৪০টি দেশের কূটনীতিকরা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনের পর বলেছেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের অবশ্যই তাঁদের নিজ দেশে ফেরত নিতে হবে৷ তাঁদের নাগরিকত্বের বিষয়টি সমাধান করতে হবে৷''
বিজ্ঞাপন
বুধবার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, চীন, ভারত, সৌদি আরবসহ ৪০টি দেশের কূটনীতিকরা কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন৷ তাঁদের সঙ্গে করে নিয়ে যান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মোহাম্মদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক৷ আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারাও সেখানে ছিলেন৷
দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা ক্যাম্প ঘুরে দেখেন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন৷ তাঁরা কোনো আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং না করলেও পরিদর্শনের পর যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জোয়েল রাইফম্যান, ইটালির রাষ্ট্রদূত মারিও পালমার ও নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত লিওনি কুয়েলেনায়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে বথা বলেন৷ তাঁরা বলেন, ‘‘একসঙ্গে এত মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য সত্যিই বাংলাদেশ প্রশংসার দাবি রাখে৷ আমরা আন্তরিকভাবে এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরবো৷ মিয়ানমার সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাবো, এই হামলা বন্ধ করে তারা যেন স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনে ও রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়৷ রোহিঙ্গাদের এই পরিস্থিতিতে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি৷''
তিন কূটনীতিক আরো বলেন, ‘‘আমরা আমাদের নিজ নিজ দেশে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি জানাবো৷ তাঁদের নাগরিকত্বের বিষয়টি অবশ্যই সমাধান করতে হবে৷ রোহিঙ্গাদের অবশ্যই তাঁদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে৷''
পরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ‘‘দুপুর দেড়টার দিকে তাঁরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প দেখে গাড়িতে উঠার কয়েক মিনিটের মধ্যে মিয়ানমার সীমান্তের একটি গ্রামে আগুন ও ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়৷ তাঁরা তখন গাড়ি বহর থামিয়ে সেই দৃশ্য দেখেন এবং অনেকে সেই দৃশ্যের ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন৷''
কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা শরণার্থী আমির হোসেন ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘কূটনীতিকরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন৷ আহতদের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ চিকিৎসা ব্যবস্থা দেখেছেন৷ তাঁরা বেশ কিছু সময় এখানে ছিলেন৷''
‘রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত নেয়াই হচ্ছে একমাত্র সমাধান’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘‘কূটনীতিকরা সরেজমিন অবস্থা দেখে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে পুরোপুরি ধারণা পেয়েছেন৷ এখন তাঁরা তাঁদের দেশকে জানাবেন৷ এর মাধ্যমে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আরো ভালোভাবে তুলে ধরার সুযোগ পেলো৷ রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধ এবং তাঁদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত নেয়াই হচ্ছে একমাত্র সমাধান৷''
রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে ইইউ
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য অতিরিক্ত মানবিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)৷ মঙ্গলবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ইইউ অতিরিক্ত তিন মিলিয়ন ইউরো মানবিক সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছে৷ সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে মিয়ানমার থেকে অধিক সংখ্যায় রোহিঙ্গা শরণার্থী আসার কারণে তারা এই অতিরিক্তি বরাদ্দ দিচ্ছে৷
ইইউ-র মানবিক সাহায্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিশনার ক্রিসটোস স্টাইলিয়ানিডেস গত মে মাসে রাখাইন সফরের সময়ে যে ১২ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা ঘোষনা দিয়েছিল, এই তিন মিলিয়ন ইউরো তার অতিরিক্তি৷ ক্রিসটোস স্টাইলিয়ানিডেস বলেন, ‘‘এই অতিরিক্ত বরাদ্দ নতুন আসা শরণার্থীদের জরুরি ভিত্তিতে বাসস্থান, পানি, খাদ্য ও স্বাস্থ্য সহায়তা দেবার কাজে ব্যবহার হবে৷''
তিনি বাংলাদেশ সরকারকে এই শরণার্থীদের আশ্রয় দেবার জন্য ধন্যবাদ জানান৷ ইইউ ১৯৯৪ থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমারকে ২৩২ মিলিয়ন ইউরো মানবিক সহায়তা দিয়েছে৷ আর বাংলাদেশকে ২০০৭ সাল থেকে এই ইস্যুতে দিয়েছে ১৫৩ মিলিয়ন ইউরো৷
টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণার্থী
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সংঘাতের মুখে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশের টেকনাফে এসেছেন সাড়ে তিন লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ সেখানে তাঁদের জীবনযাত্রা, তাঁদের জীবনের দুঃসহ স্মৃতির বর্ণনা জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফের লম্বার বিল এলাকা দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গা শরণার্থী আসছে আশ্রয়ের সন্ধানে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রোহিঙ্গা শরণার্থীরা দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে এসে পৌঁছান টেকনাফে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পরিবারের অসুস্থ ও বৃদ্ধ সদস্যদের এভাবে কাঁধে নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে টেকনাফে এসেছেন অনেকেই৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
শরণার্থীরা মিয়ামনমার থেকে অনেকটা খালি হাতেই পালিয়ে এসেছেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
শরণার্থীদের মধ্যে অনেকেই চোখের সামনে দেখেছেন স্বজন হত্যার বিভৎস দৃশ্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রোহিঙ্গা শরণার্থী নারী ও শিশুরা বাংলাদেশে আসার দীর্ঘপথে নদী-খালও পাড়ি দিয়েছেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ২৫ আগস্টের পর থেকে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছে বাংলাদেশে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফ ও নাইক্ষংছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত থেকে আসা কমে গেলেও শাহপরীর দ্বীপ থেকে এখনও দলে দলে শরণার্থীরা আসছেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফের নাফ নদীর ওপারে প্রতিদিনিই দেখা যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের বসতি জ্বালিয়ে দেয়ার দৃশ্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
তিন দিন ধরে আগুন দেয়া হচ্ছে মংডু ও রাসিডাং এলাকার রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর৷ শাহপরীর দ্বীপ থেকে তোলা ছবি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বাংলাদেশে আসা শরণার্থীদের অনেকেই নিয়ে আসছেন গবাদি পশু৷ এক্ষেত্রে তাঁরা ব্যবহার করছেন নাফ নদীকে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
গত কয়েকদিন ধরে আসা মানুষদের বড় একটা অংশের শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই মেলেনি৷ কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের পাশেই দিন কাটছে তাঁদের৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
অনেকে আবার জায়গা করে নিয়েছেন সড়কের পাশের বিভিন্ন টিলার উপরে৷ সোখানে খোলা আকাশের নীচেই দিন রাত পার করছেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফের বালুখালীতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নুতন শিবির৷ বিশাল এ এলাকায় সব শরণার্থীরই জায়গা করে দিতে কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ২ লাখের বেশিই শিশু, যা এবার আসা মোট শরণার্থীর ৬০ শতাংশ৷ ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ২৫ শে আগস্টের পর থেকে ১১শ’রও বেশি শিশু অভিভাবক ছাড়া রাখাইন থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত তিন হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ শুরু হয়েছে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের কাজ৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসা শুরু করলে প্রথমে সীমান্ত সিল করা দেয়া হয়েছিল৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কিন্তু কয়েকদিন পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আচরনের নির্দেশ দিলে সীমান্ত শিথিল হয় এবং ব্যাপকহারে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা খাবারের তীব্র সংকটে ভুগছেন৷ কোনো গাড়ি থেকে শুকনা খাবার দিতে দেখলেই খাবার সংগ্রহ করতে তাঁদের মধ্যে শুরু হয় কঠিন প্রতিযোগিতা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
২৫শে আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, অস্ত্রধারী বিদ্রোহীরা ২৪টি পুলিশ চেকপোস্ট ও একটি সেনাঘাঁটিতে একযোগে হামলা চালায়৷ তাদের পাল্টা হামলা চালালে তা সহিংসতায় রূপ নেয়৷ দু’পক্ষের সংঘর্ষে সেইদিনই রাখাইন রাজ্যে অন্তত ৮৯ জন নিহত হয়৷