মুসলিম ব্রাদারহুডের শীর্ষ নেতা মাহমুদ ইজ্জতের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সহিংসতায় মদত দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
মিশরের ৭৬ বছর বয়সী মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা ইজ্জতকে সন্ত্রাসবাদী কাজে জড়িত থাকার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল আদালত। সরকারি সংবাদপত্র আল-আরহাম এই খবর জানিয়েছে। মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোরসিকে সেনাবাহিনী সরিয়ে দেয়ার পর ইজ্জত জনগণকে সহিংস হওয়ার জন্য উস্কানি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
আগে ধারণা ছিল তিনি দেশ থেকে পালিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ গত বছর অগাস্টে কায়রো থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। তার বাসভবন থেকে এনক্রিপ্টেড মেসেজ পাওয়া যায় বলে পুলিশ জানিয়েছিল। সেই সব বার্তা তিনি দেশ ও বিদেশের ব্রাদারহুডের সদস্যদের পাঠিয়েছিলেন।
কী অভিযোগ?
ইজ্জতের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তিনি ব্রাদারহুড সদস্য ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘাতের সময় তার সংগঠনের সদস্যদের হাতে অস্ত্র তুলে নিতে বলেছিলেন। ২০১৫ সালে সাবেক প্রসিকিউটার জেনারেলের হত্যার ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ। সাবেক প্রসিকিউটার জেনারেল ছিলেন মুসলিম ব্রাদারহুড আন্দোলনের বিরোধী।
মিশরের বিপ্লবের নেতারা কে, কোথায়?
২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি মিশরে বিপ্লব শুরু হয়েছিল৷ ১৭ দিন পর ১১ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে বিপ্লব শেষ হয়৷ বিপ্লব আয়োজনের নেতারা কে, কোথায় আছেন- তা জানাতে এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ওয়ায়েল গোনিম
পুলিশের নির্যাতনে ব্লগার খালেদ সায়িদের মৃত্যুর প্রতিবাদে ফেসবুকে ‘আমরা সবাই খালেদ সায়িদ’ নামে একটি পাতা খুলেছিলেন তিনি৷ তখন দুবাইয়ে থাকতেন গোনিম৷ সায়িদকে চিনতেন তিনি৷ গোনিমের খোলা ফেসবুক পাতা মিশরে ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি শুরু হওয়া বিপ্লব আয়োজনে ভূমিকা রেখেছিল৷ ৪০ বছর বয়সি গোনিম এখন যুক্তরাষ্ট্রের থাকেন৷ মিশরের বর্তমান অবস্থা নিয়ে অনলাইনে তার লেখা পড়ে এখন তাকে হতাশ ও স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে বলে মনে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Elfiqi
মহিনুর এল-মাসরি
মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা আইনজীবী এল-মাসরি ব্লগার সায়িদের মৃত্যুতে প্রতিবাদ শুরু করা ব্যক্তিদের মধ্যে একজন৷ ৩৫ বছর বয়সি এল-মাসরি বেশ কয়েকবার জেল খেটেছেন৷ ২০১৯ সালে বন্দিদের রক্ষা করতে সরকারি কৌঁসুলির কার্যালয়ে গেলে তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়৷ এখনো তিনি জেলে আছেন৷ তার মামলার শুনানি হচ্ছে না৷
ছবি: picture alliance/AA/M. Mahmoud
আলা আবদেল-ফাত্তাহ
বিপ্লবের শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন তিনি৷ এ কারণে বেশ কয়েকবার জেল খাটতে হয়েছে তাকে৷ পাঁচ বছর কারাগারে থাকার পর ২০১৯ সালের মার্চে মুক্তি পেয়েছিলেন তিনি৷ তবে এর ছয়মাস পর আবারো তাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এখনো তিনি জেলে আছেন৷
ছবি: CC BY-SA 2.5/Common Good
আহমেদ মাহের
২০০৮ সালের ৬ এপ্রিল মিশরের এল-মহাল্লা এল-কুবরা শিল্পনগরীর শ্রমিকরা একটি প্রতিবাদের ডাক দিয়েছিলেন৷ তাদের সমর্থনে ফেসবুকে প্রতিবাদ আয়োজন করেছিলেন মাহেরসহ কয়েকজন৷ এই আন্দোলন ২০১১ সালের আন্দোলন আয়োজনে সহায়তা করেছিল৷ বেশ কয়েকবার জেল খাটা ৪০ বছর বয়সি মাহের ২০১৭ সালে মুক্তি পান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এসরা আবদেল-ফাত্তাহ
বিপ্লব চলাকালীন সরাসরি সম্প্রচার করার কারণে তিনি ‘ফেসবুক গার্ল’ নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন৷ ২০১১ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্যও তিনি মনোনীত হয়েছিলেন৷ তাকে বেশ কয়েকবার আটক করা হয়েছে৷ সবশেষ ২০১৯ সালের অক্টোবরে তাকে আটক করা হয়৷ এখনও তিনি কারাগারে আছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Desouki
আহমেদ দুমা
মিশরের প্রতিটি সরকারের আমলে তিনি আটক হয়েছেন৷ ২০১১ বিপ্লবের শুরুর প্রতিবাদকারীদের মধ্যে দুমা একজন৷ সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগ করার দায়ে ২০১৯ সালে তাকে ১৫ বছরের জেল দেয়া হয়৷ এছাড়া দুই কোটি ৮৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে৷ ৩২ বছর বয়সি দুমা এখনও কারাগারে আছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আসমা মাহফুজ
২৫ জানুয়ারির প্রতিবাদের সপ্তাহখানেক আদে সবাইকে বিক্ষোভে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন তিনি৷ তার এই ভিডিও অনেককে প্রতিবাদে অংশ নিয়ে উৎসাহ দেয়৷ মাহফুজকে কখনও গ্রেপ্তার করা না হলেও মিশরের বাইরে ভ্রমণ করার বিষয়ে তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা আছে৷ ৩৫ বছর বয়সি এই একক মা এখন তার দুই সন্তান লালনপালন নিয়ে ব্যস্ত আছেন৷ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে আছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মোহাম্মদ আল বারাদেই
৭৮ বছর বয়সি এই কূটনীতিক পেশাজীবনের বেশিরভাগ সময়ই দেশের বাইরে কাটিয়েছেন৷ তবে ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি বিপ্লব শুরুর দুইদিন পর তিনি দেশে ফিরেছিলেন৷ ২০১৩ সালে তিনি অন্তর্বতী ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পেয়েছিলেন৷ তবে একমাস পর ৫০০-র বেশি মুরসি সমর্থককে হত্যার ঘটনায় পদত্যাগ করেন৷ এরপর তিনি অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় চলে যান৷ এখন তিনি সেখানেই আছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
ইজ্জতের আইনজীবীরা অবশ্য এই রায় সম্পর্কে কিছু বলেননি। তবে ব্রাদারহুড আগে জানিয়েছিল, ইজ্জতের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালে তার অনুপস্থিতিতে আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তাকে গ্রেফতারের পর আবার বিচার শুরু হয়।
২০১৩ থেকে গ্রেপ্তার হওয়া পর্যন্ত তিনি ছিলেন মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রধান।
ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে
২০১৪ সাল থেকে সেনা প্রধান আব্দেল ফতাহ এল-সিসসি প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। তিনি নানাভাবে মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রভাব কম করার চেষ্টা করছেন। মোরসি ও ব্রাদারহুড সমর্থকরা ২০১৩ সালে কায়রোতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। তখন সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে কয়েকশ মানুষ প্রাণ হারান। সাম্প্রতিক সময়ে মিশরের বিচারকরা কয়েকশ মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা ও কর্মীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।