রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার আন্তর্জাতিক আদালতে দায়ের করা মামলায় সমর্থন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে কানাডা৷
বিজ্ঞাপন
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডকে উদ্ধৃত করে এ খবর জানিয়েছে দ্যা ক্যানাডিয়ান প্রেস৷
গত সোমবার মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আদালতে মামলা দায়ের করে গাম্বিয়া৷
মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশনের পক্ষ থেকে মামলাটি দায়ের করা হয়৷
ভাসান চর কি রোহিঙ্গাদের জন্য স্বর্গ?
প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের জন্য বসতি গড়ে তুলেছে বাংলাদেশ৷ তবে দ্বীপটি ঘূর্ণিঝড়প্রবণ হওয়ায় তা রোহিঙ্গাদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: DW/A. Islam
মূল ভূখন্ড থেকে দূরে
বিশ বছরেরও কম সময় আগে ভাসান চর জেগে উঠেছিল৷ বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে এটি ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ সেখানে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে যেতে চাইছে বাংলাদেশ৷
ছবি: DW/A. Islam
যাওয়া সহজ নয়
ভাসান চরে যেতে সাধারণ মানুষের উপযোগী কোনো বাহন নেই৷ ঐ দ্বীপের কয়েকজন দোকানি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, বর্ষার সময় সাগর উত্তাল থাকায় সাধারণ মাছ ধরার নৌকায় করে ভাসান চরে পৌঁছানো কঠিন হয়ে যায়৷
ছবি: DW/A. Islam
তিন মিটার উঁচু বাঁধ
উঁচু ঢেউ ও বন্যার হাত থেকে ভাসান চরকে বাঁচাতে সরকার ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ও তিন মিটার উঁচু বাঁধ নির্মাণ করেছে৷ এক দোকানি জানালেন, মাসে দু’বার বাঁধের বাইরের দিকে থাকা বাজার এক মিটার পর্যন্ত ডুবে যায়৷
ছবি: DW/A. Islam
একইরকম ভবন
রোহিঙ্গাদের জন্য ১,৪৪০টি একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে৷ প্রতিটি ভবনে ১৬টি ঘর রয়েছে৷ ১২x১৪ ফুটের একেকটি ঘরে একটি পরিবারের অন্তত চার জন সদস্যকে থাকতে হবে৷ ঘূর্ণিঝড়ের সময় ব্যবহারের জন্য ১২০টি চারতলা আশ্রয়কেন্দ্রও নির্মাণ করা হয়েছে৷
ছবি: DW/A. Islam
সৌরশক্তি
ভবনগুলোর জ্বালানি চাহিদা মেটাতে সেগুলোতে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে৷ এছাড়া প্রয়োজনের সময় ব্যবহারের জন্য দুটি ডিজেল জেনারেটর ও বিশাল এক মাঠে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে৷ খাবার পানির জন্য রয়েছে নলকূপ৷ আরও আছে বৃষ্টির পানি থেকে খাবার পানি পাওয়ার ব্যবস্থা৷
ছবি: DW/A. Islam
ক্ষয় রোধের ব্যবস্থা
কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবিতে ২০০২ সালে প্রথম এই দ্বীপের অস্তিত্বের কথা জানা যায়৷ এরপর কয়েকবার এটি স্থান পরিবর্তন করেছে৷ ভূমিক্ষয় ঠেকাতে সরকার চরটিতে তিন স্তরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে৷
ছবি: DW/A. Islam
দ্বীপটি কি বাসযোগ্য?
কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, দ্বীপটি এখনও বসবাসের উপযোগী নয়৷ তবে আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত মনে করছেন, বাঁধের উচ্চতা যদি সাড়ে ছয় থেকে সাত মিটার করা যায় তাহলে দ্বীপটি বসবাসযোগ্য হতে পারে৷ তবে ভাসান চরে ফসল ফলানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: DW/A. Islam
রোহিঙ্গাদের ভয়
কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গারা ডয়চে ভেলেকে বলেন, তাঁদের ভাসান চরে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তাঁরা মারা যেতে পারেন৷ তবে প্রকল্পের প্রধান স্থপতি আহমেদ মুক্তা বলেন, ‘‘চরটি রোহিঙ্গাদের জন্য এক স্বর্গ৷’’
ছবি: DW/A. Islam
রোহিঙ্গারা কি ভাসান চরে যাবেন?
কয়েকটি সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে যে, নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে৷ তবে রোহিঙ্গারা সেখানে না গেলে গৃহহীন বাংলাদেশিদের ভবিষ্যতে সেখানে নিয়ে যাওয়া হতে পারে৷
ছবি: DW/A. Islam
9 ছবি1 | 9
এক বিবৃতিতে ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড বলেন ‘‘মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগের বিষয়টিতে ক্যানাডার সমর্থন রয়েছে৷ এ বিষয়ে কিভাবে পূর্ণ সহায়তা সহায়তা প্রদান করা যায় সে পথ খুঁজছে ক্যানাডা৷’’
গাম্বিয়ার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি আরো বলেন, বিষয়টি আইনি সমাধানের জন্য সমমনা দেশগুলোকে নিয়ে কাজ করবে ক্যানাডা৷ রোহিঙ্গা নির্যাতনের সাথে জড়িত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে এবং মিয়ানমারে দীর্ঘ মেয়াদে শান্তি ও সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনতে কাজ করবে ক্যানাডা, বলেন তিনি৷
মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গারার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালে দেশ ছেড়েছিল৷ সেসময় প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়৷
ঘটনার তদন্তে ২০১৮ সালে একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিশন গঠন করে জাতিসংঘ৷ এ কমিশন তাদের প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার জোরালো প্রমান তুলে ধরে৷ সেসময় ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিশনের এ প্রতিবেদনকে সমর্থন জানায় ক্যানাডার হাউস অব কমন্স৷
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন ঠেকাতে কোন ভূমিকা রাখতে না পারার অভিযোগ এনে দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেত্রী অং সান সুচিকে দেয়া সম্মানজনক নাগরিকত্বও বাতিল করে দেশটি৷