ব্রেক্সিট সত্ত্বেও ব্রিটেনকে ইউরোপের অংশ হিসেবে অনেকেই মন থেকে ছাড়তে পারছেন না৷ ব্রাসেলসে এক পার্কে এখনো ব্রিটেনের ক্ষুদ্র সংস্করণ শোভা পাচ্ছে৷ করোনা সংকটের কারণে দর্শক কমে গেলেও মিনি ইউরোপ বহাল তবিয়তে রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার প্রাসাদ ও বিগ বেন ঘড়ি, এথেন্সের অ্যাক্রোপোলিস, নেদারল্যান্ডসের উইন্ড মিল, প্যারিসের আইফেল টাওয়ার, অথবা বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ তোরণ৷ ব্রাসেলস শহরের মাঝে মিনি ইউরোপে গেলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি সদস্য রাষ্ট্রের বিখ্যাত দ্রষ্টব্যগুলি চোখে পড়বে৷
তবে কথাটা কি ঠিক? ইইউ-র সদস্য দেশের সংখ্যা সত্যি কি ২৮? অবশ্যই নয়৷ ব্রেক্সিটের কারণে ২০২০ সালের ৩১শে জানুয়ারি ব্রিটেন তো ইইউ ত্যাগ করেছে! সেই ঐতিহাসিক বাস্তব সম্পর্কে পার্কের কর্ণধার টিয়েরি মেউস বলেন, ‘‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য চিরকালই ইউরোপীয় ইউনিয়নের মূলমন্ত্র ছিল৷ বর্তমানে সেই বার্তা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷ সে কারণে ব্রিটেনের বিদায় ইউরোপের মানুষের জন্য দুঃখজনক৷’’
ব্রাসেলসে বিগ বেন, আইফেল টাওয়ার!
02:44
পার্কের প্রতিষ্ঠাতা টিয়েরি মেউস অবশ্য ব্রেক্সিটের কারণে দমে যাবার পাত্র নন৷ তিনি মিনি ইউরোপেও নতুন সীমানার ব্যবস্থা করেছেন৷
সাড়ে তিনশোরও বেশি স্থাপনার কারণে পার্কে দ্রষ্টব্যের অভাব নেই৷ প্রায় ৯,০০০ মূর্তি ও ৩৩টি অ্যানিমেশনও সেখানে দেখা যায়৷ এমনকি করোনা সংকটের সময়ে আদর্শ আচরণ সম্পর্কেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ টিয়েরি মেউস বলেন, ‘‘বর্তমানে মাত্র দশ শতাংশের মতো দর্শক আসছেন৷ বছরের শেষ পর্যন্ত সময়ে আগের বছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ লোক হলেই আমরা খুশি হবো৷ গত বছর প্রায় চার লাখ মানুষ এসেছিলেন৷ এ বছর এক লাখ ষাট হাজার হলেই চলবে৷
ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য আর ইইউ-র অংশ না থাকলেও দেশটি ইউরোপের হৃদয়েই অবস্থিত৷ কমপক্ষে ব্রাসেলস শহরে তো বটেই৷
লুসিয়া শুলটেন/এসবি
ইউরোপের বিখ্যাত ও সুন্দর যত ঘড়ি
ইউরোপের বিভিন্ন শহরের প্রাচীন ভবনের দেয়ালে শোভা পায় দৃষ্টিনন্দন কিছু ঘড়ি৷ এসব ঘড়ি শুধু সময়ই জানায় না, ইউরোপের রাজা-বাদশাহদের শিল্প চর্চার প্রতীক হিসেবেও কাজ করে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
লন্ডনের ‘বিগ বেন’
লন্ডনের বিগ বেন ঘড়িটিকে বলা হয় ইউরোপের দেয়ালে ঝুলানো সবচেয়ে বিখ্যাত ঘড়ি৷ তবে যে ভবনের দেয়ালে ঘড়িটি ঝোলানো আছে, তার ডাক নাম বিগ বেন৷ ভবনটির প্রকৃত নাম হলো এলিজাবেথ টাওয়ার৷ ‘ভয়েস অব ব্রিটেন’ নামে খ্যাত এ ঘড়িটি প্রতি ঘন্টায় একবার করে ঘণ্টা বাজিয়ে তার উপস্থিতি জানান দেয়৷ তবে ভবনটির সংস্কার কাজ চলছে বলে আগামী কয়েক বছর ঘড়িটির পরিচিত এ ঘণ্টা শুনবে না কেউ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/PA Wire/V. Jones
বার্লিনের ‘ওয়ার্ল্ড টাইম ক্লক’
আধুনিক নকশায় খচিত বার্লিনের আলেকজান্দ্রিয়া প্লাৎসে স্থাপিত ওয়ার্ল্ড টাইম ক্লক’টি দর্শণার্থীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়৷ বিখ্যাত শিল্পী এরিখ জন-এর নকশা করা এ ঘড়িটি ১৯৬৯ সালে দর্শণার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়৷ দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যে খচিত এ ঘড়ির উপরের অংশটি আমাদের সৌরজগতেকে চিত্রায়িত করেছে৷ আর নিচের দিকে নকশা করা সিলিন্ডারটিতে বিশ্বের ২৪টি ভিন্ন ভিন্ন স্থানের সময় নির্দেশ করে৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur-online/Schöning
‘টাউনহল ক্লক‘
চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগ শহরের টাউন হলের দেয়ালে খচিত জোতির্বিদ্যা বিষয়ক ‘টাউনহল ক্লক’টি গোথিক প্রযুক্তির একটি বিশেষ নিদর্শন৷ কথিত আছে যে, ১৪১০ সালে স্থাপিত এ ঘড়ির নির্মাণের পর নকশাকারীর চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছিল, যেন একই নকশার আর কোনো ঘড়ি কেউ নির্মাণ করতে না পারে৷
ছবি: picture-alliance/chromorange/Bilderbox
স্ট্রাসবুর্গের ‘জ্যোতির্বাদ্যা ঘড়ি’
জার্মানির স্ট্রাসবুর্গ শহরের ক্যাথেড্রেলে স্থাপিত একজন সুইস স্থপতির নকশা করা এ ঘড়িটি মূলত ইউরোপের রেনেসাঁর চিহ্নবিশেষ৷ প্রতিদিন দূপুর সাড়ে বারোটায় চালু হয় এটি৷ ঘড়িটির চারপ্রান্তে শিশু, তরুণ, প্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রবীণদের মূর্তি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images GmbH/G. Lenz
ভিয়েনার ‘অ্যাঙ্কর ক্লক’
অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা শহরের অ্যাঙ্কর ক্লকটি শহরটির হহে মার্কট স্কয়ারে অবস্থিত অ্যাঙ্কর-হফ ভবনের দুটি আংশকে একটি সেতুর মতো করে একত্রিত করেছে৷ প্রতি ১২ ঘণ্টায় কপারের তৈরি ১২টি ঐতিহাসিক মূর্তি সেতুটি অতিক্রম করে৷
ছবি: picture-alliance /picturedesk/K. Schöndorfer
ভেনিসের ‘টরে ডেল’অরলোগিয়ো’
ইটালির ভেনিস শহরে সেন্ট মার্ক স্কয়ারে স্থাপিত টরে ডেল’অরলোগিয়ো ঘড়িটি শুধু সময়ই নির্দেশ করছে না, বরং চন্দ্র ও সৌর বর্ষের নির্দেশনাও দিচ্ছে৷ ২০০৬ সাল থেকে ঘড়িটিকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে তত্তাবধান করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Engelhardt
ফ্রান্সে রয়েছে ‘জাদুর ঘর’
ফ্রান্সের ব্লইস শহরে স্থাপিত এটিকে ঠিক ঘড়ি বলা না গেলেও স্থাপনাটির ড্রাগন আকৃতির দুটি মাথা সময়ের নির্দেশনা দেয়৷ প্রতি আধা ঘণ্টায় একবার ড্রাগন আকৃতির মাথা দুটি বেরিয়ে এসে ভয়ানকভাবে সামনের দিকে দৌড়াতে থাকে৷ স্থাপনাটির পিছনে রয়েছে যাদুবিদ্যা প্রদর্শনকারী একটি যাদুঘর৷ উল্যেখ্য, আধুনিক যাদুবিদ্যার জনক রবার্ট-হোডিন৷ ব্লইস শহরে জন্মগ্রহন করেছিলেন তিনি৷