মিয়ানমারে রোহিঙ্গা এবং সেনাবাহিনীর চলমান সংঘর্ষ সপ্তাহান্তে ব্যাপক রূপ নিয়েছিল৷ সংঘর্ষে অন্তত ২৮ জন রোহিঙ্গা এবং দু'জন সেনাসদস্য মারা গেছে৷ স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে রোহিঙ্গাদের অনেক ঘর পোড়ানোর দৃশ্যও ফুটে উঠেছে৷
বিজ্ঞাপন
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে রোহিঙ্গা জঙ্গিদের একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয় এবং সেই অভিযানে হতাহতের ঘটনা ঘটে৷ সেনাবাহিনীর দাবি, সেনা হামলায় নিহতরা জঙ্গি৷ তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামগুলো ঘিরে রেখে সেনাবাহিনী যে অভিযান চালিয়েছে তাতে মূলত বেসামরিক নাগরিকই নিহত হয়েছে৷
গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের সীমান্তে তিনটি চেকপোস্টে ন'জন পুলিশ নিহত হওয়ার পর থেকেই রাখাইন রাজ্যে ব্যাপক অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী৷
রোহিঙ্গাদের ‘যুদ্ধের’ যেন শেষ নেই
ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ায় রোহিঙ্গাদের প্রবেশের ঘটনা ঘটেই চলেছে৷ অনেক বাংলাদেশিও আছেন তাঁদের মাঝে৷ থাইল্যান্ডে গিয়ে কবরেও ঠাঁই হয়েছে অনেকের! আজকের ছবিঘরটি তাঁদের নিয়েই৷
ছবি: Reuters/R: Bintang
আটকে পড়া
গত ১০ মে চারটি নৌযানে করে ইন্দোনেশিয়ার আচে প্রদেশে প্রবেশ করে ৬০০ রোহিঙ্গা৷ একই সময়ে লাংকাওইতে প্রবেশ করে প্রায় এক হাজার রোহিঙ্গা৷ সমুদ্র থেকে স্থলে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ তাঁদের ঘিরে ফেলে৷ ভাগ্যান্বেষণে দেশ ছাড়া মানুষগুলো এখনো মুক্ত নয়৷
ছবি: Reuters/R. Bintang
ক্লান্ত
মানবপাচারকারীরা তাঁদের ছেড়ে যাওয়াতে সমুদ্রবক্ষে বিপদেই পড়েছিলেন রোহিঙ্গারা৷ আনুমানিক সপ্তাহ খানেক সমুদ্রপথে ঘুরে অবশেষে ভীষণ ক্ষুধার্ত এবং ক্লান্ত অবস্থায় তাঁরা ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছান৷ দীর্ঘ অর্ধাহার, অনাহারে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে৷ তাঁদের চিকিৎসা চলছে৷
ছবি: Reuters/R: Bintang
ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা
প্রতিবছর এভাবেই মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে শত শত রোহিঙ্গা৷ মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কিছু বাংলাদেশিও থাকেন সব সময়৷ ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী তোলায় অনেক নৌযান ডুবে যায় সাগরে, সলিলসমাধি হয় অনেকের৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম তিন মাসে ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ছেড়েছেন অন্তত ২৫ হাজার রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি৷
ছবি: Asiapics
ওদের কোনো দেশ নেই!
বৌদ্ধপ্রধান দেশ মিয়ানমারে ৮ লক্ষের মতো রোহিঙ্গা মুসলমানের বাস৷ তবে সংখ্যাটা দ্রুতই কমছে৷ বৌদ্ধদের সঙ্গে দাঙ্গার কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই৷ মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকারই করে না৷ তাদের মতে, রোহিঙ্গারা ‘বাংলাদেশি অভিবাসী’৷ আবার বাংলাদেশে আশ্রয় নিলে ঐতিহাসিক কারণেই তাঁদের মিয়ানমার থেকে আগত বহিরাগতের মর্যাদা দেয় বাংলাদেশ৷
ছবি: Reuters/R: Bintang
আধুনিক দাস-বাণিজ্য
মানবপাচারকারীদের কাছে সমুদ্রপথে বাংলাদেশ ছাড়া রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশিরা যেন ক্রীতদাস৷ মাত্র ২০০ ডলারের বিনিময়ে নির্বিঘ্নে মালয়েশিয়ায় পৌঁছে দেয়ার কথা বলে নৌযানে তুললেও যাত্রীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়৷ খেতে না দেয়া, ছোট্ট জায়গায় গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য করা, শারীরিক নির্যাতন – বলতে গেলে সব ধরণের অত্যাচারই চলে তাঁদের ওপর৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Yulinnas
থাইল্যান্ড নিয়ে আতঙ্ক
রোহিঙ্গারা থাইল্যান্ডেও যান৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, ২০১২ সালে আড়াই লাখ মানুষ অবৈধভাবে থাইল্যান্ডে প্রবেশ করেছেন৷ অভিবাসন প্রত্যাশীদের জন্য থাইল্যান্ড অবশ্য একেবারেই নিরাপদ ঠিকানা নয়৷ মানবপাচারকারীরা সে দেশে নিয়ে অভিবাসন প্রত্যাশীদের জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি করে৷ মুক্তিপণ না দিলে মেরেও ফেলা হয়৷ সম্প্রতি মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে বেশ কিছু গণকবরের সন্ধান পেয়েছে থাই সরকার৷
ছবি: Reuters/D. Sagolj
পরিত্যক্ত
থাইল্যান্ড সরকারের অভিযান শুরুর পর অনেক রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশিকে গভীর জঙ্গলে ফেলে পাচারকারীরা পালিয়ে যায়৷ মালয়েশিয়া সীমান্তের কাছের জঙ্গল থেকে উদ্ধার করে এ পর্যন্ত অন্তত শ’ খানেক অভিবাসন প্রত্যাশীকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে থাই কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: AFP/Getty Images/Str
7 ছবি1 | 7
গেল সপ্তাহান্তে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের নিকটবর্তী মাউংড-তে ব্যাপক অভিযান চালায় সেনাবাহিনী৷ সেনাবাহিনীর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সংঘর্ষে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা এখনো জানা যায়নি৷ তবে এ পর্যন্ত অন্তত ২৮ জন রোহিঙ্গা এবং দু'জন সেনাসদস্য নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৯ অক্টোবর থেকে চলে আসা সংঘর্ষে এ পর্যন্ত অন্তত ৬০ জন রোহিঙ্গা এবং ১৭ জন সেনাসদস্য নিহত হয়েছে৷ ২০১২ সালের কথিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর চলমান এই সংঘর্ষেই সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটল৷
এদিকে সেনা অভিযানে রোহিঙ্গা হত্যার পাশাপাশি ব্যাপক হারে রোহিঙ্গাদের ঘর-বাড়িতে অগ্নি সংযোগেরও প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ স্যাটেলাইট থেকে তোলা কিছু ছবি প্রকাশ করেছে৷ ছবিগুলোতে দেখা গেছে, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোর অনেক বাড়ি পুড়ে প্রায় ছাই৷ মানবাধিকার সংস্থাটির অনুমান, অন্তত ৪৩০টি বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে৷ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা তদন্তের জন্য হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তদন্তের দাবি জানিয়েছে৷