মিশরে অব্যাহত বিক্ষোভ ও সহিংসতায় নিহত অন্তত ৩৫ জন
২১ নভেম্বর ২০১১সর্বশেষ পরিস্থিতি
সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের পতনের পর গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে মিশর৷ পরিকল্পনা অনুসারে ২৮শে নভেম্বর সেখানে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা৷ অথচ এরই মধ্যে আবারও বিক্ষোভ আর সংঘর্ষে উত্তপ্ত মিশর৷ রাজধানী কায়রোয় তিন দিন ধরে চলছে বিক্ষোভকারী এবং নিরাপত্তা কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া৷ এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৫ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে মর্গ কর্তৃপক্ষ৷ তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে মৃতের সংখ্যা ২২ বলে জানানো হয়েছে৷ আহতের সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ৷ বিক্ষোভের দাবানল রাজধানী কায়রো ছাড়িয়ে আলেকজান্দ্রিয়া, আসওয়ান এবং সুয়েজ শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে বলে খবরে প্রকাশ৷
সরকার ও সামরিক বাহিনীর পদক্ষেপ
এদিকে, অব্যাহত বিক্ষোভ এবং বিক্ষোভকারীদের দমনে সরকারের ভুল পদক্ষেপের প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন মিশরের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী এমাদ আবু গাজি৷ সরকারি বার্তা সংস্থা মেনা জানিয়েছে, সামরিক বাহিনীর শীর্ষ পরিষদের কাছে পদত্যাগ পত্র হস্তান্তর করেছেন মন্ত্রী গাজি৷ তবে সোমবার দেশটির সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, সেনা সদস্যরা তাহরির চত্বরে যায়নি বরং বিক্ষোভকারীরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হামলার চেষ্টা করে৷ সেনা কমান্ডের উপ-প্রধান জেনারেল সাঈদ আব্বাস এক বিবৃতিতে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বিক্ষোভকারী এবং মন্ত্রণালয় ভবনের মাঝে প্রতিরক্ষা ব্যুহ গড়ে তোলে সেনা সদস্যরা৷ বিক্ষোভকারীরা যদি অনুরোধ করে সেনা সদস্যদের তাহরির চত্বরে গিয়ে তাদের প্রতিরক্ষার জন্য কাজ করতে, তাহলে সেনা সদস্যরা সেখানেও বিক্ষোভকারীদের যে কোন সহিংসতার হাত থেকে রক্ষার জন্য কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে৷
আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া
মিশরে চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটাতে উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জার্মানি৷ জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলের পক্ষে এক মুখপাত্র সোমবার বিবৃতিতে বলেন, ‘‘সেখানে শক্তি প্রয়োগ এবং এর ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষের হতাহতের ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক৷'' পররাষ্ট্র মন্ত্রী ভেস্টারভেলে উভয় পক্ষকে সহিংসতার পথ পরিহার করে গণতন্ত্রের পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন ঐ মুখপাত্র৷ তিনি আরো জানান, মধ্যপ্রাচ্যে জার্মানির বিশেষ দূত বরিস রুগে শীঘ্রই মিশরের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে সেখানে যাবেন৷
মিশরের কয়েকদিনের এই সহিংস ঘটনাকে উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী উইলিয়াম হেগ৷ তিনি মিশরের সামরিক কর্মকর্তাদের প্রতিশ্রুতি মাফিক সেখানে গণতন্ত্রের বিকাশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান৷ এছাড়া গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীদের হতাহতের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে ফ্রান্স৷ পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আয়োজনেরও আহ্বান জানায় প্যারিস৷ সোমবার ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ব্যার্না ভালেরো বলেন, ‘‘গত কয়েকদিনের সংঘর্ষে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ফ্রান্স৷ সেখানে সহিংসতায় এতো মানুষের প্রাণহানির নিন্দা জানাই আমরা৷''
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক