতে চান তারা? এজাহারের ঠিকানা আর ফোন নাম্বারের বাইরে তারা গেলেন না কেন? আইনে বাধা থাকার কথা হাস্যকর বলেই আমার মনে হয়

এত কিছুর পরও মামলা চলাকালে বন্যা চাইলে যে-কোনো সময় এসে সাক্ষ্য দিতে পারেন৷ কিন্তু বন্যার আসার পথ কি কেউ সুগম করবে? তাকে কি আসতে দেয়া হবে? আমার তো মনে হয়  তিনি যাতে সাক্ষ্য দিতে না আসতে পারেন তার জন্যও তৎপর আছেন কেউ কেউ৷

দেখুন ২০১৭ সালের ছবিঘরটি

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ