মিশরে বৈঠকে মিলিত হলেন তিন দেশের শীর্ষ নেতারা। রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে শুরু করে আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হলো।
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েলের কাছে এই বৈঠক আরো একটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারা ইরান-বিরোধী জোটকে শক্তিশালী করতে চাইছে। ইসরায়েলের মিডিয়া জানিয়েছে, সোম ও মঙ্গলবার এই আলোচনায় অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল, ওই অঞ্চলে ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব।
মিশরের প্রধানমন্ত্রী আবদেল ফাতাহ আল সিসি, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট এবং আমিরাতের কার্যত শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান বৈঠক করেন।
কী নিয়ে আলোচনা হলো?
মিশরের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তিন নেতা তেল-গ্যাসের বাজারের স্থিতাবস্থা ও খাদ্যসুরক্ষা নিয়ে আলোচনা করেছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববাজারে অশোধিত তেলের দাম বেড়ে গেছে। গমের দামও বেড়েছে।
আমিরাতের সরকারি সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে তিন নেতার কথা হয়েছে। তাছাড়া তিন দেশের কাছে চিন্তার বিষয়গুলি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত, বাহরাইনের চুক্তি
ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের ঐতিহাসিক চুক্তি হোয়াইট হাউসে সই হলো। ইসরায়েল লাভবান হলো। বিক্ষোভ প্যালেস্টাইনে।
ছবি: Getty Images/A. Wong
দীর্ঘ বিরোধের অবসান
কয়েক দশক ধরে চলা বিরোধের অবসান। সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে চুক্তিতে সই করল ইসরায়েল। কূটনৈতিক,সম্পর্ক গড়ে তুলবে তারা। চুক্তিতে সই করলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, আমিরাতের বিদেশ মন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন আল নেহয়ান এবং বাহরাইনের বিদেশমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল জায়ানি।
ছবি: Getty Images/AFP/S. Loeb
ট্রাম্পের সভাপতিত্ব
হোয়াইট হাউসে চুক্তি সই হয়েছে। সভাপতিত্ব করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট ভোটের আগে এই চুক্তি তাঁর অন্যতম তুরুপের তাস। ট্রাম্প বলেছেন, ''মধ্যপ্রাচ্যে নতুন ভোর হলো। এই চুক্তি ঐতিহাসিক।'' তার আশা, বাকি আরব দেশগুলিও আমিরাত ও বাহরাইনকে অনুসরণ করবে।
ছবি: Getty Images/A. Wong
উচ্ছ্বসিত নেতানিয়াহু
এতদিন আরব দুনিয়ায় কার্যত একঘরে ছিল ইসরায়েল। এ বার আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু হবে। তাই উচ্ছ্বসিত ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এই চুক্তি আরব-ইসরায়েল সংঘাত চিরতরে শেষ করে দিতে পারে। তাই এই চুক্তি ঐতিহাসিক। শান্তির ভোর হলো। তার মতে, করোনা নামক অতিমারির দিন শেষ হবে, কিন্তু আজ যে চুক্তি হলো, তার জন্য দীর্ঘস্থায়ী শান্তি থাকবে।
ছবি: Reuters/T. Brenner
খুশি আমিরাত, বাহরাইন
নেতানিয়াহুকে ধন্যবাদ দিয়েছেন আমিরাতের বিদেশমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল যে শান্তির পথ বেছে নিয়েছে এবং প্যালেস্টাইনের এলাকা দখল করবে না বলেছে, তাতে তিনি খুশি। কয়েক দশক ধরে বিভাজন ও সংঘাতের পর শান্তি ফিরল। ইতিহাসের গতি পরিবর্তন হলো। খুশি বাহরাইনও।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Brandon
খারিজ করল প্যালেস্টাইন
হোয়াইট হাউসে যখন এই চুক্তি সই হচ্ছে, তখন প্যালেস্টাইনে বিক্ষোভ চলছে। বিশেষ করে অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজা ভূখণ্ডে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ইসরায়েল যে এলাকা দখল করে রেখেছে, তা ছেড়ে না দিলে শান্তি আসবে না। প্যালেস্টাইন এই চুক্তিকে খারিজ করে বলেছে, তাদের পিছন থেকে ছুরি মারা হয়েছে।
ছবি: Reuters/M. Salem
বিরোধে সৌদি, ইরান, তুরস্ক
এই চুক্তির বিরোধিতা করে প্যালেস্টাইনের পাশে দাঁড়িয়েছে সৌদি আরব, ইরান এবং তুরস্ক। সৌদি আরব বলেছে, তারা প্যালেস্টাইন সমস্যার প্রকৃত সমাধান চায়। তাদের দাবি, স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং পূর্ব জেরুসালেমকে তার রাজধানী করতে হবে। ইরান ও তুরস্কও চুক্তির বিরোধী। এই চুক্তিতে শুধু নতুন করে প্যালেস্টাইনের এলাকা দখন না করার মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইসরায়েল।
ছবি: Reuters/T. Brenner
লাভ কতটা
এক দল বিশেষজ্ঞের মতে, এই চুক্তির ফলে লাভ খুব বেশি হবে না। কারণ, এমনিতেই ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের সংঘাত একেবারেই কমে গিয়েছিল। লাভটা হলো, তাদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু হলো। ওই বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তিন দেশের একটাই লক্ষ্য, ইরানের প্রভাব কমানো। সে জন্যই এই চুক্তি সম্ভব হয়েছে।
ছবি: Reuters/T. Brenner
ট্রাম্প কতটা সুবিধা পাবেন
হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তি করিয়ে ট্রাম্প তার ক্ষমতা দেখাতে পারলেন বলে তার সমর্থকদের দাবি। এর ফলে ভোটের আগে ট্রাম্পের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হলো বলে তারা মনে করছেন। এর সুবিধা কি ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পাবেন? ট্রাম্প-বিরোধীরা মনে করছেন, তার ভাবমূর্তি করোনা ও কৃষ্ণাঙ্গ-হত্যার ফলে যে জায়গায় নেমেছে, সেখান থেকে ওঠার আশা কম।
ছবি: Reuters/T. Brenner
8 ছবি1 | 8
ইরান নিয়ে
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে জানানো হয়েছে, তিন শীর্ষনেতাই সব পর্যায়ে সম্পর্ক জোরদার করা নিয়ে কথা বলেছেন। তবে তারা ইরানের নাম নেয়নি।
কিন্তু ইসরায়েলের ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী তেল আভিভে বলেছেন, ইরানের চক্র ভাঙতে তারা যে কোনো দেশের সঙ্গে হাত মেলাতে প্রস্তুত। তারা দেখতে পাচ্ছেন, এই চক্র শক্তিশালী হচ্ছে। তাই ইসরায়েলও অন্য দেশের সঙ্গে একজোট হয়ে আর্থিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াবে।
পশ্চিমা দেশগুলি এখন ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির নবীকরণ করতে চাইছে। বেনেট অবশ্য এই চুক্তির ঘোর বিরোধী।
ইরানের শক্তির মোকাবিলা করতে মিশর, আমিরাত ও ইসরায়েল এই তিন দেশ নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াচ্ছে।
২০২০ সালে আমিরাতের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। মিশরের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক তার অনেক আগে থেকেই ছিল।