বিমসটেকে যাচ্ছেন না সু চি
২৯ আগস্ট ২০১৮উল্টো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ‘মিথ্যা অভিযোগ' করছে বলে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তারা৷
মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ হাতোই দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউজ লাইট অব মিয়ানমারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যে কোনো অভিযোগের পক্ষে দিনক্ষণসহ ‘শক্ত প্রমাণ' চেয়েছেন৷
এদিকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মধ্যে বৃহস্পিতবার নেপালে শুরু হতে যাওয়া বিমসটেক সম্মলনে অংশ নিচ্ছেন না মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি৷ তার বদলে দেশটির প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করবেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে৷
শান্তিতে নোবেলজয়ী এনএলডি নেতা সু চিই কার্যত মিয়ানমারের সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন৷ রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় বিশ্বজুড়ে তার সমালোচনা চলছে৷ এক সময়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এই নেত্রী এখন ‘হতাশার নাম' হয়ে উঠেছেন বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি)৷
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন নিয়ে ২৭ আগস্ট একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতিসংঘ গঠিত স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন৷
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ‘গণহত্যার অভিপ্রায়' থেকেই রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে৷ আর মিয়ানমারের নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চির বেসামরিক সরকার ‘বিদ্বেষমূলক প্রচারকে উসকে' দিয়ে, গুরুত্বপূর্ণ ‘আলামত ধ্বংস' করে এবং সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষা না করে সেই নৃশংসতায় ‘ভূমিকা' রেখেছে৷
আইন প্রয়োগের নামে ভয়ংকর ঐ অপরাধ সংঘটনের জন্য মিয়ানমারের সেনাপ্রধান এবং জ্যেষ্ঠ পাঁচ জেনারেলকে বিচারের মুখোমুখি করার সুপারিশ করেছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন৷
পরদিন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও সুইডেনসহ বেশ কয়েকটি দেশ মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানায়৷ তবে মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত চীন ও রাশিয়া ঐ পথে না হেঁটে সংকট সমাধানে দেশটির সরকারের সঙ্গে আলোচনার পক্ষে মত দেয়৷
এদিকে জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে জ হাতোই বলেছেন, ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন গঠন করা হয়েছিল হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের একটি প্রস্তাবের ভিত্তিতে৷ ‘‘আমাদের অবস্থান পরিষ্কার এবং আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই যে, হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের কোনো প্রস্তাব আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়৷''
সে কারণেই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনকে মিয়ানমারে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি৷
মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র দাবি করেন, মানবাধিকার লংঘনের ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্সে' বিশ্বাসী তার দেশ৷ ‘‘কোনো ধরনের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটলে আইনি পদক্ষেপ নেবে সরকার,'' জানান জ হাতোই৷
গত বছর আগস্টে সংকট শুরুর পর বিশ্ববাসীর মনোযোগের কেন্দ্রে চলে আসে রাখাইনে নিপীড়ন ও রোহিঙ্গাদের মানবিক বিপর্যয়৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন সেখানে গণহত্যার জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে দুষলেও তা অস্বীকার করে শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির সরকার৷ প্রথম থেকেই এই ধরনের বক্তব্য দিয়ে আসছে তারা৷
সু চি সরকারের মুখপাত্র বলেন, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যেসব ‘ভুয়া' অভিযোগ এ পর্যন্ত করেছে, সেগুলো তদন্তের জন্যও মিয়ানমার একটি কমিশন গঠন করেছে৷
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার চলতি বছরের শুরুতে রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে চার সদস্যের ঐ কমিশন গঠনের ঘোষণা দেয়৷ স্থানীয় দুইজনের সঙ্গে ঐ কমিশনে সদস্য হিসেবে আছেন ফিলিপিনো কূটনীতিক রোজারিও মানালো এবং জাতিসংঘে জাপানের সাবেক রাষ্ট্রদূত কেনজো ওশিমা৷
মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের ফেসবুক পাতা বন্ধ করার জন্য এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জ হাতোই৷ এই অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেছেন, এতে সরকারের ‘জাতীয় সংহতি' সৃষ্টির প্রচেষ্টা ব্যাহত হতে পারে৷
এদিকে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনকে ‘সবচেয়ে সমন্বিত, তথ্যবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ' হিসেবে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ৷
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বুধবার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘‘মিয়ানমার যে এটা প্রত্যাখ্যান করবে, তা খুবই স্বাভাবিক৷ কিন্তু এতে কিছু যায় আসে না৷ পুরো বিশ্ব জানে, বাংলাদেশ প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে খুব ধৈর্যের সঙ্গে এই সঙ্কট মোকাবেলা করেছে৷''
‘তাদের বেদনা কখনো ভুলতে পারব না'
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিয়ে কথা বলেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী কেট ব্ল্যানচেট৷ জাতিসংঘের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে গত মে মাসে কক্সবাজারে শরণার্থী শিবির ঘুরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি৷
ব্ল্যানচেট বলেন, ‘‘আমি একজন মা এবং যেসব রোহিঙ্গা শিশুর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে তাদের প্রত্যেকের চোখে আমি নিজের সন্তানদের দেখেছি৷ প্রতিটি বাবা-মায়ের মধ্যেই নিজেকে উপলব্ধি করেছি৷
‘‘কীভাবে একজন মা তার সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ দেখে সহ্য করতে পারে? তাদের এই নিদারুণ অভিজ্ঞতা কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না,'' বলেন তিনি৷
এএইচ/জেডএইচ (এএফপি/রয়টার্স)