যৌথ বিবৃতিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নিন্দা জানালো বিশ্বের একাধিক দেশ। জাতিসংঘও কড়া বিবৃতি দিয়েছে। দেশের রাস্তায় সাজোয়া গাড়ি নামিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবাদীদের দমন করতে রাস্তায় সেনার সাজোয়া গাড়ি নামিয়ে দিল মিয়ানমারের সেনা বাহিনী। বিক্ষোভকারীদের দ্রুত বাড়ি ফিরে যাওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্র মিয়ানমারের সেনার এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। যৌথ বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার সকলের আছে। কোনো ভাবেই যেন তা দমন করা না হয়। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া রাজনৈতিক নেতাদের দ্রুত মুক্তির দাবিও জানানো হয়েছে।
অং সান সু চির সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে। সু চি সহ একাধিক নেতা-মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, আপাতত এক বছরর জন্য দেশ শাসন করবে সেনা। তাদের অভিযোগ, বিগত নির্বাচনে সু চির দল ব্যাপক কারচুপি করেছে। নির্বাচন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হয়নি। সে কারণেই সেনা সরকার ভেঙে দিয়ে ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিয়েছে।
বিশ্ব জুড়ে প্রতিবাদের ভাষা
মিয়ানমার থেকে রাশিয়া, আর্জেন্টিনা থেকে বৈরুত-- গোটা বিশ্ব জুড়ে চলছে বিক্ষোভ-আন্দোলন। দেখে নেওয়া যাক তেমনই কিছু ছবি।
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Sharifulin
তিন আঙুলের স্যালুট
মিয়ানমারে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে তিন আঙুলের স্যালুট বেছে নিয়েছেন প্রতিবাদকারী। ডিসটোপিয়ান উপন্যাস 'হাঙ্গার গেমস'এ এ ধরনের স্যালুটের কথা বলা হয়েছিল। পরে যা নিয়ে ওয়েব সিরিজও হয়। এই স্যালুটের অর্থ শাসককে অপমান করা। সম্প্রতি থাইল্যান্ডেও বিক্ষোভকারীরা এই স্যালুট করে জেলে গেছেন।
'শ্বাস নিতে পারছি না'। গত গরমে গোটা বিশ্বে এই একটি বাক্য ছড়িয়ে পড়েছিল। মার্কিন নাগরিক জর্জ ফ্লয়েডের গলা চেপে মেরে ফেলেছিল পুলিশ। মৃত্যুর সময় এ কথাই বলেছিলেন জর্জ। এরপরই গোটা বিশ্বে শুরু হয় ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন। বিক্ষোভকারীরা নিলডাউন হয়ে বসে, হাত সামনে নিয়ে আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানান।
ছবি: Leonard Ortiz/Orange County Register/ZUMA Wire/picture alliance
মুষ্টিবদ্ধ হাত
উনিশ শতকে মুষ্টিবদ্ধ হাত ছিল শ্রমিক আন্দোলনের প্রতীক। পরবর্তী সময় তা কৃষ্ণাঙ্গদের আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হয়। অ্যামেরিকার সিভিল রাইটস আন্দোলনে এই প্রতীকের ব্যবহার হয়। ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনেও মুষ্টিবদ্ধ হাতের প্রতীক সামনে এসেছে।
প্রতিবাদ-প্রতিরোধে জমজমাট রাশিয়া। নাভালনির গ্রেফতার এবং শাস্তি ঘোষণার পরে দেশ জুড়ে আন্দোলন আরো বেড়েছে। নাভালনির বিচারের দিন তাঁর স্ত্রী একটি লাল সোয়েটার পরে আদালতে গিয়েছিলেন। তারপর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সকলে নাভালনির প্রতি সংহতি জানাচ্ছেন লাল জামা গায়ে দিয়ে। লাল হয়ে উঠেছে বিক্ষোভের রং।
ছবি: Moscow City Court/Sputnik/picture alliance
বিক্ষোভের রং সবুজ
গর্ভপাতের পক্ষে আন্দোলন চলছিল আর্জেন্টিনায়। সেখানে আন্দোলনকারীরা প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে বেছে নেন সবুজ স্কার্ফ। ডিসেম্বরে সরকার গর্ভপাতকে বৈধ করে। প্রতিবাদে বলেন সবুজ ঢেউয়ের জয় হলো।
ছবি: Alejo Manuel Avila/Le Pictorium agency/ZUMA Wire/picture alliance
হাই রেসোলিউশন ভেস্ট
২০১৮ সালে ফ্রান্সে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন নেটিজেনদের একাংশ। প্রেসিডেন্টের একাধিক নীতির বিরুদ্ধে ওই বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। সেখানে হাই রেসোলিউশন ভেস্ট পরে প্রতিবাদে সামিল হন আন্দোলনকারীরা।
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Zihnioglu
ছাতা নিয়ে বিক্ষোভ
২০১৪ সালে হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থিরা ছাতা নিয়ে বিক্ষোভে নেমেছিলেন। ছাতাই ছিল তাঁদের বিক্ষোভের প্রতীক। এরপর জল বহু দূর গড়িয়েছে। এখনো হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থিদের বিক্ষোভ আম্ব্রেলা রেভোলিউশন বলে সূচিত হয়।
ছবি: AFP/Getty Images/P. Lopez
বৈরুতের ফুল
বিক্ষোভকারীদের উপর নির্মমভাবে আক্রমণ চালিয়েছিল পুলিশ। কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে, লাঠিচার্জ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করা হয়েছিল। তারই প্রতিবাদে সাদা জামা আর হাতে ফুল নিয়ে বৈরুতের রাস্তায় মিছিল করেন নারীরা। পুলিশকে ফুল দেন তাঁরা।
এসজি/জিএইচ (মারিয়া জন স্যানচেজ)
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Sharifulin
8 ছবি1 | 8
সেনার ওই বিদ্রোহের পর থেকেই গোটা দেশ জুড়ে গণতন্ত্রপন্থিরা রাস্তায় নেমেছেন। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ-প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছেন। সেনাও প্রতিবাদীদের সরাতে ব্যাপক অত্যাচার চালাচ্ছে। লাঠিচার্জ করে, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে, জলকামান ব্যবহার করে প্রতিবাদীদের ছত্রভঙ্গ করা হচ্ছে। ব্যবহার করা হচ্ছে রবার বুলেটও। প্রতিদিন হাজার হাজার প্রতিবাদীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। তারই মধ্যে রোববার দেশের রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে সাজোয়া গাড়ি। কার্যত ফ্ল্যাগ মার্চ করতে শুরু করেছে সেনাবাহিনী।
এই পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, ক্যানাডা সহ ১১টি দেশের দূতাবাস একটি যৌথ বিবৃতি পেশ করেছে। যেখানে বলা হয়েছে, 'মিয়ানমারের জনগণের প্রতিবাদকে আমরা সমর্থন করি। তাদের গণতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সমর্থন জানাই।' সেনা যেভাবে সেই আন্দোলন বন্ধ করার চেষ্টা করছে, তার নিন্দা করে ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দ্রুত গ্রেপ্তার এবং আটক হওয়া রাজনীতিবিদ এবং আন্দোলনকারীদের মুক্তি দেওয়া হোক।
জাতিসংঘও একটি আলাদা বিবৃতি জারি করে একই কথা বলেছে। সেখানে বলা হয়েছে, আন্দোলন বন্ধের নামে সেনাবাহিনী যা করছে, তার জন্য সমস্ত দায়িত্ব নিতে হবে সেনা প্রধানদের। গোটা বিশ্ব এর নিন্দা করছে।
তবে মিয়ানমারের সেনার তরফে এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি।