ফেসবুকে রোহিঙ্গাদের প্রতি বিদ্বেষমূলক পোস্ট সরাতে বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়েছে ফেসবুক৷ কট্টরপন্থি এক বৌদ্ধ গোষ্ঠী ও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো একাধিক ভিক্ষুকে সামাজিক যোগাযোগ সাইটটিতে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ফেসবুক বৃহস্পতিবার জানিয়েছে এই তথ্য৷
মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুকের ব্যবহারকারী৷ সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, মিয়ানমার থেকে ফেসবুকে এখন অবধি ১৮ মিলিয়ন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, যেখানে দেশটির মোট জনসংখ্যা ৫০ মিলিয়নের মতো৷
বৌদ্ধপ্রধান দেশটির এত মানুষ ফেসবুকে উপস্থিত থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি সেদেশে ফেসবুকের অপব্যবহার রোধে বিশেষ সক্রিয় ছিল না৷ সম্প্রতি জাতিসংঘের তদন্তকারীরাও জানিয়েছেন, দেশটিতে নানা অপপ্রচারমূলক কর্মকাণ্ডে ফেসবুক ব্যবহার করা হচ্ছে৷ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াতে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় উস্কানি দিতে ব্যাপকহারে ব্যবহার করা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ সাইটটি৷
গত কয়েক বছর ধরে ফেসবুকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে নানা বিদ্বেষমূলক প্রচারণা চালানোর পর গত বছর সংখ্যালঘু গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে এক সেনা অভিযান শুরু হলে অন্তত সাত লাখ রোহিঙ্গা রাখাইন রাজ্য ছেড়ে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়৷ সেই অভিযানে অনেক রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে৷
ভাইরাল হওয়া কিছু ভুয়া খবর
আজকাল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেক তাজা খবর শেয়ার করা হয়৷ কিন্তু সেই খবরগুলোতে অনেক ভুয়া খবরও থাকে৷ অনেক সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা বিভ্রান্তও হন৷ ছবিঘরে থাকছে ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি ছড়ানো কয়েকটি ভুয়া খবর৷
একটি ফেসবুক লাইভে দেখাচ্ছিল আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র থেকে নভোচারীদের স্পেসওয়াক করার দৃশ্য৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় তা ভাইরাল হয়ে যায়৷ ইউএনআইএলএডি, ভাইরাল ইউএসএ এবং ইন্টারেসটিনেট- এটি পোস্ট করার পর ফেসবুকে বিপুল পরিমাণ লাইক ও শেয়ার হয়৷ কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ফুটেজের কোথাও নাসা বা ফেসবুকের লাইভ স্ট্রিম কথাটির উল্লেখ ছিল না৷ পরে নাসা’র এক মুখপাত্র জানান, ভিডিওটি ২০১৩ সালে রুশ নভোচারীদের ধারণ করা ভিডিও৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Nasa
করোনা বিয়ারের প্রতিষ্ঠাতার উইল
২০১৬ সালের অন্যতম ভাইরাল খবর এটি-করোনা বিয়ার-এর প্রতিষ্ঠাতা আন্তোনিও ফার্নান্দেজ মৃত্যুর আগে তাঁর জন্মভূমি স্পেনের একটি গ্রামের ৮০টি পরিবারের মধ্যে ২০ কোটি ইউরো দান করার উইল করে গেছেন৷ ডেইলি মেইল প্রথমে খবরটি প্রকাশ করে স্থানীয় পত্রিকার বরাত দিয়ে৷ পরে আরটি, দ্য ইন্ডেপেন্ডেন্ট, দ্য মিররসহ বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রও তা প্রকাশ করে৷ পরে ফার্নান্দেজের পরিবার প্রতিবাদ জানানোয় তারা খবরটি সরিয়ে ফেলে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/M. Rourke
ধর্ষণের ভুয়া খবর
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বার্লিনে লিজা নামের এক জার্মান কিশোরীকে এক দল অভিবাসীর ধর্ষণ করার খবর ভাইরাল হয়ে যায়৷ বিশেষ করে রুশ মিডিয়ায় খবরটি বিপুল কভারেজ পায়৷ পরে কিশোরীটি জানায়, সে সব কিছু বানিয়ে বলেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Wuestenhagen
মার্কিন নির্বাচন
মার্কিন নির্বাচনে যে ভুয়া খবরটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছিল তাতে ছিল ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধের মাত্রার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফলের তুলনা৷ এছাড়া নির্বাচনের ফলাফলের এমন একটি মানচিত্র ওয়াশিংটন পোস্ট প্রকাশ করেছিল, যেটির দিকে ভালোভাবে তাকালে বোঝা যায় একেবারে ওপরে ২০১২ সালের উল্লেখ রয়েছে৷
ট্রাম্প এবং সিম্পসন
সিম্পসন কার্টুনে বেশ কিছু ভবিষ্যদ্বাণী থাকে৷ আর এ কারণে ট্রাম্প নির্বাচনে জেতার পর একটি ট্রল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যেখানে বলা হয় সিম্পসনে আগেই বলা হয়েছিল, ট্রাম্প নির্বাচনে জিতবেন৷ কিন্তু বাস্তবে এমন কিছু হয়নি৷ অথচ টুইটারে বাস্তব আর পুরোনো ভুয়া সিম্পসনের ছবি দেয়ায় নিউজটি ভাইরাল হয়ে যায়৷
ছবি: INTERTOPICS / Taschen-Verlag
শোকার্ত ক্যাঙ্গারু
ডেইলি মেইল এমন একটি ছবি প্রকাশ করে যেখানে দেখানো হয় এক পুরুষ ক্যাঙ্গারু নারী ক্যাঙ্গারুকে দুই হাতে ধরে অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে আছে৷ ইভান সুইৎজারের তোলা ছবিটি এভাবে উপস্থাপনের কারণে ভাইরাল হয়ে যায়৷ তবে ভেটেরিনারি বিশেষজ্ঞরা জানান, নারী ক্যাঙ্গারুর সঙ্গে যৌন মিলনের ইচ্ছে জাগলে পুরুষ ক্যাঙ্গারুর চোখ অশ্রুসজল হয়, তখনই তারা দুই হাত দিয়ে ঝাঁকিয়ে নারী ক্যাঙ্গারুকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করে৷
ছবি: DW/C. Atkinson
বিখ্যাত গণমাধ্যমের নকল
ভুয়া খবর প্রচারকারীরা জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত ওয়েবসাইটগুলোকে নকল করে ৷ ফলে মানুষ খুব ভালোভাবে লক্ষ্য না করলে বুঝতে পারে না, সেগুলো প্রকৃত ওয়েবসাইট, নাকি ভুয়া৷ যেমন, এবিসি নিউজ ডট কম এর সঙ্গে ডট সিও যুক্ত করে (ABCnews.com.co), ব্লুমবার্গের সঙ্গে ডট এমএ যুক্ত করে, ওয়াশিংটন পোস্ট ডট কম- এর সঙ্গে ডট সিও যুক্ত করে কয়েকটি ভুয়া সংবাদ সাইট তৈরি করা হয়েছে৷ এসব ওয়েবসাইটের কাজই ভুয়া সংবাদ পরিবেশন করা৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
7 ছবি1 | 7
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত নেতিবাচক প্রচারণায় ফেসবুকের ব্যবহারের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনায় আসার পর অবশ্য টনক নড়েছে প্রতিষ্ঠানটির৷ চলতি সপ্তাহে দেশটিতে ফেসবুক ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়মনীতি মানা হচ্ছে কিনা তা যাচাইয়ের জন্য অভিযানে নেমেছে প্রতিষ্ঠানটি৷ ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানোর দায়ে কট্টরপন্থি বৌদ্ধদের গোষ্ঠী ‘মা বা থা’ এবং পারমাউক্খা ও থুসেইত্তা নামের দুই উগ্রপন্থি বৌদ্ধ ভিক্ষুকে ফেসবুকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷
ফেসবুকের কন্টেন্ট পলিসি ম্যানেজার ডেভিড কারাগ্লিয়ানো এই বিষয়ে বলেন, ‘‘তাদের ফেসবুক ব্যবহারের কোনো অধিকার নেই এবং অন্য কেউ যদি তাদের পক্ষে কোনো কিছু ফেসবুকে পোস্ট করে, তাহলে তাদেরও প্লাটফর্মটিতে নিষিদ্ধ করা হবে৷’’
অ্যাক্টিভিস্টরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন যে, ফেসবুক সাধারণত আপত্তিকর কোনো পোস্ট ফেসবুকে প্রকাশের আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে নিলেও মিয়ানমারের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি কালক্ষেপণ করতো৷ এমনকি কোনো কোনো সময় বিদ্বেষমূলক পোস্ট সরিয়ে নেয়াও হতো না৷
মিয়ানমারের পোস্টের ক্ষেত্রে সাড়া দিতে দেরি হওয়ার বিষয়টি ফেসবুকও স্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে যে, মিয়ানমার থেকে প্রকাশিত কন্টেন্ট দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানটির সিঙ্গাপুর এবং ব্যাংকক কার্যালয়ে কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, যাদের মধ্যে মিয়ানমারের ভাষা জানা কর্মীরাও রয়েছেন৷ তবে ঠিক কতজন কর্মীকে এই কাজে নিয়োগ করা হয়েছে তা জানায়নি প্রতিষ্ঠানটি৷
উল্লেখ্য, ফেসবুক থেকে ব্যবহারকারীদের তথ্যচুরির এক ঘটনা নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বে বর্তমানে চাপে রয়েছে ফেসবুক৷ তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটি ‘ভুয়া খবরের’ বিস্তৃতি রোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে৷