বাংলাদেশে মিথ্যা, হয়রানিমূলক মামলা চলছে অবিরাম। জুলাই গণ অভ্যুত্থানের সময়ের হত্যাকাণ্ডে জড়ানো মিথ্যা মামলার জোয়ারে প্রতিদিন যোগ হচ্ছে আরো বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা মামলা।
পুলিশ সদর দপ্তরের সর্বশেষ হিসাব বলছে, গত বছরের জুলাই-আগস্টের নানা ঘটনায় ৭৩১টি হত্যা মামলাসহ মোট এক হাজার ৩০টি মামলা হয়। এখন পর্যন্ত পাঁচটি হত্যা মামলাসহ ২৫টি মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে। প্রতীকী ছবিছবি: DW
সাবেক সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খানকে গত ৭ সেপ্টেম্বর আটক করে শাহবাগ থানায় গত ২৮ আগস্ট দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘মঞ্চ ৭১' নামের একটি সংগঠনের আয়োজন করা মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ তুলে আলোচনাসভায় উপস্থিত ১৬ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়। এক জামায়াত নেতার উপস্থিতিতে কিছু লোক মব সন্ত্রাস চালিয়ে যথাযথ অনুমতি সাপেক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পণ্ড করলেও পুলিশ প্রকাশ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠান পণ্ডকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি৷ পুলিশের এক সাব-ইন্সপেক্টর বাদী হয়ে সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠায়। তাদের কেউ এখনো জামিন পাননি। পরে আটক করে একই মামলায় জড়ানো আবু আলম মহীদ খানও জামিন পাননি এখনো।
বিজ্ঞাপন
মামলার নেপথ্যের কারণ টকশোতে কথা বলা?
আবু আলম মহীদ খানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ওবায়দুল ইসলাম ডয়চে ভেলকে বলেন, " রিপোর্টার্স ইউনিটির ঘটনায় তাকে সন্দেহজনকভাবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তিনি ওখানে উপস্থিতও ছিলেন না। এজাহারেও তার নাম নেই। আসলে তিনি টকশোতে কথা বলেন, তাই টকশো থেকে বিরত রাখতে তাকে আটক করে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। রবিবার জামিনের আবেদন করেছিলাম। জামিনও দেয়নি আদালত।”
তার কথা, " আসলে এখন কাকে কোন মামলায় দেবে তা তো বলা কঠিন। যাকে যে মামলায় দিলে সুবিধা হয়, তাকে সেই মামলা দেয়া হয়। গ্রেপ্তার করে মতিঝিল থেকে, মামলা দেয় মিরপুরে।”
"সন্ত্রাস দমন আইনের কোনো উপাদানই ওই মামলায় নেই। একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে দিনের বেলা কীভাবে রাষ্ট্রবিরোধী এবং সরকার পতনের ষড়যন্ত্র করা হয় আমি বুঝি না। আর ওই অনুষ্ঠানের তো অনুমতি নেয়া ছিল ডিএমপি থেকে,” বলেন তিনি।
যাকে যে মামলায় দিলে সুবিধা হয়, তাকে সেই মামলা দেয়া হয়: ওবায়দুল ইসলাম
This browser does not support the audio element.
মিথ্যা মামলা রোধে আছে বুলি, নেই উদ্যোগ
জুলাই হত্যাকাণ্ডের অনেক মামলায় নিরীহ মানুষকে আসামি করে হয়রানি, চাঁদাবাজী ও হেনস্তার অভিযোগ ওঠার পর অন্তর্বর্তী সরকার এসব মামলার ব্যাপারে নানা ধরনের সতর্কতার কথা বললেও বাস্তবে কোনো কাজ হচ্ছে না। উল্টো পুলিশও এখন অসংখ্য ‘ভুয়া' মামলা করছে বলে অভিযোগ।
পুলিশ সদর দপ্তরের সর্বশেষ হিসাব বলছে, গত বছরের জুলাই-আগস্টের নানা ঘটনায়৭৩১টি হত্যা মামলাসহ মোট এক হাজার ৩০টি মামলা হয়। এখন পর্যন্ত পাঁচটি হত্যা মামলাসহ ২৫টি মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে।
এর মধ্যে ঢাকায় ৭০৭টি মামলায় পাঁচ হাজার ৮৯ জনকে এখন পর্যন্ত আটক করা হয়েছে। এর পাশাপাশি অব্যাহত আছে হয়রানি।
রাতের ঢাকায় চলাফেরা করতে গিয়ে বিভিন্ন রাস্তায় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ছেন বাসিন্দারা৷ ওত পেতে থাকা ছিনতাইকারী নিয়ে যাচ্ছে টাকা ও ব্যাগ৷ বাধা দিলে জীবনও চলে যাচ্ছে৷ গত চার মাসে ছিনতাইকারীদের হাতে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
নারীকে টেনে নিয়ে গেলো ছিনতাইকারীদের প্রাইভেটকার
ঢাকায় একটি রাস্তার পাশে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের শিক্ষক ফারহানা আক্তার জাহান৷ হঠাৎ কাছে আসা সাদা রংয়ের একটি প্রাইভেট কারের জানালা থেকে একজন তার হাতে থাকা ব্যাগটি টান মারে৷ সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে পড়ে যান৷ গাড়ির সঙ্গে তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকে ছিনতাইকারীরা৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, সমাজে মাদকের প্রভাব বেড়েছে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি কম, এ কারণেই ছিনতাই বেড়েছে৷
ছবি: privat
‘রাস্তায় বের হতেই ভয় লাগে’
২৭ এপ্রিল মামাতো বোনকে সঙ্গে নিয়ে রাত সোয়া ২টার দিকে বাড়ি থেকে রিক্সায় বাড্ডার একটি হাসপাতালে যাচ্ছিলেন ব্যারিস্টার মারুফ হোসেন মোল্লা৷ বাড্ডার হোসেন মার্কেটের পেছনে মোটরসাইকেলে আসা দুই ছিনতাইকারী তাদের মোবাইল ফোন, টাকা নিয়ে যায়৷ ব্যারিস্টার মোল্লা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ওই ঘটনার পর এখন রাস্তায় বের হতেই ভয় লাগে! দিনে বা রাতে কখনই চলাফেরায় নিরপদ বোধ করছি না৷ এক ধরনের মানষিক ট্রমার মধ্যে পড়ে গেছি৷
ছবি: privat
ভাইরাল হলে ব্যবস্থা!
পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় ভোররাতে চাপাতি ঠেকিয়ে এক তরুণীর কাছ থেকে চেইন ও ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তৎপর হয় পুলিশ৷ ভিডিওতে দেখা যায়, একটি রিকশায় দুই যাত্রী একটি গলির মুখে এসে দাঁড়ান৷ এ সময় একটি মোটরসাইকেলে তিনজন এসে রিকশার সামনে থামে৷ এক ব্যক্তি কোমর থেকে একটি চাপাতি বের করে রিকশায় থাকা তরুণীকে কোপ দেওয়ার অঙ্গভঙ্গি করে এবং ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
ছিনতাই আতঙ্কে মোহাম্মদপুরের মানুষ
মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পের পাশে আজিজ মহল্লার মাদ্রাসা রোড বাইলেন সড়কে দিনের বেলাতেও চলাফেরা মুশকিল৷ ছিনতাই আতঙ্কে এই এলাকার বাসিন্দারা৷ রাতে নীরবতা নামলে ছিনতাইকারীদের আনাগোনা বাড়ে বলে জানালেন বাসিন্দারা৷ এর সঙ্গে বিহারি ক্যাম্পের কিছু যুবক জড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ তাদের৷ ছবিটি শুক্রবার মধ্যরাতে তোলা৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
আপোষে না দিলে মারধর
প্রেসক্লাব এলাকা থেকে একটি রাইড শেয়ারিং বাইক নিয়ে উত্তরার বাসায় ফিরছিলেন সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম৷ ধানমণ্ডির শুক্রাবাদ এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় একটি গলিতে বাইক চালক সাথে আরেকজনকে নিয়ে তার সাথে থাকা জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে৷ বাধা দেওয়ায় শারীরিক আঘাতের শিকার হন তিনি৷ এক পর্যায়ে তার ফোন, মানিব্যাগ ছিনতাইকারীরা নিয়ে নেয়৷ আমিনুল ইসলাম জানান, গুরুতর আহত হয়ে তিনি বেশ কিছুদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন৷
ছবি: privat
‘মানুষ রাতে বের হতে ভয় পায়’
গত শুক্রবার রাত ৩টার দিকে মোম্মদপুরের শিয়া মসজিদ এলাকায় একজন বয়স্ক নারী এক তরুণকে নিয়ে রিক্সায় যাচ্ছিলেন৷ নিজের পরিচয় প্রকাশ না করে তিনি বললেন, “ভাই অনেক ঝুঁকি নিয়ে বের হয়েছি৷ ভয় লাগছে৷ দোয়া করবেন যেন সুস্থ্যভাবে বাসায় যেতে পারি৷” নূরউদ্দিন নামের রিক্সাচালক বললেন, “এখন মানুষ রাতে বের হতে ভয় পায়৷ তাই খুব একটা ভাড়া হয় না৷” জানা গেছে, গত চার মাসে রাজধানীতে ছিনতাইকারীদের হাতে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
বাসিন্দাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর চেষ্টা
নিরাপত্তার কারণে এখন অধিকাংশ এলাকার প্রবেশমুখে গেট বসানো হয়েছে৷ বিশেষ করে মোহাম্মদপুর এলাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকি বেশি থাকায় যেখানে সম্ভব সেখানেই গেইট বসিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন এলাকার মানুষ৷ প্রতিটি গেইটে একজন করে নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে৷ ছবিটি গত শুক্রবার মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদিয়া হাউজিং এলাকা থেকে তোলা৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
র্যাবের টহল
শুক্রবার রাতে মোহাম্মদপুর এলাকায় বিহারি ক্যাম্পের সামনে র্যাবের একটি টহল গাড়িকে দেখা গেল৷ কয়েকদিন আগে মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৮ থেকে ৩০ বছরের ২৬ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব৷ তাদের কাছ থেকে একটি চাপাতি, ১৩টি চাকু ও ১২টি ক্ষুর উদ্ধার করা হয়৷ র্যাব জানিয়েছে, মোহাম্মদপুরসহ আশপাশের এলাকায় কয়েকটি ছিনতাইকারী চক্র রয়েছে৷ তাদের ধরতে টহল ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়িয়েছে তারা৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
তিন মাসে গ্রেপ্তার এক হাজার
শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে মোম্মদপুর বাসস্টান্ডের কাছে পুলিশের একটি টহল গাড়ি দেখা যায়৷ তবে মোহাম্মদপুর এলাকার কোথাও র্যাব, পুলিশ বা যৌথবাহিনীর চেকপোস্ট দেখা যায়নি৷ পুলিশের গণমাধ্যম শাখা জানিয়েছে, তিন মাসে ছিনতাইকারী সন্দেহে তারা প্রায় এক হাজার জনকে গ্রেপ্তার করেছে৷রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ডিবি ও থানা পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে৷ টহল কার্যক্রমের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
টহল জোরদার করার দাবি পুলিশের
ঢাকা মহানগর এলাকায় চুরি, ছিনতাই প্রতিরোধে ডিএমপির টহল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান৷ তিনি বলেন, কৌশলগত ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়মিত চেকপোস্ট পরিচালনা করা হচ্ছে৷ এছাড়া বিভিন্ন অপরাধপ্রবণ এলাকায় ‘ব্লক রেইড’ পরিচালনা করা হচ্ছে৷
ছবি: privat
10 ছবি1 | 10
ফুল দিতে গিয়ে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি হন রিক্সাচালক
গত ১৫ আগস্ট ধানমণ্ডি ৩২ নাম্বারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে আটক হন রিকশা চালক আজিজুর রহমান। হাতের ফুল কেড়ে নিয়ে তাকে মারপিট করা হয়। কিন্তু হেনস্তাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ওই রিক্সা চালককেই জুলাই-আগস্টের ঘটনায় চলতি বছরের এপ্রিলে দায়ের করা একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় ধানমন্ডি থানা পুলিশ। ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে ১৭ আগস্ট আদালত থেকে জামিন দেয়।
রিকশা চালক মো. আজিজুর রহমানকে যে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, ওই মামলাটি দায়ের হয় চলতি বছরের ২ এপ্রিল। মামলার বাদী আরিফুল ইসলাম মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজে স্নাতকের শিক্ষার্থী। তিনি জানান, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট তিনি সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় পিঠে গুলিবিদ্ধ হন। তিনি কামরাঙ্গীরচর এলাকায় থাকেন। আরিফুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন," আমি নিজে মামলাটি করিনি। আমাদের এলাকার মনি চেয়ারম্যান অনুদানের কথা বলে আমার কাছ থেকে একটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন। পরে জানতে পারি মামলা হয়েছে এবং আমিই সেই মামলার বাদী।'
তিনি আরো বলেন, "এই মামলাটি দিয়ে অনেককে হয়রানি করা হচ্ছে বলে আমি বুঝতে পারছি। মামলা-বাণিজ্য করা হচ্ছে। কারণ, আমি প্রায়ই ফোন পাই। কিন্তু আমি কিছু জানি না। ওই রিকশা চালককে ছাড়ানোর বিষয়ে আমার কিছু করার থাকলে আমাকে বলবেন। আমি সহায়তা করবো।”
গত ফেব্রুয়ারিতে মানবাধিকার সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) এক প্রতিবেদনে জানায়, তারা জুলাই অভ্যুত্থানের সময়ের ৮৮১ জন শহিদের পরিবারে সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখেছেন তাদের মধ্যে ৩০০ শহিদের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে।
তবে এমন নজিরও আছে যে, পরিবার মামলা না করলেও অন্যরা বাদী হয়ে মামলা করেছে।
আদালতে বিচারপ্রার্থীদের যত দুর্ভোগ
আদালত অঙ্গনে গিয়ে বিচারপ্রার্থীদের অভিজ্ঞতার কথা শুনেছে ডয়চে ভেলে৷ তাদের নানা ধরনের দুর্ভোগের কথা থাকছে ছবিঘরে...
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
সন্তানের জন্য মায়ের সংগ্রাম
সাভারের অ্যানি আক্তার তার মেয়ে রাবিয়া বুসরিকে নিয়ে তিন মাসে একবার ঢাকার আদালতে আসেন সন্তানের ভরণপোষণের টাকা নিতে। রাবিয়ার বাবার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর আদালতের মাধ্যমে মাসিক তিন হাজার টাকা ভরণপোষণের জন্য নির্ধারিত হলেও সেই টাকা তুলতে ঢাকায় যাতায়াত ও অন্যান্য কাজে প্রায় দেড় হাজার টাকা খরচ হয়। বাকি টাকায় মেয়ের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন অ্যানি। তবুও মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য অ্যানি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
ছবি: Abdul Goni
শারমিনের অভিজ্ঞতা
ঢাকার মিরপুরের শারমিন আক্তার। তার ভাই ইব্রাহিম সরকার পালিয়ে একটি মেয়েকে বিয়ে করেন। ইব্রাহিম ও শারমিনের বিরুদ্ধে ওই মেয়েটির বাবা ধর্ষণ মামলা করেছেন। সেই মামলায় শারমিন ছয় মাস জেলও খেটেছেন। একজন নারী হওয়া সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দেয়ায় তিনি বিস্মিত ও হতাশ৷ ন্যায় বিচারের আশায় তাকে প্রতি মাসেই আদালতে আসতে হয়। শারমিন জানালেন, মামলার পেছনে তার অনেক টাকাও খরচ হয়েছে।
ছবি: Abdul Goni
বিগত সরকারের আমলের মামলার কারণে আদালতে আসা-যাওয়া
কৃষক দলের সদস্য হারুনুর রশিদ সুমন। রাজনীতির কারণে বিগত সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা হয়েছে। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর অনেকের মামলা প্রত্যাহার করা হলেও সুমনের মামলাগুলো আগের মতোই আছে। কিভাবে মামলা প্রত্যাহার হবে, কার কাছে যাবেন, কাকে ধরলে কাজ হবে জানেন না তিনি। তারপরও মামলা প্রত্যাহার হবে এমন আশায় প্রতিদিনই আসছেন পুরনো ঢাকার কোর্টে।
ছবি: Abdul Goni
ছেলেকে নিয়ে আদালতে
ছেলে আলামিন শুভর স্ত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ছেলের কারণে গত দুই বছর ধরে আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন আব্দুর রাজ্জাক। তার দাবি, স্বামীর সঙ্গে অভিমান করে শুভর স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু শুভর স্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা প্রভাবশালী হওয়ায় হত্যা মামলা করেছে। সেই মামলায় জেল খেটেছে শুভ। এখন প্রতিনিয়তই হাজিরা দিতে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আসেন আব্দুর রাজ্জাক।
ছবি: Abdul Goni
মামলার নিষ্পত্তিতে ধীর গতি
মামলা নিষ্পত্তিতে অনেক সময় লাগছে বলে মনে করেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি খুরশিদ মিয়া আলম। বর্তমান সরকারের কাছে মানুষের যে প্রত্যাশা, সেই গতিতে মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে না বলেই মত তার। তিনি বলেন, লাখ লাখ রাজনৈতিক মামলা ছিল। সেগুলোর নিষ্পত্তি হচ্ছে কিছু কিছু। কিছু মামলা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের বিষয়। ঘন ঘন জজদের বদলিতেও বিচার কিছুটা বিঘ্ন হচ্ছে। বিচারপ্রার্থীদের ন্যায় বিচার, সুবিচার পেতে সময় লাগছে।
ছবি: Abdul Goni
‘নারী নির্যাতন-মাদকসহ অন্যান্য মামলায় প্রশাসনের নজর কম’
অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাসে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে মনে করেন আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন। তার মতে, ‘‘উল্টো দুর্ভোগ বেড়েছে। রাজনৈতিক মামলার কারণে নারী-মাদকসহ স্বাভাবিক সময়ে যে মামলাগুলো হয়, সেগুলো হচ্ছে না। এসব মামলার দিকে প্রশাসন নজর দিতেও পারছে না। প্রশাসনকে অস্থির মনে হচ্ছে। এই সরকারের আমলে ন্যায় বিচারের প্রত্যাশা ছিল, সেটা পূরণ হচ্ছে না।’’
ছবি: Privat
আদালতেও বৈষম্য
আদালতেও এক ধরনের বৈষম্য হচ্ছে বলে মনে করেন আইনজীবী আমিনুল গনি টিটো। তার মতে, রাজনৈতিক মামলা কিছুটা কমলেও অন্যান্য মামলা আগের মতোই আছে। আদালতে বিচারপ্রার্থী বা আইনজীবীদের ওপর হামলার ঘটনায় এক ধরনের বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘আগে কিন্তু আইনজীবীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেনি। এই পরিস্থিতিতে আইনজীবীরা আদালতে দাঁড়াতে ভয় পাচ্ছেন। এভাবে তো আদালত চলতে পারে না।’’
ছবি: Privat
‘সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ আগের মতোই’
আগে জজ সাহেবরা অনেক বেশি চাপে থাকতেন বলে মনে করেন আইনজীবী তরিকুল ইসলাম। এখন জজ সাহেবদের উপর সেই চাপ নেই। পরিস্থিতিতে এক ধরনের ইতিবাচক গতি এসেছে। তবে তিনি মনে করেন, সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ আগের মতোই আছে। এখন একজন বিচারপ্রার্থী এক বছর পর একটি ডেট পান। সেদিনও যদি শুনানি না হয় তাহলে তারা তো হতাশ হবেনই।
ছবি: Privat
ন্যায় বিচারের আশায়
তিন সন্তানকে নিয়ে কেরানীগঞ্জের পলি আক্তারের এখন দিন কাটছে থানা আর আদালতের বারান্দায়। ন্যায়বিচারের আশায় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আদালতেই থাকছেন। তার স্বামী মো. কবির তার দেখাশোনা করে না। কিস্তিতে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে একটি গাড়ি কিনে দিয়েছিলেন পলি। সেই গাড়ি নিয়ে কবির তাকে ছেড়ে চলে যায়। এখন স্বামীর বিচার চেয়ে ঘুরছেন আদালতের দরোজায়।
ছবি: Abdul Goni
9 ছবি1 | 9
আওয়ামী লীগ নেতা ‘বানিয়ে' মামলা
মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ নামে একজন গাড়ি চালক গত বছরের ১৯ জুলাই উত্তরায় নিহত হন । তার স্ত্রী ফারজানা বেগম জানান, ওই ঘটনায় তিনি মামলা করতে পারেননি। তার শাশুড়িকে ( আসাদুল্লাহর মা ) নিয়ে গিয়ে মামলা করায় কিছু লোক। ফারজানা বলেন, "মামলায় কতজন আসামি, কেউ গ্রেপ্তার হয়েছে কিনা তার কিছুই আমি জানি না। আসলে এই মামলার ব্যাপারে আমরা কোনো খবর এখন আর রাখি না । যারা মামলা করিয়েছে, তারাই জানেন মামলা নিয়ে কী হচ্ছে,” বলেন তিনি।
এইসব মামলাকে পুঁজি করে ব্যবসা দখলেরও অভিযোগ আছে। ঢাকার উত্তরায় পত্রিকার বিক্রির ব্যবসা করেন (হকার) মো. রুস্তুম আলী। তার একটি সেন্টার আছে সেখানে। তিনি অভিযোগ করেন, "শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর জুলাই আন্দোলনের একটি হত্যা মামলায় আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমি এক মাস আগে জামিনে ছাড়া পেয়েছি।”
তার কথা, " আমার বাসা বাড্ডা, ব্যবসা করি উত্তরায়। আর আমাকে হাজারীবাগ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বানিয়ে ওই থানার মামলায় আসামি করা হয়েছে। মোট আসামি দুইশ'র বেশি। আমি কোনো দিন রাজনীতি করিনি।'' তিনি আরো জানান, ‘‘মামলার বাদী ঢাকার বাইরে বসবাসরত। ওই একই ঘটনায় আবার নিহতের পরিবার ধানমন্ডি থানায়ও একটি মামলা করেছে। সেখানে আমি আসামি না।”
"এখন আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থানীয় বিএনপির কিছু লোকের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। যেহেতু আমি হকার, তাই ব্যবসা তো তারা করতে পারে না। ব্যবসা আমাকে দিয়েই করায়, কিন্তু মাসে তাদের এক লাখ টাকা দিতে হয়।”
এখন আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থানীয় বিএনপির কিছু লোকের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে:মো. রুস্তম আলী
This browser does not support the audio element.
জুলাই আন্দোলনে অংশ নেয়া বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদলের এক নেতার পরিবারের সদস্যরাও এই ধরনের মামলার আসামি হয়েছেন। কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রকি ভূঁইয়ার পরিবারের কয়েকজন সদস্য এখন জুলাই হত্যা মামলার আসামি। রকি ডয়চে ভেলেকে বলেন," আসলে রজনীতি নিয়ে গ্রুপিং এবং চাঁদাবাজি করতে আমার ছোট ভাইসহ স্থানীয় আরো আট জন বিএনপির লোককে আসামি করা হয়েছে।”
" গত বছরের চার আগস্ট আমাদের উপজেলায় সরকার পতনের আন্দোলনে যে দুইজন নিহত হওয়ার কথা এজাহারে বলা হয়েছে, তারা আসলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। মেডিকেল প্রতিবেদনেও তাই আছে,” দাবি তার।
অন্যদিকে যারা অপরাধ করেছে, তাদের বাদ দিয়ে অন্যদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করার অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে।
গোপালগঞ্জে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত চারজনের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন-সৎকার সম্পন্ন হয়েছে৷ ৯০ জন গ্রেপ্তার হলেও মামলা হয়নি৷ মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচজনে৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP
গুলিতে নিহত পাঁচজন
গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচজনে৷ ১৬ জুলাই বুধবার আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের হামলা চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়৷ এতে ঘটনার দিন মারা যান দীপ্ত সাহা (২৫), রমজান কাজী (১৮), সোহেল মোল্লা (৪১) ও ইমন (২৪)৷ গুলিবিদ্ধ রমজান মুন্সী (৩২) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে মারা গেছেন৷
ছবি: Privat
সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়নি, হয়নি ময়নাতদন্ত
নিহত চারজনের দাফন ও সৎকার সম্পন্ন হলেও, তাদের কারও সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়নি, হয়নি ময়নাতদন্তও৷ স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে পোশাক ব্যবসায়ী দীপ্ত সাহাকে বুধবার রাতে পৌর শ্মশানে সৎকার এবং রমজান কাজীকে (বাদ এশা) দাফন করা হয়৷ বৃহস্পতিবার সকালে সোহেল রানা ও ইমন তালুকদারকে দাফন করা হয়েছে৷ পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরাও এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP
আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বক্তব্য
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মীর মো. সাজেদুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘‘ময়নাতদন্ত ছাড়াই তিন জনের দাফন ও একজনের সৎকার হয়েছে৷’’ জেলা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নিহতদের সুরতহাল করা হয়নি এবং হাসপাতাল থেকে তাদের মৃত্যুসনদও দেওয়া হয়নি৷ গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জীবিতেষ বিশ্বাস বলেন, ‘‘চারজনের মরদেহ হাসপাতালে এসেছিল৷ তাদের ময়নাতদন্ত হয়নি৷’’
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP
গ্রেপ্তার হলেও হয়নি মামলা
এই ঘটনায় পুলিশ ৯০ জনকে আটক করলেও আজ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি৷ ঢাকা রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) রেজাউল করিম মল্লিক সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে৷ সদর থানায় এখন পর্যন্ত ৪৫ জন আটক আছেন। তাঁদের থানায় রাখা হয়েছে। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত যৌথ বাহিনীর অভিযানে ২৫ জনকে আটক করা হয়েছিল। ’’
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP
৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে পুলিশের ওপর হামলা, গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের জেলা সভাপতি নিউটন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানসহ ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে৷ মামলায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে৷
ছবি: Anik Rahman/REUTERS
রমজানের পরিবারে মাতম
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ নিহত রমজান কাজীর মা মর্জিনা বেগম৷ অভাবের সংসারে একমাত্র রোজগারের ব্যক্তি ছিলেন রমজান৷ তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বলে দাবি মা মর্জিনা বেগমের৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP
সংঘর্ষ-ভাংচুর-কারফিউ
১৬ জুলাই দিনভর দফায় দফায় গোপালগঞ্জে হামলা, ভাঙচুর, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷ এতে অন্তত নয়জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন৷ ঘটনার পরপরই শহরে কারফিউ জারি করা হয়, যা চলে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP
এনসিপির জুলাই পদযাত্রা
সারা দেশে মাসব্যাপী জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ ঘোষণা করে এনসিপি৷ এই কর্মসূচি ঘিরে চার দফায় হামলা চালায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা৷ পুলিশ সদস্য ও তাদের গাড়ি, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), শহরের পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশস্থল, জেলা প্রশাসকের বাসভবন ও জেলা কারাগার চত্বরসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনা ঘটে৷
ছবি: T.K Islam
মঞ্চে হামলা
বেলা ২টা ৫ মিনিটে সমাবেশস্থলে পৌঁছান আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমসহ নেতারা৷ এর আগে সমাবেশস্থলে মঞ্চ ভাঙচুর ও হামলা চালান আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা৷ পরে সমাবেশ শেষে হামলার শিকার হন এনসিপির নেতারা৷ বিকেল পাঁচটার দিকে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সহায়তায় গোপালগঞ্জ ত্যাগ করে এনসিপির নেতারা৷
ছবি: AFP
গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি
শহরে পুলিশ , র্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবি টহল দিচ্ছে৷ সেখানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে৷
ছবি: Anik Rahman/REUTERS
তদন্ত কমিটি গঠন
গোপালগঞ্জের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, দু’সপ্তাহের মধ্যে পুরো ঘটনার তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে৷ আরো বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়ীদের আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ৷ সরকার ন্যায় বিচার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷
ছবি: CA Press Wing Bangladesh
11 ছবি1 | 11
হামলায় নিহত হওয়া নিহতের ‘অপরাধ'?
৯ আগস্ট রংপুরের তারাগঞ্জে রূপলাল দাস ও প্রদীপ লালকে হত্যার ঘটনায় করা মামলার এজাহার পুলিশ উদ্দেশ্যমূলকভাবে পাল্টে দিয়েছে বলে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন। রূপলালের মেয়ে নূপুর দাসের অভিযোগ "পুলিশ সব দোষ আমার বাবার ঘাড়েই চাপিয়েছে। আমার বাবা নাকি নিজের কারণেই মারা গেছে। এখন তো আর উনি বেঁচে নাই। ওনাকে দোষ দিলে উনি তো আর প্রতিবাদ করতে পারবেন না। ঘটনার পরের দিন আমার বিয়ের তারিখ ঠিক করতে যাওয়ার কথা ছিল। তাদের ব্যাগে পানীয় ছিল, যেটা আমাদের বিয়ে-শাদীতে খায়। কিন্তু ব্যাগে আপেল, কমলা, ডালিম, পেয়ারা মিষ্টিও ছিল। সেগুলো নিয়ে গেছে। এজাহারে ওই ফল ও মিষ্টির কথা বলা হয়নি। বলা হয়েছে, ব্যাগে দুর্গন্ধযুক্ত পানীয় এবং ঔষধ পায়। কয়েকজন তাদের আটকে তা পান করলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং উত্তেজিত জনতা তাদের (রূপলালদের) গণপিটুনি দেয় বলে দাবি করা হয়েছে,” বলেন তিনি।
গত ৫ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার দরবারে হামলা চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়, কবর থেকে তুলে পোড়ানো হয় নুরা পাগলার লাশ৷ সেই ঘটনায় মূল আসামিদের আড়াল করার অভিযোগ উঠেছে। যারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে হামলা করেছে , যেসব রাজনৈতিক দলের (মূলত স্থানীয় বিএনপি ও জামাত) নেতারা প্রকাশ্যে ইন্ধন দিয়েছেন, তাদের আইনের আওতায় না এনে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মী ও অন্য নিরীহ ব্যক্তিদের আটকের অভিযোগ উঠেছে৷
যারা মবের শিকার, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে: নূর খান
This browser does not support the audio element.
মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন," অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বার বার মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার ব্যপারে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে আমরা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখছি না। উল্টো যারা মবের শিকার, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। পুলিশও উদ্দেশ্যমূলক মামলা করছে। আর মামলগুলোতে শত শত আসামি করা হচ্ছে। অজ্ঞাত আসামি করা হচ্ছে। মামলাকে কেউ কেউ ব্যবসায় পরিণত করেছে। মামলা করার আগেও চাঁদার হুমকি দেয়া হচ্ছে। আবার চাঁদা না পেলে মামলা করা হচ্ছে। মামলার পর নাম বাদ দেয়ার জন্যও চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।”
"আপনি অবাক হবেন, চাঁদার জন্য সলিমুল্লাহ এতিম খানার তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে দেশের তিন জায়গায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। তাকে জেলেও যেতে হয়েছে। অনেক মামায় এমন আসামি করা হচ্ছে, যারা ওই জায়গায় ছিলেনই না। ঘটনা ধানমণ্ডির, আসামী মিরপুরের,” বলেন তিনি।
আর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক বলেন," আসলে এইসব মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইন আছে। কিন্তু আইনের প্রয়োগ হচ্ছে না। সরকার বললেও কোনো কার্যকর পক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। ফলে এখন মামলা চাঁদাবজি এবং রাজনৈতিক হয়রানির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।”
সরকার অবশ্য এই ধরনের মামলা থেকে রেহাই দিতে সম্প্রতি ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করেছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩(ক)/১৭৩(অ) এ নতুন বিধানটি যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনার, এসপি বা কোনো জেলার এসপি পদমর্যাদার কোনো পুলিশ কর্মকর্তার এখতিয়ারাধীন কোনো মামলার বিষয়ে তিনি যৌক্তিক মনে করলে তদন্ত কর্মকর্তাকে ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর সেই মামলার তদন্তের ব্যাপারে প্রাথমিক প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিতে পারবেন। ম্যাজিস্ট্রেট তার বিবেচনাবলে নিরপরাধ ও যার বিরুদ্ধে ওই অপরাধের কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই, তাদের বিচার পূর্ববর্তী পর্যায়েই মামলা থেকে রেহাই দিতে পারবেন।
পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষাখাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও বিক্ষোভ-প্রতিবাদ
গত নয় বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে একের পর এক শিক্ষা-কেলেঙ্কারি সামনে এসেছে। প্রতিবাদ হয়েছে। তদন্ত চলছে। আদালতে চলছে মামলা। সংবাদ শিরোনামে বেশি না এলেও এখনো চলছে শিক্ষাখাতকে দুর্নীতিমুক্ত করার দাবিতে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ.....
ছবি: Subrata Goswami/DW
২০১৬ সালে যা হয়েছিল
২০১৬ সালে শিক্ষক নিয়োগের জন্য পরীক্ষা নেয়া হয়। তারপর প্যানেল তৈরি করে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। অভিযোগ ওঠে, অনেক নিয়োগই বেআইনিভাবে হয়েছে, অযোগ্যরা বিপুল অর্থের বিনিময়ে চাকরি পেয়েছে। তারপর বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
গ্রুপ ডি কর্মীর নিয়োগ নিয়েও কেলেঙ্কারি
২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের স্কুল সার্ভিস কমিশন(এসএসসি) সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে ১৩ হাজার গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়। প্যানেল তৈরি হয়। ২০১৯ সালে এই প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তারপরেও এই প্যানেল থেকে অন্তত ২৫ জনকে নিয়োগ করা হয়। আদালতে মামলা হয়। অভিযোগ করা হয়, ওই নিয়োগ বেআইনি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিবিআই তদন্তের নির্দেশ
২০২১ সালের নভেম্বরে কলকাতা হাইকোর্ট শিক্ষা কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। রাজ্য সরকার তা ঠেকানোর জন্য আবেদন করে। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়। ২০২২ থেকে শুরু হয় সিবিআই তদন্ত।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেপ্তার
২০২২ সালের ২৩ জুলাই সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করে সিবিআই। পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখনো জেলে বন্দি। সম্প্রতি, তার শরীর খারাপ হয়েছে। আদালত তাকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করার নির্দেশ দিয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
গ্রেপ্তার অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়
পার্থর ঘনিষ্ঠ টলিউড অভিনেত্রী অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে ২১ কোটি টাকা উদ্ধার করে ইডি। এছাড়া এক কোটি ২০ লাখ টাকার গয়না উদ্ধার হয়। অর্পিতাকে গ্রেপ্তার করে ইডি। অর্পিতার আরেকটি বাড়ি থেকে ২৭ কোটি ৯০ লাখের ক্যাশ ও ছয় কেজি সোনা উদ্ধার হয়। অর্পিতা কিছুদিন আগে জামিন পেয়েছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিধায়ক, নেতা, প্রশাসক গ্রেপ্তার
২০২২ সালের অগাস্টে বিশেষ পরামর্শদাতা কমিটির আহ্বায়ক শান্তিপ্রসাদ সিনহাকে সিবিআই গ্রেপ্তার করে। এসএসসি-র সচিব অশোক সেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আরেক কর্মকর্তা কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, সুবীরেশ ভট্টাচার্যকেকেও গ্রেপ্তার করা হয়। বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে ইডি গ্রেপ্তার করে। সিবিআই আরেক বিধায়ক জীবন কৃষ্ণ সাহাকে গ্রেপ্তার করে। তাদের অনেকেই জামিন পেয়েছেন। উপরের ছবিটি মানিক ভট্টাচার্যের।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ওএমআর শিট কেলেঙ্কারি
নিয়োগ পরীক্ষা হয় ওএমআর(অপটিক্যাল মার্ক রিডার) শিটের মাধ্যমে। ফলে কম্পিউটার এই শিট পড়তে পারে এবং কোনোরকম কেলেঙ্কারি না হয়। কিন্তু ওএমআর শিটে কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়েও চাকরি পাওয়ার অভিযোগ ওঠে। সিবিআই তদন্তে দেখা গেছে, ওমআর শিট পরে দল করা হয়েছে পরে আদালতে এসএসসি স্বীকার করে কিছু ক্ষেত্রে মার্কস মিলছে না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারি
প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগের জন্য টেট পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে অভিযোগ ওঠে, টেট পরীক্ষায় পাস না করলেও ৩১০ জনকে চাকরি দেয়া হয়েছিল। এর জন্য এজেন্ট, সাব এজেন্ট নিয়োগ করা হয়েছিল। লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে তারা চাকরি দিয়েছে বলে সিবিআইের অভিযোগ। ২০১৬ থেকে ২০২২ পর্যন্ত তারা সক্রিয় ছিল।
ছবি: Subrata Goswami/DW
২৬ হাজার চাকরি বাতিলের রায়
২০২৪ সালে কলকাতা হাইকোর্ট রায় দেয়, ২০১৬ সালে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছিল, তাদের চাকরি বাতিল করা হবে। কারণ, এই নিয়োগ প্রক্রিয়াতে জালিয়াতি হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মামলা সুপ্রিম কোর্টে
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট জানতে চেয়েছিল, এই ২৬ হাজারের মধ্যে থেকে যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের আলাদা করা সম্ভব কিনা। এসএসসি জানিয়েছে, সম্ভব। সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্ত রায় দেয়নি।
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Kachroo
রাজ্যের তিন হাজারের বেশি স্কুলে পড়ুয়া নেই
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের ইউনিফায়েড ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন প্লাস (ইউডিআইএসই+)রিপোর্ট ফর দ্য অ্যাকাডেমিক ইয়ার ২০২৩-২০২৪ প্রকাশিত হয়েছে। সেই রিপোর্ট জানাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের তিন হাজার ২৫৪টি স্কুলে কোনো ছাত্রছাত্রী নেই। সেখানে শিক্ষক আছেন ১৪ হাজার ৬২৭ জন। ভারতে এরকম দুরবস্থা আর কোনও রাজ্যের নেই। আর একজন শিক্ষক আছে এমন স্কুলের সংখ্যা ৬৩৬৬।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বন্ধ হওয়ার মুখে
২০২১ সালে রাজ্যে ৬৪টি স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ২০২২ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছিলেন, ''বিভিন্ন স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সার্ভে করছি। কেন বন্ধ হচ্ছে, তা জানার চেষ্টা চলছে।'' ব্রাত্য বসু এই কথা বলার দুই বছর পর দেখা যাচ্ছে, রাজ্য়ে আরো কয়েক হাজার স্কুল বন্ধের মুখে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ড্রপ আউটের সমস্যা
রাজ্য সরকারের দাবি, প্রাথমিক ও উত্ত প্রাথমিকে পশ্চিমবঙ্গে ড্রপ আউটের সংখ্যা শূন্য। কিন্তু মাধ্যমিক স্তরে ড্রপ আউটের হার ১৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ছবি: str/dpa/picture alliance
চাকরিপ্রার্থীদের প্রতিবাদ
মেয়ো রোডে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে এসএসসি চাকরিপ্রার্থীরা তিন বছরের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। এখনো সেই বিক্ষোভ চলছে। একসময় প্রচুর হবু শিক্ষককে সেই বিক্ষোভে দেখা যেত। এখন সংখ্যাটা কমলেও বিক্ষোভ জারি আছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অনেকগুলি মঞ্চে প্রতিবাদ
রানি রাসমণির মূর্তির কাছে দশটিরও বেশি প্রতিবাদমঞ্চ আছে। সেখানে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, প্রাথমিক,. উচ্চপ্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা। এখানেও দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ চলছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এসএফআইয়ের প্রতিবাদ
গত সোমবার বিধাননগরে শিক্ষা দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখান বামপন্থি ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের সদস্যরা। তারা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কাছে গিয়ে জানাতে চায়, শিক্ষামন্ত্রী হিসাবে ব্রাত্য বসু শূন্য পেয়েছেন। কিন্তু পুলিশ তাদের উপর লাঠি চালায়। অন্তত ৮০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাতে তাদের ছাড়া হয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
16 ছবি1 | 16
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা মামলাগুলো মনিটরিং করছি। চার্জশিটে যাতে নিরপরাধ কেউ না থাকে, সে ব্যাপারে কঠোর নজরদারী করা হচ্ছে। আর নতুন করে যাতে কোনো হয়রানিমূলক মামলা না হয়, নিরীহ কাউকে যেন আসামি করা না হয় সেই নির্দেশনা পুলিশের প্রত্যেক ইউনিটকে দেয়া হয়েছে।”
আর প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারি প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ বলেন," এরই মধ্যে মিথ্যা ও হয়রানীমূলক মামলা প্রতিরোধে আমরা আইন সংশোধন করেছি। আর মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের তালিকা করা হচ্ছে। এটা প্রক্রিয়াধীন। এরই মধ্যে ৩০ জনের মতো ব্যক্তিকে এই ধরনের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়া চলবে।”