রোহিঙ্গা নির্যাতনের অভিযোগে মিয়ানমারের পাঁচ সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আর্থিক ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে অস্ট্রেলিয়া৷ এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছিল৷
বিজ্ঞাপন
ঐ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বাধীন সামরিক ইউনিট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপর চলা নিপীড়নের জন্য দায়ী বলে অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে৷ দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস পেইন বলেন, ‘‘আমি মিয়ানমারের পাঁচ সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আর্থিক ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি৷ এই কর্মকর্তাদের অধীনে থাকা ইউনিটগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী৷''
নিষেধাজ্ঞার কারণে যেসব কোম্পানি এই ব্যক্তিদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করবে তাদের ১ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হতে পারে৷ আর ঐ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা ব্যক্তিরা ১০ বছর কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন বলে জানা গেছে৷
এ ব্যাপারে মন্তব্যের জন্য মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ হিতাইকে ফোন করলে তিনি ফোন ধরেননি বলে জানিয়েছে রয়টার্স৷
অস্ট্রেলিয়া যে পাঁচ কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করেছে, তাঁদের মধ্যে চার জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনে বিচারের প্রস্তাব করেছিল জাতিসংঘ৷ সম্প্রতি প্রকাশিত সংস্থার এক প্রতিবেদনে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে গণধর্ষণ ও গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়৷ ঐ একই প্রতিবেদনে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনে বিচারের প্রস্তাব করা হয়েছিল৷
রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংসতার চিত্র
মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে৷ রয়টার্সের আলোকচিত্রীর ছবিতে সেইসব নৃশংসতার ছবি ফুটে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
একবছরের শিশু
মনকে নাড়া দেয়া ব্যান্ডেজে মোড়ানো তুলতুলে ছোট্ট এই দু’টি পা শহিদের৷ বয়স মাত্র এক বছর৷ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে দাদি তাহেরা যখন পালাচ্ছিলেন, তখন তাঁর কোল থেকে পড়ে যায় ছোট্ট শহিদ৷ ছবিটি কক্সবাজারে রেডক্রসের এক হাসপাতালে ২৮ অক্টোবর তোলা৷
ছবি: Reuters/H. McKay
কালাবারো, ৫০
রাখাইনের মংদুতে তাঁদের গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয় সেনা সদস্যরা৷ এতে স্বামী, মেয়ে ও এক ছেলেকে হারান কালাবারো৷ তাঁর ডান পায়ে আঘাত করা হয়৷ যেখানে পড়ে গিয়েছিলেন সেখানেই কয়েক ঘণ্টা মারা যাওয়ার ভান করে ছিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
সেতারা বেগম, ১২
নয় ভাই-বোনের মধ্যে একজন সে৷ সেনারা যখন তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, তখন বাকি আটজন বের হয়ে যেতে পারলেও সে আগুনের মধ্যে আটকা পড়ে গিয়েছিল৷ পরে তাকে উদ্ধার করা হয়৷ তবে পা পুড়ে যায়৷ এই অবস্থায় বাংলাদেশে পৌঁছেছে সে৷ বাংলাদেশেই তার চিকিৎসা করা হয়৷ এখন তার দুই পা থাকলেও নেই কোনো আঙুল৷
ছবি: Reuters/J. Silva
নূর কামাল, ১৭
নিজের ঘরে লুকিয়ে ছিল সে৷ সেখান থেকে সৈন্যরা তাকে খুঁজে বের করে প্রথমে রাইফেলের বাট, পরে ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করে৷ ছবিতে সেটিই দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
আনোয়ারা বেগম, ৩৬
ঘরে আগুনের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুম থেকে উঠে পালাতে গিয়েছিলেন তিনি৷ তবে এর মধ্যেই পুড়ে যাওয়া ছাদ তাঁর মাথায় ভেঙে পড়ে৷ ফলে শরীরে থাকা নাইলনের কাপড় গলে হাত পুড়িয়ে দেয়৷ ‘‘আমি মনে করেছিলাম, মরে যাব৷ তবে আমার সন্তানদের জন্য বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি,’’ রয়টার্সকে বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মমতাজ বেগম, ৩০
সেনারা তাঁর বাড়িতে ঢুকে মূল্যবান জিনিসপত্র দিতে বলেছিল৷ তখন মমতাজ তাঁদের দারিদ্র্যের কথা জানালে সৈন্যরা বলেছিল, ‘‘যদি তোমার কোনো অর্থ না থাকে, তাহলে আমরা তোমাকে হত্যা করব৷’’ এই বলে, সৈন্যরা তাঁকে ঘরে বন্দি করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল৷ কোনোরকমে সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে বের হয়ে দেখেন তাঁর তিন ছেলে মৃত, আর মেয়েকে প্রহার করা হয়েছে, তার রক্ত ঝরছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
ইমাম হোসেন, ৪২
মাদ্রাসায় পড়িয়ে ফেরার পথে তিন ব্যক্তি ছুরি নিয়ে তাঁর উপর হামলা করেছিল৷ পরের দিনই তিনি তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গ্রামের অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন৷ এরপর তিনিও কক্সবাজারে পৌঁছান৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মোহাম্মদ জাবাইর, ২১
গ্রামের বাড়িতে এক বিস্ফোরণে তার শরীরের এই অবস্থা৷ ‘‘আমি কয়েক সপ্তাহ অন্ধ ছিলাম৷ কক্সবাজারের এক সরকারি হাসপাতালে ২৩ দিন চিকিৎসাধীন ছিলাম,’’ বলেছে সে৷