মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে নিরাপত্তাবাহিনীর সংঘর্ষ
১৩ অক্টোবর ২০১৬
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং নিরাপত্তাবাহিনীর সংঘর্ষে অন্তত ৩৯ জন নিহত হয়েছে৷ এর মধ্যে ১৩ জন নিরাপত্তাকর্মী৷ দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছে, বাংলাদেশ সীমান্তে পুলিশকে হত্যার জেরই হামলা কারণ৷
বিজ্ঞাপন
গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অং সান সুচি জয়ী হওয়ার পর এই প্রথম রোহিঙ্গা ও নিরাপত্তাবাহিনীর মধ্যে এত বড় সংঘাতের ঘটনা ঘটল৷ ঘটনার সূত্রপাত রবিবার সকালে৷ নিরাপত্তাবাহিনী বলছে, সেদিন সশস্ত্র রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ সীমান্তের তিনটি পুলিশ ঘাঁটিতে হামলা চালায়৷ এতে মিয়ানমারের ৯ বর্ডার পুলিশ নিহত হয়, আহত হয় পাঁচ জন৷ এ সময় বেশ কিছু অস্ত্র এবং ১০ হাজার রাউন্ড গুলি নিয়ে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা৷
এরপরই রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের শহর মাউঙ্গদাওয়ে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী এবং পুলিশ৷ তিনশ' মানুষের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে৷ হামলাকারীরা পিস্তল, তলোয়ার এবং ছুরি নিয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর উপর হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করা হয়৷
বাংলাদেশে শরণার্থী, বাংলাদেশের শরণার্থী
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা, ইউএনএইচসিআর-এর এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের শরণার্থী আশ্রয়দাতা দেশের তালিকায় নবম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ৷ তেমনি বাংলাদেশ থেকেও অনেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশে শরণার্থী হয়ে যাচ্ছেন৷
ছবি: Reuters
বাংলাদেশ নবম
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর ‘গ্লোবাল ট্রেন্ডস-২০১৩’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলছে, বিশ্বের শরণার্থী আশ্রয়দাতা দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান নবম৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের অর্থনীতির তুলনায় ধারণক্ষমতার দিকে থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর নবম শরণার্থী আশ্রয়দাতা দেশ৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman
কতজন শরণার্থী?
দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশে দুটি সরকারি শরণার্থী শিবিরে ৩০ হাজারের মতো মিয়ানমারের (রোহিঙ্গা) শরণার্থী বসবাস করছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিবেদন৷ শিবিরের বাইরে আছে আরও দুই থেকে পাঁচ লাখ অনিবন্ধিত ব্যক্তি৷
ছবি: AP
আশ্রয়প্রার্থী
হ্যাঁ৷ বাংলাদেশেও কেউ কেউ আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন৷ ইউএনএইচসিআর ওয়েবসাইটের বাংলাদেশ পাতায় এমন আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা নয়জন বলে জানানো হয়েছে৷ ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সংখ্যাটা এমন ছিল বলে উল্লেখ করা হয়৷
ছবি: DW/Shaikh Azizur Rahman
বাংলাদেশের শরণার্থী
উন্নত জীবনের আশায় বাংলাদেশ থেকে অনেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন৷ অনেকক্ষেত্রে তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পথে রওনা দেন৷ কেউ গন্তব্যে পৌঁছে গ্রেপ্তার হয়ে ফিরে আসেন৷ কেউ বা শরণার্থী পরিচয় পান৷ বাংলাদেশের এমন শরণার্থীর সংখ্যা ৯,৮৩৯ জন৷
ছবি: Reuters
বাংলাদেশের আশ্রয়প্রার্থী
উন্নত বিশ্বে কোনোভাবে ঢুকে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার চল অনেকদিন ধরেই চলছে৷ জাতিসংঘের হিসেবে বাংলাদেশের এমন আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ২২,১২৮ জন৷ সংখ্যাটা ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রযোজ্য৷
ছবি: Reuters
স্বপ্নের শুরু টেকনাফে
বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার মতো দেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন অনেক বাংলাদেশি৷ এ জন্য তাঁরা দালালদের অনেক অর্থও দিয়ে থাকেন৷ তাঁদের এই যাত্রা শুরু হয় টেকনাফ থেকে৷
ছবি: DW/Shaikh Azizur Rahman
ছোট নৌকা থেকে বড় নৌকায়
টেকনাফ থেকে প্রথমে ছোট নৌকায় যাত্রা শুরু হয়৷ তারপর একসময় মাছ ধরার বড় নৌকা বা কার্গোতে যাত্রীদের তুলে দেয়া হয়৷ সাধারণত অক্টোবর থেকে পরবর্তী পাঁচ মাসকে সমুদ্র যাত্রার জন্য সঠিক সময় বলে বিবেচনা করা হয়৷
ছবি: Asiapics
খাবার, পানির অভাব
ইউএনএইচসিআর-এর একটি প্রতিবেদন বলছে, যাঁরা সাগর পথে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেন তাঁদের অনেকে খাবার ও পানির অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ এছাড়া দালালরা অনেক সময় তাঁদের সঙ্গে খারাপ আচরণও করে৷
ছবি: Reuters
8 ছবি1 | 8
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আশঙ্কা, এই সংঘাতের ফলে গৃহহীন সাধারণ রোহিঙ্গারা হামলার শিকার হবে৷ বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র ‘গ্লোবাল নিউ লাইট'কে দেয়া সাক্ষাৎকারে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি দাবি করেছেন, তাঁর সরকার সেখানে আইন প্রতিষ্ঠার জন্য হামলাকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বাধ্য হচ্ছে৷
জানিয়েছেন, কারা এই হামলা চালিয়েছে সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত নয় কর্তৃপক্ষ৷ সেনাবাহিনীর সংবাদপত্র ‘মিয়াওয়াদি' জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে কিয়েটিয়োপিন গ্রামে ১০ হামলাকারী নিহত হয়৷ তাদের অস্ত্রশস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে৷ অন্যদিকে বুধবার স্বশস্ত্র হামলাকারীরা ২৫টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়৷ এছাড়া তারা কিয়েটিয়োপিন গ্রামের বর্ডার পুলিশ কোয়ার্টারেও হামলা চালায়৷
রবিবার থেকে এখন পর্যন্ত ১৩ নিরাপত্তাকর্মী সহ নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯ জন৷ স্থানীয় এক ব্যক্তি সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানান, নিহত ২৬ জনের মধ্যে সাধারণ মানুষও ছিল, যাদের হাতে অস্ত্র ছিল না, কিন্তু সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেখে ভয়ে পালানোর সময় তারা নিহত হয়৷ এছাড়া আরও চারজনকে আটক করে নিরাপত্তাবাহিনী৷ আটক ওই মুসলিম ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে৷
কোন কোন দেশে রয়েছে শিশু যোদ্ধা
পৃথিবীর বিভিন্ন কোণায় চলছে সংঘর্ষ৷ আর এসব সংঘর্ষে শিশুরা যে কেবল সহিংসতার শিকার হচ্ছে তা নয়, তাদের হাতেও উঠছে হাতিয়ার৷ ছবিঘরে থাকছে সেসব দেশের কথা৷
ছবি: Guillaume Briquet/AFP/Getty Images
ভারত
ছত্তিশগড়ের মতো মাওবাদীর প্রভাব আছে এমন এলাকাগুলোতে অনেক শিশুর হাতে বন্দুক তুলে দেয়া হয়েছে৷ পুলিশের সঙ্গে মাওবাদীদের সংঘর্ষে বেশ কিছু শিশু নিহতও হয়েছে৷
ছবি: AP
আফগানিস্তান
আফগানিস্তানে তালিবানসহ আরো কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন শিশুদের যুদ্ধে শামিল করে৷ বিশেষ করে এদের আত্মঘাতী হামলা চালানোর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ এমনকি আফগান পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে শিশুদের পুলিশে ভর্তি করানোর৷
ছবি: picture alliance/Tone Koene
মিয়ানমার
মিয়ানমারে বহু বছর আগে থেকে শিশুদের জোর করে সেনাবাহিনীতে ভর্তি করিয়ে দেয়ার চল রয়েছে এবং সংঘাতপূর্ণ এলাকায় লড়াইয়ে পাঠানো হয় তাদের৷ এদের মধ্যে ১১ বছর বয়সি শিশুও রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P.Kittiwongsakul
মধ্য আফ্রিকা
মধ্য আফ্রিকার দেশগুলোতে ১২ বছরের শিশুদের বিভিন্ন বিদ্রোহী দলে বন্দুকের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷
ছবি: UNICEF/NYHQ2012-0881/Sokol
চাদ
সেই দেশে কেবল বিদ্রোহী দলগুলোই নয়, সরকারি দলের বিভিন্ন সংগঠনেও শিশুদের যোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ ২০১১ সালে সরকার সেনাবাহিনীতে শিশুদের ভর্তি না করার বিষয়ে সরকার এক সিদ্ধান্তে পৌঁছায়৷
ছবি: UNICEF/NYHQ2010-1152/Asselin
কলম্বিয়া
দক্ষিণ অ্যামেরিকার এই দেশটিতে সম্প্রতি গৃহযুদ্ধ শেষ হয়েছে৷ কিন্তু এর আগে ফার্ক বিদ্রোহীরা শিশুদের যোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণ দিত৷
ছবি: AP
ডেমোক্রেটিক রিপাবলিকান অফ কঙ্গো
যুক্তরাষ্ট্রের এক জরিপ বলছে, এক সময় ডেমোক্রেটিক রিপাবলিকান অফ কঙ্গোয় ৩০ হাজার কিশোর-কিশোরী বিভিন্ন গ্রুপের হয়ে লড়াইয়ে অংশ নিত৷ এমনকি যৌনদাসী হিসেবেও কিশোরীদের ব্যবহার করত এসব গোষ্ঠী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gambarini
ইরাক
আল কায়েদা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে শিশুদের কেবল যোদ্ধা হিসেবেই নয়, গুপ্তচর হিসেবেও ব্যবহার করে৷ এছাড়া আত্মঘাতী হামলায় শিশুদের ব্যবহার করে তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সোমালিয়া
জঙ্গি সংগঠন আল শাবাব ১০ বছরের শিশুদেরও জোর করে তাদের দলের যোদ্ধা হিসেবে গড়ে তোলে৷ বেশিরভাগ সময়ই শিশুদের স্কুল বা বাড়ি থেকে অপহরণ করে দলে নেয়া হয়৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/Abdi Warsameh
দক্ষিণ সুদান
২০১১ সালে দক্ষিণ সুদান আলাদা রাষ্ট্র হওয়ার পর শিশুদের সেনাবাহিনীতে ঢোকানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে৷ তারপরও বেশ কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠী শিশুদের ব্যবহার করছে৷
ছবি: DW/A. Stahl
10 ছবি1 | 10
মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটস বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এসব এলাকায় বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে এবং মিয়ানমারের সরকারকে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষকে রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে তারা৷
২০১২ সাল থেকে রোহিঙ্গা ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে৷ রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আজও অবস্থান করছে ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ৷ তাদের চলাফেরায় অনেক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে৷ স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে না তারা৷