মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর নিপীড়নকে ‘কার্যত জাতিগত নির্মূল' বলে দাবি করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস৷ তাই অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধে দেশটির সরকারের প্রতি ‘দ্রুত পদক্ষেপ' নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অবস্থান
সহিংসতার কারণে ৩ লাখ ৮০ হাজার মানুষের বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ৷ মিয়ানমারে চলা এই সহিংসতার বিরুদ্ধে গত ৯ বছরের মধ্যে এই প্রথম এত শক্তিশালী অবস্থান নিল জাতিসংঘ৷ ব্রিটেনের জাতিসংঘ রাষ্ট্রদূত ম্যাথু রাইক্রোফট এক বিবৃতিতে বলেছেন, ন'বছরের মধ্যে এটা জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ৷ মহাসচিব নিরাপত্তা পরিষদে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছেন, যেখানে মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি এবং অবিলম্বে সেখানে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে৷ ১৯৮৯ সালের পর থেকে এই প্রথম কোনো জাতিসংঘ মহাসচিব এমন পদক্ষেপ নিলেন৷ ২০০৮ সালের পর থেকে মিয়ানমার পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্য কখনোই একমত হতে পারেনি৷ কেননা চীন বরাবরই মিয়ানমার সরকার এবং সেনাবাহিনীকে সমর্থন দিয়ে আসছে৷
টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণার্থী
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সংঘাতের মুখে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশের টেকনাফে এসেছেন সাড়ে তিন লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ সেখানে তাঁদের জীবনযাত্রা, তাঁদের জীবনের দুঃসহ স্মৃতির বর্ণনা জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফের লম্বার বিল এলাকা দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গা শরণার্থী আসছে আশ্রয়ের সন্ধানে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রোহিঙ্গা শরণার্থীরা দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে এসে পৌঁছান টেকনাফে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পরিবারের অসুস্থ ও বৃদ্ধ সদস্যদের এভাবে কাঁধে নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে টেকনাফে এসেছেন অনেকেই৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
শরণার্থীরা মিয়ামনমার থেকে অনেকটা খালি হাতেই পালিয়ে এসেছেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
শরণার্থীদের মধ্যে অনেকেই চোখের সামনে দেখেছেন স্বজন হত্যার বিভৎস দৃশ্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রোহিঙ্গা শরণার্থী নারী ও শিশুরা বাংলাদেশে আসার দীর্ঘপথে নদী-খালও পাড়ি দিয়েছেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ২৫ আগস্টের পর থেকে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছে বাংলাদেশে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফ ও নাইক্ষংছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত থেকে আসা কমে গেলেও শাহপরীর দ্বীপ থেকে এখনও দলে দলে শরণার্থীরা আসছেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফের নাফ নদীর ওপারে প্রতিদিনিই দেখা যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের বসতি জ্বালিয়ে দেয়ার দৃশ্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
তিন দিন ধরে আগুন দেয়া হচ্ছে মংডু ও রাসিডাং এলাকার রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর৷ শাহপরীর দ্বীপ থেকে তোলা ছবি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বাংলাদেশে আসা শরণার্থীদের অনেকেই নিয়ে আসছেন গবাদি পশু৷ এক্ষেত্রে তাঁরা ব্যবহার করছেন নাফ নদীকে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
গত কয়েকদিন ধরে আসা মানুষদের বড় একটা অংশের শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই মেলেনি৷ কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের পাশেই দিন কাটছে তাঁদের৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
অনেকে আবার জায়গা করে নিয়েছেন সড়কের পাশের বিভিন্ন টিলার উপরে৷ সোখানে খোলা আকাশের নীচেই দিন রাত পার করছেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফের বালুখালীতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নুতন শিবির৷ বিশাল এ এলাকায় সব শরণার্থীরই জায়গা করে দিতে কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ২ লাখের বেশিই শিশু, যা এবার আসা মোট শরণার্থীর ৬০ শতাংশ৷ ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ২৫ শে আগস্টের পর থেকে ১১শ’রও বেশি শিশু অভিভাবক ছাড়া রাখাইন থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত তিন হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ শুরু হয়েছে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের কাজ৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসা শুরু করলে প্রথমে সীমান্ত সিল করা দেয়া হয়েছিল৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কিন্তু কয়েকদিন পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আচরনের নির্দেশ দিলে সীমান্ত শিথিল হয় এবং ব্যাপকহারে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা খাবারের তীব্র সংকটে ভুগছেন৷ কোনো গাড়ি থেকে শুকনা খাবার দিতে দেখলেই খাবার সংগ্রহ করতে তাঁদের মধ্যে শুরু হয় কঠিন প্রতিযোগিতা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
২৫শে আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, অস্ত্রধারী বিদ্রোহীরা ২৪টি পুলিশ চেকপোস্ট ও একটি সেনাঘাঁটিতে একযোগে হামলা চালায়৷ তাদের পাল্টা হামলা চালালে তা সহিংসতায় রূপ নেয়৷ দু’পক্ষের সংঘর্ষে সেইদিনই রাখাইন রাজ্যে অন্তত ৮৯ জন নিহত হয়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
22 ছবি1 | 22
বুধবার নিরাপত্তা পরিষদে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে রাখাইনে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের কারণে ৩ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গার সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়৷ এরপর সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে এক বিবৃতিতে ওই উদ্বেগ, নিন্দা ও আহ্বানের কথা জানান৷ সেই সঙ্গে রাখাইনে মানবিক সহায়তাকর্মীদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়৷
বৈঠক শুরুর আগে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, ‘‘আমি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি রাখাইনে সামরিক অভিযান বন্ধ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া ব্যক্তিদের ফেরার অধিকার স্বীকার করে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি৷''
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ‘জাতিগত নির্মূলের' শিকার হচ্ছে কিনা, এমন এক প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, ‘‘যখন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশ দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে, তখন সেই পরিস্থিতি তুলে ধরতে এর চেয়ে ভালো কোনো শব্দ আপনি কি খুঁজে পাবেন?'' তিনি এ সময় রাখাইনে ‘গুরুত্বপূর্ণ মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে' মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান৷ সেই সঙ্গে তিনি রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার দেওয়া অথবা এমন কোনো আইনি মর্যাদা দেওয়ারও আহ্বান জানান, যাতে তাঁরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন৷
নিরাপত্তা পরিষদের এক কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইডেন আরো কঠোর বিবৃতির আহ্বান জানিয়েছিল৷ কিন্তু চীনসহ নিরাপত্তা পরিষদের আরো কয়েকটি সদস্য দেশ এ ব্যাপারে একমত হয়েছে যে মিয়ানমার সরকার এবং সেনাবাহিনীর কাছে সহিংসতা বন্ধে এই বার্তাই যথেষ্ট৷
মিয়ানমারের সরকার বুধবার জানায় যে, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি এবারের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন না৷ জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, সু চির সফর বাতিলের ঘোষণার আগে তিনি তাঁর সঙ্গে এই ট্র্যাজেডি নিয়ে বেশ কয়েকবার কথা বলেছেন৷
নোবেল বিজয়ীদের খোলা চিঠি
এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংকট নিরসনে জাতিসংঘের জরুরি হস্তক্ষেপে চেয়ে বুধবার খোলা চিঠি লিখেছেন নোবেলজয়ী ও বিশিষ্টজনরা৷ চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন ১২ নোবেলজয়ী, ১৫ বিশিষ্টজন৷ এঁদের মধ্যে শান্তিতে নোবেলজয়ী ও গ্রামীন ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রয়েছেন৷ সেখানে বলা হয়, মিয়ানমারের রাখাইনে যে মানবিক সংকট ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ভয়ংকর রূপ নিয়েছে – তার অবসানে জাতিসংঘের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন৷
কক্সবাজারে পৌঁছাচ্ছে আন্তর্জাতিক ত্রাণ
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা হাজার রোহিঙ্গা শিশুর জন্য জরুরি ভিত্তিতে পানি ও স্বাস্থ্য সরঞ্জাম বহনকারী ইউনিসেফ-এর ট্রাক আজ কক্সবাজারে যাচ্ছে৷ আগামী দিনগুলোতে আরও জরুরি ত্রাণ সরবরাহ করা হবে বলে জাতিসংঘের এই সংস্থার এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে৷ জরুরি এসব সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে – ডিটারজেন্ট পাউডার, সাবান, পরিষ্কার রুমাল, তোয়ালে ও স্যান্ডেল৷ এছাড়া ইউনিসেফ পানি শোধন ও পরিবহনের ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে সহায়তা করছে এবং নলকূপ বসানোর ক্ষেত্রেও সহযোগী সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়৷
মিয়ানমারে সহিংসতার মুখে গত ২৫ অগাস্ট থেকে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে, যাদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ শিশু বলে প্রাথমিক ধারণা৷ বিপুল সংখ্যক এই শরণার্থীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার ও শরণার্থী সংস্থাগুলো৷ আগামী চার মাসের জন্য রোহিঙ্গা শিশুদের সহায়তায় ইউনিসেফ ৭৩ লাখ ডলার সাহায্য চেয়েছে৷
রোহিঙ্গা সংকট: কার কী অবস্থান?
হিংসালীলা ও বৈরি মনোভাবের মুখে মিয়ানমার থেকে দলে দলে পালাতে হচ্ছে রোহিঙ্গাদের৷ তাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সমাজে সহানুভূতি সত্ত্বেও মূলত কৌশলগত কারণে বিভিন্ন দেশ ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Armangue/AP
বাংলাদেশ
মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাংলাদেশেই আশ্রয় নিচ্ছে বেশিরভাগ রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ এত সংখ্যক মানুষকে আশ্রয় দেওয়া অবশ্যই বিশাল চ্যালেঞ্জ৷ আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয়ের উদ্যোগ চলছে৷ শরণার্থীদের পরিচয় নিশ্চিত করতে তাদের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ নিয়ে তথ্যভাণ্ডার গড়ার কথা চলছে৷
ছবি: picture-alliance/AA/Z. H. Chowdhury
ভারত
দেশের উত্তর পূর্বে বিদ্রোহীদের মোকাবিলা করতে এবং চীনের প্রভাব সীমিত রাখতে ভারতের একের পর এক সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে চলেছে৷ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও প্রথম মিয়ানমার সফরে গিয়ে সে দেশের সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন৷ রাখাইনের অর্থনৈতিক উন্নতির লক্ষ্যেও প্রকল্পে অংশ নিচ্ছে ভারত৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
তুরস্ক
রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি নিয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছে তুরস্ক৷ শুধু কথায় নয়, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সাহায্য দিতেও তৎপর সে দেশ৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ফার্স্ট লেডি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন৷ জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ইস্যু তুলে ধরতেও তৎপর হতে চায় তুরস্ক৷
ছবি: picture-alliance/abaca/K. Ozer
মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়া মানবিক কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাময়িক আশ্রয়ের আশ্বাস দিয়েছে৷ তবে অন্যান্য নথিপত্রহীন বহিরাগতদের মতো তাদেরও নির্দিষ্ট কেন্দ্রে আটক রাখা হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ উল্লেখ্য, মালয়েশিয়া জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেশনে স্বাক্ষর করেনি৷ তাই সেখানে শরণার্থীরা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে বিবেচিত হয়৷
ছবি: Reuters/Stringer
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি-র প্রতি অগাধ আস্থা দেখিয়েছিলেন৷ বর্তমান রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন এখনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়নি৷ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর দুশ্চিন্তা প্রকাশ করলেও সরাসরি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো কূটনৈতিক অবস্থান নেয় নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Watson
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাখাইনে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে মিয়ানমারের সহযোগিতা দাবি করেছে৷ সেইসঙ্গে এই সংখ্যালঘু এই গোষ্ঠীর উপর নিপীড়ন বন্ধ করার ডাক দিয়েছে ইইউ৷ শরণার্থীদের সহায়তা করতে বাংলাদেশে ত্রাণ সাহায্য পাঠানোর অঙ্গীকার করেছে এই রাষ্ট্রজোট৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
চীন
মিয়ানমারের সরকারের সঙ্গে চীনের দীর্ঘ ও গভীর সম্পর্ক রয়েছে৷ সে দেশে কৌশলগত স্বার্থের খাতিরেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সরকারের বিরোধিতা করছে না চীন৷ জাতিসংঘ সহ আন্তর্জাতিক মঞ্চে চীনের এই অবস্থান আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমারের সরকারের জন্য জরুরি৷
ছবি: Reuters/R. Dela Pena
রাশিয়া
চীনের মতো রাশিয়াও মিয়ানমারের সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে৷ জাতিসংঘে সে দেশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে এই দুই ভেটো শক্তি৷ এদিকে রাশিয়ার মুসলিম-প্রধান চেচনিয়া অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে মস্কোর উপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z.Bairakov
জাতিসংঘ
জাতিসংধের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিস্থিতির মোকাবিলার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমারের উদ্দেশ্যে হিংসালীলা বন্ধ করার ডাক দিয়েছেন৷ প্রাক্তন মহাসচিব কোফি আন্নানের নেতৃত্বে এক কমিশন পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষ্যে কিছু প্রস্তাব পেশ করেছে৷ তবে নিরাপত্তা পরিষদ এখনো প্রকাশ্যে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
বিভিন্ন মহলে সমালোচনার মুখে পড়া ভারত সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বাংলাদেশে ত্রাণ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এই ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে খাদ্যের পাশাপাশি থাকছে ওষুধপথ্য, মশারি ও অস্থায়ী শিবির তৈরির সরঞ্জাম৷ ভারতের ত্রাণসামগ্রী স্থল, জল ও আকাশপথে বাংলাদেশে পাঠানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে৷ অন্যদিকে, এরইমধ্যে ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছে উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কো৷ বৃহস্পতিবার সকালে ১৪ টন ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে মরক্কো এয়ারের একটি বিমানে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে৷
মিয়ানমারের ১৭৬টি গ্রাম জনশূন্য
মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে দেশটির রাখাইন রাজ্যে ৪৭১টি রোহিঙ্গা গ্রামের মধ্যে ১৭৬টি গ্রাম পুরোপুরি জনশূন্য হয়ে গেছে৷ এছাড়া আরও ৩৪টি গ্রাম আংশিকভাবে জনশূন্য হয়েছে৷ রাষ্ট্রপতির দপ্তরের মুখপাত্র জানান, গত ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮৬টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে৷ তবে এরপর আর কোনো সংঘর্ষ হয়নি৷ বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অনেকেই জানিয়েছেন, মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে, তাদের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে৷ এমনকি রোহিঙ্গাদের তাদের বাড়ি-ঘর না ছাড়লে মরতে হবে এমন হুমকিও দেওয়া হয়েছে৷
এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)
প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য পাঠান, লিখুন নীচের ঘরে৷
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশ যাত্রা
নিজের দেশে সহিংসতা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা৷ তবে জাতিসংঘের অনুরোধ সত্ত্বেও সীমান্তে কড়াকড়ি অব্যাহত রেখেছ বাংলাদেশ৷ আজও রোহিঙ্গাদের অবৈধ অভিবাসী মনে করে মিয়ানমার৷
আশ্রয়ের সন্ধান
মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের পরিকল্পিত হামলার জের ধরে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর দমনপীড়ন শুরু করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী৷ ফলে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের সীমান্তের দিকে ছুটছেন রোহিঙ্গারা৷ সর্বশেষ অস্থিরতায় ইতোমধ্যে প্রাণ গেছে একশ’র বেশি মানুষের৷
ব্যাপক উদ্বাসন
বাংলাদেশের সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার মাঝখান থেকে এক রোহিঙ্গা শিশুকে পার করছেন এক ব্যক্তি৷ মিয়ানমার সরকার দাবি করেছে, রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা সাতটি গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে, একটি চেকপোস্ট এবং এক শহরের দুই প্রান্তে হামলা করেছে৷
ছবি: Getty Images/R.Asad
বৌদ্ধ শরণার্থীরা ছুটছে দক্ষিণের দিকে
নিরাপত্তা বাহিনীর দমনপীড়নের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার বৌদ্ধরাও নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় খুঁজছেন৷ রোহিঙ্গা মুসলমান এবং রাখাইন বৌদ্ধদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা বিরাজ করছে৷ ২০১২ সালে সেখানে রক্তাক্ত দাঙ্গা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রবেশ নিষেধ
বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা আশ্রয়প্রত্যাশী রোহিঙ্গাদের সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন৷ তবে এ সব বাধার মাঝেও তিন হাজারের মতো রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন৷ বাংলাদেশ ইতোমধ্যে চারলাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
মানবিক সংকট
একটি আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থার কর্মী লিখেছেন: ‘‘অনেক রোহিঙ্গাকে আমরা অসুস্থ অবস্থায় পাচ্ছি৷ এর কারণ তাঁরা বাংলাদেশে প্রবেশের আগে দীর্ঘসময় সীমান্তে আটকে ছিলেন৷ অসুস্থদের মধ্যে নারী এবং শিশুদের সংখ্যা বেশি৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Alam
বাংলাদেশে স্বাগত নয়
কক্সবাজারের কুতুপালাং শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া একদল রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের একটি দ্বীপে সরিয়ে নিতে চাচ্ছে যেটি বর্ষা মৌসুমে অধিকাংশ সময় পানির নীচে তলিয়ে থাকে৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
নো ম্যান’স ল্যান্ডের আটকে থাকা
পানির মধ্যে দিয়ে হেঁটে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশের চেষ্টা করছে রোহিঙ্গা শিশুরা৷ এই মুহূর্তে ছ’হাজারের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় সীমান্তে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷