মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের তদন্তকারীরা৷ বুধবার তাঁরা নিরাপত্তা পরিষদে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে এর বিচার দাবি করেছেন তাঁরা৷ জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের চেয়ারম্যান মারজুকি দারুসমান জানিয়েছেন, গণহত্যার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জন্মহার কমানো এবং বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে স্থানান্তরও চলছে৷ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘এটা চলমান গণহত্যা৷’’ ৪৪৪ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ রয়েছে৷ সেগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে এসবের বিচার হওয়া উচিত অথবা যুগোস্লাভিয়ার নতুন কোনো ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যেতে পারে৷
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ সেনাকর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রাখাইনে গণহত্যা চালানোর অপরাধে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করা উচিত৷ গত বছর রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ৭ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা৷ এই সহিংসতায় ৩৯০টি গ্রাম পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, নিহত হয়েছে ১০ হাজার রোহিঙ্গা৷
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ইয়াংহি লি বলেছেন, ‘‘শান্তিতে নোবেল জয়ী নেত্রী অং সান সুচি ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতি অনেক বদলে যাবে বলে ধারণা করেছিলেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়৷ কিন্তু বাস্তবতা হলো অতীত পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তনই হয়নি, বরং আরো খারাপ হয়েছে৷’’
মারজুকি দারুসমান হুঁশিয়ার করে বলেন, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের জন্য একেবারেই নিরাপদ নয়৷ ফলে বাংলাদেশ থেকে তাঁদের ফিরিয়ে দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না৷ এরকম ঘটনা ঘটলে আরো অনেক মানুষের প্রাণহানির সম্ভাবনা তৈরি হবে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি৷
মিয়ানমার সরকার যথারীতি জাতিসংঘের এই তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে৷ এর নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তারা৷ এশিয়ার কূটনীতিকদের নিয়ে একটি স্বতন্ত্র তদন্ত কমিশন গঠনের কথা জানিয়েছে তারা৷ তবে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন জানিয়েছে, তাদের তদন্তে এমন সব তথ্য-প্রমাণ রয়েছে, যাতে স্পষ্টই বোঝা যায়, রোহিঙ্গাদের পুরোপুরি নির্মূল করতেই মিয়ানমার এই নিপীড়নের পথ বেছে নিয়েছে৷
এপিবি/এসিবি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)
২৩ আগস্টের ছবিঘরটি দেখুন...
যা যা হারালেন সুচি
রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন বন্ধে কোনো ভূমিকা না রাখার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী অং সান সুচি৷ ফলে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে অবদানের জন্য পাওয়া স্বীকৃতিও হারাচ্ছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Khin Maung Win
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের খেতাব
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিকে দেওয়া সর্বোচ্চ খেতাব ‘অ্যাম্বাসেডর অব কনশেন্স’ প্রত্যাহার করে নিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Marquez
এলি উইজেল অ্যাওয়ার্ড
যুক্তরাষ্ট্রের হলোকস্ট মেমোরিয়াল মিউজয়াম মানবাধিকারের বিষয়ে অবদানের জন্য ২০১২ সালে সুচি’কে এ পুরস্কার দিয়েছিল৷ কিন্তু রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন বন্ধে নোবেল বিজয়ী এ নেত্রী কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করেনি দাবি করে পদকটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/Ye Aung Thu
ফ্রিডম অব অক্সফোর্ড
নিজ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই করে যাওয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড শহর কর্তৃপক্ষ ১৯৯৭ সালে সুচি’কে ‘ফ্রিডম অব অক্সফোর্ড’ সম্মাননা প্রদান করে৷ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন শুরুর পর এ সম্মাননা ফিরিয়ে নেয়া হয়৷ কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা এমন কাউকে এ সম্মানে ভূষিত করতে চান না যিনি মানবাধিকার লংঘনের সময় ‘চোখ বন্ধ’ করে রাখে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/Aung Shine Oo
ফ্রিডম অব গ্লাসগো অ্যাওয়ার্ড
রোহিঙ্গা নির্যাতন বিষয়ে নিস্ক্রিয় ভূমিকার জন্য ফ্রিডম অব গ্লাসগো অ্যাওয়ার্ডও হারিয়েছেন সুচি৷ স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এক চিঠিতে মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানালে পালটা প্রতিক্রিয়া দেখান সুচি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/W. Maye-E
অক্সফোর্ডের কক্ষ থেকে বিতাড়িত
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জুনিয়র কমন রুম’ টাইটেল থেকে মুছে ফেলা হয়েছে সুচির নাম৷ রোহিঙ্গা বিষয়ে সুচির কোনো ভূমিকা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র-ছাত্রীরা সুচির নাম মুছে ফেলার পক্ষে ভোট দেয়৷
ছবি: picture-alliance /dpa/L. Bo Bo
ইউনিসন অ্যাওয়ার্ড
রোহিঙ্গা নির্যাতন বিষয়ে নিষ্ক্রিয় থাকার কারণে হারানো পদকগুলোর মধ্যে আরেকটি হলো ইউনিসন অ্যাওয়ার্ড৷ যুক্তরাজ্যের সর্ববৃহৎ ট্রেড ইউনিয়ন ইউনিসন সুচিকে তাঁর গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় অবদান রাখার জন্য এ পদকটি দিয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Thu
এডিনবার্গ অ্যাওয়ার্ড
স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ শহর কর্তৃপক্ষ সুচিকে ২০০৫ সালে দেয়া এডিনবার্গ অ্যাওয়ার্ডটি বাতিল করে দেয়ার চিন্তা করছে৷ রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে পদক্ষেপ নিতে গত নভেম্বরে এডিনবার্গ শহর কর্তৃপক্ষ সুচিকে চিঠি লেখে৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো উত্তর দেননি শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এ নেত্রী৷ চলতি সপ্তাহেই অ্যাওয়ার্ডটি প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Reuters/Soe Zeya Tun
নোবেল বাতিলের আহ্বান
রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়ে নিশ্চুপ থাকার কারণে ১৯৯১ সালে শান্তিতে পাওয়া সুচির নোবেল পুরস্কারটি প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য একটি আন্তার্জাতিক ক্যাম্পেইন হয়েছিল৷ কিন্তু নোবেল কমিটির প্রধান বলেছেন, এ পুরস্কার প্রত্যাহার করে নেয়া সম্ভব নয়৷