পেরুর জঙ্গলে মিষ্টি জলের এক শিকারি মাছ সেখানকার মানুষের জীবিকার জন্য জরুরি৷ অথচ এই মাছ সংরক্ষণে তাদের ভূমিকা কম নয়৷ সরকার ও এক জার্মান সংস্থা সেই উদ্যোগ চালাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
‘‘একবার আমি যখন ‘‘আগোহার'' ধরে যাচ্ছি; তাঁবু ফেলে আমার মাছ ধরার ছিপ ইত্যাদি পরীক্ষা করে দেখছি...'' পাইচে মাছ যখন শিকার করে, তখন তা বহুদূর থেকে শোনা যায়! পাইচে হল মিষ্টিজলের শিকারি মাছদের মধ্যে অন্যতম, বিশেষ করে সাইজের দিক দিয়ে৷ পাইচে মাছ যে উপহ্রদে থাকে, সেখানে যাওয়া খুব সহজ নয়৷
অ্যামাজন নদীর উৎসগুলির মধ্যে পড়ে পেরুর রিও উকায়ালি নদী৷ তারই একটি খাঁড়ি ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বোট চলেছে৷ পেরুর অ্যামাজন অঞ্চলে জিআইজেড-এর শাখার যুগ্ম প্রশাসক মিলাগ্রোস অবলিতাস কিরস জানালেন, ‘‘আমি জীবনে প্রথমবার নদী দেখি ১১ বছর বয়সে৷ দেখে ভেবেছিলাম সমুদ্র! মানুষ যখন প্রথমবার দেখে, তার পরিবেশ কতোটা বড়, তখন সে বুঝতে পারে, প্রকৃতি কতো বিশাল৷ সেটাই আমার কাছে বড় কথা, আমি নিজেকে সেই বিশালত্বের অংশ হিসেবে মনে করি – এখানেও আমার ঠিক সেই অনুভূতি হয়৷''
মাছের জগতের আশ্চর্য
পৃথিবীতে মাছের প্রজাতি প্রায় তিন হাজার৷ তাদের মধ্যে কিছু কিছু মাছ সত্যিই চমকে দেবার মতো, যেমন ইলেকট্রিক ইল বা বৈদ্যুতিক পাঁকাল মাছ৷
ছবি: imago/Olaf Wagner
ইলেকট্রিক ইল
ইলেকট্রিক ইল কিন্তু পাঁকাল মাছ নয়, বাংলায় সে পড়বে ছুরি মাছদের পর্যায়ে৷ ৬০০ ভোল্ট অবধি ইলেকট্রিক শক মারতে পারে! সেভাবেই শিকার ধরে - বা মারে - এই বৈদ্যুতিক পাঁকাল৷ গবেষণা করে দেখা গেছে যে, বাদুড়রা যেমন শব্দতরঙ্গ ব্যবহার করে পোকামাকড়ের অবস্থান জানতে পারে, তেমন ইলেকট্রিক ইল’ও কারেন্ট মারার সময় সেই পন্থায় শিকারের অবস্থিতিও জানতে পারে৷
ছবি: imago/Olaf Wagner
ডোরাকাটা তীরন্দাজ মাছ
এই মাছগুলো জলের নীচে থেকেই পুকুরের ধারের ঘাস-গুল্ম থেকে পোকামাকড় শিকার করতে পারে৷ কিভাবে? মুখ থেকে জলের পিচকিরি ছুঁড়ে পোকাগুলোকে পানিতে ফেলে দেয় এই তীরন্দাজ মাছ৷ বড় মাছগুলো তিন মিটার দূরত্বে বসা শিকারকে ঘায়েল করতে পারে!
এই মাছটি বালির মধ্যে শরীর ডুবিয়ে বসে থাকে শিকার ধরার আশায়৷ শিকার এলে লাফ দিয়ে উঠে শিকার ধরে৷ স্টারগেজার মাছের চোখ মাথার উপর বসানো, থ্যাবড়া মুখটাও ওপরদিকে বাঁকানো৷ মনে রাখতে হবে, মাছটি কিন্তু বিষাক্ত৷
ছবি: picture-alliance / OKAPIA KG
স্টোনফিশ বা পাথর মাছ
এ’মাছটিও বিষাক্ত এবং ক্যামোফ্লেজ, মানে ছদ্মবেশ ধারণে ওস্তাদ৷ দেখলে মনে হবে যেন শ্যাওলায় ঢাকা এক টুকরো পাথর৷ কিন্তু পায়ের নীচে পড়লেই বিষাক্ত কাঁটাগুলো ফুটে যাবে! বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত মাছগুলোর মধ্যে পড়ে এই পাথর মাছ৷ সে বিষে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে৷
ছবি: gemeinfrei
পটকা মাছ
পটকা মাছেদের পেটটা রাবারের মতো বাড়ে বা কমে৷ পটকা মাছেরা পেটে পানি ঢুকিয়ে বলের মতো গোলাকৃতি হয়ে যেতে পারে৷ এদের শরীরেও টেট্রোডোটক্সিন নামের একটি মারাত্মক বিষ আছে৷ জাপানে এই মাছ সুখাদ্য বলে পরিগণিত৷ তবে অতি সাবধানে কাটতে হয়, বিষের অংশটা বাদ দিয়ে৷ কেননা সে’ বিষে মানুষ মরতে পারে৷
ছবি: picture alliance/Arco Images
অ্যাঙ্গলার ফিশ বা মাছ ধরা মাছ
এই মাছের মাথায় ইলিসিয়াম নামধারী একটি আঙুলের মতো দেখতে আঁচিল আছে৷ সেই আঁচিলের ওপর দিকটা বাতির মতো জ্বল জ্বল করে, যা’তে হবু শিকাররা আকৃষ্ট হয়৷ তারপরেই সেই শিকার অ্যাঙ্গলার মাছের সুবিশাল মুখগহ্বরে ঢুকে যায়৷ এই মাছের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল, বিশ্বের সর্বত্র এদের পাওয়া যায়, এমনকি গভীর সমুদ্রেও৷
ছবি: Flickr/Stephen Childs
ভাইপার ফিশ বা সর্প মাছ
আজগুবি মাছ দেখতে হলে যেতে হয় সাগরের অতলে৷ সেখানে জলের চাপ বেশি, আলো প্রায় নেই বললে চলে, খাবারও কম৷ এই পরিবেশে শিকার ফসকালে চলবে না৷ তাই ভাইপার ফিশদের দাঁত, মুখ, সবই ভয়ংকর, ভয়াবহ...
ছবি: picture-alliance/dpa
প্লেইস বা রূপচাঁদা মাছ
চাঁদা মাছরা চ্যাপটা৷ তাদের ক্যামোফ্লেজ বা নিজেকে লুকনোর ক্ষমতা অসাধারণ, বিশেষ করে কাদার মধ্যে৷ মজার কথা: বড় হওয়ার সময় তাদের একটা চোখ মাথার এপাশ থেকে ওপাশে চলে গিয়ে অন্য চোখটির সঙ্গে যুক্ত হয়!
ছবি: picture-alliance/dpa/H.Bäsemann
সিহর্স ঘোড়া নয়
যদিও এই ছোট্ট মাছগুলোকে ঘোড়ার মতো দেখতে এবং এদের প্রকৃতিও অত্যন্ত নিরীহ৷ দ্বিতীয়ত, ‘সাগরের ঘোড়া’ নামধারী এই মাছগুলি চিৎ হয়ে নয়, খাড়া হয়ে সাঁতার কাটে - ফলে এরা খুব ভালো সাঁতারু হয় না৷ তৃতীয়ত, পুরুষ সিহর্সরা নিষিক্ত ডিমগুলোকে পেটের ভাঁজে বয়ে নিয়ে বেড়ায় এবং পরে বাচ্চাদের জন্মও দেয়৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
মাডস্কিপার বা লাফানো কাদা মাছ
মাডস্কিপাররা মাছ হলেও, তাদের জল বেশি পছন্দ, না ডাঙা বেশি পছন্দ, তা তারা কখনো ঠিক করে উঠতে পারেনি৷ নিঃসন্দেহে মাছ হলেও, তারা পাখনা ব্যবহার করে কাদার ওপর দিয়ে হাঁটতে পারে৷ এছাড়া তারা অন্যান্য উভয়চরের মতো ত্বক দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/MAXPPP
হাতুড়ি-মাথা হাঙর
বিজ্ঞানীদের মতে হ্যামারহেড শার্কের মাথাটা হাতুড়ির মতো দেখতে হওয়ার কারণ হল, এর ফলে তার চোখ দু’টো আরো দূরে দূরে হয়৷ ফলে হাতুড়ি-মাথা হাঙর আরো বেশি দেখতে পায়... যেমন শিকার...
ছবি: imago/imagebroker
11 ছবি1 | 11
ইমিরিয়া সংরক্ষিত এলাকার অনেক ভিতরে মৎস্য বিভাগ, বনবিভাগ আর জার্মান জিআইজেড সংস্থার পরিবেশ সংরক্ষণকারীরা মিলিত হয়েছেন৷ স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে মিলে তারা পাইচে মাছের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চান – তবে পাইচে মাছ ধরা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে চান না৷ সেজন্য পারস্পরিক আস্থা থাকা চাই৷ জিআইজেড-এর এর্নান ফ্লোরেস মার্তিনেস জানালেন, ‘‘স্থানীয় লোকেদের পক্ষে ওটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কেননা তারা চিরকাল পাইচে মাছ ধরে আসছেন৷ কিন্তু এ পর্যন্ত সেজন্য কোনো সরকারি অনুমতি লাগত না৷ আমরা চাই, ওরা যাতে বেআইনিভাবে পাইচে মাছ না ধরেন, বৈধভাবে পাইচে মাছ ধরেন; মাছ ধরার একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী টেকসইভাবে মাছ ধরেন৷''
পাইচে মাছকে এরা বলে আরাপাইমা৷ আরাপাইমা এখন বিরল হয়ে এসেছে – ঠিক কতটা বিরল, সেটাই জানতে চান বিজ্ঞানীরা৷ আগে জেলেরা এখানে যথেচ্ছ মাছ ধরতেন; কিন্তু সংরক্ষিত এলাকা হবার পর মাছ ধরা নিষিদ্ধ হতে চলেছে৷ সেটা যাতে না ঘটে, সেজন্য জেলেরা পাইচে মাছ ধরে দেখাতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু পালানোর আপ্রাণ প্রচেষ্টায় মাছটি মারা যায়৷
এক মিটার সত্তর সেন্টিমিটার লম্বা মাছটি তখনও বংশবৃদ্ধি করার সময় পায়নি৷
অ্যার্নস্ট মায়ার/এসি
দেবারতি গুহ
প্রকৃতিতে যেভাবে ভারসাম্য বজায় থাকে
বিভিন্ন প্রাণী ও ইকোসিস্টেমের মধ্যে সম্পর্কের কারণে প্রকৃতিতে ভারসাম্য বজায় থাকে৷ ছবিঘরে থাকছে এমন কয়েকটি উদাহরণ৷
দু’জনেরই লাভ
ছবিতে হাঙরের নীচে চারটি ছোট্ট মাছ দেখতে পাচ্ছেন? নাম রেমোরা৷ তারা হাঙরের শরীরে থাকা খাবারের উচ্ছিষ্ট খায়৷ হাঙর খাবার খাওয়ার পর সেই উচ্ছিষ্টগুলো তৈরি হয় যা তার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর৷ এভাবে হাঙরের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার বিনিময়ে রেমোরারা হাঙরের শরীরে চেপে অনেকদূর যায়৷ এমনিতে রেমোরার শরীরে অন্য মাছের মতো ‘সুইম ব্লাডার’ না থাকায় চলাফেরা করতে একটু সমস্যাই হয়৷ ভিডিও দেখতে উপরের ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: CC BY 2.0/Derek Keats
খাবারের বিনিময়ে নিরাপত্তা
ছোট্ট যে পাখিটি দেখতে পাচ্ছেন তার নাম অক্সপেকার৷ মহিষের সঙ্গে থেকে সে মহিষের শরীরে থাকা খুশকি সহ অন্যান্য ময়লা পরিষ্কার করে, এমনকি কানের ময়লাও৷ তাতে অক্সপেকারের লাভ? অমন বড় মহিষের সঙ্গে থাকলে কার সাধ্য তার বিনষ্ট সাধন করে! অক্সপেকারের বাস সাব-সাহারা আফ্রিকায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Wisniewski
সিমবায়োসিস সম্পর্ক
দেয়াল, পাথর বা গাছের গুঁড়িতে শৈবালের মতো দেখতে এই ছত্রাকটি অনেকে হয়ত দেখেছেন৷ এর নাম লিচেন৷ শেওলা আর ব্যাঙের ছাতার মধ্যে সিমবায়োসিস (পারস্পরিক সুবিধা দিয়ে ও নিয়ে বেঁচে থাকা) সম্পর্কের মাধ্যমে এটির জন্ম হয়৷ শেওলা সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য তৈরি করে, আর ব্যাঙের ছাতা পরিবেশ থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করে শেওলাকে বাঁচিয়ে রাখে৷ ফলে লিচেন বেশ রোগ প্রতিরোধী ও বিভিন্ন ইকোসিস্টেমে বেঁচে থাকার ক্ষমতা আছে তার৷
ছবি: picture-alliance/H. Bäsemann
পরাগায়নে সহায়তা
ছবিটি বেশ পরিচিত৷ ফুলের উপর বসে আছে প্রজাপতি৷ সে মধু সংগ্রহ করছে৷ তা করতে গিয়ে প্রজাপতির শরীরে ফুলের পরাগরেণু লেগে যায়৷ এরপর প্রজাপতিটি যখন আরেকটি ফুলে গিয়ে বসে তখন তার শরীরে লেগে থাকা পরাগরেণু নতুন ফুলে গিয়ে পড়ে৷ এভাবে পরাগায়ন হয়ে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B.Thissen
সাহারার ধূলা খেয়ে বেঁচে থাকে অ্যামাজন
প্রথমে ছবিটি একটু বর্ণনা করা দরকার৷ উপগ্রহ থেকে পাওয়া এই ছবিতে সাগরের পানির উপর ধূলার উপস্থিতি দেখতে পাচ্ছেন? হ্যাঁ এই ধূলা সাহারা মরভূমির ধূলা৷ সেগুলো বাতাসে ভেসে যাচ্ছে অ্যামাজন অরণ্যের দিকে৷ এই ধূলা খেয়েই বেঁচে আছে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ বলে পরিচিত অ্যামাজন৷
ছবি: NASA
এখানেও লেনদেন
ছবিটি ‘হার্মিট ক্র্যাব’-এর৷ বাংলায় যাকে অনেকে সন্ন্যাসী কাঁকড়া বলে থাকেন৷ তারা তাদের সম্পদ লুকাতে ও শিকারের হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে তাদের খোসায় ‘অ্যানেমোনি’ নামের একপ্রকার সামুদ্রিক প্রাণীকে থাকতে দেয়৷ বিনিময়ে অ্যানেমোনি ঐ কাঁকড়ার ফেলে দেয়া খাবার থেকে উপকৃত হয়৷
ক্লাউনফিশ
হ্যাঁ৷ নিমো৷ অ্যানিমেটেড ফিল্ম ‘ফাইন্ডিং নিমো’-র নিমো চরিত্রটি আসলে একটি ক্লাউনফিশ৷ তারাও অ্যানেমোনির মধ্যে বাস করে৷ বিষাক্ত অ্যানেমোনি ক্লাউনফিশকে শিকারির হাত থেকে রক্ষা করে৷ বিনিময়ে ক্লাউনফিশ অন্য মাছদের প্রলোভন দেখিয়ে অ্যানেমোনিদের কাছে নিয়ে আসে৷
ছবি: imago/OceanPhoto
শেওলা থেকে পুষ্টি
মধ্য ও দক্ষিণ অ্যামেরিকায় দেখা পাওয়া এই প্রাণীটির নাম স্লোথ৷ তারা সাধারণত পাতা খায়৷ কিন্তু সেখান থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না তারা৷ এই অভাব মেটাতে তারা নিজেদের লোমে থাকা শেওলা খায়৷ আর শেওলা স্লোথের শরীরে বাস করা গুবরে পোকা সহ অন্যান্য পোকার মল খেয়ে বেঁচে থাকে৷