ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ধর্মীয় নিপীড়ন বিষয়ক মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্যাম ব্রাউনব্যাক বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনা সত্ত্বেও মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন বন্ধ হয়নি৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশের সময় এই মন্তব্য করেন তিনি৷ ব্রাউনব্যাক বলেন, সহিংসতা এখনও চলছে৷
এর আগে মার্চ মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সহকারী মহাসচিব অ্যান্ড্রু গিলমুর জানিয়েছিলেন, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এখনও রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে চলে যেতে বাধ্য করছে৷ রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘মিয়ানমারের সরকার বিশ্বকে এই তথ্য জানাতে ব্যস্ত যে, তারা ফিরে আসা রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করতে প্রস্তুত৷ কিন্তু একই সময়ে তাদের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের (রোহিঙ্গাদের) বাংলাদেশে চলে যেতে বাধ্য করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে৷’’
রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংসতার চিত্র
মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে৷ রয়টার্সের আলোকচিত্রীর ছবিতে সেইসব নৃশংসতার ছবি ফুটে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
একবছরের শিশু
মনকে নাড়া দেয়া ব্যান্ডেজে মোড়ানো তুলতুলে ছোট্ট এই দু’টি পা শহিদের৷ বয়স মাত্র এক বছর৷ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে দাদি তাহেরা যখন পালাচ্ছিলেন, তখন তাঁর কোল থেকে পড়ে যায় ছোট্ট শহিদ৷ ছবিটি কক্সবাজারে রেডক্রসের এক হাসপাতালে ২৮ অক্টোবর তোলা৷
ছবি: Reuters/H. McKay
কালাবারো, ৫০
রাখাইনের মংদুতে তাঁদের গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয় সেনা সদস্যরা৷ এতে স্বামী, মেয়ে ও এক ছেলেকে হারান কালাবারো৷ তাঁর ডান পায়ে আঘাত করা হয়৷ যেখানে পড়ে গিয়েছিলেন সেখানেই কয়েক ঘণ্টা মারা যাওয়ার ভান করে ছিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
সেতারা বেগম, ১২
নয় ভাই-বোনের মধ্যে একজন সে৷ সেনারা যখন তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, তখন বাকি আটজন বের হয়ে যেতে পারলেও সে আগুনের মধ্যে আটকা পড়ে গিয়েছিল৷ পরে তাকে উদ্ধার করা হয়৷ তবে পা পুড়ে যায়৷ এই অবস্থায় বাংলাদেশে পৌঁছেছে সে৷ বাংলাদেশেই তার চিকিৎসা করা হয়৷ এখন তার দুই পা থাকলেও নেই কোনো আঙুল৷
ছবি: Reuters/J. Silva
নূর কামাল, ১৭
নিজের ঘরে লুকিয়ে ছিল সে৷ সেখান থেকে সৈন্যরা তাকে খুঁজে বের করে প্রথমে রাইফেলের বাট, পরে ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করে৷ ছবিতে সেটিই দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
আনোয়ারা বেগম, ৩৬
ঘরে আগুনের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুম থেকে উঠে পালাতে গিয়েছিলেন তিনি৷ তবে এর মধ্যেই পুড়ে যাওয়া ছাদ তাঁর মাথায় ভেঙে পড়ে৷ ফলে শরীরে থাকা নাইলনের কাপড় গলে হাত পুড়িয়ে দেয়৷ ‘‘আমি মনে করেছিলাম, মরে যাব৷ তবে আমার সন্তানদের জন্য বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি,’’ রয়টার্সকে বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মমতাজ বেগম, ৩০
সেনারা তাঁর বাড়িতে ঢুকে মূল্যবান জিনিসপত্র দিতে বলেছিল৷ তখন মমতাজ তাঁদের দারিদ্র্যের কথা জানালে সৈন্যরা বলেছিল, ‘‘যদি তোমার কোনো অর্থ না থাকে, তাহলে আমরা তোমাকে হত্যা করব৷’’ এই বলে, সৈন্যরা তাঁকে ঘরে বন্দি করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল৷ কোনোরকমে সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে বের হয়ে দেখেন তাঁর তিন ছেলে মৃত, আর মেয়েকে প্রহার করা হয়েছে, তার রক্ত ঝরছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
ইমাম হোসেন, ৪২
মাদ্রাসায় পড়িয়ে ফেরার পথে তিন ব্যক্তি ছুরি নিয়ে তাঁর উপর হামলা করেছিল৷ পরের দিনই তিনি তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গ্রামের অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন৷ এরপর তিনিও কক্সবাজারে পৌঁছান৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মোহাম্মদ জাবাইর, ২১
গ্রামের বাড়িতে এক বিস্ফোরণে তার শরীরের এই অবস্থা৷ ‘‘আমি কয়েক সপ্তাহ অন্ধ ছিলাম৷ কক্সবাজারের এক সরকারি হাসপাতালে ২৩ দিন চিকিৎসাধীন ছিলাম,’’ বলেছে সে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
8 ছবি1 | 8
এদিকে, মিয়ানমারের নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চির কার্যালয় সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে ৫৮ জন মুসলিম রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে পৌঁছেছেন৷ দেশটির সরকারি গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঐ বিবৃতিতে বলা হয়, প্রত্যাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা না মেনে ফিরে আসায় তাদের আটক করা হয়েছিল৷ পরে ‘ক্ষমা’ করে তাদের অস্থায়ী ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে৷ সেখানে তাদের পরিচয় পরীক্ষা করে দেখা হবে৷
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর আগত রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে রাখার জন্য মিয়ানমার সীমান্তে একটি শিবির গড়ে তোলা হয়েছে৷ সেখানকার প্রথম বাসিন্দা হলেন এই ৫৮ রোহিঙ্গা৷ তারা গত চার মাসে বিভিন্ন পর্যায়ে মিয়ানমারের প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন সু চির মুখপাত্র জ টেয়৷ তবে ফিরে আসাদের পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানায়নি মিয়ানমার৷
এদিকে, বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা নেই৷ ‘‘ক্যাম্প থেকে কোনো রোহিঙ্গার রাখাইনে ফিরে যাওয়ার ঘটনা আমরা শুনিনি,’’ এএফপিকে বলেন বাংলাদেশের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম৷
এর আগে গতমাসে একটি রোহিঙ্গা পরিবারের পাঁচ সদস্যের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার খবর দিয়েছিল মিয়ানমার৷ সেই সময় বাংলাদেশ দাবি করেছিল, পরিবারটি নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থান করছিল এবং সেখান থেকেই ফেরত গেছে৷
এদিকে, বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি স্টার’ বলছে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও প্রত্যাবাসন কর্মীরা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, সোমবার পর্যন্ত একজনও আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারে ফিরে যায়নি৷ তাই মিয়ানমারের সবশেষ ঘোষণা প্রহসন আর ‘পুরো ধোঁকা' বলে মন্তব্য করেছেন তাঁরা৷
জেডএইচ/এসিবি (এপি, এএফপি, ডেইলি স্টার)
২৬ জানুয়ারির এই ছবিঘরটি দেখুন...
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া মুসলিম রোহিঙ্গাদের ফের দেশে ফেরানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷ সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই রাখাইন প্রদেশে ঘরে ফেরা রোহিঙ্গাদের জন্য ক্যাম্প তৈরির কাজ শুরু করেছে মিয়ানমার সরকার৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters
রোহিঙ্গা ক্যাম্প
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা, ত্রাণ এবং পুনর্বাসন মন্ত্রক ক্যাম্প তৈরির কাজ করছে৷ পুরো অঞ্চলটিকে ঘিরে দেওয়া হয়েছে কাঁটাতার দিয়ে৷ ক্যাম্পে জাতিসংঘের তরফ থেকে এইড দেওয়া হবে৷ তবে জাতিসংঘ জানিয়েছে, তাদের এইড প্রদানকারী সংস্থাকে ক্যাম্পে ঢোকার সমস্ত ব্যবস্থাপনা করে দিতে হবে৷ খবর, ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ ক্যাম্পে থাকতে পারবেন৷
ছবি: Reuters
অতন্দ্র প্রহরা
ইতিমধ্যেই ক্যাম্পের বাইরে মিয়ানমার সরকার পুলিশ মোতায়েন করেছে৷ ক্যাম্পে যাতে নতুন করে কোনো সমস্যা না হয়, তার দিকে নজর রাখার জন্যই নাকি অতন্দ্র প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters
শেষ পর্যায়ের কাজ
ক্যাম্প তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে বলে জানানো হয়েছে সরকারের তরফ থেকে৷ বাংলাদেশের শিবির থেকে রোহিঙ্গারা ফিরলেই তাদের সেখানে থাকার ব্যবস্থা করা হবে৷
ছবি: Reuters
অভিবাসন দফতরের উপস্থিতি
মিয়ানমারের অভিবাসন দফতরের কর্মীরাও নিয়মিত যাচ্ছেন ক্যাম্পে৷ রোহিঙ্গারা ফিরতে শুরু করলে তাঁদের সমস্ত তথ্য নথিভুক্ত করার জন্য অভিবাসন দফতরের অফিসও তৈরি হয়েছে ক্যাম্পে৷
ছবি: Reuters
কাজ চলছে পুরোদমে
শেষ পর্যায়ের কাজে হাত লাগিয়েছেন রাখাইন প্রদেশের সাধারণ মানুষও৷ দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য বহু শ্রমিককে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ক্যাম্পে৷
ছবি: picture-alliance/AP/T. Zaw
জেলখানার মতো
বলা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে ক্যাম্পে৷ যদিও কেউ কেউ বলছেন, বাইরে থেকে ক্যাম্পটিকে দেখতে লাগছে জেলখানার মতো৷
ছবি: Reuters
হেলিকপ্টার দর্শন
ইতিমধ্যেই ক্যাম্প তৈরির কাজ দেখে গিয়েছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রক্ষার সংস্থাগুলি৷ হেলিকপ্টারে করে তাদের এলাকা ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছে৷