গত এপ্রিলে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের বিষয়টি তদন্ত করার এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-র আছে কিনা তা জানতে চেয়েছিলেন এক কৌঁসুলি৷ এবার সে বিষয়ে বাংলাদেশের মতামত জানতে চেয়েছে হেগভিত্তিক সংস্থাটি৷
বিজ্ঞাপন
গত এপ্রিলে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের বিষয়টি তদন্ত করার এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধআদালত (আইসিসি)-র আছে কিনা তা জানতে চেয়েছিলেন এক কৌঁসুলি৷ এবার সে বিষয়ে বাংলাদেশের মতামত জানতে চেয়েছে হেগভিত্তিক সংস্থাটি৷
গত ৯ এপ্রিল মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের বিষয়টি তদন্ত করার এখতিয়ার আইসিসির আছে কিনা তা জানতে চেয়েছিলেন ঐ আদালতেরই কৌঁসুলি ফাতু বেনসুদা৷ বিষয়টি নিয়ে একটি শুনানি আয়োজনের অনুরোধও জানিয়েছিলেন তিনি৷ আইসিসির রায় বেনসুদার পক্ষে গেলে তিনি রোহিঙ্গা বিতাড়নের বিষয়ে তদন্ত করার সুযোগ পাবেন৷
বেনসুদার তদন্ত করার পরিকল্পনা স্বাভাবিক কারণেই মিয়ানমারকে অস্বস্তিতে ফেলে৷ তবে তদন্ত করার এখতিয়ার আদৌ আছে কিনা সেই বিষয়ে আইসিসির শুনানি এখনো হয়নি৷এ বিষয়েই বাংলাদেশের মতামত জানতে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে আইসিসি৷ ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ শামসুল হক আইসিসির চিঠি প্রাপ্তির খবর নিশ্চিত করেছেন৷
রোহিঙ্গাদের খবরের কারণে কারাগারে, অতঃপর মুক্তি
মিয়ানমারের রাখাইনে ১০ মুসলিম রোহিঙ্গার হত্যা নিয়ে প্রতিবেদনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে আটক হয়েছিলেন ওয়া লন ও কিঁয় সোয়ে৷ ৫১১ দিন বন্দি থাকার পর প্রেসিডেন্টের ক্ষমা পেয়ে মঙ্গলবার তাঁরা ছাড়া পেয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP/T. Zaw
হাসিমুখ
৫১১ দিন পর কারাগারের বাইরে মুক্ত মানুষ হিসেবে হাঁটা৷ রোহিঙ্গা হত্যা নিয়ে প্রতিবেদন করতে গিয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে আটক হয়েছিলেন তাঁরা৷ এরপর তাঁদের সাত বছরের জেলও হয়েছিল৷ অবশেষে প্রেসিডেন্টের সাধারণ ক্ষমতার আওতায় তাঁরা মঙ্গলবার মুক্তি পান৷
ছবি: picture-alliance/AP/T. Zaw
যে অভিযোগ আনা হয়েছিল
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ১০ মুসলিম রোহিঙ্গা পুরুষ ও ছেলেকে হত্যা করা হয়৷ সেই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে হিয়ে ঐ বছরের ডিসেম্বরে রয়টার্সের হয়ে কাজ করা মিয়ানমারের ঐ সাংবাদিককে আটক করা হয়েছিল৷ তাঁদের বিরুদ্ধে ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’ ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছিল৷
ছবি: Reuters/A. Wang
সমালোচনা
দুই সাংবাদিক আটকের ঘটনায় নোবেলজয়ী অং সান সুচির আমলের মিয়ানমারে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছিল৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন দেশ সাংবাদিকদের মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিল৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সেই সময় বলেছিল, রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূলের ঘটনা যাতে কেউ জানতে না পারে সে জন্য এই সাংবাদিকদের আটক করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Wang
নির্ভীক সাংবাদিক
পুলিশি প্রহরাতেও সাংবাদিক ওয়া লনের মুখে হাসি ছিল অবিরাম৷ মিয়ানমারের তথ্য মন্ত্রণালয় সেই সময় জানিয়েছিল, বিদেশি গণমাধ্যমে প্রচারের জন্য তাঁরা অবৈধভাবে তথ্য সংগ্রহ করছিলেন৷
ছবি: Reuters/A. Wang
সহচর
ছবিতে দুই সাংবাদিকের একজন কিঁয় সোয়েকে দেখতে পাচ্ছেন৷ গতবছরের এপ্রিলে আদালতে শুনানির পর পুলিশি ভ্যানে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর সময় এই ছবিটি তোলা৷
ছবি: Reuters/A. Wang
পাশে ছিলেন স্ত্রী
গতবছরের ফেব্রুয়ারিতে তোলা এই ছবিতে স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে কিঁয় সোয়েকে দেখতে পাচ্ছেন৷ আদালতে শুনানির পর চোখের জল ফেলেছিলেন সোয়ের স্ত্রী৷
ছবি: Reuters/A. Wang
6 ছবি1 | 6
চিঠিতে তিনটি বিষয়ে বাংলাদেশের মতামত জানতে চেয়েছে আইসিসি৷ এর মধ্যে প্রধান দু'টি বিষয় হলো – এক, বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের পারিপার্শিক অবস্থা এবং দুই, মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সম্ভাব্য তদন্তের এখতিয়ার আইসিসির আছে কিনা৷
এখতিয়ারের বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, বাংলাদেশ আইসিসির সদস্য হলেও মিয়ানমার নয়৷ তবে গত এপ্রিলে বিষয়টি উত্থাপনের সময়ই আইসিসির কৌসুলি বেনসুদা জানিয়েছিলেন, তিনি মনে করেন, মিয়ানমার আইসিসির সদস্য না হলেও তদন্ত করা যেতে পারে৷ তাঁর যুক্তি, রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের সঙ্গে যেহেতু সীমান্ত পারাপারের সম্পর্ক আছে, তাই আইসিসি তদন্ত করার পক্ষে রায় দিলে তা বিদ্যমান আইনের ভিত্তিতেই পরিচালনা করা সম্ভব৷ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টমিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরুর পর রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে থাকে৷ এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৭ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে৷ আশ্রিত রোহিঙ্গারা বলছেন, রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ধর্ষণ ও গণহত্যা চালিয়েছে৷ সেনাসদস্যদের বিরুদ্ধে ঘরবাড়ি পোড়ানোর অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা৷ তবে মিয়ানমার সরকার বলে আসছে, রোহিঙ্গা জঙ্গিরা অন্তত দু'ডজন পুলিশ ক্যাম্প এবং একটি সেনা ছাউনিতে হামলা চালালে বাধ্য হয়েই জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়৷
এসিবি/ডিজি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংসতার চিত্র
মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে৷ রয়টার্সের আলোকচিত্রীর ছবিতে সেইসব নৃশংসতার ছবি ফুটে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
একবছরের শিশু
মনকে নাড়া দেয়া ব্যান্ডেজে মোড়ানো তুলতুলে ছোট্ট এই দু’টি পা শহিদের৷ বয়স মাত্র এক বছর৷ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে দাদি তাহেরা যখন পালাচ্ছিলেন, তখন তাঁর কোল থেকে পড়ে যায় ছোট্ট শহিদ৷ ছবিটি কক্সবাজারে রেডক্রসের এক হাসপাতালে ২৮ অক্টোবর তোলা৷
ছবি: Reuters/H. McKay
কালাবারো, ৫০
রাখাইনের মংদুতে তাঁদের গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয় সেনা সদস্যরা৷ এতে স্বামী, মেয়ে ও এক ছেলেকে হারান কালাবারো৷ তাঁর ডান পায়ে আঘাত করা হয়৷ যেখানে পড়ে গিয়েছিলেন সেখানেই কয়েক ঘণ্টা মারা যাওয়ার ভান করে ছিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
সেতারা বেগম, ১২
নয় ভাই-বোনের মধ্যে একজন সে৷ সেনারা যখন তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, তখন বাকি আটজন বের হয়ে যেতে পারলেও সে আগুনের মধ্যে আটকা পড়ে গিয়েছিল৷ পরে তাকে উদ্ধার করা হয়৷ তবে পা পুড়ে যায়৷ এই অবস্থায় বাংলাদেশে পৌঁছেছে সে৷ বাংলাদেশেই তার চিকিৎসা করা হয়৷ এখন তার দুই পা থাকলেও নেই কোনো আঙুল৷
ছবি: Reuters/J. Silva
নূর কামাল, ১৭
নিজের ঘরে লুকিয়ে ছিল সে৷ সেখান থেকে সৈন্যরা তাকে খুঁজে বের করে প্রথমে রাইফেলের বাট, পরে ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করে৷ ছবিতে সেটিই দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
আনোয়ারা বেগম, ৩৬
ঘরে আগুনের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুম থেকে উঠে পালাতে গিয়েছিলেন তিনি৷ তবে এর মধ্যেই পুড়ে যাওয়া ছাদ তাঁর মাথায় ভেঙে পড়ে৷ ফলে শরীরে থাকা নাইলনের কাপড় গলে হাত পুড়িয়ে দেয়৷ ‘‘আমি মনে করেছিলাম, মরে যাব৷ তবে আমার সন্তানদের জন্য বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি,’’ রয়টার্সকে বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মমতাজ বেগম, ৩০
সেনারা তাঁর বাড়িতে ঢুকে মূল্যবান জিনিসপত্র দিতে বলেছিল৷ তখন মমতাজ তাঁদের দারিদ্র্যের কথা জানালে সৈন্যরা বলেছিল, ‘‘যদি তোমার কোনো অর্থ না থাকে, তাহলে আমরা তোমাকে হত্যা করব৷’’ এই বলে, সৈন্যরা তাঁকে ঘরে বন্দি করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল৷ কোনোরকমে সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে বের হয়ে দেখেন তাঁর তিন ছেলে মৃত, আর মেয়েকে প্রহার করা হয়েছে, তার রক্ত ঝরছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
ইমাম হোসেন, ৪২
মাদ্রাসায় পড়িয়ে ফেরার পথে তিন ব্যক্তি ছুরি নিয়ে তাঁর উপর হামলা করেছিল৷ পরের দিনই তিনি তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গ্রামের অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন৷ এরপর তিনিও কক্সবাজারে পৌঁছান৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মোহাম্মদ জাবাইর, ২১
গ্রামের বাড়িতে এক বিস্ফোরণে তার শরীরের এই অবস্থা৷ ‘‘আমি কয়েক সপ্তাহ অন্ধ ছিলাম৷ কক্সবাজারের এক সরকারি হাসপাতালে ২৩ দিন চিকিৎসাধীন ছিলাম,’’ বলেছে সে৷