মিয়ানমারের রাজনীতি
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২বহু দশক ধরে দেশটি মিলিটারি শাসনে বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ছিল৷ বর্তমান প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন ২০১১ সালের মার্চে তার নির্বাচনের পর থেকে সন্তর্পণে কিছু কিছু রাজনৈতিক সংস্কারের ব্যবস্থা করছেন৷ বিরোধী দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি বা এনএলডি'র উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে৷ দলনেত্রী সু চি বহু দশক ধরে গৃহান্তরীণ থাকার পর আবার মুক্ত৷ পয়লা এপ্রিলের উপ-নির্বাচনের জন্য একটানা ঘুরে চলেছেন তিনি৷ দেশের মানুষ তাকে ভালোবেসে ‘দ্য লেডি' বলে ডাকে৷ সু চি যেখানেই যান, রাস্তার ধারে হাজার হাজার মানুষের ভিড়৷ এই ৬৬ বছরের মহিলা যেন মিয়ানমারের মূর্তিমতী ভবিষ্যৎ৷
পয়লা এপ্রিল সংদের ৪৮টি আসনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ কিন্তু বিরোধী নেত্রী এবং তার ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি'র জন্য এ'টি বিশ বছর পরে আবার একটি অগ্নিপরীক্ষা৷ এবং সু চি যে সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন, সে'বিষয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই৷ যে সু চি বিগত বিশ বছরে ইয়াঙ্গন থেকে প্রায় বেরোতেই পারেননি, তিনি এখন দিনে শত শত কিলোমিটার যাত্রাপথ অতিক্রম করছেন৷ ইয়াঙ্গন থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মাইয়াং'এ একটি এইডস প্রকল্প পরিদর্শন করার সময় তিনি সুবিশাল জনতার সামনে বলেন: ‘‘যতো বেশি মানুষের সঙ্গে সম্ভব কথা বলাটা জরুরি, যা'তে সকলকে বুঝতে পারি৷ এ'কাজে আমার সকলের সাহায্য প্রয়োজন৷''
সব সময়ে যে তা সম্ভব হচ্ছে, এমন নয়৷ সু চি'কে ম্যান্ডালে শহরে তার জনসভা বাতিল করতে হয়, কেননা কর্তৃপক্ষ আগে কথা দেওয়া সত্ত্বেও শেষমেষ তাকে স্থানীয় ফুটবল স্টেডিয়ামে সভা করতে দেননি৷ হয়তো কর্তাব্যক্তিদের তরফে কিছুটা ভয়ও আছে - সু চি তো ঠিক কোনো সাধারণ বৈরী নন৷ তার পিছনে মিয়ানমারের সমগ্র বিরোধীপক্ষ একত্রিত, এমনকি ১৯৮৮ সালের আন্দোলনের যে সব ছাত্রনেতা এখন কারাবাস থেকে মুক্তি পাচ্ছেন, তারাও৷ কো কো গুয়ি সেরকম এক সাবেক ছাত্রনেতা৷ তিনি বলেন: ‘‘এই উপ-নির্বাচন একাধারে একটি সুযোগ এবং একটি চ্যালেঞ্জ৷ কিন্তু তা'তে অংশ নেওয়াটা একটা আবেগের ব্যাপারও বটে, এবং তা'তে আমরা অং সান সু চি'কে সমর্থন করি৷''
সু চি বারংবার গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের কথা বলছেন৷ বলছেন যে, তিনি সামরিক প্রশাসকদের সৃষ্ট ২০০৮ সালের সংবিধানটিকে বদলাতে চান৷ কিন্তু সে পরিবর্তন, সে রদবদল কেমন হবে? উপ-নির্বাচনে জয়ের পর তার দল এনএলডি কি কর্মসূচি নেবে? সু চি'র পর দলের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব উ থেইন ও বলেন, সংসদ সু চি'র পক্ষে মাত্র একটি কর্মক্ষেত্র হবে:
‘‘অং সান সু চি প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন'এর সঙ্গে কথা বলছেন বটে, কিন্তু তিনি এই সরকারের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন কিনা, সেটা সু চি জানেন না৷ তার ভূমিকা হবে বিরোধী নেত্রীর, এবং প্রয়োজনে পুনরায় সংসদের বাইরেও৷''
ইয়াঙ্গনে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি'র দলীয় কার্যালয়টি একটি ছোট বাড়িতে৷ কার্যালয়ের ভিতরে এখনও আসবাবপত্র সব এসে পৌঁছয়নি৷ অথচ আগামীতে এখানেই মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া হবে৷
প্রতিবেদন: উডো স্মিট / অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক