দেশের উত্তরাঞ্চলে হাজার হাজার সৈন্যের সমাবেশ ঘটাচ্ছে মিয়ানমারের সামরিক সরকার৷ এমন তথ্য উল্লেখ করে সেখানে বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে৷
বিজ্ঞাপন
২০১৬ ও ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংস হামলার আগে সেখানে যেভাবে সৈন্য জড়ো করা হয়েছিল একইভাবে এবার মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে সৈন্য জড়ো করা হচ্ছে৷ জাতিসংঘে জমা দেয়া এক প্রতিবেদনে মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত টম এন্ড্রুস এমন তথ্য জানিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জমা দেয়া প্রতিবেদনে তিনি দেশটিতে আরো রক্তপাত, নিপীড়ন ও নির্যাতনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন৷
প্রতিবেদনে টম অ্যান্ড্রুস বলেন, ‘‘আরো নৃশংস অপরাধ সংগঠিত হওয়ার ব্যাপারে প্রস্তুত থাকা উচিত, যেমনটা মিয়ানমারের ওই অঞ্চলের মানুষও প্রস্তুত রয়েছেন৷ আমি খুব করে চাই যেন আমার আশঙ্কা ভুল হয়,’’ বলেন টম অ্যান্ড্রুস৷
দেশে ফিরতে চান না ভারতের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা
দিল্লির অদূরে হরিয়ানায় দেশের সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা ক্যাম্প। ডয়চে ভেলের ক্যামেরায় তাদের জীবনযাপন।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
পাশাপাশি পাঁচটি ক্যাম্প
দশ কিলোমিটারের মধ্যে পাঁচটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প তৈরি হয়েছে। একেকটি ক্যাম্পে একশ থেকে দেড়শ পরিবার থাকে। সব মিলিয়ে হাজার পাঁচেক রোহিঙ্গা শরণার্থী থাকেন এই ক্যাম্পগুলিতে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
জম্মু-দিল্লি-পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে
জম্মু, পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লির ক্যাম্প ছেড়ে বহু রোহিঙ্গা হরিয়ানার ক্যাম্পে চলে এসেছেন। আরাবল্লি পর্বতের গায়ে মেওয়াতের নুহ অঞ্চলে এই ক্যাম্প।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
নির্যাতন, ভয়
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অভিযোগ, জম্মুতে বহু শরণার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের উপর মানসিক অত্যাচারও হয়েছে। সে কারণেই ওই ক্যাম্প ছেড়ে তারা হরিয়ানায় চলে এসেছেন। এখানেও তাদের ক্যাম্পের বাইরে যেতে দেওয়া হয় না। ক্যাম্পে কেউ গেলে, এমনকী, সাংবাদিক গেলেও পুলিশকে জানাতে হয়।
মিয়ানমারের প্রতি মুহূর্তের খবর রাখেন শরণার্থীরা। সেনা সরকার তৈরির পর তারা আরো ভয়ে। শরমার্থীদের বক্তব্য, না খেতে পেয়ে বিদেশে মরতে রাজি তারা। কিন্তু মিয়ানমারে গিয়ে আর আক্রমণের শিকার হতে চান না।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
একটাই টয়লেট
গোটা শিবিরের জন্য মাত্র একটি টয়লেট। পাশের জঙ্গলে যেতে হয় নারী-পুরুষ সকলকেই।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
মেয়েদের নানা রোগ
মাসিকের সময়েও মেয়েদের জঙ্গলে যেতে হয়। নানারকম রোগ ধরা পড়ছে তাদের। জাতিপুঞ্জের শরণার্থী সংক্রান্ত সংস্থা ইউএনএইচসিআর তাদের সাহায্য করতে চায় না বলে অভিযোগ।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
সাহায্য করে না প্রশাসন
প্রশাসন শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখে না বলে অভিযোগ। সরকারি হাসপাতালেও অর্থের বিনিময়ে চিকিৎসা করাতে হয়।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এই বৃদ্ধা মৃত্যুর দিন গুনছেন। আর বাঁচতে চান না তিনি।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
14 ছবি1 | 14
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক বাহিনী জোরপূর্বক দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির ক্ষমতা দখল করে৷ স্থানীয় একটি গোষ্ঠীর প্রতিবেদন অনুযায়ী, তারপর থেকে এখন পর্যন্ত এগারশোর বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে৷ গ্রেপ্তার হয়েছেন আট হাজারের উপরে৷ অ্যান্ড্রুস জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের উপর ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়েছে, একারণে অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন৷ এমনকি শিশুরাও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে৷
মিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে অ্যান্ড্রুস বলেন, উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে লাখো সেনা ও ভারি অস্ত্র জড়ো করার তথ্য তিনি পেয়েছেন৷ যার প্রেক্ষিতে সেখানে জান্তা সরকারের সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷ ‘‘এই তথ্যগুলো ২০১৬ ও ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উপর চালানো গণহত্যার আক্রমণের পূর্বের সামরিক সমাবেশের ভীতিকর কৌশলের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়,’’ বলেন টম অ্যান্ড্রুস৷
উল্লেখ্য নিরাপত্তা বাহিনীর দমনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালে রাখাইন থেকে অন্তত সাত লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন৷
প্রতিবেদনে তিনি সামরিক জান্তাকে অর্থ, অস্ত্র ও বৈধতা না দিতে সব দেশের প্রতি আহ্বান জানান৷ এই চাপ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি৷
সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী পাঁচ হাজারের বেশি রাজনৈতিক বন্দিকে সম্প্রতি মুক্তি দিয়েছে জান্তা সরকার৷ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান এর সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হবে না এমন সিদ্ধান্তের কয়েকদিনের মধ্যেই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়৷ তবে অ্যান্ড্রুস জানিয়েছেন, মুক্তিপ্রাপ্তদের কাউকে কাউকে ‘আবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে’৷