বুধবার মিয়ানামারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনী হেলিকপ্টার থেকে এক দল রোহিঙ্গার উপর হামলা চালিয়েছে৷ এতে ৫ জন নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছেন৷ গ্রামবাসী ও এক আইনপ্রণেতার বরাত দিয়ে এমন তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স৷
বিজ্ঞাপন
ঘটনাটি ঘটেছে বুথিডাউং নামের একটি পৌরসভা এলাকায়৷ তার কাছেই ছিল রোহিঙ্গাদের এক সময়কার মূল বাসভূমি৷ কিন তাউং গ্রামের কমিউনিটি নেতা জাও কির আহমেদ রয়টার্সকে বলেন, ‘‘গতকাল বিকাল চারটায় সামরিক বাহিনীর হামলায় ৫ জন নিহত হয়েছেন৷ যার মধ্যে একজন আমাদের গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন৷'' এই কারণে গ্রামের মানুষ এখন আর ঘরের বাইরে বের হতে সাহস পাচ্ছেন না বলেও জানান তিনি৷
রোহিঙ্গা শিশুদের পড়াশোনা, ধর্মচর্চা ও চিকিৎসা
জীবন বাঁচাতে রোহিঙ্গারা ত্যাগ করেছেন মাতৃভূমি৷ বাংলাদেশে কিভাবে হচ্ছে তাঁদের সন্তানদের পড়াশোনা আর নিজেদের ধর্মচর্চা? কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়ে তোলা ছবি দিয়েই তা জানাচ্ছেন জীবন আহমেদ৷
ছবি: Jibon Ahmed
১ম শ্রেণি শেষ করেছে আয়াছ
নয় বছর বযসি মো. আয়াছ-ও শরণার্থীর ঢলের সাথে জীবন বাঁচাতে চলে এসেছে বাংলাদেশে৷ অল্প বয়সেই সাক্ষী হয়েছে বিভৎসতার, নিষ্ঠুরতার৷ তারপরও থেমে থাকেনি আয়াছ৷ এক বছরে শেষ করেছে প্রথম শ্রেণির পড়াশোনা৷ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিও পরিচালিত ‘মুক্তি’ স্কুলে লেখাপড়া করা আয়াছ মেধার পরিচয়ও দিচ্ছে শ্রেণীকক্ষে, জানালেন শিক্ষকরা৷
ছবি: Jibon Ahmed
ডাক্তার হবে উম্মে হাবিবা
ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখে ৬ বছরের উম্মে হাবিবা৷ স্বপ্ন পূরণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হাবিবা ক্যাম্পের স্কুলের দৈনিক তিন শিফটের কোনোটিই বাদ দিতে চায় না৷ ইংরেজিতে ছড়া ও অক্ষর লিখতে শিখেছে ইতিমধ্যে৷ হাবিবা পড়ালেখায় ভালো এবং মনোযোগী বলে জানিয়েছেন তার শিক্ষকেরা৷
ছবি: Jibon Ahmed
রোহিঙ্গা শিশুদের ইংরেজি পড়ান নাহিদা
রোহিঙ্গা তরুনী নাহিদা নিজ দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে৷ নিজ দেশ ছেড়ে এসেও থেমে নেই তিনি৷ বর্তমানে একটি এনজিও পরিচালিত স্কুলের শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করেন৷ চেষ্টা করছেন রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে নিয়ে যেতে৷
ছবি: Jibon Ahmed
রোহিঙ্গা শিশুদের ধর্ম শিক্ষা
সাত লাখেরও অধিক রোহিঙ্গার ধর্ম শিক্ষার জন্য মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ করেছে বিভিন্ন এনজিও৷ রোহিঙ্গা মুসলিম শিশুদের মাদ্রাসায় পড়ার আগ্রহই বেশী৷ অন্যদিকে মসজিদগুলোতে বয়স্কদের নামাজ পড়ার জন্য রয়েছে ভালো ব্যাবস্খা৷
ছবি: Jibon Ahmed
মা-বাবা নেই, তাই এতিমখানায়
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থাপিত বেশিরভাগ মাদ্রাসাতেই রয়েছে এতিমখানা৷ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে মা-বাবা হারানো সন্তানদের ঠাঁই হয়েছে এ এতিমখানাগুলোতে৷ এতিমখানাগুলোতে সবাই মিলেমিশে মা-বাবা হারানোর শোক ভোলার চেষ্টা করে তারা৷
ছবি: Jibon Ahmed
স্থানীয় চিকিৎসা
ঝার-ফুঁক আর ওঝা দিয়ে জীন তাড়ানোর সংস্কারও আছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক বৈদ্য আগুন দিয়ে একজন ‘রোগীর উপর ভর করা জীন’ তাড়ানোর চেষ্টে করছেন৷ তিনি একজন পেশাদার বৈদ্য৷ জীন তাড়ানো বাবদ প্রতিবার তিনি তিন হাজার এক টাকা করে নেন৷
ছবি: Jibon Ahmed
6 ছবি1 | 6
‘ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর রেডক্রস' বা আইসিআরসির একটি দল বুথিডাউং হাসপাতাল পরিদর্শন করেছে৷ সেখানে ১৩ জনকে আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিতে দেখেছে তারা৷ এর মধ্যে কয়েকজনের জরুরি ভিত্তিতে সার্জারি করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান স্টিফেন সাকালিয়ান৷ ‘‘আইসিআরসি এবং মিয়ানমার রেডক্রস এই ঘটনা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে৷ রোগীদের ঔষধ সরবরাহ, সিত্তয়ে হাসপাতালে স্থানান্তরসহ আমরা আমাদের দিক থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে আবেদন করেছি,'' বলেন স্টিফেন সাকালিয়ান৷
রশিদ আহমেদ নামের একজন শ্রমিক রয়টার্সকে ফোনে জানান, সাই দিন উপত্যকায় কাজ করার সময় তাঁর বড় ভাই, চাচা, এবং ভাতিজার উপর গুলি চালানো হয়েছে৷ ‘‘তাঁরা যখন সেখানে কাজ করছিল, বাঁশ কেটে তা সংগ্রহ করার সময় তাঁদের উপর একটি হেলিকপ্টার হামলা চালায়,'' বলেন তিনি৷ আরও দুই গ্রামবাসীও হেলিকপ্টার থেকে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন৷
হামলার পর আহত কয়েকজনকে বুথিডাউং শহরে নিয়ে যাওয়া হয়৷ কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তাঁদের কয়েকজনের মৃত্যু হয়৷ মং কিয়াও জান নামের এক আইনপ্রণেতা এমন তথ্য জানান৷ ৫টি মরদেহ উদ্ধারের কথাও উল্লেখ করেন তিনি৷
তবে ঘটনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র৷ মেজর জেনারেল তুন তুন নাই বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, সেনাবাহিনী সময়মতো এই ঘটনার ‘সত্য খবর' প্রকাশ করবে৷
গত ডিসেম্বরের পর থেকে ১৭,০০০ মানুষ রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সহিংসতায় বাস্তুচ্যূত হয়েছেন৷ গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে মানবিক সহযোগিতা দেয়ার অনুমতি দিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানায়৷