সেনা অভ্যুত্থানের ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসক ও নার্সরা ধর্মঘটের ডাক দেন৷ অন্যদেরও এই আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান তারা৷

অন্যদিকে, ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমজীবী মানুষ ও অন্যান্য সামাজিক সংগঠন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে অংশ নেন৷ তারা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দাও’, ‘আমাদের লক্ষ্য গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা’৷ শনিবার রাত থেকে দেশজুড়ে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছেন৷

বিক্ষোভকারীদের সাথে রাজপথে নেমেছেন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা৷ বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশটিতে ভিক্ষুদের সংগঠন ‘সংঘ’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে৷

ইয়াঙ্গুন বা মান্দালয়ের মতো বড় শহরের পাশাপাশি ছোট শহরগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভের আগুন৷ শান রাজ্যের মতো আদিবাসী অঞ্চলগুলোও বাদ যায়নি৷

হলিউডের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হাঙ্গার গেমস যারা দেখেছেন তারা এই প্রতীকের সাথে পরিচিত৷ থাইল্যান্ডে বিক্ষোভের সময় আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাতে ‘থ্রি ফিঙ্গার গ্রিটিংস’ ব্যবহার করেছিলেন বিক্ষোভকারীরা৷ মিয়ানমারেও সেই একই দৃশ্যের দেখা মিললো৷

যারা রাজপথে নেমে আন্দোলনে যোগ দিতে পারছেন না, তাদের অনেকেই বিক্ষোভকারীদের পানি আর খাবার দিয়ে সাহায্য করছেন, বারান্দায় দাঁড়িয়েও সংহতি জানিয়েছেন অনেকে৷

১ লা ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সু চি এবং তার দল এনএলডি’র অনেক শীর্ষ নেতাকে আটক করেছে সেনাবাহিনী৷ আন্দোলনকারীরা সবার মুক্তি দাবি করছেন৷

বিক্ষোভ দমনে সোমবার রাতে সামরিক জান্তা ডিক্রি জারি করেছে৷ রাজধানীসহ প্রধান তিনটি শহরে পাঁচজনের বেশি মানুষের সমবেত হওয়া নিষিদ্ধ৷ রাত ৮টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে৷ এই ঘোষণার পর বিক্ষোভকারীদের মধ্যে থেকে অনেকে ফুল নিয়ে এগিয়ে আসেন দায়িত্বরত পুলিশের দিকে৷

রাজধানী নেপিদোতে মঙ্গলবার বিক্ষোভকারী এবং পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে৷ সামরিক জান্তা বিক্ষোভকে অবৈধ ঘোষণা করেছে৷ বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে রাবার বুলেট আর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ৷ বিক্ষোভকারীরা পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে৷ রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷

বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে রাজপথে অবস্থান নিয়েছেন সেনা সমর্থকরা৷ সেনা সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি দেশজুড়ে বেশ কিছু সমাবেশের আয়োজন করেছে৷

বর্তমান বিক্ষোভ যে রূপ নিয়েছে তা ১৯৮৮ সালের সেনা অভ্যুত্থানের কথা মনে করিয়ে দেয়৷ তখন সরকারবিরোধী আন্দোলনে পুরো দেশের শাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ক্ষমতা হাতে নেয় সেনাবাহিনী৷ কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়, আটক করা হয়েছিল অনেককে, দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন অসংখ্য আন্দোলনকর্মী ও শিক্ষার্থী৷