মিয়ানমারের সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া ছিল অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ৷ অপ্রিয় ঘটনারও তেমন খবর পাওয়া যায়নি৷ কিন্তু ফলাফল ঘোষণার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক বিলম্বকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
সংসদে সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত আসনগুলি ছাড়া প্রায় সব ভোটই পড়েছে অং সান সু চি-র এনএলডি দলের ঝুলিতে৷ সু চি নিজে মনে করেন, দল প্রায় ৭৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে৷ সেনা-সমর্থিত ইউএসডিপি সরকার জনগণের এই রায় মেনে নেবে – এটাই তিনি ধরে নিচ্ছেন৷ দলের আরেক নেতা ৮১ শতাংশ ভোট জয়ের আশা করছেন৷ ইউএসডিপি নেতা কি উইন স্বীকারও করে নিয়েছেন, যে তাঁর দলের সম্পূর্ণ পরাজয় ঘটেছে এবং এনএলডি-র জয় হয়েছে৷
রবিবার ভোটগ্রহণের পর সরকারি ফলাফল ঘোষণার প্রক্রিয়ায় অস্বাভাবিক বিলম্বের ফলে সেনাবাহিনীর প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে৷ এনএলডি সরাসরি সরকারের নির্বাচনি প্যানেলের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে ফলাফল ঘোষণায় বিলম্বের অভিযোগ এনেছে৷ তারা কোনো কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দলের মুখপাত্র উইন টিয়েন৷
মিয়ানমারের এবারের নির্বাচন সম্পর্কে কিছু মৌলিক তথ্য শেয়ার করেছেন স্টেফান সিমানোভিৎস৷
অতীতে গণতন্ত্রের দিকে অগ্রসর হয়েও একাধিকবার আবার সামরিক শাসনের পথে ফিরে গেছে মিয়ানমার৷ এ ক্ষেত্রে ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ' সংস্থার মূল্যায়ন শেয়ার করেছেন কাইল নাইট৷
মিয়ানমারে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে দ্য গার্ডিয়ান সংবাদপত্রে৷ সেটি শেয়ার করেছেন মিশেল পেনা৷
রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারে মুসলিমদের ভবিষ্যতের প্রশ্নে অং সান সু চি-র নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বার বার৷ ফলে ক্ষমতায় এসে তিনি এই সংকট সমাধানে কী করবেন, তাও স্পষ্ট নয়৷
প্রতিবেশী দেশ হিসেবে মিয়ানমারের নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রাখছে বাংলাদেশ৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অং সান সু চি-কে অভিনন্দনবার্তা পাঠিয়েছেন৷
ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ায় রোহিঙ্গাদের প্রবেশের ঘটনা ঘটেই চলেছে৷ অনেক বাংলাদেশিও আছেন তাঁদের মাঝে৷ থাইল্যান্ডে গিয়ে কবরেও ঠাঁই হয়েছে অনেকের! আজকের ছবিঘরটি তাঁদের নিয়েই৷
ছবি: Reuters/R: Bintang
আটকে পড়া
গত ১০ মে চারটি নৌযানে করে ইন্দোনেশিয়ার আচে প্রদেশে প্রবেশ করে ৬০০ রোহিঙ্গা৷ একই সময়ে লাংকাওইতে প্রবেশ করে প্রায় এক হাজার রোহিঙ্গা৷ সমুদ্র থেকে স্থলে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ তাঁদের ঘিরে ফেলে৷ ভাগ্যান্বেষণে দেশ ছাড়া মানুষগুলো এখনো মুক্ত নয়৷
ছবি: Reuters/R. Bintang
ক্লান্ত
মানবপাচারকারীরা তাঁদের ছেড়ে যাওয়াতে সমুদ্রবক্ষে বিপদেই পড়েছিলেন রোহিঙ্গারা৷ আনুমানিক সপ্তাহ খানেক সমুদ্রপথে ঘুরে অবশেষে ভীষণ ক্ষুধার্ত এবং ক্লান্ত অবস্থায় তাঁরা ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছান৷ দীর্ঘ অর্ধাহার, অনাহারে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে৷ তাঁদের চিকিৎসা চলছে৷
ছবি: Reuters/R: Bintang
ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা
প্রতিবছর এভাবেই মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে শত শত রোহিঙ্গা৷ মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কিছু বাংলাদেশিও থাকেন সব সময়৷ ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী তোলায় অনেক নৌযান ডুবে যায় সাগরে, সলিলসমাধি হয় অনেকের৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম তিন মাসে ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ছেড়েছেন অন্তত ২৫ হাজার রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি৷
ছবি: Asiapics
ওদের কোনো দেশ নেই!
বৌদ্ধপ্রধান দেশ মিয়ানমারে ৮ লক্ষের মতো রোহিঙ্গা মুসলমানের বাস৷ তবে সংখ্যাটা দ্রুতই কমছে৷ বৌদ্ধদের সঙ্গে দাঙ্গার কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই৷ মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকারই করে না৷ তাদের মতে, রোহিঙ্গারা ‘বাংলাদেশি অভিবাসী’৷ আবার বাংলাদেশে আশ্রয় নিলে ঐতিহাসিক কারণেই তাঁদের মিয়ানমার থেকে আগত বহিরাগতের মর্যাদা দেয় বাংলাদেশ৷
ছবি: Reuters/R: Bintang
আধুনিক দাস-বাণিজ্য
মানবপাচারকারীদের কাছে সমুদ্রপথে বাংলাদেশ ছাড়া রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশিরা যেন ক্রীতদাস৷ মাত্র ২০০ ডলারের বিনিময়ে নির্বিঘ্নে মালয়েশিয়ায় পৌঁছে দেয়ার কথা বলে নৌযানে তুললেও যাত্রীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়৷ খেতে না দেয়া, ছোট্ট জায়গায় গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য করা, শারীরিক নির্যাতন – বলতে গেলে সব ধরণের অত্যাচারই চলে তাঁদের ওপর৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Yulinnas
থাইল্যান্ড নিয়ে আতঙ্ক
রোহিঙ্গারা থাইল্যান্ডেও যান৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, ২০১২ সালে আড়াই লাখ মানুষ অবৈধভাবে থাইল্যান্ডে প্রবেশ করেছেন৷ অভিবাসন প্রত্যাশীদের জন্য থাইল্যান্ড অবশ্য একেবারেই নিরাপদ ঠিকানা নয়৷ মানবপাচারকারীরা সে দেশে নিয়ে অভিবাসন প্রত্যাশীদের জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি করে৷ মুক্তিপণ না দিলে মেরেও ফেলা হয়৷ সম্প্রতি মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে বেশ কিছু গণকবরের সন্ধান পেয়েছে থাই সরকার৷
ছবি: Reuters/D. Sagolj
পরিত্যক্ত
থাইল্যান্ড সরকারের অভিযান শুরুর পর অনেক রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশিকে গভীর জঙ্গলে ফেলে পাচারকারীরা পালিয়ে যায়৷ মালয়েশিয়া সীমান্তের কাছের জঙ্গল থেকে উদ্ধার করে এ পর্যন্ত অন্তত শ’ খানেক অভিবাসন প্রত্যাশীকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে থাই কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: AFP/Getty Images/Str
7 ছবি1 | 7
সংকলন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
গণতান্ত্রিক নির্বাচন সত্ত্বেও মিয়ানমারে ক্ষমতার হস্তান্তর শান্তিপূর্ণভাবে ঘটবে কি? আপনার কী মত? জানিয়ে দিন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷