রাঙ্গামাটিতে দুর্গতদের দেখতে যাওয়ার পথে হামলায় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ও তাঁর সহকর্মীদের আহত হওয়ার ঘটনায় বিএনপি মামলা করবে না৷ দলটি মনে করে, মামলা করে লাভ নেই৷ তবে বিএনপির এ অবস্থানকে সন্দেহের চোখে দেখছে আওয়ামী লীগ৷
বিজ্ঞাপন
তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, জড়িতদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ পুলিশ এখনো কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি৷
রবিবার সকালে মির্জা ফখরুল ইসলামসহ বিএনপি নেতারা চট্টগ্রাম থেকে গাড়িতে রাঙ্গামাটি যাচ্ছিলেন৷ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার শান্তিরহাট এলাকায় তাদের গাড়ি বহরে হামলা চালানো হয়৷ হামলায় মির্জা ফখরুল ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম আহত হন৷ গাড়ি বহরে থাকা একজনের মাথা ফেটে যায়৷ হামলায় মির্জা ফখরুলের গাড়িরও ক্ষতি হয়৷
Imtiaz Bhuyan - MP3-Stereo
হামলার পর বিএনপির চেয়ারপর্সন বেগম খালেদা জিয়া এই হামলার জন্য ‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের' দায়ী করেছেন আর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘‘মির্জা ফখরুলের ওপর হমলা অন্যায়৷'' তিনি অপরাধীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়ার কথা জানান৷
সোমবার বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই হামলার মধ্য দিয়ে সরকার দেশে একটা অস্থিরতা তৈরি করতে চায়৷ তারা চায় অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি করে বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে৷ কিন্তু বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখা যাবে না৷'' তিনি বলেন, ‘‘এর আগেও ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় নির্বাচনী প্রচারণায় বের হলে কারওয়ান বাজার ও বাংলা মটরসহ কয়েকটি এলাকায় ম্যাডাম খালেদা জিয়ার ওপর হামলা হয়েছে৷ এটা আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ৷ মির্জা ফখরুল কোনো রাজনৈতিক কাজে যাচ্ছিলেন না৷ তিনি ত্রাণ বিতরণের মতো মানবিক কাজে যাচ্ছিলেন৷ তারপরও আওয়ামী লীগ তার ওপর হামলা করে৷''
Mahbu Ul Alam Hanif - MP3-Stereo
মামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘থানা কি বিএনপি'র মামলা নেবে? বিএনপির মামলা থানা নেয়না, বিএনপি'র মামলা কোর্ট নেয় না৷ থানা যেমন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন তেমনি কোর্টও আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন৷ তাই আমরা মামলা করব না৷ জনগণের কাছে বিচার দিচ্ছি৷ জনগণ যাতে এই অপশক্তির বিচার আগামী নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে করে, সেই আহ্বান জানাচ্ছি৷''
বিপরীতে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা এই হামলার নিন্দা জানিয়েছি৷ জড়িতদের গ্রেপ্তার করার নির্দেশনা দিয়েছি৷ তদন্ত করে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করতে বলেছি৷ আমরা কখনোই এই ধরণের হামলা সমর্থন করি না৷ যদিও অতীতে বিএনপি আওয়ামী লীগের ওপর অনেক হামলা চালিয়েছে৷ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ওপর একাধিকবার হামলা করেছে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা এরইমধ্যে জেনেছি, বিএনপি নেতাদের যে পথে যাওয়ার কথা ছিল, তারা সে পথে যাননি৷ তারা রুট পরিবর্তন করেছেন৷ এটা পুলিশকে জানালে পুলিশ তাদের নিরাপত্তা দিতে পরতো৷ তারা কেন রুট পরিবর্তন করল, সেটা বিএনপিই ভালো বলতে পারবে৷''
Ahmed Azam Khan - MP3-Stereo
অন্যদিকে রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ ভুঁইয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিএনপি মহাসচিবের ওপর হামলার ঘটনার তদন্ত শুরু হয়ে গেছে৷ আমরা হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি৷ বিএনপির পক্ষ থেকে কেউ এখনো মামলা করেননি৷ মামলা করলে আমাদের তদন্তের কাজে সুবিধা হতো৷''
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ‘হামলাকারী'দের ছবির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘কিছু ছবি আমরাও দেখেছি৷ তবে তা স্পষ্ট নয়৷ তবুও আমরা চিহ্নিত করা ও নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছি৷ এখন পর্যন্ত কাউকে চিহ্নিত বা আটক করা যায়নি৷''
এদিকে রাঙ্গামাটির ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় আড়াই হাজার দুর্গত আশ্রয় নিয়েছেন৷ সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও রেড ক্রিসেন্টের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে তাদের দুই বেলা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে৷ তবে সোমবার দুপুরের পর আবারো বৃষ্টি শুরু হওয়ায় কিছুটা আতঙ্ক দেখা দেয়৷
বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনের ইতিহাস
স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ১১ বার সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ ছবিঘরে থাকছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য৷
ছবি: Anupam Nath/AP/picture alliance
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ সে সময় ৩০০ আসনে সরাসরি নির্বাচন হয়৷ আর সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ছিল ১৫টি৷ ঐ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল ৭ এপ্রিল, তেজগাঁওয়ে অবস্থিত তখনকার জাতীয় সংসদ ভবনে৷ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টিতে জয়লাভ করে৷ বঙ্গবন্ধু সে সময় ঢাকা-১২ আসন থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন৷
ছবি: AP
দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন, প্রথম নারী সাংসদ
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ হয়৷ সেবার সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ছিল ৩০টি৷ তবে ঐ সংসদেই প্রথমবারের মতো প্রত্যক্ষ ভোটে একজন নারী সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন৷ খুলনা-১৪ থেকে নির্বাচিত হন সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ৷ প্রথম অধিবেশন বসেছিল ২ এপ্রিল৷ নির্বাচনে মাত্র মাস ছয়েক আগে প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি ২০৭টি আর আওয়ামী লীগ ৫৪টি আসন পেয়েছিল৷
ছবি: imago stock&people
তৃতীয় সংসদ নির্বাচন
ভোটগ্রহণ হয় ১৯৮৬ সালের ৭ মে৷ জাতীয় পার্টি ১৫৩টি, আওয়ামী লীগ ৭৬টি আর জামায়াতে ইসলামী ১০টি আসন পায়৷ বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করেছিল৷
ছবি: http://www.parliament.gov.bd
চতুর্থ সংসদ নির্বাচন
১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ আওয়ামী লীগ, বিএনপি সহ বেশ কয়েকটি দল এই নির্বাচন বর্জন করেছিল৷ জাতীয় পার্টি আসন পেয়েছিল ২৫১টি৷ সংরক্ষিত মহিলা আসন সংক্রান্ত আইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এই সংসদে মোট আসন সংখ্যা ছিল ৩০০টি৷
ছবি: http://www.parliament.gov.bd
পঞ্চম সংসদ নির্বাচন
তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি, আওয়ামী লীগ ৮৮টি আর জাতীয় পার্টি ৩৫টিতে জয়লাভ করে৷ এছাড়া নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে ৩০ জন মহিলাকে সাংসদ নির্বাচিত করা হয়৷ অবশ্য তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটি সংবিধানের অংশ ছিল না৷ পরের সংসদে সেই বিল পাস হয়েছিল৷
ছবি: Getty Images
ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন
অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি৷ আওয়ামী লীগ সহ অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল নির্বাচনটি বর্জন করেছিল৷ ফলে মোট ভোট গৃহীত হয়েছিল মাত্র ২১ শতাংশ৷ ৩০০টি আসনের মধ্যে বিএনপি ২৭৮টিতে জয়লাভ করেছিল৷ মাত্র চার কার্যদিবসে সংসদ বসার পর তা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়৷ এই সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস হয়৷
ছবি: picture-alliance/Dinodia Photo
সপ্তম সংসদ নির্বাচন
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬, বিএনপি ১১৬ ও জাতীয় পার্টি ৩২টি আসনে জয়লাভ করে৷ পরে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ৷
ছবি: Reuters
অষ্টম সংসদ নির্বাচন
ভোটগ্রহণ হয় ২০০১ সালের ১ অক্টোবর৷ অষ্টম সংসদের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ৩০০টি৷ কারণ সংরক্ষিত মহিলা আসন সংক্রান্ত আইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় শুরুতে কোনো মহিলা আসন ছিল না৷ পরে আইন করে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ এ উন্নীত করা হয়৷ নির্বাচনে বিএনপি ১৯৩ আর আওয়ামী লীগ ৬২টি আসনে জয়ী হয়েছিল৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
নবম সংসদ নির্বাচন
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে অনুষ্ঠিত সবশেষ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর৷ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার পেয়েছিল ২৬৩টি আসন৷ আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট পায় ৩৩টি আসন৷
ছবি: picture-alliance/A.A./N. Kumar
দশম সংসদ নির্বাচন
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি৷ ফলে ১৫৩ জন সাংসদ কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই সাংসদ নির্বাচিত হন৷
ছবি: DW/M. Mamun
একাদশ সংসদ নির্বাচন
বাংলাদেশের সবশেষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালে৷ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হওয়া এই নির্বাচনে সংসদের ৩০০ আসনের ২৮৮টিই পেয়েছিল ক্ষমতাসীন দল ও মহাজোট৷ সেই নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ভোট পড়েছে পাঁচ ভাগের চার ভাগ৷ ঘটেছে নজিরবিহীন ঘটনাও৷ ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে৷ প্রায় আট হাজার কেন্দ্রে পড়েছে ৯০ শতাংশের বেশি৷
ছবি: Anupam Nath/AP/picture alliance
11 ছবি1 | 11
কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক না হওয়ায় নতুন সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে৷ রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ঠিক না হওয়ায় বিপাকে পড়েছে জেলার কৃষি ও পরিবহন সেক্টরের লক্ষাধিক মানুষ৷ চাষীরা বিভিন্ন উপজেলা থেকে ফল নিয়ে ঘাটে এলেও ক্রেতার অভাবে তা বিক্রি করতে পারছেন না৷ অন্যদিকে পরিবহন সঙ্কটের কারণে বেপারিরা পণ্য ক্রয় করছেন না৷ তাই চাষিরা অনেক টাকা লোকশানের আশঙ্কা করছে৷ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফল বিক্রি করতে না পারলে তা বাগানেই পচে নষ্ট হবে৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷