মিয়ানমারের রাখাইনে নতুন ‘জঙ্গি গোষ্ঠীর' উত্থানের খবরে বাংলাদেশকে সতর্ক করে দিয়েছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা৷ রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে এই জঙ্গি গোষ্ঠীও আর তৎপরতা বিস্তৃত করতে পারবে না৷
বিজ্ঞাপন
‘হারাকা আল-ইয়াকিন' নামের এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি গত ৯ অক্টোবর মিয়ামারের সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা চালায়৷ হামলায় মোট ৯ জন পুলিশ নিহত হয়৷ পরে আরেক হামলায় এক সেনাসদস্যও নিহত হয়৷
ব্রাসেলস ভিত্তিক থিংক ট্যাংক দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) জানিয়েছে, হারাকা আল-ইয়াকিন নামের নতুন ওই সশস্ত্র গ্রুপটি গত অক্টোবরে মিয়ানমারে সরকারি বাহিনীর ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত৷ এই গ্রুপটির আন্তর্জাতিক যোগাযোগও স্পষ্ট৷ পাকিস্তান ও সৌদি আরবের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে৷
বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের কথা
জাতিসংঘের ত্রাণকর্মীদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, নভেম্বরের ১৯ থেকে ২১ তারিখ, এই তিনদিনে বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে শত শত রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
সহিংসতা
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৮৬ জন প্রাণ হারিয়েছে৷ গৃহহীন হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার জন৷ অক্টোবরের ২৭ তারিখে তোলা এই ছবিতে ঐ রাজ্যের একটি গ্রামের বাজার দেখা যাচ্ছে, যেটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল৷ শিশুরা সেখান থেকে বিভিন্ন জিনিস সংগ্রহ করছে৷
ছবি: Reuters/Soe Zeya Tun
পালিয়ে বাঁচা
সহিসংতা থেকে বাঁচতে নভেম্বরের ১৯ থেকে ২১ তারিখ শত শত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের ত্রাণকর্মীরা৷ উপরের ছবিটি ২১ নভেম্বরের৷ কক্সবাজারের কুটুপালাং শরণার্থী কেন্দ্রে বসবাসরত রোহিঙ্গা নারীরা নতুন আসা শরণার্থীদের দেখছেন৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
নতুন শরণার্থী
মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত পার হয়ে কুটুপালাং শরণার্থী কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন নতুন শরণার্থীরা৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
ধরা পড়ায় কান্না
অবৈধভাবে বাংলাদেশ সীমান্ত পার হওয়ায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা তাদের ধরেছে৷ মুসলিম নারী ও তাঁর সন্তানরা তাই কাঁদছেন৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
অপেক্ষা
কুটুপালাং ক্যাম্পে ঢোকার অপেক্ষায় নতুন আসা রোহিঙ্গারা৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
সন্তানসহ মা
মুসলিম এই রোহিঙ্গা নারী তাঁর সন্তানকে নিয়ে কুটুপালাং শিবিরে ঢোকার অপেক্ষায় আছেন৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
শরণার্থী শিশু
কুটুপালাং শরণার্থী কেন্দ্রের রোহিঙ্গা শিশুরা স্কুলে পড়াশোনার ফাঁকে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
আদি বাসিন্দা
কুটুপালাং ক্যাম্পে নিজেদের বাড়িতে শিশুরা৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
বাড়ির আঙিনায়
একজন রোহিঙ্গা নারী তাঁর সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে কুটুপালাং শরণার্থী শিবিরে তাঁর বাড়ির সামনে বসে আছেন৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
9 ছবি1 | 9
আইসিজির দাবি, হারাকা আল-ইয়াকিন গোপনে রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামে দু'বছরের বেশি সময় ধরে প্রশিক্ষণ দিয়েছে৷ হারাকা নেতা আতা উল্লাহ-র জন্ম করাচিতে৷ তিনি বর্তমানে সৌদি আরবের মক্কায় রয়েছেন৷ তার বাবা একজন অভিবাসী রোহিঙ্গা মুসলিম৷ আতা উল্লাহ পাকিস্তান বা অন্য কোথাও গিয়ে আধুনিক গেরিলাযুদ্ধের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বলে দাবি করছে আইসিজি৷ হারাকা গ্রুপের ২০ সদস্যের একটি দল দেশের বাইরে থেকে গ্রুপটির কর্মকাণ্ড তদারকি করে থাকে৷
বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদ (অব.) ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গত অক্টোবরেও সরকারি বাহিনীর ওপর হামলায় বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প থেকে কিছু রোহিঙ্গা নেয়া হয়েছে৷ ফলে এটি বাংলাদেশের জন্য ভাবনার বিষয়৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের টেকনাফ ও উখিয়ায় কিছু মাদ্রাসা আছে যা সৌদি সহায়তায় পরিচালিত হয়৷ ঐ সব মাদ্রাসার একটিতে অভিযান চালিয়ে তিন রোহিঙ্গা জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের খবরও আছে৷ খবর আছে সেই সব মাদ্রাসায় বৈঠকেরও৷''
আব্দুর রশীদ বলেন, ‘‘বাংলাদেশের কোনোভাবেই এই জঙ্গিদের প্রতি নমনীয় ভাব দেখানোর সুযোগ নেই৷ প্রধানমন্ত্রী নিজেও সংসদে বলেছেন কোনো সন্ত্রাসী তৎপরতার জন্য বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করতে দেয়া হবে না৷''
মানবাধিকার নেতা এবং জঙ্গি বিষয়ক গবেষক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের এখন উচিত হবে নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে চাপ আরও জোরদার করা৷ কারণ এই নির্যাতনকে জঙ্গিরা সহানুভূতি পাওয়ার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে৷ বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে যাতে এখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে মিয়ানমারের ওই জঙ্গি গোষ্ঠী কোনো প্রভাব বিস্তার করতে না পারে৷''
নূর খান বলেন, ‘‘খেয়াল রাখতে হবে জঙ্গিদের যেমন প্রতিরোধ করতে হবে, তেমনি জঙ্গি দমন বা প্রতিরোধের নামে সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতনের কোনো সুযোগ নেই, যা মিয়ানমার সরকার করছে৷''
Abdur Rashid - MP3-Stereo
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সোমবার বলেছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতন ও লুটপাটের যে অভিযোগ তা ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের' শামিল হতে পারে৷
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী দেশটিতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে৷ এর মধ্য দিয়ে সেখানে ‘মানবিক বিপর্যয়' তৈরি হয়েছে৷ সংস্থাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা বিষয়ক পরিচালক রাফেন্দি ডিজামিন বলেন, ‘‘মিয়ানমারে সেনাবাহিনী বেসামরিক রোহিঙ্গাদেরকে নির্মম ও নিয়মিত সহিংসতার লক্ষ্যে পরিণত করেছে৷''
এর আগে জাতিসংঘও একই অভিযোগ তুলেছিল৷ মিয়ানমারে জাতিগত নির্মূল প্রক্রিয়া চলছে বলেও অভিযোগ করেছিল জাতিসংঘ৷ তাই বাংলাদেশকে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মিয়ানমারের নতুন জঙ্গি গোষ্ঠীর বিষয়টি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দেখতে হবে৷ এখানে বাংলাদেশের নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িত৷ সহজ না হলেও বাংলাদেশের এ নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ও কাজের পরিবেশ তৈরির ওপর জোর দেয়া উচিত বলে মনে করেন নূর খান৷
রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে নতুন এই জঙ্গি গোষ্ঠী কি সত্যিই আর তৎপরতা বিস্তৃত করতে পারবে না? লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷
বাংলাদেশে শরণার্থী, বাংলাদেশের শরণার্থী
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা, ইউএনএইচসিআর-এর এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের শরণার্থী আশ্রয়দাতা দেশের তালিকায় নবম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ৷ তেমনি বাংলাদেশ থেকেও অনেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশে শরণার্থী হয়ে যাচ্ছেন৷
ছবি: Reuters
বাংলাদেশ নবম
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর ‘গ্লোবাল ট্রেন্ডস-২০১৩’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলছে, বিশ্বের শরণার্থী আশ্রয়দাতা দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান নবম৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের অর্থনীতির তুলনায় ধারণক্ষমতার দিকে থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর নবম শরণার্থী আশ্রয়দাতা দেশ৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman
কতজন শরণার্থী?
দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশে দুটি সরকারি শরণার্থী শিবিরে ৩০ হাজারের মতো মিয়ানমারের (রোহিঙ্গা) শরণার্থী বসবাস করছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিবেদন৷ শিবিরের বাইরে আছে আরও দুই থেকে পাঁচ লাখ অনিবন্ধিত ব্যক্তি৷
ছবি: AP
আশ্রয়প্রার্থী
হ্যাঁ৷ বাংলাদেশেও কেউ কেউ আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন৷ ইউএনএইচসিআর ওয়েবসাইটের বাংলাদেশ পাতায় এমন আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা নয়জন বলে জানানো হয়েছে৷ ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সংখ্যাটা এমন ছিল বলে উল্লেখ করা হয়৷
ছবি: DW/Shaikh Azizur Rahman
বাংলাদেশের শরণার্থী
উন্নত জীবনের আশায় বাংলাদেশ থেকে অনেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন৷ অনেকক্ষেত্রে তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পথে রওনা দেন৷ কেউ গন্তব্যে পৌঁছে গ্রেপ্তার হয়ে ফিরে আসেন৷ কেউ বা শরণার্থী পরিচয় পান৷ বাংলাদেশের এমন শরণার্থীর সংখ্যা ৯,৮৩৯ জন৷
ছবি: Reuters
বাংলাদেশের আশ্রয়প্রার্থী
উন্নত বিশ্বে কোনোভাবে ঢুকে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার চল অনেকদিন ধরেই চলছে৷ জাতিসংঘের হিসেবে বাংলাদেশের এমন আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ২২,১২৮ জন৷ সংখ্যাটা ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রযোজ্য৷
ছবি: Reuters
স্বপ্নের শুরু টেকনাফে
বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার মতো দেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন অনেক বাংলাদেশি৷ এ জন্য তাঁরা দালালদের অনেক অর্থও দিয়ে থাকেন৷ তাঁদের এই যাত্রা শুরু হয় টেকনাফ থেকে৷
ছবি: DW/Shaikh Azizur Rahman
ছোট নৌকা থেকে বড় নৌকায়
টেকনাফ থেকে প্রথমে ছোট নৌকায় যাত্রা শুরু হয়৷ তারপর একসময় মাছ ধরার বড় নৌকা বা কার্গোতে যাত্রীদের তুলে দেয়া হয়৷ সাধারণত অক্টোবর থেকে পরবর্তী পাঁচ মাসকে সমুদ্র যাত্রার জন্য সঠিক সময় বলে বিবেচনা করা হয়৷
ছবি: Asiapics
খাবার, পানির অভাব
ইউএনএইচসিআর-এর একটি প্রতিবেদন বলছে, যাঁরা সাগর পথে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেন তাঁদের অনেকে খাবার ও পানির অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ এছাড়া দালালরা অনেক সময় তাঁদের সঙ্গে খারাপ আচরণও করে৷