মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা, দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেসব বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসি৷
বিজ্ঞাপন
আইসিসির কৌঁসুলি ফাতু বেনসুদা তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছেন৷ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পূর্ণ তদন্ত শুরু করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখবেন তিনি৷
উল্লেখ্য, মিয়ানমার আইসিসির সদস্য না হলেও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকাণ্ডকে বিচারের আওতায় আনা যায় কিনা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আইসিসির কাছে গত এপ্রিলে একটি শুনানি আয়োজনের আবেদন করেছিলেন কৌঁসুলি বেনসুদা৷
সপ্তাহ দুয়েক আগে আইসিসি জানায় যে, রোহিঙ্গা বিতাড়ন নিয়ে তদন্ত করার এখতিয়ার আইসিসির আছে৷ যদিও মিয়ানমার সেই সময় আইসিসির এখতিয়ার থাকার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছিল৷
এরপরই বেনসুদা মঙ্গলবার এক ভিডিও বার্তায় জানান, তিনি প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছেন৷ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যেসব কর্মকাণ্ডের কারণে রোহিঙ্গারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে – যেমন মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, হত্যা, যৌন সহিংসতা, গুম, ধ্বংস ও লুন্ঠন – সেসব বিষয়ে তিনি তদন্ত করবেন বলে জানিয়েছেন৷
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালআইসিসির তদন্ত শুরু করার খবরকে স্বাগত জানিয়েছে৷ এক টুইটার বার্তায় তারা জানিয়েছে, এর ফলে রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার একটি পথ খুলেছে৷
জাতিসংঘের প্রতিবেদন
রোহিঙ্গা নিপীড়ন বিষয়ে তদন্ত করতে জাতিসংঘের গঠন করা একটি কমিটি মঙ্গলবার তাদের পূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ এতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও গণহত্যার বিচার শুরু হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন তদন্তকারীরা৷
জেনেভায় নিযুক্ত মিয়ানমারের নতুন রাষ্ট্রদূত জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন ‘একপেশে' বলে মন্তব্য করেছেন৷
কেমন আছে রোহিঙ্গারা?
মিয়ানমারে সেনা সদস্যদের নির্বিচার হত্যা-নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার এক বছর পূর্ণ হলো৷ কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে কেমন চলছে অসহায় এসব মানুষের জীবন, সে চিত্রই তুলে আনার চেষ্টায় এই ছবিঘর৷
ছবি: Jibon Ahmed
এক ঘরে ১০ জনের বসবাস
আট সন্তান নিয়ে এক ঘরে গাদাগাদি করে থাকেন জোহার ও উম্মে কুলসুমা দম্পতি৷ তাঁদের দুই মেয়ে বড় হয়েছে৷ আর সবার ছোটটার বয়স দুই বছর৷ রাখাইনে কৃষি কাজ করতেন জোহার৷ এখন কাজ নেই, সাহায্যে চলছে তাঁদের জীবন৷
ছবি: Jibon Ahmed
এক টিউবওয়েলে চলে ৯৯ পরিবার
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ পানি সরবরাহে ক্যাম্পে বসানো হয়েছে গভীর নলকূপ৷ একটি নলকূপের পানি নিয়ে চলছে তিন ব্লকের ৯৯টি পরিবার৷
ছবি: Jibon Ahmed
৩৩ পরিবারের জন্য চার টয়লেট
বাঁশ আর প্লাস্টিক দিয়ে পাহাড়ের ঢালে তৈরি করা হয়েছে টয়লেট৷ এক জায়গায় পাশাপাশি চারটি টয়লেট দিয়ে কাজ চালাতে হয় ৩৩টি পরিবারের সদস্যদের৷ আর দুটো গোসলখানা ব্যবহার করে ২০ থেকে ৩৫টি পরিবার৷
ছবি: Jibon Ahmed
নিউমোনিয়া
রোহিঙ্গা শিবিরের শিশুদের নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার এখনো বেশ৷ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত আট মাসের জাইনুকা বিবিকে বালুখালীতে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিমের চিকিৎসকদের কাছে এনেছেন মা খালেদা বানু৷
ছবি: Jibon Ahmed
ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম
ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিমের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে বেশ কয়েকটি সংস্থা ও সংগঠন৷ এ রকম একটি টিমের চিকিৎসক সোহেল জানান, প্রতি দিন ৪০-৫০ জন রোগী দেখেন৷ তাঁদের অধিকাংশ পানিবাহিত, ঠান্ডা ও ইনফেকশনের সমস্যা নিয়ে আসেন৷
ছবি: Jibon Ahmed
ঈদে জন্ম ‘কোরবান আলীর’
শরণার্থী শিবিরে ২১ সেপ্টেম্বর জন্ম হয়েছে এজাহার হোসেন ও রেনুর একমাত্র ছেলে সন্তানের৷ কোরবানির ঈদের দিন জন্ম হওয়ায় তার নাম রাখা হয়েছে কোরবান আলী৷ এনজিও পরিচালিত একটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে জন্ম নেওয়া এই শিশু ও তার মা সুস্থ আছে বলে জানান এজাহার হোসেন৷
ছবি: Jibon Ahmed
অপরিকল্পিত বসতি
স্বল্প সময়ের মধ্যে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আসায় তাঁদের আশ্রয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই গড়ে তোলা হয় ঘর৷ বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ঘরগুলো৷
ছবি: Jibon Ahmed
ঝুঁকিপূর্ণ ঘর
কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ের মধুরছড়ার এই বসতিতে আছে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা৷ পাহাড়ের ঢালে তৈরি করা হয়েছে তাঁদের ঘর৷ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এসব ঘর থেকে তাঁদের সরিয়ে নেওয়া পরিকল্পনা করেছে সরকার৷ এরইমধ্যে কিছু পরিবারকে সরিয়েও নেওয়া হয়েছে৷