মিয়ানমার সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট সব অ্যাকাউন্ট ফেসবুকে নিষিদ্ধ
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থান নিয়েছে ফেসবুক৷ এবার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন সব অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করেছে তারা৷
বিজ্ঞাপন
এর আগে মিয়ানমারের সেনা-নিয়ন্ত্রিত মাইআওয়াড্ডি টিভি এবং রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত এমআরটিভি ব্লক করেছিল ফেসবুক৷ তারপরও সে-দেশের পরিস্থিতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি৷ কারারুদ্ধ নেত্রী অং সান সু চি-র মুক্তি এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে এখনো বিক্ষোভ চলছে সারা দেশে৷ চলছে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশি নির্যাতন৷সামরিক অভ্যুত্থান এবং আন্দোলনকারীদের ওপর নির্যাতনকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করে এবার সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট সব অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফেসবুক৷ এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘‘ফেব্রুয়ারির ১ তারিখের অভ্যুত্থানের পর থেকে ভয়ঙ্কর সহিংসতাসহ যা যা ঘটেছে তাতে এমন নিষেধাজ্ঞা খুব প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে৷আমরা মনে করি, ফেসবুক আর ইন্সটাগ্রামে টাটমাডো (মিয়ানমার সেনাবাহিনী)-কে সুযোগ দেয়ার ঝুঁকিটা অনেক বড়৷’’
এ সিদ্ধান্তের ফলে মিয়ানমার সেনাবাহিনী বা সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান ফেসবুকে আর বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবে না৷
মিয়ানমারের শান রাজ্যের ইন্থা জাতিগত গোষ্ঠী সম্প্রতি দেশটির সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে ব্যতিক্রমী এক প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করে৷ সেখানকার ইনলে লেকে নৌকায় চড়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা৷
ছবি: Robert Bociaga
বিস্তৃত প্রতিবাদ
মিয়ানমারে ০১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছে৷ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশটির জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র ইনলে লেকের কাছের বাসিন্দারা সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের দাবিতে এক অভিনব প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন৷
ছবি: Robert Bociaga
নৌকায় করে প্রতিবাদ
সব শ্রেণির মানুষ নৌকায় করে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন৷ তাদের হাতে ছিল মেগাফোন এবং প্ল্যাকার্ড৷ প্রতিবাদকারীরা সমস্বরে বিপ্লবী গানও গেয়েছেন৷
ছবি: Robert Bociaga/DW
সামরিক অভ্যুত্থান
মিয়ানমারের ঊধ্বর্তন সামরিক কর্মকর্তারা চলতি মাসের শুরুতে শাসন ক্ষমতা নিজেদের দখলে নিয়ে নেন৷ তাদের দাবি, দেশটিতে গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছিল৷ সেই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেছিল অং সান সু চি’র দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
আইন অমান্য
সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে হাজার হাজার মানুষ মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন৷ সামরিক জান্তার জারি করা বিভিন্ন আইন দল বেঁধে অমান্য করছেন তারা৷ তবে, আন্দোলনকারীদের দমনে সামরিক জান্তাও কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে, যার মধ্যে প্রতিবাদকারীদের গ্রেপ্তার, দমনপীড়নের ঘটনাও ঘটেছে৷ ইতোমধ্যে কয়েকজন প্রতিবাদকারী নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণও হারিয়েছেন৷
ছবি: REUTERS
নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়েছে লেকের প্রতিবাদকারীরা
পশ্চিমা দেশগুলো অভ্যুত্থানকারী নেতাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং সু চিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দাবি করেছে৷ ইনলা লেকের প্রতিবাদকারীরা এই নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা খর্ব করতে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যা একটি ভালো ব্যাপার৷ তবে তারা আবারও ঊধ্বর্তন সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে রাজি নন, যা সু চির নীতি ছিল৷
ছবি: Robert Bociaga
গণতন্ত্রই সমাধান
ইন্থা জনগোষ্ঠী মনে করে দেশটির সংখ্যালঘুদের ঐতিহ্য রক্ষার একমাত্র উপায় হচ্ছে গণতান্ত্রিক এবং বিকেন্দ্রীভূত ব্যবস্থা৷ এ কারণে মিয়ানমারে কেন্দ্রীয় গণতন্ত্র প্রয়োজন বলে মনে করেন এক প্রতিবাদকারী৷
ছবি: Robert Bociaga
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার
যদিও সু চি’র এনএলডি পার্টি গণতান্ত্রিক যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেসব পূরণ করেনি, তারপরও ইনলে লেকের বাসিন্দারা দলটির প্রতি অনুগত থাকতে আগ্রহী৷ তবে বৃহস্পতিবারের প্রতিবাদকারীরা তাদের কর্মসূচিকে এনএলডি’র পক্ষের কোনো সমাবেশ নয়, বরং গণতন্ত্র পুনরাদ্ধের জন্য প্রতিবাদ হিসেবে বিবেচনা করছেন৷
ছবি: Robert Bociaga
সেনানিয়ন্ত্রিত পর্যটন
ইনলে লেক পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা হলেও স্থানীয় ইন্থা সম্প্রদায় তা থেকে খুব একটা লাভবান হতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন৷ সেখানকার অধিকাংশ হোটেল এবং অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় রয়েছেন সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা৷ সামরিক অভ্যুত্থানের আগে স্থানীয়রা পর্যটন খাত থেকে যতটুকু লাভবান হতে পারতেন, এখন তা-ও পারছেন না৷