একদিকে এভাবে সরকারবিরোধী অবস্থানে সমর্থকদের অনড় থাকতে উদ্বুদ্ধ করছে মুসলিম ব্রাদারহুড৷ অন্যদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্রাদারহুড সমর্থকদের বিক্ষোভ থামাতে মরিয়া৷ মিশর আবার বিস্ফোরণোন্মুখ৷
বিজ্ঞাপন
দেশের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে ক্ষমতাচ্যুত হবার পর থেকে মিশরের রাজনৈতিক সংকট নতুন রূপ নিয়েছে৷ অবশ্য কায়রোসহ দেশের অনেক শহরের রাস্তার চিত্রই বদলায়নি৷ আগে যেখানে ছিল মুরসিবিরোধীদের ভিড়, সেখানে এখন মুরসিসমর্থকরা সোচ্চার৷ আগে ছিল মুরসির পতনের দাবি, এখন দাবি তাঁকে মুক্ত করার – ক্ষমতায় ফেরানোর৷ মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থকদের রুখতে খুব কঠোর অবস্থান নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার৷ বিক্ষোভরত মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থকদের রাস্তা থেকে সরাতে পুলিশকে সক্রিয় হতে বলেছে মন্ত্রীপরিষদ৷ সেক্ষেত্রে আরো রক্তক্ষয়, আরো প্রাণহানির আশঙ্কা৷ গত শনিবার একদিনেই সারা দেশের তাঁদের ৮০ জন সমর্থক মারা গেছে বলে দাবি করে মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষ থেকে বিক্ষোভরতদের প্রতি কোনো অবস্থাতেই রাজপথ না ছাড়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে৷ কায়রোর রাজপথে মাইকে মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থকদের প্রয়োজনে মৃত্যুও বরণ করে নিতে উদ্বুদ্ধ করতে বলা হচ্ছে, ‘‘শহিদরা মরেনা, শহিদরা বেহেশতে যায়৷''
উত্তাল মিশর
মিশরের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিলেন আদলি মনসুর৷ এবার দ্রুত নির্বাচনের পালা৷ একটানা বিক্ষোভের পর বুধবার সামরিক বাহিনী নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুরসি-কে অপসারণ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শপথ নিলেন অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট
আদলি মনসুর এতকাল সাংবিধানিক আদালতের প্রধান ছিলেন৷ আপাতত তাঁর হাতেই ক্ষমতার রাশ চলে এলো৷ শপথ গ্রহণ করে তিনি মুসলিম ব্রাদারহুড-এর প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ প্রেসিডেন্ট মনসুর বলেন, তারাও দেশের অংশ এবং জাতির ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাদের অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হলো৷
ছবি: picture-alliance/AP
নতুন নির্বাচনের ঘোষণা
আগামী নির্বাচন পর্যন্ত দেশ চালাবেন মনসুর৷ সর্বদলীয় এক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শীর্ষে থাকবেন তিনি, যদিও সেই সরকারের রূপরেখা এখনো স্পষ্ট নয়৷ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আবদেল ফাতাহ আল সিসি (ছবিতে দেখা যাচ্ছে) এক টেলিভিশন ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের পরিকল্পনা তুলে ধরেন৷ নতুন নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো স্থির করা হয় নি৷
ছবি: picture alliance/AA
সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি
কায়রোর পরিস্থিতি আপাতত শান্ত৷ এর অন্যতম প্রধান কারণ অবশ্যই ক্ষমতাকেন্দ্রে রদবদলের পর গোটা শহরে সৈন্যদের উপস্থিতি৷ যেমন গিজা এলাকায় এই সাঁজোয়া গাড়িটি দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ কাছেই কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়৷
ছবি: Getty Images
দুই পক্ষের সংঘর্ষ
মুরসির অনুগামী ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষে কায়রোর উত্তর শহরতলি, আলেক্সান্ড্রিয়া সহ দেশের কিছু প্রান্তে হতাহতের খবর পাওয়া গেছে৷
ছবি: picture alliance/AA
তাহরির চত্বরে উৎসব
মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হবার পর কায়রোর তাহরির চত্বরে লক্ষ লক্ষ মানুষের জমায়েত দেখা যায়৷ সামরিক বাহিনী অবিলম্বে জানিয়ে দিয়েছিল যে এক বেসমারিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷
ছবি: Reuters
আনন্দে আত্মহারা
কয়েক দিন ধরে গণবিক্ষোভের পর মুরসি-বিরোধীরা সামরিক বাহিনীর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে৷ মুরসির নেতৃত্বে সরকার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হলেও অনেকেই ক্ষুণ্ণ হয়েছিল৷ তাদের অভিযোগ, মুরসি দেশের মধ্যে চরম বিভাজনের সৃষ্টি করেছিলেন ও মানুষের জীবন দূর্বিসহ করে তুলেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বেপরোয়া সমর্থক
মুসলিম ব্রাদারহুড-এর সদস্যরা ও প্রেসিডেন্ট মুরসির অন্যান্য সমর্থকরা কায়রোর এক মসজিদে তাদের প্রিয় নেতার ছবি তুলে ধরেছে৷ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তখন সামরিক বাহিনীর বক্তব্য প্রচারিত হচ্ছিল৷
ছবি: Reuters
মুসলিম ব্রাদারহুড-এর রোষ
মুরসি নিজে সামরিক বাহিনীর ঘোষণাকে ‘অভ্যুত্থান’ হিসেবে বর্ণনা করেন ও এই পদক্ষেপের নিন্দা করেন৷ তাঁর দলের সদস্যদেরও একই মত৷ চরম ক্ষোভ ও রোষের সঙ্গে তারা প্রেসিডেন্টের অপসারণের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে৷
ছবি: Reuters
সামরিক বাহিনীর ‘রোডম্যাপ’
‘আরব বসন্ত’-এর সময় সামরিক বাহিনীর ভূমিকা এখনো স্পষ্ট হয় নি৷ এখন তারা মিশরের সমাজকে শক্তিশালী করে তোলার ঘোষণা করেছে৷ তবে এই পরিকল্পনার খুঁটিনাটি এবং সেই প্রক্রিয়ায় মুসলিম ব্রাদারহুড-কে কতটা শামিল করা হবে, সে সব এখনো স্পষ্ট নয়৷
ছবি: Reuters
তরুণ বিপ্লবী
সামরিক বাহিনী যখন বিরোধীদের সঙ্গে সংঘাত মেটানোর জন্য সময়সীমা স্থির করে দিয়েছিল, তখনই তারা বলেছিল, যে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে৷ কারণ তরুণদের উদ্যোগেই এই ‘অসাধারণ বিপ্লব’-এর সূচনা ঘটেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করে মুসলিম ব্রাদারহুডের এ মুহূর্তে এ ছাড়া কোনো গতিও নেই৷ ইংল্যান্ডের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম ব্রাদারহুড বিষয়ক বিশেষজ্ঞ খলিল আল-আনানি মনে করেন, ‘‘ওরা (মুসলিম ব্রাদারহুড) এখন কিছুটা দুর্বল অবস্থায় আছে৷ ওদের হাতে এখন আসলে অন্য কোনো কার্ড নেই৷'' তাঁর মতো অনেক বিশ্লেষকই মনে করেন, বিক্ষোভকারীদের প্রাণহানির ঘটনা যত বাড়বে মিশরের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপও তত বাড়বে – এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রাজপথ ছাড়ছে না, খুব তাড়াতাড়ি হয়ত ছাড়বেওনা মুসলিম ব্রাদারহুড৷ এ অবস্থায় সরকার যদি আারো কঠোর অবস্থান নেয় তাহলে পরিস্থিতি যে আরো ভয়াবহ হয়ে উঠবে তা বলাই বাহুল্য৷