যুক্তরাষ্ট্রে চলছে রিপাবলিকান দলের সম্মেলন৷ সোমবার প্রথম দিনে অনেক রাজনীতিক বক্তব্য রেখেছেন৷ তবে সব ছাড়িয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পের দেয়া বক্তব্য বেশি আলোচিত হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
মূলত তাঁর দেয়া বক্তব্যের কিছু অংশের সঙ্গে ২০০৮ সালে দেয়া বর্তমান ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার বক্তব্যের মিল খুঁজে পেয়েছেন অনেকে৷ যেমন মেলানিয়া ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘আমার মা-বাবা আমাকে এই মূল্যবোধগুলো শিখিয়েছেন: তুমি জীবনে যা চাইবে তার জন্য পরিশ্রম করবে৷ তোমার বলা কথাই তোমার অঙ্গীকার এবং তুমি তাই করবে যা তুমি বলবে এবং তুমি তোমার দেয়া অঙ্গীকার রক্ষা করবে৷ তুমি মানুষকে সম্মান করবে৷....এ সব শিক্ষা আমি আমার ছেলেদেরও দিচ্ছি৷'' এই শিক্ষাগুলো আগামী কয়েক প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
মেলানিয়ার বক্তব্যের এই অংশের সঙ্গে মিশেল ওবামার বক্তব্যের মিলের বিষয়টি প্রমাণে একটি টুইট করেছে সিএনএন৷
এই টুইটে মিশেল ওবামা আর মেলানিয়া ট্রাম্পের বক্তব্যের মিলের অংশটি শোনা যাচ্ছে৷
গণমাধ্যমে এই তথ্য প্রকাশের পর টুইটারে #FamousMelianaTrumpQuotes ব্যবহার করে ব্যঙ্গ করতে দেখা গেছে অনেককে৷ এই প্রতিবেদন লেখার সময় হ্যাশট্যাগটি প্রায় তিন লক্ষবার ব্যবহৃত হয়েছে৷
এদিকে, মেলানিয়ার বক্তব্যের ব্যাপারে একটি বিবৃতি দিয়েছে ট্রাম্প ক্যাম্পেইন৷ সেখানে মিশেল ওবামার বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করা হয়নি৷
রিপাবলিকান কনভেনশন চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত৷ এই সময়ের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসাবে আনুষ্ঠানিক সমর্থন জানানো হবে৷
কনভেনশনের প্রথম দিন আরও অনেকের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নিউ ইয়র্কের সাবেক মেয়র রুডি জুলিয়ানি৷ এই সময় তিনি হিলারি ক্লিন্টনের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘হিলারি ক্লিন্টনের ক্যাম্পেইনের ভিত্তি হচ্ছে তাঁর অভিজ্ঞতা৷ এই অভিজ্ঞতার কারণেই তাঁর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়া উচিত হবে না৷ ওবামা-ক্লিন্টন যুগের মতো ভুল পুনরায় করার মতো সময় নেই আমাদের৷''
জুলিয়ানির এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় একটি টুইট করেছেন হিলারি ক্লিন্টন৷ এতে দেখা যাচ্ছে, ২০১০ সালে হিলারি সম্পর্কে জুলিয়ানি বলেছিলেন, ‘‘আমার মনে হয় তিনি (হিলারি) ভালো কাজ করছেন....তাঁর প্রতি আমার যথেষ্ট সম্মান আছে৷''
স্লোভেনিয়ার লাজুক কিশোরী থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি
ট্রাম্প তখন একটা করে জয় পাচ্ছেন, সেই সঙ্গে বাড়ছে স্লোভেনিয়া থেকে আসা এক নারীকে নতুন রূপে দেখার সম্ভাবনা৷ দরিদ্র দেশের সাধারণ কিশোরী থেকে মডেল, তারপর ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর ঘরণী৷ এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফার্স্ট লেডি’ও হলেন৷
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/R. Fitchett
লাজুক মেয়ে
স্লোভেনিয়া তখনো যুগোস্লাভিয়ার অংশ, সেখানে তখনো চলছে ‘সমাজতান্ত্রিক শাসন’, সেই সময়েই সেভনিকা নামের ছোট্ট এক শহরে জন্ম মেলানিয়া নাভস-এর৷ ছোটবেলা থেকেই মেলানিয়া খুব লাজুক প্রকৃতির৷
ছবি: picture alliance/AP Images/A. Harnik
স্কুলের শান্ত, সুবোধ বালিকা
বাবা ভিক্টর নাভস ছিলেন গাড়ির ডিলার৷ মা আমালিয়া কাজ করতেন পোশাক কারখানায়৷ বাড়ির পাশেই ছিল মেলানিয়ার স্কুল৷ কর্মজীবী বাবা-মায়ের কাছে কোনোদিন স্কুল থেকে মেয়ের নামে নালিশ আসেনি৷ বার্তা সংস্থা এপি-র প্রতিবেদকের কাছে কয়েকদিন আগেও মেলানিয়ার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন সেই স্কুলের সাবেক শিক্ষিকা আর শিক্ষার্থীরা৷ সবার এক কথা, ‘‘বড় ভালো মেয়ে ছিল মেলানিয়া৷ খুব মৃদুভাষী আর ভদ্র মেয়ে৷’’
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/R. Fitchett
স্বপ্নের পথের সন্ধান
প্রাথমিক স্কুল পর্ব শেষে স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবিয়ানার এক উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তে যায় মেলানিয়া৷ সেখানেই তাকে দেখে ফেলে ফটোগ্রাফার স্টেইন জেরকো৷ ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার আকর্ষণীয় ফিগারের অধিকারী কিশোরীটির ছবি তুলে নিতে ভুল করেননি স্টেইন৷ সেভনিকায় থাকতেই মডেল হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন মেলানিয়া৷ স্টেইনের চোখে পড়ায় স্বপ্ন পূরণে বেশি সময় লাগেনি৷
ছবি: imago/UPI Photo
সুপার মডেল
মাত্র ১৬ বছর বয়সে মডেল হিসেবে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু৷ প্রথমে স্লোভেনিয়ায়, তারপর ইটালির মিলান, ফ্রান্সের প্যারিস হয়ে ১৯৯৬ সালে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে৷ বড় বড় ফ্যাশন হাউসগুলোতে তখন তাঁর খুব চাহিদা৷ ইংরেজি, ইটালিয়ান, ফরাসি এবং জার্মান ভাষা শিখে প্রতিষ্ঠা সহজসাধ্য করার কাজও অনেকটাই সেরে নিয়েছেন ততদিনে৷ ওপরে ফিলাডেলফিয়া স্টাইল ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে নিজের ছবির সামনে মেলানিয়া৷
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/R. Fitchett
ট্রাম্পের সঙ্গে পরিচয় এবং পরিণয়
নিউইয়র্কে প্রথম সাক্ষাতেই মেলানিয়াকে ট্রাম্পের ভালো লেগে যায়৷ নিজের ফোন নাম্বার দিয়ে বলেছিলেন, ‘ফোন করো৷’ মেলানিয়া পাত্তা দেননি৷ পরে ট্রাম্পই আবার ফোন করে দেখা করতে চান৷ সেই দেখার সুবাদেই ১৯৯৬ সালে ২৪ বছরের বড় ট্রাম্পকে বিয়ে করেন মেলানিয়া৷
ছবি: Reuters/J. Bourg
অমিল নিয়েই সুখি
ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্ত্রী হলেও মেলানিয়ার কম এবং যৌক্তিক কথা বলার সুনাম রয়েছে৷ স্বামীর নির্বাচনি প্রচারে নেমেও নিজের কথা সুস্পষ্ট যুক্তিতেই বলেছেন৷ ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম অভিবাসন প্রত্যাশীদের ঢুকতে দেবেন না, মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তেও দেয়াল দাঁড় করাবেন৷ মেলানিয়া বলেন, কেউ বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে চাইলে সে সুযোগ রাখা উচিত৷
ছবি: Getty Images/K. Winn
‘ফার্স্ট লেডি’
বিশ্লেষকদের ভুল প্রমাণ করে, নিন্দুকদের মুখে ছাই দিয়ে প্রেসিডেন্ট হলেন ট্রাম্প৷ মেলানিয়া হয়ে গেলেন ‘ফার্স্ট লেডি’৷