গাড়ি বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক শহরের জীবনযাত্রার মান কমে যাচ্ছে৷ ইটালির এক শহর পাড়ার মধ্যে চত্বর উন্মুক্ত করে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করছে৷ স্থানীয় মানুষকে শামিল করে পৌর কর্তৃপক্ষ এমন উদ্যোগ নিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
তুলি আর রং নিয়ে ভোরবেলাই তারা উদয় হন৷ মিলান শহরের বাসিন্দা ও স্বেচ্ছাসেবীরা শহরের ‘প্রাতো চেন্তেনারো' নামের এলাকার একটি চত্বর রং করছেন৷ রাউন্ডঅ্যাবাউট ও গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গার সরিয়ে জায়গাটিকে তারা সম্পূর্ণ গাড়িমুক্ত করে তুলতে চান৷
ডিজাইনের ছাত্রী জুলিয়া বাদোকি স্বেচ্ছাসেবীদের একজন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা অ্যাসফাল্টের উপর রং করছি, কারণ আমরা জায়গাটিকে মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই৷ আমরা জায়গাটিকে নতুন করে সাজাচ্ছি৷ আগে যে সব গাড়ি থাকতো, সেগুলি চলে গেছে৷''
মিলান শহরে এই নিয়ে ৩৯টি চত্বর গাড়িমুক্ত করা হচ্ছে৷ সেই ব্যস্ত আবাসিক এলাকায় এখন পার্ক করা গাড়ির বদলে অলিভ গাছ, টেবিল-চেয়ার ও বেঞ্চ শোভা পাচ্ছে৷ অ্যাসফাল্টের উপরেও রং করা হচ্ছে৷ স্বেচ্ছাসেবীরা দুই দিনের মধ্যেই রংয়ের কাজ শেষ করতে চান৷ নিজের প্রেরণা সম্পর্কে জুলিয়া বাদোকি বলেন, ‘‘প্রায় ২৪ বছর ধরে মিলানে থাকি বলে নিজের শহরে এই কাজে আমিও হাত লাগিয়েছিলাম৷ এই অভিযানের মাধ্যমে আমরা অবশেষে গাড়ির বদলে মানুষের জন্য জায়গা আদায় করতে পারি৷ বয়সের তোয়াক্কা না করে আমরা সবাই বাইরে মিলিত হতে পারি৷''
মিলানের পৌর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে এমন খোলা চত্বরের আইডিয়া ছড়িয়ে পড়ছে৷ দেমেত্রিয়ো স্কোপেলিতি নামের স্থপতি ও তাঁর টিম নগর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে দ্রুত ও সস্তার সমাধানসূত্র সৃষ্টি করছেন৷ একেবারে সূচনা পর্ব থেকে নাগরিকদের শামিল করা এই উদ্যোগের মূলমন্ত্র৷
মিলানের ৩৯টি চত্বর গাড়িমুক্ত
04:29
‘‘মানুষ চত্বরের রূপান্তর সংক্রান্ত প্রস্তাব পেশ করেন৷ নাগরিক উদ্যোগের সদস্য ও নগর পরিকল্পনাকারীরা তারপর একসঙ্গে প্রকল্পের কাজ চূড়ান্ত করেন৷ কাজ শুরু হলে স্বেচ্ছাসেবী ও স্থানীয় বাসিন্দারা সাহায্য করেন, এখানে যেমনটা ঘটছে৷''
২০১৮ সালে রংয়ে ভরপুর ‘পিয়াৎসা আপের্তা' বা উন্মুক্ত চত্বরের উদ্যোগ শুরু হয়৷ প্রথমে পর্তা জেনোভা, পিয়াৎসা সিচিলিয়া ও ভিয়া স্পোলেতোর রূপান্তর ঘটানো হয়৷ তবে পিয়াৎসা দেরগানো ছিল শহরের প্রথম উন্মুক্ত চত্বর৷ পরীক্ষামূলকভাবে শুধু শুরুতেই চত্বর রং করা হয়৷ ইতোমধ্যে সেই চত্বরে অ্যাসফাল্ট সরিয়ে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হয়েছে৷ নতুন গাছপালা, টেবিল টেনিস খেলার ব্যবস্থা ও বেঞ্চ জায়গাটিকে মনোরম করে তুলেছে৷ পৌরসভার স্থপতি দেমেত্রিয়ো স্কোপেলিতি বলেন, ‘‘আমরা এই কাজকে স্থায়ী ‘কাঠামোগত হস্তক্ষেপ' বলি৷ এই চত্বর পাড়ার প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে৷ মনে হবে যেন চিরকাল এমনই ছিল৷ ইটালির ঐতিহ্য অনুযায়ী পিয়াৎসা কবল স্টোন দিয়ে ঢাকা৷ কেউ যদি ২৫টি পার্কিং স্পেস আবার ফিরে পেতে চায়, তাকে পাগল ঘোষণা করা হবে৷''
গাড়ির জন্য এখন শুধু চিকন একটা পথ অবশিষ্ট রয়েছে৷ নতুন করে চত্বর সাজাতে মিলানের পৌর কর্তৃপক্ষকে সামান্য ব্যয় করতে হয়৷ অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত কম খরচে রূপান্তর ঘটিয়ে বিশাল পরিবর্তন আনা যায়৷ এমনকি রং করার সময়েই মানুষ জায়গাটি ব্যবহার করায় জুলিয়া ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবীরা খুবই খুশি৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জুলিয়া বাদোকি বলেন, ‘‘কাজের শুরুতেই এখানকার অনেক বাসিন্দা এসেছিলেন৷ বিশেষ করে চত্বরের একেবারে পাশেই থাকেন, এমন মানুষের উৎসাহ বেশি ছিল৷ তাঁরা টেবিল ঢেকে, চেয়ারে বসে সারা দূপুর ধরে তাস খেলেছিলেন৷ তাই আমার মতে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রকল্প পাড়ার সবার কাছে আরও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে৷''
রং শুকিয়ে যাবার আগেই পিয়াৎসার উপর স্বতঃস্ফূর্ত পারফরমেন্স দেখা গেলো৷ এক নাচের শিক্ষক স্বেচ্ছাসেবী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নাচতে উদ্বুদ্ধ করলেন৷
এমন উদ্যোগের দৌলতে মিলান অন্যান্য শহরের জন্যও আদর্শ হয়ে উঠছে৷ আগামী বছর শহরের আরও ১৪টি পিয়াৎসা এভাবে উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে৷
২০১৮ সালের ছবিঘর
পরিবেশ বাঁচাতে ডিজেলের গাড়ি কমাতে চায় যেসব শহর
বিশ্বের বড় শহরগুলি যে সমস্যার সঙ্গে যুঝছে, সেটি হলো স্মগ বা কুয়াশা৷ শহরের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ডিজেলে চলা গাড়ি নিষিদ্ধ করা হবে কিনা, তাই নিয়ে বিতর্ক চলছে জার্মানিতে৷ ‘ড্রাইভিং ব্যান’ হবে মুশকিল আসান?
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Dedert
গাড়ির শেষ নেই
জার্মানির স্টুটগার্ট শহরের একটি সরণি৷ এভাবে চললে বায়ুদূষণ প্রায় অবধারিত বলা চলে; গাড়ির ধোঁয়ার সঙ্গে কুয়াশা যোগ হয়ে যদি ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়, তবে তো কথাই নেই৷ কিন্তু গাড়ি চলাচল আধুনিক সভ্যতা ও জীবনযাত্রার অঙ্গ৷ তাহলে কি শহরের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় বা রাস্তায় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট কয়েক ধরনের গাড়ি চলা নিষিদ্ধ করেই পার পাওয়া যাবে?
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
অসলোয় বায়ুদূষণ বাড়লে ডিজেল গাড়ি চলা বারণ
নরওয়ের রাজধানীতে ডিজেল গাড়ি নিষিদ্ধের ব্যবস্থা করা হয়েছে ২০১৭ সালের ১৭ই জানুয়ারি থেকে৷ অবশ্য অ্যাম্বুলেন্স ও অন্যান্য সরকারি পরিষেবার যানবাহন ডিজেল হলেও চলতে পারে৷ এছাড়া ২০১৯ সাল থেকে সিটি সেন্টারে সরকারি পার্কিং লট ও গ্যারেজ কমিয়ে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে৷
ছবি: Fotolia/nanisimova
প্যারিসও ডিজেল গাড়ি নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে
২০২৪ সাল থেকে ফ্রান্সের রাজধানীতে ডিজেল গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ হবে; ২০৩০ সাল থেকে প্যারিসে ডিজেল বা পেট্রোল, কোনো ধরনের খনিজ তেলে চলা গাড়ি নিষিদ্ধ করা হবে – অর্থাৎ প্যারিসে শুধু ইলেকট্রিক গাড়ি চলবে৷ বর্তমানে প্যারিসে বায়ুদূষণ একটা বিশেষ মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে, ‘রোটেশন সিস্টেম’ অনুযায়ী শুধুমাত্র জোড় বা বেজোড় নাম্বারপ্লেটের গাড়ি চলতে পারে৷
ছবি: Reuters/C. Platiau
লন্ডনে গাড়ির ভিড়ের মাশুল
লন্ডনের কেন্দ্রে গাড়ি চালাতে গেলে দিনে ১০ পাউন্ড বা প্রায় ১৪ ডলার কিংবা ১১ ইউরো মাশুল গুণতে হয়৷ উদ্দেশ্য – মানুষ যেন গাড়ি নিয়ে শহরের কেন্দ্রে না আসেন৷ ২০০৩ সাল থেকে এই ‘কনজেশ্চান চার্জ’ বসানো হয়েছে৷ রাস্তায় লাগানো যন্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ির নাম্বারপ্লেট চিনে নিতে পারে – অর্থাৎ ধরতে পারে, ‘ভিড়ের মাশুল’ দেওয়া হয়েছে কিনা৷ নয়তো ২৪০ পাউন্ড অবধি জরিমানা!
ছবি: picture-alliance/dpa
বিশ্বের সবচেয়ে সাইকেল বান্ধব শহর
কোপেনহেগেনে ২০১৯ সাল থেকে ডিজেল গাড়ি ঢোকা বন্ধ করার কথা ভাবা হচ্ছে৷ বর্তমানে ডেনমার্কের রাজধানীতে ৩০০ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা শুধুমাত্র সাইকেল আরোহীদের জন্য রাখা; শহরের অর্ধেক বাসিন্দা সাইকেলে চড়ে অফিস যান৷ উদ্দেশ্য – সাইকেল চালানো যেন গাড়ি চালানোর চেয়ে শুধু সস্তাই নয়, নির্ঝঞ্ঝাটও হয়৷
ছবি: picture-alliance/Hans Ringhofe
মাদ্রিদের বিভিন্ন এলাকা শুধু পথচারীদের
মাদ্রিদের রয়্যাল থিয়েটারের সামনের চত্বরটিতে ইতিমধ্যেই গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ, অন্যান্য এলাকাও ‘পেডেস্ট্রিয়ান জোন’ ঘোষণা করার প্রচেষ্টা চলেছে৷ লক্ষ্য হলো আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে স্পেনের রাজধানীর গোটা কেন্দ্রীয় অংশটি শুধুমাত্র পথচারীদের জন্য খোলা রাখা৷ এর কারণ হলো, মাদ্রিদের চারপাশে পাহাড় থাকার ফলে দূষিত বায়ু শহরেই আটকা পড়ে ও ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়৷
হেলসিংকির ট্রাফিক অ্যাপ
ভবিষ্যতে হেলসিংকিতে সরকারি পরিবহণ আরো ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠবে, কেননা, আগামী দশ বছরের মধ্যে সব ধরনের সরকারি পরিবহণকে একটি অ্যাপ-এ অন্তর্ভুক্ত করা হবে; বাস, স্বয়ংক্রিয় গাড়ি ও (ছবিতে) মিনিবাসগুলির কোনো নির্দিষ্ট রুট থাকবে না ৷ তারা অ্যাপ অনুযায়ী যাত্রী তুলে নিতে পারবে৷ এরপরে ফিনল্যান্ডের রাজধানীতে সবাই যদি গাড়ি কেনাই ছেড়ে দেয়, তো আশ্চর্য হবার কিছু থাকবে না৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/Li Jizhi
দিল্লিতে ইলেকট্রিক রিকশা
ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লি কুয়াশা বা ধোঁয়ার জন্য আজ বিশ্বসেরা৷ কাজেই সেখানে এই ইলেকট্রিক রিকশাগুলি একটি আশার আলো বৈকি৷ ২০৩০ সালের মধ্যে দিল্লিতে যাবতীয় নতুন গাড়ি বিদ্যুৎচালিত হবে, এই হলো পরিকল্পনা; অর্থাৎ ডিজেল বা পেট্রোলে চলা গাড়ি কুয়াশার মতোই কালে বিলীন হবে৷