মিয়ানমারে ক্ষমতা দখল করা সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে৷ শনিবার মান্ডালে শহরে প্রতিবাদকারীদের উপর গুলি ছোঁড়ে নিরাপত্তা বাহিনী৷
বিজ্ঞাপন
মেডিকেল শিক্ষার্থীদের আয়োজিত এই বিক্ষোভে প্রায় এক হাজার মানুষ যোগ দেন৷ নয় ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে এক তরুণীর মৃত্যু প্রতিবাদে বিক্ষোভের আয়োজন করেন তারা৷ এতে অন্তত দুইজনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন সেখানকার জরুরি সেবাদানে নিয়োজিত কর্মীরা৷ মান্ডালে ভিত্তিক একটি স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধার দলের প্রধান হ্লাইং মিন ও জানিয়েছেন, একটি শিপইয়ার্ডের কাছে এই সহিংসতায় প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছেন৷
শুক্রবার গুলিতে প্রাণ হারানো মিয়া থোয়েট থোয়েট খিয়াং এর স্মরণে প্রতিবাদকারীরা ফুল ও ব্যানার হাতে মান্ডালে ও ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় নামেন৷ নিরাপত্তা বাহিনী প্রতিবাদকারীদের উপর টিয়ার গ্যাস, জল কামান ও রবার বুলেট ছোঁড়ে৷ সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ চলছে৷ এখন পর্যন্ত ৫৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে একটি স্বাধীন পর্যবেক্ষক দল৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল সবশেষ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন৷ তিনি বিক্ষোভকারীদের উপর সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমারের সামরিক ও সব নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান৷ দেশটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন আলোচনায় বসবে বলেও এক টুইটে উল্লেখ করেন৷
মিয়ানমারের সামরিক জান্তার উপর অবরোধ আরোপে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়ে আসছেন সু চির সমর্থকরা৷ যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা ও ব্রিটেন এরইমধ্যে জেনারেলদের উপর অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে৷
এফএস/এডিকে (এএফপি, রয়টার্স)
মিয়ানমারে সেনা শাসনের বিরুদ্ধে অভিনব বিক্ষোভ
সেনা অভ্যুত্থানের এক সপ্তাহ পর মিয়ানমারজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চরম রূপ নিয়েছে৷ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন চিকিৎসক, শিক্ষকসহ সব স্তরের মানুষ৷ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন তারা৷
ছবি: REUTERS
চিকিৎসক আর নার্সরা প্রথম সারিতে
সেনা অভ্যুত্থানের ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসক ও নার্সরা ধর্মঘটের ডাক দেন৷ অন্যদেরও এই আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান তারা৷
ছবি: REUTERS
সব শ্রেণি পেশার মানুষ
অন্যদিকে, ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমজীবী মানুষ ও অন্যান্য সামাজিক সংগঠন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে অংশ নেন৷ তারা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দাও’, ‘আমাদের লক্ষ্য গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা’৷ শনিবার রাত থেকে দেশজুড়ে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছেন৷
ছবি: Ye Aung Thu/AFP/Getty Images
আন্দোলনে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের সংহতি
বিক্ষোভকারীদের সাথে রাজপথে নেমেছেন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা৷ বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশটিতে ভিক্ষুদের সংগঠন ‘সংঘ’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
দেশজুড়ে বিক্ষোভ
ইয়াঙ্গুন বা মান্দালয়ের মতো বড় শহরের পাশাপাশি ছোট শহরগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভের আগুন৷ শান রাজ্যের মতো আদিবাসী অঞ্চলগুলোও বাদ যায়নি৷
ছবি: AFP/Getty Images
তিন আঙুলের অভিবাদন
হলিউডের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হাঙ্গার গেমস যারা দেখেছেন তারা এই প্রতীকের সাথে পরিচিত৷ থাইল্যান্ডে বিক্ষোভের সময় আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাতে ‘থ্রি ফিঙ্গার গ্রিটিংস’ ব্যবহার করেছিলেন বিক্ষোভকারীরা৷ মিয়ানমারেও সেই একই দৃশ্যের দেখা মিললো৷
ছবি: REUTERS
বারান্দা থেকে সংহতি
যারা রাজপথে নেমে আন্দোলনে যোগ দিতে পারছেন না, তাদের অনেকেই বিক্ষোভকারীদের পানি আর খাবার দিয়ে সাহায্য করছেন, বারান্দায় দাঁড়িয়েও সংহতি জানিয়েছেন অনেকে৷
ছবি: REUTERS
সু চি’র মুক্তি
১ লা ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সু চি এবং তার দল এনএলডি’র অনেক শীর্ষ নেতাকে আটক করেছে সেনাবাহিনী৷ আন্দোলনকারীরা সবার মুক্তি দাবি করছেন৷
ছবি: Sem Van Der Wal/ANP/AFP/Getty Images
অভিনব প্রতিবাদ
বিক্ষোভ দমনে সোমবার রাতে সামরিক জান্তা ডিক্রি জারি করেছে৷ রাজধানীসহ প্রধান তিনটি শহরে পাঁচজনের বেশি মানুষের সমবেত হওয়া নিষিদ্ধ৷ রাত ৮টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে৷ এই ঘোষণার পর বিক্ষোভকারীদের মধ্যে থেকে অনেকে ফুল নিয়ে এগিয়ে আসেন দায়িত্বরত পুলিশের দিকে৷
ছবি: Ye Aung Thu/AFP/Getty Images
উত্তপ্ত হচ্ছে পরিস্থিতি
রাজধানী নেপিদোতে মঙ্গলবার বিক্ষোভকারী এবং পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে৷ সামরিক জান্তা বিক্ষোভকে অবৈধ ঘোষণা করেছে৷ বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে রাবার বুলেট আর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ৷ বিক্ষোভকারীরা পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে৷ রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
ছবি: REUTERS
সেনা সমর্থকরাও রাজপথে
বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে রাজপথে অবস্থান নিয়েছেন সেনা সমর্থকরা৷ সেনা সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি দেশজুড়ে বেশ কিছু সমাবেশের আয়োজন করেছে৷
ছবি: Thet Aung/AFP/Getty Images
৮৮’র অভ্যুত্থানের কথা স্মরণ
বর্তমান বিক্ষোভ যে রূপ নিয়েছে তা ১৯৮৮ সালের সেনা অভ্যুত্থানের কথা মনে করিয়ে দেয়৷ তখন সরকারবিরোধী আন্দোলনে পুরো দেশের শাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ক্ষমতা হাতে নেয় সেনাবাহিনী৷ কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়, আটক করা হয়েছিল অনেককে, দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন অসংখ্য আন্দোলনকর্মী ও শিক্ষার্থী৷