প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসির পদত্যাগের দাবিতে মিশরে চলছে বিক্ষোভ৷ শনিবার রাতে আন্দোলনকারীদের উপর টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ ও হামলা চালিয়েছে পুলিশ৷
বিজ্ঞাপন
মিশরের বন্দর নগরী সুয়েজে দ্বিতীয় দিনের মত বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে৷ প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে অন্য শহরগুলোতেও৷ কায়রোর বিখ্যাত তাহরির চত্বরে যাতে কেউ জড়ো হতে না পারে সেজন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক সদস্যকে সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে৷
মিশরে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির পতনের পর ২০১৩ সালে বিশেষ আইন করে যেকোন বিক্ষোভ সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ক্ষমতাসীন সরকার৷ এরপর এবারই প্রথম কোন সরকার বিরোধী আন্দোলনের সূচনা হল৷
আন্দোলনের শুরু যেভাবে
জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মিশরের ক্ষমতাসীন সরকারের উপর জনগণের অসন্তোষ ক্রমশ বাড়ছে৷ তার উপর ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ১২০০ কোটি ডলারের ঋণের বিনিময়ে খরচ কমানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে আসছে সিসি সরকার৷ বর্তমানে প্রতি তিনজনের একজন মিশরীয় দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে৷
এমন অবস্থায় মোহাম্মদ আলী নামের সিসি বিরোধী একজন নির্বাসিত ব্যবসায়ী অনলাইনে প্রতিবাদের ডাক দেন ৷ শুক্রবার সব গুরুত্বপূর্ণ চত্বরে মিশরীয়রা যাতে লাখে লাখে সিসির বিরুদ্ধে র্যালিতে যোগ দেন সেই আহবান জানিয়ে তিনি গত সপ্তাহে এক ভিডিও পোস্ট করেন৷ ফেইসবুকে এই আবেদনে তিনি বলেন, ‘‘এটা জনগণের বিক্ষোভ... আমাদের সবাইকে এক হয়ে যেতে হবে... এবং সংগঠিতভাবে প্রধান চত্ত্বরগুলোতে জড়ো হতে হবে৷‘‘ সিসি এবং সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও তোলেন তিনি৷ তার এই ভিডিও দ্রুতই ভাইরাল হয়ে যায়৷
তার আহবানে সাড়া দিয়ে শুক্রবার স্থানীয় দুই শক্তিশালী ক্লাবের ফুটবল ম্যাচ শেষে কয়েকশো মিশরীয় রাজধানীর কায়রোতে জড়ো হন৷ সিসির পদত্যাগের দাবি জানিয়ে তারা স্লোগান দিতে থাকেন৷ এক পর্যায়ে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ বাধে৷ এসময় ৭৪ জনকে গ্রেপ্তার করে নিরাপত্তা বাহিনী৷
শনিবার রাতে বিক্ষোভকারীদের একটি দল সুয়েজের শহরতলীতে জড়ো হয়৷ নিরাপত্তাবাহিনী সড়কে ব্যারিকেড এবং সাঁজোয়া যান দিয়ে তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বাধে৷ পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসে অনেকেই আহত হয়েছেন বলে এএফপিকে জানিয়েছেন এক আন্দোলনকারী৷
সরকার যা বলছে
প্রেসিডেন্ট সিসি তাঁর বিরুদ্ধে আনা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷ জনগণের প্রতি তিনি নিজেকে ‘সৎ আর বিশ্বস্ত‘ হিসেবেও দাবি করেছেন৷ এই মুহূর্তে তিনি নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন৷ আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তাঁর ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে৷
এফএস/এআই (এএফপি, রয়টার্স)
আরব বসন্তের পাঁচ বছর পর কোন দেশের কী অবস্থা
টিউনিশিয়ায় শুরু৷ এরপর সেটা ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য দেশে৷ কিন্তু যে লক্ষ্য নিয়ে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল সেই লক্ষ্য কি পূরণ হয়েছে?
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Khalil Hamra
নিজ গায়ে আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ
২০১০ সালের ১৭ই জানুয়ারি টিউনিশিয়ার সিদি বুজিদ শহরে মোহামেদ বুয়াজিজি নামের এক ফেরিওয়ালা নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন৷ ঐ ঘটনার প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হলে ২০১১ সালের ১৪ই জানুয়ারি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বেন আলিকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল৷ আরব বসন্তের শুরু তখন থেকেই৷
ছবি: AP
বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে টিউনিশিয়ার অনেক সমস্যার মধ্যে একটি হচ্ছে নিরাপত্তা সমস্যা৷ ২০১৫ সালের জুলাই মাসে সেখানকার একটি পর্যটন এলাকায় সন্ত্রাসী হামলা হলে ৩৮ জন নিহত হন৷ এর বেশিরভাগই ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Bounhar
মিশর
টিউনিশিয়ার ঢেউয়ের প্রথম আঁচড় লাগে মিশরে৷ সেখানে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয় ২০১১ সালের ২৫শে জানুয়ারি৷ এর কদিন পর ১১ই ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন ৩০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা হোসনি মুবারক৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Abed
বর্তমান পরিস্থিতি
মিশরে হোসনি মুবারককে বিদায় করে বিশেষ লাভ হয়নি৷ আরেক সামরিক প্রধান আবদেল ফাতাহ আল-সিসি দেশের প্রথম বেসামরিক এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুর্সিকে কারাবন্দি করে মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থকদের বিরুদ্ধে কড়া হাতে দমন অভিযান চালাচ্ছেন৷
ছবি: Reuters
লিবিয়া
১৯৬৯ সাল থেকে ২০১১ পর্যন্ত লিবিয়া শাসন করেন মুয়ম্মর গাদ্দাফি৷ এরপর আরব বসন্তের ছোঁয়া লিবিয়া স্পর্শ করলে এক পর্যায়ে লিবিয়া জুড়ে আন্দোলন শুরু হয়৷ যোগ দেয় আন্তর্জাতিক বাহিনী৷ ২০১১ সালের জুন মাসে মানবতাবিরোধী অপরাধে গাদ্দাফিকে অভিযুক্ত করা হয়৷ এর কয়েক মাস পর অক্টোবরের ২০ তারিখ তাঁকে হত্যা করা হয়৷
ছবি: Christophe Simon/AFP/Getty Images
বর্তমান পরিস্থিতি
লিবিয়ার উপর এখন সে দেশের সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই৷ ২০১২ সালে গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি সরকার ক্ষমতায় গেলেও শান্তি ফিরে আসেনি৷ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মরক্কো
দেশটিকে রাজতন্ত্র বিদ্যমান৷ ১৯৯৯ সাল থেকে দেশ পরিচালনায় আছেন রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদ (ছবি)৷ তবে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফেসবুকে একটি ইভেন্ট খুলে সংস্কার ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার দাবি জানানো হয়৷ বিক্ষোভে হতাহতের ঘটনাও ঘটে৷ এরপর মার্চের ১০ তারিখে সংস্কারের ঘোষণা দেয় রাজতন্ত্র৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Jocard
বর্তমান অবস্থা
গণভোটের মাধ্যমে রাজার কিছু ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও সংসদকে দেয়া হয়৷ রাজা আর এখন আগের মতো যাঁকে খুশি তাঁকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে পারেন না৷ এ জন্য তাঁকে সংসদে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া দল থেকে একজনকে বেছে নিতে হয়৷