যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক মিল্কিকে হত্যার সময়কার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে৷ ব্লগ, ফেসবুকে এই হত্যাকাণ্ডের ফুটেজ শেয়ার করেছেন অসংখ্য মানুষ৷ সন্দেহভাজন খুনিরাও ধরা পড়েছে দ্রুত৷
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩১.০৭.১৩) গভীর রাতের ঘটনা৷ গাড়ি থেকে নেমে গুলশানের একটি বিপনি বিতানে ঢুকছিলেন যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক মিল্কি৷ হঠাৎ সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি ও টুপি পরা এক যুবক মিল্কিকে গুলি করতে শুরু করে৷ আততায়ী বাম হাতে মোবাইল নিজের কানে ধরে রেখে ডান হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করতে থাকে৷
এই আততায়ীকে যুবলীগেরই আরেক নেতা এইচ এম জাহিদ সিদ্দিক তারেক বলে নিশ্চিত করেছে ব়্যাব৷ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে এই তথ্য৷
গোলাম আযমের শাস্তি, প্রাণহানি
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১৷ তবে এই রায়ে সন্তুষ্ট নয় সাধারণ জনতা৷ এই নিয়ে সংঘর্ষে কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছে৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
আমৃত্যু কারাদণ্ড
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে পাঁচ ধরনের অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে – একথা উল্লেখ করে সোমবার (১৫.০৭.১৩) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বলেছে, ‘‘তার অপরাধ মৃত্যুদণ্ডের৷ তবে আযমের বয়স এবং অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে তাকে আমৃত্যু কারাগারে রাখার জন্য ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে৷’’
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
মুক্তিযুদ্ধ
১৯৭১ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ৷ আন্তর্জাতিক মহল মনে করে, সেই যুদ্ধে তিন থেকে পাঁচ লাখ প্রাণহানি হয়৷ তবে বাংলাদেশের দাবি, মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ লাখ এবং সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দুই লাখের মতো বাংলাদেশি নারীকে ধর্ষণ করেছিল৷
ছবি: AP
সন্ত্রাসী সংগঠন ‘‘জামায়াতে ইসলামী’’
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সোমবার দেওয়া রায়ে তার দল জামায়াতে ইসলামীকে ‘‘সন্ত্রাসী সংগঠন’’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আদালত৷ রায়ে বলা হয়েছে, ‘‘গোলাম আযম একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই সংগঠনের প্রধান ছিলেন৷ তার নির্দেশে এবং পরিকল্পনাতেই একাত্তরে বাংলাদেশে হত্যা, ধর্ষণ এবং লুটতরাজসহ মানবতাবিরোধী অপরাধগুলি সংঘটিত হয়৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
‘‘তার মৃত্যুদণ্ডই প্রাপ্য ছিল’’
এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক মুনতাসির মামুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আদালত বলেছে তার অপরাধ মৃত্যুদণ্ডের৷ তাই তার মৃত্যুদণ্ডই প্রাপ্য ছিল৷’’ অন্যদিকে বীরাঙ্গনা ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিনী রায় শুনে পুরোপুরি হতাশ৷ তিনি বলেন, ‘‘মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কোনো শাস্তি নেই গোলাম আযমের জন্য৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
নিহত কমপক্ষে তিন
সোমবার (১৫.০৭.১৩) গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার দিন স্থানীয় সময় বিকেল ছয়টা পর্যন্ত কমপক্ষে তিন ব্যক্তি নিহত হয়েছে৷ বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের বরাতে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ‘‘কুষ্টিয়ায় রাস্তা ব্লক করার চেষ্টার সময় গণপিটুনিতে প্রাণ হারায় দুই জামায়াতে ইসলামী কর্মী৷ এছাড়া চাপাইনবাবগঞ্জে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারায় আরেক ব্যক্তি৷’’ (ফাইল ফটো)
ছবি: Reuters
সন্তুষ্ট আওয়ামী লীগ
গোলাম আযমের ৯০ বছর কারাদণ্ড হওয়ায় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সরকার এই রায়ে সন্তুষ্ট৷ আদালত স্বাধীনভাবে রায় দিয়েছে৷’’
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
আপিলের ঘোষণা
তবে গোলাম আযমের আইনজীবীদের একজন তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, এই রায় ন্যায়ভ্রষ্ট এবং আবেগতাড়িত৷ তাই এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করবেন৷ আদালতের রায়ে একাত্তরে জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলারও সমালোচনা করেছেন তাজুল ইসলাম৷ তিনি বলেন, ‘‘আদালত তার আওতার বাইরে গিয়ে এই মন্তব্য করেছে৷’’
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
সজাগ গণজাগরণ মঞ্চ
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ গোলাম আযমের বিপক্ষে দেওয়া আদালতের রায় প্রত্যাখ্যান করেছে৷ তাদের দাবি, গোলাম আযমকে ফাঁসি দিতে হবে৷ এই দাবি নিয়ে সোমবার আবারো শাহবাগে সমাবেত হয়েছেন অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড়
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুকে৷ প্রতিবাদ গোলাম আযমের শাস্তি হওয়ায় নয়, বরং তার ফাঁসির আদেশ না হওয়ায়৷ ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আহসান টিটু লিখেছেন, ‘‘এক কথায় খুশি না! ফাঁসি চাই৷’’
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে৷ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল বিএনপি মনে করে, সরকার বিরোধী দলকে দুর্বল করতে এই ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করেছে৷ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
প্রকাশ্যে মিল্কিকে গুলি করার এই দৃশ্য রেকর্ড হয়ে গেছে একটি সিসিটিভি ক্যামেরায়৷ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর তা ছড়িয়ে পড়ে ইন্টারনেটে৷ এই বিষয়ে কমিউনিটি বাংলা ব্লগ সামহয়্যার ইন ব্লগে জহির উদ্দিনের লেখার শিরোনাম, ‘‘মিল্কি হত্যাকাণ্ড সিসি ক্যামেরায় ধরা না পড়লে কি হতো??'' এই ব্লগার লিখেছেন, ‘‘ইসলামিক লেবাস পড়ে নিজেদের দলের মানুষ খুন করলো আওয়ামী নেতা, এরপর? যদি এই সিসি ক্যামেরা না থাকতো তাহলে নিশ্চিতভাবেই এই দায় হয়তো যেতো হেফাজতের উপর অথবা জামায়াতের উপর৷''
ডয়চে ভেলের দ্য বব্স অ্যাওয়ার্ড জয়ী ব্লগার আবু সুফিয়ান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘পাঞ্জাবি, টুপি পইরা যুবলীগ নেতা খুন করলো ছোট বেলার বন্ধুকে৷ সিসিটিভিতে ফ্রন্ট ফুটেজ না পাইয়া যদি শুধু ব্যাক ফুটেজ পাওয়া যাইতো তাইলে কি হইতো? সুবহানআল্লাহ! দোষ পড়তো পাঞ্জাবি-টুপি'র৷''
জাগোবিডি ডটকম নামক একটি ওয়েবসাইটের ফেসবুক পাতায় মিল্কি হত্যাকাণ্ডের পুরো ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে৷ শুধু এই একটি পাতা থেকেই প্রথম বারো ঘণ্টায় ভিডিওটি শেয়ার হয়েছে দু হাজারেরও বেশি বার৷ তপু শেখ সেখানে মন্তব্য করেছেন, ‘‘হায়রে আমাদের সোনার দেশ, একজন মানুষ ওরা গুলি করে মারছে আর বাকি সবাই দাঁড়িয়ে দেখছে, সে যে দলেরই হোক না কেন... সে তো মানুষ, এর নাম আমরা বীরের জাতি???''
কাওসার শাহিনা নামের আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, ‘‘এটা একটা মানুষ আর এত মানুষের সামনে তাঁকে হত্যা করে কিভাবে পালিয়ে যায় হত্যাকারী? তারপর এখানে পুলিশও ছিলো৷ হায়রে দেশ, কোথায় বাস করছি!''