1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মিশরে মুবারকের ছায়া ও পশ্চিমা বিশ্বের আচরণ

ক্যার্স্টিন ক্নিপ/এসবি২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

মিশরের এক আদালত নাগরিক অধিকার কর্মী আলা আবদেল-ফাতাহ’কে নিষিদ্ধ বিক্ষোভে অংশ নেবার দায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে৷ ডিডাব্লিউ-র ক্যার্স্টিন ক্নিপ মনে করেন, এই রায় সে দেশের জন্য এক ব্যর্থতা৷

Ägypten Alaa Abd el-Fattah Blogger
ছবি: CC BY-SA 2.5/Common Good

বে-আইনি বিক্ষোভে অংশ নেবার দায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড৷ এমন রায় শুনে যারা মিশরের বর্তমান সরকারের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার কথা ভাবছেন, পথে নেমে প্রতিবাদ করার আগে তাঁরা দু’বার ভাববেন৷ আলা আবদেল-ফাতাহ’র মতো এত খ্যাতিমান নাগরিক অধিকার কর্মীর দশা দেখে সেই উপলব্ধি আরও গভীর হবে৷ মিশরের মানুষ বুঝতে পারছেন, শুধু খ্যাতির জোরে কড়া শাস্তি এড়ানো সম্ভব নয়৷ অন্যদিকে আবার এটাও দেখা যাচ্ছে, খ্যাতির মাত্রা কম হলে শাস্তির মেয়াদ বেড়ে যেতে পারে৷ কারণ ফাতাহ’র সঙ্গে অন্য যে কম পরিচিত ব্যক্তি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের কয়েকজনের শাস্তির মেয়াদ ১৫ বছর৷

মিশরের মানুষের কাছে এই রায় কোনো বিচ্ছিন্ন প্রবণতা নয়৷ সম্প্রতি মিশরের আদালতে এমন অনেক রায় শোনা গেছে৷ বেশ কয়েকটি মামলায় মুসলিম ব্রাদারহুডের কয়েক’শো সদস্যের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় শোনানো হয়েছে৷ হাজার-হাজার সরকার-বিরোধী নেতাকর্মী জেলে আটক রয়েছে৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশানাল স্থানীয় সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানাচ্ছে, শুধু গত বছরের গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত রাজনৈতিক কারণে ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ কারাগারে আটক ছিল৷ তাদের মধ্যে বেশিরভাগের বিরুদ্ধে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগও আনা হয়নি৷

বিচার বিভাগ ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে মিলের অভাব নেই৷ ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’ সংগঠন সংবাদমাধ্যমের অধিকারের ব়্যাংকিং-এ ১৮০টি দেশের মধ্যে মিশরকে ১৫৭ স্থানে রেখেছে৷ গত বছর সিনাই উপদ্বীপে এক রক্তাক্ত হামলার পর ১৭টি বেসরকারি ও সরকারি সংবাদপত্রের সম্পাদকরা কোনো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে প্রশ্ন তোলার বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছিলেন৷ তাঁরা এই অবস্থানকে দেশের কঠিন সময় দেশাত্মবোধের পরিচয় হিসেবে তুলে ধরেন৷ অন্যরা এর মধ্যে ‘সেল্ফ সেন্সরশিপ’-এর গন্ধ পেয়েছেন৷

সংবাদমাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী, সরকার ইন্টারনেটও নিয়ন্ত্রণ করতে চায়৷ কিছু ‘ধ্বংসাত্মক আইডিয়া’ বন্ধ করাই নাকি এর উদ্দেশ্য৷ এর মধ্যে রয়েছে ‘বিক্ষোভের ডাক’, ‘ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত’, ‘শ্লেষ, মানহানি ও অশ্লীলতা’ ইত্যাদি৷

সরকার বলছে, দেশের স্থিতিশীলতা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের দায়িত্ববোধই এই রাজনৈতিক নীতির কারণ৷ কিন্তু এই সন্দেহ দানা বাঁধছে, যে ২০১১ সালে বিপ্লবের আগের সময়ে দেশকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াই তাদের আসল উদ্দেশ্য৷ তখন প্রায় কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই দেশ শাসন করা যেত৷ কেউ প্রতিবাদ জানালেও তা অগ্রাহ্য করা যেত৷ সে সময়কার নীরবতা মোটেই সরকারি নীতির প্রতি জনসমর্থন ছিল না, তার কারণ ছিল সরকারি রোষের ভীতি৷ রাজনৈতিক ‘এলিট শ্রেণি’ তখনো এর পরোয়া করেনি, আজও করে না৷

তবে সেই যুগ আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে৷ সিনাই উপদ্বীপে সন্ত্রাসবাদ দেখিয়ে দিচ্ছে যে, সবাই সরকারের কড়া নীতির পরোয়া করে না৷ তার উপর প্রশ্ন উঠছে, সরকারের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী সংগ্রামের লক্ষ্য কে? সিনাই উপদ্বীপে ‘ইসলামিক স্টেট’-এর সমর্থকরা, নাকি যারা ধর্মীয় অথবা ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থান থেকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে আল-সিসি’র রাজনৈতিক নীতির বিরোধিতা করছে, তারা? মিশরের আদালতের সাম্প্রতিকতম রায় দেখিয়ে দিচ্ছে, যে ‘রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ’-এর সংজ্ঞার আওতায় অনেক কিছুই ধরা যেতে পারে৷

বছর চারেক আগে মুবারক সরকারের পতন হয়েছিল৷ ইউরোপ ও অ্যামেরিকার কাছে এই প্রশাসন ছিল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার নোঙর৷ এই মনোভাব মিশর সহ আরব বিশ্বের অনেক স্বৈরাচারী দেশের জনমানসে পশ্চিমা বিশ্ব সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি করেছে৷ স্বৈরচারী শাসকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বিদ্রোহের মাধ্যমে ফেটে পড়েছে৷ সেই বিদ্রোহে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ দিয়েছে৷ মৃত্যুর এই প্রবণতা তখনই থামবে, যখন মধ্যপ্রাচ্যে গণতান্ত্রিক সরকার ও সত্যিকারের নিরপেক্ষ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হবে৷ তা না হলে জানতে হবে, এক বিপ্লবের সমাপ্তি মানেই আরেক বিপ্লবের সূচনা৷

ডিডাব্লিউ-র ক্যার্স্টিন ক্নিপছবি: DW/P. Henriksen
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ