মিশরের তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন তাদেরই সফল করতে হবে
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১১নতুন মিশরের উত্থান, তারুণ্যের মিশর
সেই ছবিই শনিবারের দুনিয়া দেখেছে৷ দেখেছে, গত ১৮ দিন ধরে যে চত্বর থেকে এই বিপ্লবকে বাস্তব করেছে মিশরের তরুণ প্রজন্ম, সেই তাহরির স্কোয়্যারকে তারা নিজেরাই হাত লাগিয়ে পরিষ্কার করছে৷ পোড়া গাড়ি থেকে শুরু করে যাবতীয় আবর্জনা সরাতে ঝাঁটা হাতে নিয়ে পথে নেমে পড়েছে আবালবৃদ্ধবনিতা৷ কাজটাকে তারা দেখছে, দেশের দায়িত্ব পেয়ে কিছু একটা করে দেখানোর মত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে৷ কিন্তু, এ হল তারুণ্যের উৎসাহ আর আবেগের বহিঃপ্রকাশ৷ এটা যথেষ্ট নয়৷
কেন যথেষ্ট নয়?
দরকারি বিষয়৷ আজকের প্রযুক্তি ফেসবুক, টুইটার, ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে দেশের সাধারণ মানুষকে জাগিয়ে তুলে যারা এই বিশ্বের প্রথম সফল ডিজিটাল বিপ্লবকে বাস্তবায়িত করল, তাদের কেউ কী আছে মিশরের প্রশাসনে? নেই৷ তাদের কোন প্রতিনিধিত্বই তৈরি হয়নি সেরকমভাবে৷ সেনাবাহিনী গতকালই কথা দিয়েছে, গণতন্ত্রের পথে দেশকে এগোতে তারা সাহায্য করবে৷ ক্ষমতা দখল করে দেশে সামরিক শাসন কায়েম করবে না৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ওয়াশিংটন, সকলেই স্বাগত জানিয়েছে এই বিবৃতিকে৷ কিন্তু তারপর কী? কারা আসবে ক্ষমতায়? নির্বাচনে এই বিপ্লবের যারা রূপকার তারা যদি অংশ না নেয়, তাহলে আবারও এমন বিপ্লব দেখা যাবে মিশরে৷ কারণ তরুণ প্রজন্মের পছন্দ নাও হতে পারে সেই সরকার, যেখানে তারা কোথাও হাজির নেই৷ কারণ, স্বপ্নটা প্রথমে ওরাই দেখেছিল৷ আরও বড় কারণ হল, স্বপ্নটাকে সফল করতে হলে চাই ওদের সক্রিয় অংশগ্রহণ৷
সেই অংশগ্রহণের প্রস্তুতিও সেভাবে নেই
সেখানেই কিছুটা হলেও মার খেয়ে গেছে মিশরের বিপ্লব৷ কারা সংগঠিত করবে এই বিপ্লব পরবর্তী মিশরকে৷ সেটাই প্রশ্ন৷ ওদিকে আলজেরিয়া কিন্তু মিশরকে দেখেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছে৷ তাদের সামনেও একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখতে হবে মিশরের তরুণ প্রজন্মকে৷ তারা একনায়কতন্ত্রকে বিদায় করতে সফল হয়েছে৷ কিন্তু তার ঠিক পরের দায়িত্বটা অনেক বেশি গুরুভার৷ সেটা হল দেশকে তরুণদের পছন্দমত করে গড়ে তোলা৷ আজ মিশর যেদিকে যাবে, আগামীকাল আলজেরিয়ার মত দেশগুলোও সেদিকেই পা বাড়াবে৷
আলজেরিয়া চাইছে ১৯ বছরের একনায়কতন্ত্রের অবসান ঘটাতে
কাজটা কিন্তু বেশ কঠিন৷ বিশেষ করে আলজেরিয়ার মত দেশে, যেখানে সরকারপক্ষের মাফিয়া মাস্তানরা রীতিমত প্রতাপশালী৷ প্রেসিডেন্ট বুতেলফিকার জন্য রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতে তারা তৈরি৷ যে কারণে আলজিরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে শনিবারের মিছিলে মোট হাজার দুয়েক মানুষ অংশ নিয়েছেন৷ আস্তে আস্তে সেদেশেও বিপ্লবের আগুন ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা৷ যদিও ইতিমধ্যেই দমননীতির পথ নিয়েছে সরকার৷ অতএব মিশরের মত জায়গায় আসতে আলজেরিয়ার এখনও বেশ সময় লাগবে৷
প্রতিবেদন : সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা : হোসাইন আব্দুল হাই