1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মিয়ানমারে ফেরা নিয়ে রোহিঙ্গাদের সংশয়

আব্দুর রহমান টেকনাফ
২ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ও অং সান সু চি-কে আটকের পর সে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মাঝে দিনভর চলছে কানাঘুষা৷ এখন দেশে ফেরা নিয়ে সংশয়ে তাদের অনেকেই৷

রোহিঙ্গা গণহত্যা বিষয়ক একটি প্রতিবেদন দেখছেন এক রোহিঙ্গা শরণার্থী ছবি: Abdur Rahman/DW

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের কারণে রোহিঙ্গাদের অনেকেই মনে করছেন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে৷

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাড়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। আগে আশ্রয় নেওয়াসহ বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে বসবাস করছেন। সম্প্রতি সেখান থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার রোহিঙ্গাকে৷ 

nuralam.mp3 - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

কক্সবাজারের টেকনাফের লেদা শরাণার্থী শিবিরে চায়ের দোকানে মুঠোফোনে মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান ও সু চিকে গ্রেপ্তারের খবর দেখছিলেন কয়েকজন রোহিঙ্গা।

আশি বছর বয়সের আবদুল জব্বারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিকে কিভাবে দেখছেন৷ জবাবে তিনি বলেন, ‘‘মিয়ানমার সামরিক বাহিনী যে ‘ক্যু' করেছে সেটি রোহিঙ্গাদের জন্য ভালো হবে না। আসলে সেদেশের সামরিক জান্তা চায় না রোহিঙ্গারা সেদেশে ফিরে যাক। এবার রোহিঙ্গা বিষয়ে সু চি-র বক্তব্য আগের তুলনার অনেকটা নরম হয়েছিল। সু চি ক্ষমতায় থাকলে রোহিঙ্গাদের ফেরা সহজ হতো। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে সেদেশের সেনারা চায় না রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হোক। আমি আগেই শিবিরে লোকজনকে বলেছিলাম মিয়ানমারে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে৷ তা-ই হয়েছে।''

লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা মোস্তফা কামাল মনে করেন সু চি-কে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে নেয়ায় দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া রোহিঙ্গাদের সমস্যাই হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘মিয়ানমারে পরিস্থিতি এখন থমথমে৷ সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে দুই দেশ সম্মতি জানিয়েছিল। সেটি (প্রত্যাবাসন) যাতে শুরু না হয় সেকারণেই সেনারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। সেদেশে পরিস্থিতি অশান্ত থাকলে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার বিষয়টি আর আলোচনায় আসবে না।''

তবে ক্যাম্পভিত্তিক রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের নেতা সৈয়দ উল্লাহ মনে করেন, ‘‘সেনা অভ্যুত্থান রোহিঙ্গাদের জন্য ভালো হতে পারে।  ২০১৭ সালে সেদেশের সেনারা জেনোসাইড চালিয়েছিল, অং সান সু চি ক্ষমতার লোভে সেটি এক প্রকারে সমর্থন দিয়েছিলেন।  এমনকি হেগ-এর আদালতে সেনাদের পক্ষে -দাঁড়িয়েছিলেন। আজ তিনি সেই ক্ষমতার কাছে বন্দি হয়ে গেলেন৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘সামরিক বাহিনীর আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রয়োজন, তাই রাজনৈতিকভাবে সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গা ইস্যুতে মনোনিবেশ করতে পারে। সেদিকটা আমাদের জন্য ভালো হতে পারে৷''

সৈয়দ উল্লাহ জানান, সামরিক জান্তার আমলে যদি রোহিঙ্গাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেয়া হয় তাহলে তিনি দেশে ফিরে যাবেন৷ 

মিয়ানমারে হঠাৎ পট পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে টেকনাফ লেদা ডেভলমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম কিছুটা সংশয়ে, ‘‘‘মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের কারণে আমাদের ভাগ্যে কী পরিবর্তন আসবে জানি না। তবে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের যে তৎপরতা সেটা অব্যাহত থাকুক আমরা সেটি প্রত্যাশা করছি। কিন্তু বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অনেকেই ভাবছেন, মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের কারণে রোহিঙ্গাদের ফেরায় দেরি হতে পারে।'' 

কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরের মাস্টার নুর আলম অবশ্য মোটামুটি নিশ্চিত যে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান তাদের জন্য সুফল বয়ে আনবে, ‘‘মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ও অং সান সু চি-কে গ্রেপ্তারের বিষয়টি আমাদের জন্য ভালো হবে মনে হচ্ছে, কারণ, ২০১০ সালে সামরিক জান্তা রোহিঙ্গাদের ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু অং সান সু চি-র রাজনৈতিক দল এনএলডি ও মগরা মিলে রোহিঙ্গা জনগোষ্টীদের মধ্যে মারামারি সৃষ্টি করে সেটি বানচাল করে দেয়। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যার পরও সু চি নীরব ছিল।এখন মনে হয় সামরিক জান্তা রোহিঙ্গাদের জন্য কাজ করবে। এতে তাদের উপর আর্ন্তজাতিক চাপও কমবে।'' 

abdur jabbar.mp3 - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

এদিকে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পাশাপাশি নতুন করে যাতে কেউ অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে-বিষয়েও সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে বলে জানান বিজিবির পরিচালক (অপারেশন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান, ‘‘বিজিবি সীমান্তে সর্তক অবস্থানে রয়েছে। কেউ যদি অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে, কতৃপক্ষের  আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'' 

মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তার বক্তব্য, ‘‘সেনা অভ্যুত্থানের বিষয়টি তাদের নিজেদের ব্যাপার। সেটার সঙ্গে সীমান্তের এই মুহূর্তে কোনো সম্পর্ক নেই। এ ব্যাপারটা বিজিবির সদর দফতর বিজিবি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষন করছে।''

কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদও জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং কোনো অবৈধ অনুপ্রবেশ যাতে না ঘটে সে বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

রোহিঙ্গা শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)-এর অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মো. তারিকুল ইসলাম বলেন রোহিঙ্গা শিবিরে যাতে অপ্রত্যাশিত কিছু না ঘটে সেদিকেও নজর আছে তাদের, ‘‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক আছে।''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ