একজন আপাতত আড়ালে৷ নিকট এবং দূর অতীত খুব গৌরবের না হলেও জেনারেল আবদেল ফাতাহ আল-সিসিই এখন এক অর্থে সবচেয়ে ক্ষমতাবান৷ রাষ্ট্র শাসনের ভার অবশ্য প্রধান বিচারপতি আদলি মনসুরের কাঁধে৷ দুই বিপরীত মেরুর মানুষই এখন শাসন করছেন মিশর৷
বিজ্ঞাপন
৪৮ ঘণ্টার 'চরমপত্র' দিয়ে দেশের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে সেনাবাহিনী৷ জেনারেল আবদেল ফাতাহ আল-সিসির দেয়া ‘হুমকি'-কে শুরুতে আমলে না নিলেও মুরসি পরে জোট সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ তাতে কাজ হয়নি৷ তুমুল বিক্ষোভের মুখে পড়া মুরসিকে গৃহবন্দী করে নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দেন আল-সিসি৷ নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করার ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি৷ সেই ঘোষণার ধারাবাহিকতায় প্রেসিডেন্ট হয়েছেন আদলি মনসুর৷ নতুন দায়িত্বে শপথও নিয়েছেন স্বৈর শাসক হোসনি মুবারক এবং সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মুরসির অধীনে কাজ করা এই বিচারপতি৷
উত্তাল মিশর
মিশরের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিলেন আদলি মনসুর৷ এবার দ্রুত নির্বাচনের পালা৷ একটানা বিক্ষোভের পর বুধবার সামরিক বাহিনী নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুরসি-কে অপসারণ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শপথ নিলেন অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট
আদলি মনসুর এতকাল সাংবিধানিক আদালতের প্রধান ছিলেন৷ আপাতত তাঁর হাতেই ক্ষমতার রাশ চলে এলো৷ শপথ গ্রহণ করে তিনি মুসলিম ব্রাদারহুড-এর প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ প্রেসিডেন্ট মনসুর বলেন, তারাও দেশের অংশ এবং জাতির ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাদের অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হলো৷
ছবি: picture-alliance/AP
নতুন নির্বাচনের ঘোষণা
আগামী নির্বাচন পর্যন্ত দেশ চালাবেন মনসুর৷ সর্বদলীয় এক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শীর্ষে থাকবেন তিনি, যদিও সেই সরকারের রূপরেখা এখনো স্পষ্ট নয়৷ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আবদেল ফাতাহ আল সিসি (ছবিতে দেখা যাচ্ছে) এক টেলিভিশন ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের পরিকল্পনা তুলে ধরেন৷ নতুন নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো স্থির করা হয় নি৷
ছবি: picture alliance/AA
সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি
কায়রোর পরিস্থিতি আপাতত শান্ত৷ এর অন্যতম প্রধান কারণ অবশ্যই ক্ষমতাকেন্দ্রে রদবদলের পর গোটা শহরে সৈন্যদের উপস্থিতি৷ যেমন গিজা এলাকায় এই সাঁজোয়া গাড়িটি দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ কাছেই কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়৷
ছবি: Getty Images
দুই পক্ষের সংঘর্ষ
মুরসির অনুগামী ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষে কায়রোর উত্তর শহরতলি, আলেক্সান্ড্রিয়া সহ দেশের কিছু প্রান্তে হতাহতের খবর পাওয়া গেছে৷
ছবি: picture alliance/AA
তাহরির চত্বরে উৎসব
মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হবার পর কায়রোর তাহরির চত্বরে লক্ষ লক্ষ মানুষের জমায়েত দেখা যায়৷ সামরিক বাহিনী অবিলম্বে জানিয়ে দিয়েছিল যে এক বেসমারিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷
ছবি: Reuters
আনন্দে আত্মহারা
কয়েক দিন ধরে গণবিক্ষোভের পর মুরসি-বিরোধীরা সামরিক বাহিনীর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে৷ মুরসির নেতৃত্বে সরকার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হলেও অনেকেই ক্ষুণ্ণ হয়েছিল৷ তাদের অভিযোগ, মুরসি দেশের মধ্যে চরম বিভাজনের সৃষ্টি করেছিলেন ও মানুষের জীবন দূর্বিসহ করে তুলেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বেপরোয়া সমর্থক
মুসলিম ব্রাদারহুড-এর সদস্যরা ও প্রেসিডেন্ট মুরসির অন্যান্য সমর্থকরা কায়রোর এক মসজিদে তাদের প্রিয় নেতার ছবি তুলে ধরেছে৷ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তখন সামরিক বাহিনীর বক্তব্য প্রচারিত হচ্ছিল৷
ছবি: Reuters
মুসলিম ব্রাদারহুড-এর রোষ
মুরসি নিজে সামরিক বাহিনীর ঘোষণাকে ‘অভ্যুত্থান’ হিসেবে বর্ণনা করেন ও এই পদক্ষেপের নিন্দা করেন৷ তাঁর দলের সদস্যদেরও একই মত৷ চরম ক্ষোভ ও রোষের সঙ্গে তারা প্রেসিডেন্টের অপসারণের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে৷
ছবি: Reuters
সামরিক বাহিনীর ‘রোডম্যাপ’
‘আরব বসন্ত’-এর সময় সামরিক বাহিনীর ভূমিকা এখনো স্পষ্ট হয় নি৷ এখন তারা মিশরের সমাজকে শক্তিশালী করে তোলার ঘোষণা করেছে৷ তবে এই পরিকল্পনার খুঁটিনাটি এবং সেই প্রক্রিয়ায় মুসলিম ব্রাদারহুড-কে কতটা শামিল করা হবে, সে সব এখনো স্পষ্ট নয়৷
ছবি: Reuters
তরুণ বিপ্লবী
সামরিক বাহিনী যখন বিরোধীদের সঙ্গে সংঘাত মেটানোর জন্য সময়সীমা স্থির করে দিয়েছিল, তখনই তারা বলেছিল, যে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে৷ কারণ তরুণদের উদ্যোগেই এই ‘অসাধারণ বিপ্লব’-এর সূচনা ঘটেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
সেনা প্রধান আল-সিসিও কাজ করেছেন মুবারক এবং মুরসির আমলে৷ এই জায়গায় মিল থাকলেও আদলি মনসুর আর আল-সিসির অতীত কিন্তু দুজনকে ভিন্ন অবস্থানেই দাঁড় করিয়েছে৷ সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহের আল-বেহাইরিস অবসর নেয়ার পর গত মাস, অর্থাৎ জুনের শেষ দিকে প্রেসিডেন্ট মুরসি সেই দায়িত্ব দেন মনসুরকে৷ কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি হয়ে গেলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রেসিডেন্ট৷ খুব তাড়াতাড়িই পেলেন বড় দায়িত্ব৷ তবে এ দায়িত্ব নির্বিঘ্নে পালন করতে পারবেন সে সম্ভাবনা কম৷ মুরসির মুসলিম ব্রাদারহুড দল এবং বিরোধী দলগুলোর মধ্যে কারো কাছেই তাঁর ভাবমূর্তি খুব উজ্জ্বল নয়৷ মুবারকের পতনের পর তাঁর অনুসারীদেরও নির্বাচনে অংশ নেয়ার অধিকার দেয়ার দাবিতে সোচ্চার হওয়ায় বরং দু'পক্ষেরই সমালোচনার তিরে বিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি৷
আল-সিসি আরো বেশি সমালোচিত৷ সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো প্রশংসনীয় কাজ তিনি করেছেন কিনা – তা অনেকটাই অজানা৷ মিশরের মানুষের কাছে দুটি বিষয় খুব মনে রাখার মতো৷ এক, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ১৯৬৭ এবং ১৯৭৩-এর যুদ্ধে তিনি অংশ নেননি৷ দুই, নারীর প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি মুরসির আমলেও খুব সমালোচিত হয়েছে৷ সেনাসদস্যদের বিরুদ্ধে নারীদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠায়, নিপীড়িতদের ‘প্রেগনেন্সি টেস্ট' করানোর কথা বলেছিলেন আল-সিসি৷ তুমুল সমালোচনার মুখে পরে তিনি নিজের অবস্থান থেকে সরে এসেছিলেন৷
তবে আদলি মনসুর আর আল-সিসির মধ্যে একটা মিল রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের চোখে পড়েছে৷ জার্মানির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান আর্চরাইনারের মতে মিশরের সেনাবাহিনী এমনিতে ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী৷ আর আদলি মনসুরের তো মুবারকের পতনের পরের আগুনে সময়েও স্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর অতীত রয়েছে৷ এই দুটো বিষয় সংকটাপন্ন মিশরের সংকট নিরসনে কি ভূমিকা রাখবে?