জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দূত মঙ্গলবার এ কথা বলেন৷ কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলার পর এমন মন্তব্য করেন অ্যান্ড্রু গিলমুর৷
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধন এখনও চলছে৷ কক্সবাজারে আমি যা দেখেছি, শুনেছি, মনে হয় না এর বাইরে অন্য কোনো সিদ্ধান্তে আমরা পৌঁছতে পারি৷
‘‘নির্যাতনের প্রকৃতি পরিবর্তন হয়েছে৷ রক্তপাত আর গণধর্ষণ থেকে সরে এসে এখন রোহিঙ্গাদের ভয় দেখানো ও তাঁদের অনাহারে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে৷ মিয়ানমারে এখনও থাকা রোহিঙ্গারা যেন পালিয়ে যায় সে লক্ষ্যে এমন করা হচ্ছে,'' এক বিবৃতিতে বলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সহকারী মহাসচিব গিলমুর৷
অদূর ভবিষ্যতে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি ‘অচিন্ত্যনীয়' বলেও মনে করছেন তিনি৷ ‘‘মিয়ানমারের সরকার বিশ্বকে এটা বলতে ব্যস্তযে তারা রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করতে প্রস্তুত আছে৷ একই সময়ে তাদের নিরাপত্তাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে চলে যেতে বাধ্য করছে৷'' বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানের সঙ্গে ফিরে যাওয়া অসম্ভব বলে মন্তব্য করেন গিলমুর৷
How Myanmar can guarantee Rohingya security
02:51
উল্লেখ্য, সাংবাদিক, কূটনীতিক ও ত্রাণ সংস্থাদের উত্তর রাখাইনে যেতে দিচ্ছে না মিয়ানমার৷ শুধু মাঝেমধ্যে সরকারের তত্ত্বাবধানে ট্যুরের ব্যবস্থা করা হয়৷
এদিকে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক পরিচালক জেমস গোমেজ বলেন, জাতিসংঘের পাওয়া নতুন তথ্য ‘দুঃখজনকভাবে আমাদের পাওয়া তথ্যের প্রতিধ্বনি'৷
হাতির হামলায় ১০ রোহিঙ্গার মৃত্যু
কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরটি যেখানে অবস্থিত সেটি একসময় বুনো হাতির বিচরণ এলাকা ছিল৷ ঐ অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশ আর মিয়ানমারের মধ্যে খাবারের সন্ধানে যাতায়াত করতো হাতি৷ কিন্তু এখন সেখানে রোহিঙ্গা শিবির থাকায় হাতিরা সমস্যায় পড়েছে৷ মাঝেমধ্যে তারা হাতিরা শিবিরের মধ্যে ঢুকে পড়ে৷ এমন কয়েকটি ঘটনায় ১০ জন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ এসব ঘটনায় অনেক রোহিঙ্গা আহতও হয়েছেন৷ শিবিরে থাকা তাদের জিনিসপত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
সমস্যার সমাধানে জাতিসংঘ ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার' বা আইইউসিএন-এর সঙ্গে একটি প্রকল্প শুরু করেছে৷ এর আওতায় হাতি যেন শিবিরে ঢুকতে না পারে সেজন্য কী করতে হবে সে ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি)
রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংসতার চিত্র
মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে৷ রয়টার্সের আলোকচিত্রীর ছবিতে সেইসব নৃশংসতার ছবি ফুটে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
একবছরের শিশু
মনকে নাড়া দেয়া ব্যান্ডেজে মোড়ানো তুলতুলে ছোট্ট এই দু’টি পা শহিদের৷ বয়স মাত্র এক বছর৷ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে দাদি তাহেরা যখন পালাচ্ছিলেন, তখন তাঁর কোল থেকে পড়ে যায় ছোট্ট শহিদ৷ ছবিটি কক্সবাজারে রেডক্রসের এক হাসপাতালে ২৮ অক্টোবর তোলা৷
ছবি: Reuters/H. McKay
কালাবারো, ৫০
রাখাইনের মংদুতে তাঁদের গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয় সেনা সদস্যরা৷ এতে স্বামী, মেয়ে ও এক ছেলেকে হারান কালাবারো৷ তাঁর ডান পায়ে আঘাত করা হয়৷ যেখানে পড়ে গিয়েছিলেন সেখানেই কয়েক ঘণ্টা মারা যাওয়ার ভান করে ছিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
সেতারা বেগম, ১২
নয় ভাই-বোনের মধ্যে একজন সে৷ সেনারা যখন তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, তখন বাকি আটজন বের হয়ে যেতে পারলেও সে আগুনের মধ্যে আটকা পড়ে গিয়েছিল৷ পরে তাকে উদ্ধার করা হয়৷ তবে পা পুড়ে যায়৷ এই অবস্থায় বাংলাদেশে পৌঁছেছে সে৷ বাংলাদেশেই তার চিকিৎসা করা হয়৷ এখন তার দুই পা থাকলেও নেই কোনো আঙুল৷
ছবি: Reuters/J. Silva
নূর কামাল, ১৭
নিজের ঘরে লুকিয়ে ছিল সে৷ সেখান থেকে সৈন্যরা তাকে খুঁজে বের করে প্রথমে রাইফেলের বাট, পরে ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করে৷ ছবিতে সেটিই দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
আনোয়ারা বেগম, ৩৬
ঘরে আগুনের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুম থেকে উঠে পালাতে গিয়েছিলেন তিনি৷ তবে এর মধ্যেই পুড়ে যাওয়া ছাদ তাঁর মাথায় ভেঙে পড়ে৷ ফলে শরীরে থাকা নাইলনের কাপড় গলে হাত পুড়িয়ে দেয়৷ ‘‘আমি মনে করেছিলাম, মরে যাব৷ তবে আমার সন্তানদের জন্য বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি,’’ রয়টার্সকে বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মমতাজ বেগম, ৩০
সেনারা তাঁর বাড়িতে ঢুকে মূল্যবান জিনিসপত্র দিতে বলেছিল৷ তখন মমতাজ তাঁদের দারিদ্র্যের কথা জানালে সৈন্যরা বলেছিল, ‘‘যদি তোমার কোনো অর্থ না থাকে, তাহলে আমরা তোমাকে হত্যা করব৷’’ এই বলে, সৈন্যরা তাঁকে ঘরে বন্দি করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল৷ কোনোরকমে সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে বের হয়ে দেখেন তাঁর তিন ছেলে মৃত, আর মেয়েকে প্রহার করা হয়েছে, তার রক্ত ঝরছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
ইমাম হোসেন, ৪২
মাদ্রাসায় পড়িয়ে ফেরার পথে তিন ব্যক্তি ছুরি নিয়ে তাঁর উপর হামলা করেছিল৷ পরের দিনই তিনি তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গ্রামের অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন৷ এরপর তিনিও কক্সবাজারে পৌঁছান৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মোহাম্মদ জাবাইর, ২১
গ্রামের বাড়িতে এক বিস্ফোরণে তার শরীরের এই অবস্থা৷ ‘‘আমি কয়েক সপ্তাহ অন্ধ ছিলাম৷ কক্সবাজারের এক সরকারি হাসপাতালে ২৩ দিন চিকিৎসাধীন ছিলাম,’’ বলেছে সে৷