মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জাগাইং-এর কানি শহরের কাছের একটি জঙ্গল থেকে সাম্প্রতিক সময়ে ৪০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে৷ সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইরত একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ও জাতিসংঘে মিয়ানমারের দূত এমন তথ্য জানিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
১ ফেব্রুয়ারি সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখলের পর দেশটিতে কয়েকশ’ বিক্ষোভকারী সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নে নিহত হয়েছেন৷ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কানি শহরে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা একটি মিলিশিয়া গ্রুপের সঙ্গেও সংঘাতের ঘটনা ঘটে৷ গত কয়েক সপ্তাহে সেখানকার বেশ কিছু জায়গা থেকে ৪০ টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি মিলিশিয়া গ্রুপটির এক সদস্যের৷ তাদের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল বলেও দাবি করেন তিনি৷
সুচি সরকারের নিযুক্ত জাতিসংঘে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াও মোই তুন সংস্থাটির মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেসকেও মঙ্গলবার চিঠিতে এই তথ্য জানান৷ তিনি লিখেছেন, গত জুলাইতে তিনটি জায়গা থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়েছে৷
একে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের স্পষ্ট প্রমাণ উল্লেখ করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপে নিরাপত্তা কাউন্সিল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি৷ কিয়াও বলেন, দেশটিতে সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠুরতা, হত্যা, গ্রেপ্তার থামার কোন লক্ষণ নেই৷
উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখলের পর তার প্রতিবাদ জানিয়ে জাতিসংঘে বক্তৃতা দেন কিয়াও৷ পরে সামরিক সরকার তাকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দিলেও তা প্রত্যাখ্যান ও রাষ্ট্রদূতের পদ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত এই কূটনীতিক৷
অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন অব পলিটিক্যাল প্রিজনার্স নামের থাইল্যান্ডভিত্তিক একটি সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে ৯৪৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন৷
এফএস/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)
গত মার্চের ছবিঘর দেখুন...
সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একজোট মিয়ানমারের আদিবাসী সশস্ত্র গোষ্ঠী
মিয়ানমারের আদিবাসী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো একজোট হয়ে লড়াই শুরু করছে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে৷ দেশটিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ৫শ’রও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে৷ বিস্তারিত ছবিঘরে৷
ছবি: Karen Teacher Working Group/REUTERS
চুক্তি ভঙ্গ
রেস্টোরেশন কাউন্সিল অফ শান স্টেট আরসিএসএস এবং কেএনইউ এর নেতারা জানিয়েছেন, সামরিক জান্তার তাদের সাথে অস্ত্রবিরতির চুক্তি ভেঙে তাদের এলাকায় হামলা শুরু করেছে৷ আদিবাসী সশস্ত্র গোষ্ঠীদের একজোট হয়ে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়েছেন তারা৷
ছবি: Soe Zeya Tun/REUTERS
মতবিরোধ
আদিবাসী নেতারা এটাও বলছেন ৭০ বছর ধরে এই দলগুলো কোন একটি বিষয়ে একমত হতে পারে না৷ আর এ কারণেই প্রত্যেকে আলাদাভাবে যুদ্ধ করে যাচ্ছে৷
ছবি: Karen Teacher Working Group/REUTERS
পালাচ্ছে কারেন রাজ্যের মানুষ
২৮ মার্চে তোলা এই ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে আদিবাসীদের রাজ্য কারেনের মানুষরা একটি স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন৷ স্থানটি কোথায় তাদের নিরাপত্তার কারণে তা জানানো হয়নি৷
ছবি: Karen Teacher Working Group/REUTERS
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিমান হামলা
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিমান হামলা থেকে বাঁচতে কারেন রাজ্যের একটি স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন কারেন জাতিগোষ্ঠীর অনেক মানুষ৷ ফেসবুক থেকে ছবিটি সংগ্রহ করেছে রয়টার্স৷
ছবি: Free Burma Rangers/REUTERS
সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একজোট হচ্ছে আদিবাসী শসস্ত্র গোষ্ঠীগুলো৷ এর মধ্যে অন্যতম কারেন্নি ন্যাশনাল পোগ্রেসিভ পার্টি৷ এর জাতিগোষ্ঠীর যোদ্ধারা থাই সীমান্তে একজোট হয়ে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছে৷ বেশ কয়েক বছর ধরে তারা জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে থাইল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলের জঙ্গলে থেকে৷
ছবি: Monika Griebeler
থাইল্যান্ড সীমান্তে শরণার্থীদের ভিড়
কারেন গোষ্ঠীর মানুষ থাইল্যান্ডের মাই হং সোন নদীর সীমান্তে জড়ো হয়েছেন, নিজেদের শেষ সম্বলটুকু নিয়ে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিচ্ছেন তারা৷
ছবি: Karen Teacher Working Group/REUTERS
থাইল্যান্ডের গ্রামে আহতরা
থাইল্যান্ড-মিয়ানমার সীমান্তের থাই প্রদেশ মাই হং সোন এর মাই সাম লিপ গ্রামে চিকিৎসা নিচ্ছেন মিয়ানমারের সহিংসতায় আহত মানুষ৷
ছবি: Soe Zeya Tun/REUTERS
কারেন ন্যাশনাল পার্টি
মিয়ানমারের আদিবাসী গোষ্ঠীর অন্যতম শক্তিশালী একটি দল হল কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন কেএনইউ৷ দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের কারেন রাজ্যের এই দলটি জানিয়েছে মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীদের রক্ষায় তাদের যোদ্ধাদের রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Karen Teacher Working Group/REUTERS
জান্তার ঘাঁটিতে হামলা
সামরিক জান্তার বিভিন্ন ঘাঁটিতে তাদের সেনারা হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির এক জ্যেষ্ঠ নেতা৷ উত্তরে একই ধরনের হামলা চালিয়েছে কোচিন ইনডেপেন্ডেন্স পার্টি৷
ছবি: Soe Zeya Tun/REUTERS
গেরিলা দলগুলোর হামলা
৩১ মার্চ আরাকার আর্মিসহ তিনটি অন্য গেরিলাদল পশ্চিমাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে৷ তাদের আন্দোলনকে ‘বসন্ত বিপ্লব’ আখ্যা দিয়ে হুঁশিয়ার করেছে সামরিকবাহিনী হত্যা বন্ধ না করলে তারা সরাসরি যুদ্ধ শুরু করবে৷
ছবি: Soe Zeya Tun/REUTERS
জাতীয় ঐক্যমতের সরকার
সু চি’র দলের পার্লামেন্ট সদস্য, যারা আত্মগোপনে আছেন তারা পহেলা এপ্রিল জাতীয় ঐক্যমতের সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন৷ সেখানে আদিবাসী গোষ্ঠীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা৷ অনলাইনে তারা এইসব জাতিগোষ্ঠীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে তারা সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে৷
ছবি: Karen Teacher Working Group/REUTERS
কেন্দ্রীয় সেনাবাহিনী গঠন
বেসামরিক সরকারের আন্তর্জাতিক মুখপাত্র ড. সাসা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তীকালীন কেন্দ্রীয় সংবিধানের খসড়া প্রস্তুত, যেখানে নৃগোষ্ঠী এবং বেসামরিক নেতারা মিলে একটি কেন্দ্রীয় সেনাবাহিনী গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন, যে সেনাবাহিনী বর্তমান সামরিক জান্তার বিকল্প হবে, একে তারা নাম দিয়েছেন ‘তাতমাদো’৷ তাদের মতে, এ ধরনের কেন্দ্রীয় সেনাবাহিনীই পারবে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/N. C. Niang
সেনা সংখ্যা
ব্রিটিশ নিরাপত্তা বিশ্লেষক অ্যান্টনি ডেভিস জানিয়েছেন, মিয়ানমারে আদিবাসীদের মধ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা প্রায় ৭৫ হাজার৷ অন্যদিকে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে সদস্য প্রায় সাড়ে তিন লাখ৷
ছবি: Karen Teacher Working Group/REUTERS
নিহত পাঁচশর বেশি মানুষ
মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সংঘাতে নিহতের সংখ্যা এরইমধ্যে ৫০০ ছাড়িয়েছে৷