রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে গাম্বিয়ার করা মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না- জাতিসংঘের বিচার আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) সেই সিদ্ধান্ত দেবে ২৩ জানুয়ারি৷
বিজ্ঞাপন
গাম্বিয়ার বিচার মন্ত্রণালয় সোমবার এক টুইটে এ তথ্য জানিয়েছে৷ তবে বিষয়টি নিশ্চিত হতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স আইসিজের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো উত্তর পায়নি।
দুই বছর আগে সন্ত্রাস দমনের নামে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা মুলসমান অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে অভিযান চালায়৷ ওই অভিযানে সেনাবাহিনী গণহত্যা, ধর্ষণ এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে৷ জাতিসংঘ ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন' বলে বর্ণনা করেছে৷ মিয়ানমার সরকার শুরু থেকেই সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে৷
ওআইসিভুক্ত পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া গত নভেম্বরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যা প্রতিরোধ ও এর শাস্তির বিধানে ১৯৪৮ সালে স্বাক্ষরিত ‘জেনোসাইড কনভেনশন' লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে এ মামলা করে৷
গাম্বিয়া নিজে ওই কনভেনশনে স্বাক্ষরকারি দেশ এবং ১৯৫৬ সালে মিয়ানমারও স্বাক্ষর করে৷
তামবাদু শুনানিতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতার চিত্র তুলে ধরেন এবং গণহত্যা বন্ধের দাবি জানান। নৃশংসতার জন্য দায়ী সেনা সদস্যদের বিচার ও সহিংসতা বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের উপর ‘আস্থা রাখা যায় না' মন্তব্য করে মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানির আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা চান গাম্বিয়ার প্রধান কৌঁসুলি পল রিখলার।
অন্যদিকে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে সুচি দাবি করেন, রাখাইনের পরিস্থিতি সম্পর্কে গাম্বিয়া যে চিত্র আদালতে উপস্থাপন করেছে তা ‘অসম্পূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর'। মিয়ানমারের সামরিক বিচার কাঠামোকে কাজ করার সুযোগ দেওয়া উচিত মন্তব্য করে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলা বাতিল করার আর্জি জানান তিনি।
দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শোনার পর আইসিজের ১৭ সদস্যের বিচারক প্যানেল বিষয়টি আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।
আইসিজের বিচারক প্যানেলের প্রধান আবদুলকাভি আহমেদ ইউসুফ গত ১৩ ডিসেম্বর বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব' এ মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন তারা।
হেগ শহরে মিয়ানমারের পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিবাদ
নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে যখন মিয়ানমারের বিপক্ষে গণহত্যা মামলার শুনানি চলছিল তখন পিস হাউসের বাইরে জড়ো হন প্রতিবাদকারীরাও৷ মিয়ানমারের সমর্থকরাও এসেছিলেন সেখানে৷ সেসব চিত্র দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/A. Islam
‘ঐক্যবদ্ধ থাকুন’
মিয়ানমারের জনগণ এই বিচারকে দেখছে দেশটির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে৷ আদালতের বাইরে দেশটির সমর্থকরা তাই জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান৷ এক নারী তেমনই এক স্লোগান সম্বলিত স্টিকার লাগিয়েছেন তার গালে৷
ছবি: DW/A. Islam
সুচিকে সমর্থন
আদালতের বাইরে মানববন্ধন করেছেন মিয়ানমারের সমর্থকরা৷ সুচির ছবিসহ বিশাল ব্যানার হাতে প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায় তাদের৷ যেখানে লেখা ছিল, ‘আমরা স্টেইট কাউন্সিলরকে সমর্থন করি’৷
ছবি: DW/A. Islam
‘সুচির সাথে আছি’
মিয়ানমারের সমর্থকরা দেশটির নেত্রী অং সান সুচির পোস্টার নিয়ে হাজির হয়েছেন৷ সেখানে লেখা, ‘আমরা তোমার সাথে আছি’৷
ছবি: DW/A. Islam
সুচি সমর্থকদের জন্য খাবার
সুচির সমর্থকদের মধ্যে খাবার বিতরণ করতে দেখা যায় কয়েকজনকে৷ সেখানে বসবাসরত একজন বার্মিজ এই খাবার সরবরাহ করেছেন বলে জানিয়েছেন তারা৷
ছবি: DW/A. Islam
গণহত্যা নয়?
রাখাইনে সহিংসতার কথা স্বীকার করলেও একে কোনোভাবেই গণহত্যা বলা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন সুচি৷ আদালতের বাইরে অবস্থান নেয়া মিয়ানমারের সমর্থকরাও তেমনটাই মনে করে৷
ছবি: DW/A. Islam
প্রতিবাদে রোহিঙ্গারা
ট্রাকে বিশাল এক ব্যানার৷ তার বেশিরভাগটা জুড়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রধানের ছবি৷ এক পাশে লেখা, ‘রোহিঙ্গাদের গণহত্যার জন্য সন্ধান চাই’৷ ব্যানারের নীচে রয়েছে সেনাবাহিনীর অন্য উচ্চপদস্থদের নাম৷ এভাবেই প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউরোপীয় বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সংগঠন দ্য ইউরোপিয়ান রোহিঙ্গা কাউন্সিল৷
ছবি: DW/A. Islam
‘স্টপ জেনোসাইড’
মিয়ানমারের গণহত্যা থামানোর আহবান নিয়ে হাজির হয়েছেন ইউরোপে বসবাসরত এই রোহিঙ্গারা৷ আদালত ভবনের বাইরে তাদের স্লোগান দিতেও দেখা যায় ৷
ছবি: DW/A. Islam
৭০ বছরের সামরিক আগ্রাসন
এরা এসেছেন আরাকার রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে৷ ‘যুদ্ধাপরাধীদের’ পক্ষে না দাড়াতে সুচির প্রতি আহবান জানিয়েছেন তারা৷ মামলা করার জন্য ধন্যবাদ জানান গাম্বিয়ার প্রতিও৷ দেশটির ৭০ বছরের সামরিক আগ্রাসন বন্ধেরও দাবি তুলে ধরেছেন একজন৷
ছবি: DW/A. Islam
প্রতিবাদে অন্যরাও
মিয়ানমারে শুধু রোহিঙ্গা নয় নির্যাতিত হচ্ছে অন্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোও৷ তেমনই একটি কারেন৷ এই সম্প্রদায়ের মানুষেরাও দ্য হেগের আদালতের সামনে এসেছেন কারেনদের জন্য বিচার চাইতে৷
ছবি: DW/A. Islam
বিচারের বিকল্প নেই
বাবা মায়ের সাথে এই দুই শিশুও এসেছে রোহিঙ্গাদের উপর চালানো নির্যাতনের ন্যয়বিচার চাইতে৷ তাদের একজনের পোস্টারে লেখা ‘বিচার অনিবার্য, এর বিকল্প নেই৷’ আরেক শিশুর হাতে ছিল মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের ছবি৷ যাতে লেখা, ‘ওয়ান্টেড’৷
ছবি: DW/A. Islam
ছুটে এসেছেন বাংলাদেশিরা
ইউরোপের অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিরাও হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের সামনে জড়ো হয়েছেন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে৷ তাদের সঙ্গে ছিল বাংলাদেশের পতাকা৷
ছবি: DW/A. Islam
শান্তি চাই
এই তরুণীরা এসেছেন বিচার, জবাবদিহি, সাম্য আর শান্তির দাবি নিয়ে৷ তারা প্রদর্শন করেছেন আরাকান আর্মির পতাকা৷
ছবি: DW/A. Islam
নিরাপত্তা
শুনানিটি যেই ভবনে চলছে তার নাম পিস হাউস৷ মূল ফটকের বাইরে নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল পুলিশ বাহিনী৷
ছবি: DW/A. Islam
13 ছবি1 | 13
গণহারে হত্যা, ধর্ষণ এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে পুরোপুরি নির্মূল করাই যে ২০১৭ সালের অগাস্টে রাখাইনে সেনা অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল তা পরের বছর জাতিসংঘের স্বাধীন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনে উঠে আসে। প্রাণ বাঁচাতে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে৷